Nature and Nurture (আচরনে প্রকৃতি ও প্রতিপালনের প্রভাব) ৯ম পর্ব

Nature and Nurture আচরনে প্রকৃতি ও প্রতিপালনের প্রভাব ৯ম পর্ব ৪র্থ অধ্যায়ের ১নং ক্লাসে আমরা আলোচনা করবোঃ

  1. ভূমিকা (Prologue)
  2. প্রকৃতিঃ আচরনের উপর জিনের প্রভাব (Nature: Genetic Influences on Behavior)
  3. মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর আচরনে জিনগত গবেষণা (Genetic Studies of Nonhuman Animal Behavior)
  4. মানুষের আচরণের জিনগত গবেষণা (Genetic Studies of Human Behavior)
  5. জমজদের উপর গবেষণা (Studies of Twins)
  6. পালিত সন্তানদের গবেষণা (Studies of Adopted Children)
  7. বংশগতির জিনগত আণবিক গঠন (Molecular Genetic Mechanisms of Inheritance)
  8. জিন, ক্রোমোজোম এবং ডিএনএ (Genes, Chromosomes and DNA)
  9. বহুরুপী জিন (Polymorphic Genes)
  10. আধিপত্যবাদী এবং প্রচ্ছন্ন জিন (Dominant and Recessive Genes)
  11. বহুভোজী বৈশিষ্ট্য (Polygenic Traits)
  12. X ও Y ক্রোমোজম ও লিঙ্গ (X and Y Chromosomes and Sex)
  13. জিন ও আচরণ (Genes and Behavior)
  14. প্রতিপালনঃ পরিবেশের প্রভাব (Nurture: Environmental Influence)
  15. উপাদানগত পরিবেশ (Physical Environments)
  16. সামাজিক পরিবেশ (Social Environments)
  17. সংস্কৃতি, জাতি ও পরিচয় (Culture, Ethnicity and Identity)

ভূমিকা (Prologue):

প্রকৃতি (Nature) বলতে মানুষের জন্মগত ভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝায়। যেমন জিন, ক্রোমোজম, ডিএনএ ইত্যাদি মানুষের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলে মানুষের প্রকৃতি বিশ্লেষনের মাধ্যমে তা জানতে পারা যায়।

অপর দিকে প্রতিপালন (Nurture) হলো মানুষ কোথায় লালিত-পালিত হয় বা কোন পরিবেশে বড় হয় কেননা সেই পরিবেশের প্রভাবও মানুষের আচরনকে প্রভাবিত করে।

উল্লেখ্য যে, মানুষের আচরন প্রকৃতি(nature)প্রতিপালন (nurture) উভয় দ্বারাই প্রভাবিত হয়।

তাহলে আমাদের জানার বিষয় হলো যে এই প্রকৃতি ও প্রতিপালন কিভাবে আমাদের আচরনকে প্রভাবিত করে (Nature and Nurture how influence our behavior).

প্রকৃতিঃ আচরনের উপর জিনের প্রভাব (Nature: Genetic Influences on Behavior):

জিন কি আমাদের আচরন ও মানসিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে?
অবশ্যই! সন্তানেরা উত্তরাধিকারসূত্রে শারীরিকভাবে তাদের মাতা পিতার বৈশিষ্ট্য পেয়ে থাকে।

যেমন উজ্জ্বল বা কালো ত্বক, নীল বা বাদামী চোখ, লম্বা কিংবা খাটো উচ্চতা এই বৈশিষ্ট্য গুলো স্বাভাবিক ভাবেই পিতা-মাতা থেকে তাদের সন্তানরা পেয়ে থাকে!

মনোবিজ্ঞানে বংশগতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়! কারন আমাদের আচরনের অনেক দিক জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে

মানুষের আচরনের কিছু কিছু ধরন তাদের বংশগতি অনুযায়ী হয় না বরং বংশগতি আমাদের বহুগুণে প্রভাবিত করে বলেই মনে হয় যেমন স্বাধারণ বুদ্ধিমত্তা।

মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর আচরনে জিনগত গবেষণা (Genetic Studies of Nonhuman Animal Behavior):

গ্রেগোর জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলা হয়। পিতা মাতার বৈশিষ্ট কিভাবে উদ্ভিদ বংশধরদের মাঝে প্রকাশ পায় সে বিষয়ে তিনি মটর (pea) গাছ নিয়ে পরিক্ষার মাধ্যমে খুবই মূল্যবান ত্বত্ত আবিষ্কার করেছিলেন।

তিনি যখন মটর গাছের মধ্যে শারিরীক গুনাবলীর পরিক্ষা করছিলেন তখন তিনি একটি নিদির্ষ্ট বৈশিষ্ট চিহ্নিত করে তাদের বংশধরদের মধ্যে সেই বৈশিষ্টটিরই প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হন।

বছাইকৃত প্রজনন (selective breeding) পদ্ধতিটি অন্যান্য প্রাণীর ওপরও প্রয়োগ করা যায়! ইঁদুরের আগ্রাসন কিংবা খাদ্য খোঁজার সক্ষমতা এবং বানরের আবেগ জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়।

ইঁদুরের উপর উক্ত গবেষণাটি চালানোর জন্য ১৯৭৬ সালে বিজ্ঞানী ইবার্ট(Ebert) ও জ্যানেট(Janet) জঙ্গলের ভেতর একটি ঘরে ইঁদুরকে আবদ্ধ করে রেখে বাছাইকৃত প্রজনন(selective breeding) গবেষনাটি পরিচালনা করেন।

১ম বংশধর পেতে,ইঁদুরের আগ্রাসনের উপর ভিত্তি করে মেয়ে ইঁদুরদের ২টি দলে ভাগ করা হলো। এরপর এই দুটি দলের সাথে অবাছাইকৃত পুরুষ ইঁদুরদের এলোমেলো ভাবে প্রজনন ঘটানো হলো। বাচ্চা হওয়ার পরে প্রত্যক দল থেকে ১০টি করে সর্বোচ্চ আগ্রাসী মেয়ে ইঁদুর এবং ১০টি করে শান্ত মেয়ে ইঁদুরকে আবারও আলাদা করে এলোমেলো করে প্রজনন ঘটানো হলো।

এরপরে দেখা গেলো যে ১০ টি অধিক আগ্রাসী ইঁদুরের বাচ্চা আরো বেশি আগ্রাসী হলো এবং ১০টি অধিক শান্ত ইঁদুরের বাচ্চা আরো শান্ত হলো।

সুতরাং উক্ত গবেষনাটির মাধ্যমে বোঝা যায় বংশধরদের আচরনের উপর জিনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।

এটা মনে হতে পারে যে, উক্ত গবেষনায় পরিবেশের প্রভাব গবেষনার ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।

তাই এরই বিকল্প গবেষনা হিসেবে ডাচ্ মনোবিজ্ঞানীরাও আরেকটি ভিন্ন পরিবেশে গবেষনা চালিয়ে অনুরুপ ফলাফল পান।

এ গবেষনাটি উক্ত গবেষনাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।

সুতরাং উক্ত তথ্যগুলোই প্রমান করে যে, আচরনের উপর জিনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।

মানুষের আচরণের জিনগত গবেষণা (Genetic Studies of Human Behavior):

নৈতিক দিক বিবেচনায় আনলে মানুষের মধ্যে নির্বাচনী/বাছাই প্রজনন পরিক্ষাটি (ইঁদুরের মতো) কখনোই চালানো সম্ভব নয়।

সুতরাং মানুষে আচরনের প্রকৃতি এবং প্রতিপালনের উপর গবেষনা করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

তবে এ গবেষনার বিকল্প হিসেবে গবেষকরা একটি উপায় বের করেন। তা হলো জমজ সন্তান এবং পালিত সন্তানদের উপর গবেষনা করা।

জমজদের উপর গবেষণা (Studies of Twins):

দুই ধরনের জমজ হয় এবং তাদের গঠনও দুটি আলাদা উপায়ে হয়।

এদের একটিকে বলে মনোজাইগোটিক (মনো=১) জমজ এবং অন্যটিকে বলে ডাইজাইগোটিক(ডাই=২) জমজ।

মনোজাইগোটিক জমজঃ
মাতার একটি মাত্র উর্বর ডিম্বাণু থেকে দুটি সন্তানের জন্ম হলে, তখন তাদের মনোজাইগোটিক জমজ বলে। মনোজাইগোটিক জমজের ক্ষেত্রে গর্ভধারনে ঠিক শুরুর দিকে ক্লাস্টারের কোষ বিভাজনের সময় এটি ভেঙ্গে যায় এবং সব ঠিক থাকলে এই দুটি ক্লাস্টার থেকেই দুটি জমজ বাচ্চা হয়।

এই দুটি জমজ বাচ্চা একই ডিম্বাণু থেকে আসার কারনে তারা দেখতে যেমন একই রকম হয় আবার তাদের জিনের গঠনও অনুরুপ হয়।

ডাইজাইগোটিক জমজঃ
ডাইজাইগোটিকের ক্ষেত্রে মাতার দুটি আলাদা আলাদা উর্বর ডিম্বাণুর সাথে পিতার দুটি আলাদা আলাদা শুক্রাণুর মিলন ঘটে! এই দুটি উর্বর ডিম্বাণু থেকে দুটি জমজ বাচ্চা হয় যাদের ডাইজাইগোটিক জমজ বলে। ডাইজাইগোটিক জমজেরা একই সময়ে একই গর্ভাশয় থেকে জন্ম নিলেও তাদের জিনগত মিল থাকে না! এর কারন এরা অন্যান্য বাচ্চাদের মতোই আলাদা শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেয়।

মনোজাইগোটিক এবং ডাইজাইগোটিক জমজেরা মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রকৃত তথ্যই সরবরাহ করে।

কেননা এ দুই ধরনের জমজ একই ঘরোয়া পরিবেশে, একই মাতা-পিতার কাছে এবং একই প্রতিবেশির সাথে বেড়ে উঠলেও তাদের জিনগত সাদৃশ্যর মাত্রা ভিন্নতর হয়ে থাকে।

মানুষের স্বভাবে বংশীয় বা জিনগত বৈশিষ্ট্যর উপর ভিত্তি করে অনেক গবেষনাই চালানো হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গবেষনা হলো জমজদের আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তার (IQ) পরিক্ষা নেয়া।

এই আইকিউ পরিক্ষা পরিচালনার ফলাফলে দেখা গেছে যে মনোজাইগোটিক জমজরা প্রায় সমান সমান আইকিউ স্কোর করে থাকে।

অন্যদিকে, ডাইজাইগোটিক জমজরা একে অন্যর থেকে সর্বদা আলাদ আলাদা স্কোর করে থাকে! অনুরুপভাবে অন্য অরো গবেষনায় দেখা গেছে শারিরীক গঠন, পেশী শক্তি, ক্রিয়া সক্ষমতাসহ মানুষের মনোস্তাত্ত্বিক গুণাবলি ও আচরন অনেকাংশেই জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

পালিত সন্তানদের গবেষণা (Studies of Adopted Children:

পালিত সন্তানদের উপর গবেষনা করেও দেখা গেছে যে মানুষের আচরনে জিনের প্রভাব বিদ্যমান! এক্ষেত্রে আবারও আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের পরিক্ষাটি চালানো হয়।

পরিক্ষাটিতে দেখা গেছে যে পালিত সন্তানদের আইকিউ স্কোর সব সময়ই তাদের প্রকৃত বাবা-মার আইকিউ স্কোরের সমান হয়।

যদিও তারা দত্তক/পালিত বাবা-মার কাছেই বড় হয় তবুও তাদের আইকিউ স্কোর পালিত বাবা-মার অনুরুপ না হয়ে প্রকৃত বাবা-মার অনুরুপ হয়।

উক্ত গবেষনার দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে আচার-আচরন এবং বুদ্ধিমত্তা সহ সকল কিছুকেই জিন প্রভাবিত করে।

বংশগতির জিনগত আণবিক গঠন (Molecular Genetic Mechanisms of Inheritance):

অতীতে মনে করা হতো যে মানুষের বংশগতীয় গুনাবলী তার রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়। কিন্তু বর্তমানে এসে আমরা জেনেছি যে মানুষের বংশগতীয় গুণাবলী জিন নামের জিনগত কিছু উপাদানের মাধ্যমে বাহিত হয়ে থাকে।

জিনকে বলা হয় বংশগতির ধারক ও বাহক।

জিন মানুষের কোষের সকল নিউক্লিয়সে পাওয়া যায়! গ্রেগোর জোহান মেন্ডেল প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি আগে জিনের আস্তিত্বের কথা অনুমান করেছিলেন।

এরপর ২০ শতকের মাঝামাঝিতে এসে শক্তিশালী ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপের বদলতে জিন আবিষ্কৃত হয়।

জিন, ক্রোমোজোম, ডিএনএ (Genes, Chromosomes and DNA):

শরীলের প্রত্যক কোষেরই ক্ষুদ্রতম গঠন থাকে যাকে বলে ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমকে বলা হয় সব দৃশ্যমান এবং অদৃশমান লক্ষন বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একক।

জিনের অবস্থান এই ক্রোমোজোমেই।

ক্রোমোজোম হলো ডি-অক্সিরাইবোনিওক্লিক এসিডের লম্বা সূত্র যাকে সংক্ষেপে ডিএনএ (DNA) বলে।

ডিএনএ স্বাভাবিক ভাবে বাঁকানো/প্যাঁচানো সিড়ির মতো হয় যা দুদিকে ঘোরানো থাকে যাকে ডাবল হেলিক্স বলে।

ডাবল হেলিক্সের প্যাঁচানো ঘূর্ননের মধ্যে নিউক্লিওটাইড নামক রাসায়নিক উপাদান থাকে।

ডিএনএ তে চার প্রকার নিউক্লিওটাইড থাকে তারা হলো অ্যাডেনিন(A),থায়ামিন(T), গুয়ানিন(G), এবং সাইটোসিন(C)

বিভিন্ন অক্ষরের সমন্বয়ে যেমন করে আমাদের বোধগম্য তথ্য গঠিত হয় তেমন করে
অ্যাডেনিন(A),
থায়ামিন(T),
গুয়ানিন(G),
এবং সাইটোসিন(C)
নামক জেনেটিক কোড দ্বারা দেহের বৈশিষ্ট্য গঠিত হয়।

ক্রোমোজোমের, ডিএনএ (DNA) এর যে অংশটি দেহের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ধারন করে তাকেই জিন বলে। ক্রোমোজোমে অবস্থান করে ডিএনএ (DNA) তে এবং ডিএনএ তে অবস্থান করে জিন।

আচরনে প্রকৃতি ও প্রতিপালনের প্রভাব – জিন, ক্রোমোজোম, ডিএনএ।

মানুষের ক্রোমোজোম ২৩ জোড়ায় বিন্যাস্ত। যখন টিস্যু/কোষ কলার বৃদ্ধি কিংবা মেরামতের সময় কোষের বিভাজন ঘটে, তখন নতুন কোষে ক্রোমোজোমের হবুহু নতুন অনুলিপি/কপি তৈরি হয়।

কিন্তু যখন জনন কোষ তৈরি হয় কেবল তখনই ক্রোমোজোম ২৩ জোড়া হতে ভেঙ্গে ২৩ টিতে পরিনত হয়।

এরপর যখন শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সফল ভাবে ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় মিলিত হয়ে নতুন একটি কোষে পরিনত হয় তখন তাকে জাইগোট বলে।

জাইগোটে বাবার ২৩ টি একক ক্রোমোজোম এবং মায়ের ২৩ টি একক ক্রোমোজোম পুনরায় ২৩ জোড়ায় পরিনত হয়

সব ঠিকঠাক থাকলে এই জাইগোট টি মায়ের জরায়ুতে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং ভ্রণের বৃদ্ধি হতে থাকে। এভাবেই সন্তানের মধ্যে বাবা-মা উভয়ের জিনগত বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হয়।

বহুরুপী জিন (Polymorphic Genes):

মানব বিবর্তনের ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সময়ে জনন কোষের ডিএনএ তে মিউটেশন (mutations) নামক কিঞ্চিত পরিবর্তন ঘটে গেছে।

বেশির ভাগ মিউটেশনই জীবকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে যে তারা আর বেঁচে থাকতেই পারে না।

কিন্তু জিনে এমনও মিউটেশন ঘটে যা কিনা জীবকে টিকে থাকতে এবং বংশ বিস্তার করতে সাহয্য করে যাতে তারা তাদের প্রজন্ম/বংশকে ভবিষ্যতেও রেখে যেতে পারে।

মাঝেমাঝে আলাদা একটি মিউটেশন প্রক্রিয়ায় জিনের একাধিক রুপ/সংস্করন তৈরি হয়। জিনের এই একাধিক রুপ/সংস্করণকে বলা হয় বহুরুপী জিন(Polymorphic Genes)।

সমস্ত মানুষের প্রায় ৯৯% ভাগ জিনের একটিমাত্র রুপ/সংস্করণ রয়েছে! বহুরুপী/পলিমর্ফিক জিন খুবই চমৎকার একধরনের জিন কেননা কিছু বহুরুপী/পলিমর্ফিক জিনের বিভিন্ন রুপ/সংস্করণ মানুষের আচরন ও মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্যের জন্য আংশিকভাবে দায়ী থাকে।

উদাহরণ সরুপ চোখের রং নির্ধারনে প্রভাব রাখা প্রত্যকটা পলিমর্ফিক জিন যা পিতার কাছে থেকে পাওয়া যায় তাকে A ও মাতার কাছে থেকে পাওয়া যায় তাকে B ধরা যাক।

যদিও যানা গেছে ৩ প্রকারের জিন চোখের রং নির্ধারনে ভূমিকাি রাখে তবুও আমাদের উদাহরনকে সহজ করার জন্য চোখের নীল ও বাদামী রং নির্ধারক জিনের কথা বিবেচনা করা যাক যেই জিন গুলো ক্রোমোজমের ১৫ নাম্বার জোড়ায় অবস্থিত।

যেমন প্রতিটি পিতামাতার নিকট থেকে পলিমর্ফিক জিনের সকল সংস্করনই পাওয় সন্তানদের জন্য সৌভাগ্যর বিষয়! এ কারনে সন্তানদের মধ্যে জিনের যথেষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়!

যেমন পুত্র সন্তানের বেলায় জিনের একটি সংস্করনের দুটি কপি পিতামাতার নিকট থেকে বাহিত হতে পারে যাকে বলবো ১৫A.

আবার কন্যা সন্তান পিতা-মাতার কাছ থেকে জিনের ১৫B সংস্করন পেতে পারে।

ফলে এই ভাই-বোনের মধ্যে জিনগত সাদৃশ্যতা থাকবে না। ফলে এক জনের চোখের রং হবে নীল ও অন্য জনের চোখের রং হবে বাদামী।

আধিপত্যবাদী এবং প্রচ্ছন্ন জিন (Dominant and Recessive Genes):

উপরের চোখের রং এর উদাহরনের কথা বিবেচনা করলে, চোখের রং বাদামী হবে না নীল হবে তা নির্ভর করবে কোন জিনের আধিপত্য বেশি তার উপর।

যদি চোখের রং বাদামী হয়ে থাকে তবে বলা হবে যে, বাদামী রং এর জিন কোডিং, নীল রং এর জিন কোডিং এর উপর আধিপত্য করেছে! অপর দিকে নীল রং এর জিন কোডকে বলা হবে প্রচ্ছন্ন জিন।

আধিপত্যবাদী(Dominant) জিন যখন উপস্থিত থাকে তখন এটির লক্ষন প্রকাশ পায়।

অপর দিকে প্রচ্ছন্ন(Recessive Genes) জিন তখনই প্রকাশ পায় যখন পিতামাতা উভয়ের কাছ থেকেই কেবলই প্রচ্ছন্ন জিন আসে এবং যেখানে আধিপত্যবাদী (Dominant) জিনের উপস্থিতি থাকে না।

বহুভোজী বৈশিষ্ট্য (Polygenic Traits):

এক্ষেত্রে জিনগত উত্তাধিকার/বংশগতির সামান্য কিছু দিক আলোচনা করা হয়েছে।

যদিও চোখের রং এবং শারিরীক উচ্চতার মতো লক্ষনগুলো ৩ বা ৪ টি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

কিন্তু অন্যান্য লক্ষন আরো অনেক বেশি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

লক্ষন নিয়ন্ত্রনের এই ভিন্ন সংখ্যক জিনকেই বলা হয় বহুভোজী বৈশিষ্ট্য (Polygenic Traits)। এ বহুভোজী বৈশিষ্ট্য (Polygenic Traits) আচরনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যেমন মেধার বৈশিষ্ট্য কিংবা মানুষের ব্যক্তিত্বর বৈশিষ্ট্যর মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

X ও Y ক্রোমোজোম ও লিঙ্গ (X and Y Chromosomes and Sex):

মানুষের আচরন ও মানসিক প্রক্রিয়া লিঙ্গ নামক আরেকটি প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়! জীববিজ্ঞানের ভাষায় X ও Y ক্রোমোজোমকে লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম হিসেবে ধরা হয়।

পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারক হিসেবে একটি X ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকে অপর দিকে মেয়েদের লিঙ্গ নির্ধারক হিসেবে দুটিই X ক্রোমোজম থাকে।

এ ক্রোমোজোম নিঃসন্দেহে নারী-পুরুষের মধ্যে শারীরিক ভিন্নতা তৈরি করে! যেমন ভিন্ন গ্রন্থির উপস্থিতি, সন্তান পালনের ভিন্নতা ইত্যাদি! উক্ত কারনে নারী-পুরুষের মধ্যে একই ধরনের জিন থাকার পরেও লিঙ্গগত পার্থক্যর কারনে তাদের আচরনে ভিন্নতা দেখা যায়।

জিন ও আচরণ (Genes and Behavior):

কিভাবে আমাদের শাররীক জীবন আমাদের দেহের কোষের অতি গভিরে থাকা ডিএনএ দ্বারা এতো এতো প্রভাবিত হয়?

এটি সম্ভব হয় কারন জিন আমাদের কোষে নিদির্ষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষন করে কোড তৈরি করে।

এ প্রোটিনগুলোই আমাদের দেহের গঠন এবং অঙ্গ তৈরি করে।

যখন ভিন্ন উপাদানের প্রোটিনে তৈরি কোষ দিয়ে নিউরন ও অ্যান্ড্রোক্রাইন গ্রন্থি তৈরি হয় তখন সেগুলোর গঠনও ভিন্ন ভাবে চালিত হয়।

উদাহরন সরুপ বলা যায়, কিছু জিন, নিউরনের অ্যাক্সনকে পরিচালনায় প্রোটিনের গঠন কেমন হবে তা নির্ধারন করে।

এভাবে জিন নিউরনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে! সুতরাং যা পরোক্ষ ভাবে আমাদের আচরনকে প্রভাবিত করে।

অনুরুপ ভাবে জিন আমাদের অ্যান্ড্রোক্রাইন গ্রন্থির গঠন ও কার্যক্রমকেও নিয়ন্ত্রন করে। ফলে নিউরন ও অন্য অঙ্গের কার্যক্রমের জন্য অ্যান্ড্রোক্রাইন গ্রন্থি থেকে হরমোন ও নিউরোপেপটাইড ক্ষরিত হয়ে আমাদের আচরনকে প্রভাবিত করে।

নিউরন ও অ্যান্ড্রোক্রাইন গ্রন্থির গঠনের দ্বারা জিন শুধু আমাদের মনোস্তাত্তিক আচরনকেই প্রভাবিত করে না বরং আমাদের উচ্চতা, ওজন, চুল ও ত্বকের রং এর মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্যও জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়।

প্রতিপালনঃ পরিবেশের প্রভাব (Nurture: Environmental Influence):

মানুষের বংশগতি তার আচরন ও মানসিক চিন্তা চেতনায় গুরুত্বপূর্ন প্রভাব রাখলেও তার পরিবেশের অভিজ্ঞতাও তার আচরনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

আমরা মোটেই কঠোর ভাবে আমাদের জিনের দ্বারা প্রভাবিত হই না।

কখনো কখনো শারীরিক গুনাবলীও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে।

যেমন শারীরিক উচ্চতা বংশীয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে কিছু দেশের মানুষের গড় উচ্চতা, পুষ্টি ও চিকিৎসার মাধ্যমে ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়ানো যায়! বংশগতি এবং পরিবেশের অভিজ্ঞতা আমাদের মনোস্তাত্তিক গুনাবলীকে প্রভাবিত করতে সর্বদা একত্রে কাজ করে।

উপাদানগত পরিবেশ (Physical Environments):

আমাদের জীবন গঠনে যখন পরিবেশের কথা বলা হয় তখন উপাদানগত/বস্তুগত(Physical Environments) পরিবেশ ও মনোস্তাত্তিক(Psychological) উভয় পরিবেশের কথাই উল্লেখ করা হয়।

পানি ও বায়ু দূষনের মতো একটি কারন বিবেচনায় আনলে দেখা যায় এ ধরনের পরিবেশ ও উপাদান মানুষের আচরন ও চিন্তাধারার উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে।

যেমন গবেষনায় দেখা গেছে দস্তা, পারদ, সিসা সহ অন্যান্য ভারি ধাতব পদার্থ রক্তে মেশার ফলে স্নায়ুবিক কার্যক্রম ও বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তাকে হ্রাস করেছে।

এমমকি গর্ভাবস্থায় মদ পানকারী মহিলার সন্তানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও আগ্রাসী হতে দেখা গেছে।

তাই বলা যায় রাসায়নিকের মতো উপাদানগত পরিবেশ (Physical Environments) আমাদের আচরনকে ও মানসিক চিন্তাকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

সামাজিক পরিবেশ (Social Environments):

মানুষ নিঃসন্দেহে সামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

আমাদের পিতামাতা, সন্তান-সন্তুতি, প্রতিবেশি সবাই আমাদের আচরনকে প্রভাবিত করে থাকে।

আমরা যে ভাষায় কথা বলি, যে খাবার গ্রহন করি তার সবই অন্যর দ্বারা প্রভাবিত হয়!

যেমন; আমাদের পিতামাতা, সন্তান-সন্তুতি,বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি সবাই এই বিশ্বাসে প্রভাবিত যে যখন একটি কিশোর সিগারেট খাবে তখন ধূমপানের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরিণতি সে ভোগ করবে।

সংস্কৃতি, জাতি ও পরিচয় (Culture, Ethnicity and Identity):

আমরা আদি থেকেই যে সমাজ, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠির অধিকারী তা আমাদের আচরনকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে এবং প্রত্যককে অন্যর চাইতে সতন্ত্র করে তোলে। যদিও মানুষের সংস্কৃতিক নিয়ম-কানুন, লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় জানা ছাড়া তাদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে বোঝা সম্ভব নয়।

একটি জাতির আচরনের ধরন, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ থেকে তার সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।

মানুষের ভাষা, খাদ্যভাস ও নৈতিক বিশ্বাসের মধ্যে তাদের সংস্কৃতি অন্তর্ভূক্ত।

তাই বলা যায় সংস্কৃতি, জাতি ও পরিচয় আমাদের আচরনকে ও মানসিক চিন্তাকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

Leave a Comment