Neural Transmission (স্নায়ুবীয় তাড়না প্রবাহ) ৬ষ্ঠ পর্ব

Neural Transmission Bangla শিরোনামের এই ৬ষ্ঠ পর্ব ৩য় অধ্যায়ের ২নং ক্লাসে আমরা আলোচনা করবো-

  1. স্নায়ুবীয় তাড়না প্রবাহ (Neural Transmission)
  2. মায়েলিন সিথ এবং স্নায়ুবিক তাড়না প্রবাহ (Myelin Sheath and Neural Transmission)
  3. সিন্যাপটিক প্রবাহ
  4. Glial কোষ

স্নায়ুবীয় তাড়না প্রবাহ (Neural Transmission):

নিউরন হলো স্নায়ুতন্ত্রের পরিবাহী তার- টেলিফোন লাইন যেভাবে আমাদের কথাবার্তা প্রেরন করে থাকে তেমনই নিউরনও বার্তা প্রেরন (Neural Transmission) করে।

কিন্তু নিউরন হলো জীবন্ত তার (Wires) যার কিনা নিজে থেকেই বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করার ক্ষমতা রয়েছে! এর ব্যাটারিও রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রকে শাক্তি সরবরাহ করে থাকে।

নিউরন ব্যাটারি ও পরিবাহীর কার্যক্রম গ্রহন করতে পারে কেননা অন্যান্য সকল জীবন্ত কোষের মতো এটি ভেজা থাকে। নিউরনের ভিতরে এক প্রকার তরল দিয়ে পূর্ণকরা থাকে এবং বাহিরের দিকেও ভিন্ন এক প্রকার তরলে ভেজা থাকে।

এই তরল রসের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক, আয়ন, বিভিন্ন কণা দ্রবীভূত থাকে যা কিনা ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্মক ইলেকট্রনিক/বৈদ্যুতিক চার্জ পরিবহন করে।

তবে নিউরনের ভিতরের ধনাত্মক(+) আয়নের চেয়ে ঋনাত্মক(-) আয়রে পরিমান বেশি থাকায় সমস্ত নিউরনকে একটা ঋণাত্মক আধানে (চার্জ) পরিনত করে। নিউরনের ভিতরের এই ঋণাত্মক চার্জ, বাহিরের ধনাত্মক চার্জের দ্বারা আকর্ষিত হয় ঠিক যেমন করে একটি চুম্বকের ঋণাত্মক প্রান্তটি অন্য চুম্বকের ধনাত্মক প্রান্তের দ্বারা আকর্ষিত হয়ে থাক।

এভাবেই নিউরন কোষের ঝিল্লি ধনাত্মক আয়নে বিশেষকরে সোডিয়াম(Na+) আয়নে পরিপূর্ণ হয়ে যায়! নিউরনগুলি যখন স্থির অবস্থায় থাকে তখন ভিতরে চাইতে নিউরনের ঝিল্লির বাইরে ১০ গুণ বেশি ধনাত্মক চার্জযুক্ত সোডিয়াম আয়ন থাকে।

এটাই নিইরনের বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস যেখানে নিউরন ঝিল্লিরে এক পাশে ধনাত্মক চার্জ এবং অপর পাশে ঋণাত্মক চার্জ থাকে।

নিউরনের ঝিল্লির কোন পাশে বেশি পরিমানে সোডিয়াম আয়ন রয়েছে তা মনে রাখার জন্য লবনাক্ত সমুদ্রের পানিতে প্রচুর সোডিয়াম থাকার বিষয়টি মনে রাখা যেতে পারে। কেননা নিউরনের বাহিরের তরল সমুদ্রের পানির মতোই অন্যান্য রাসায়নি উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম জমা রাখে।

কেন এমন হয়? এমন হওয়ার কারন- বিবর্তনের তত্ত্ব অনুসারে সকল জীবের জন্ম সমুদ্রের পানিতেই এবং তারপর জীব সমুদ্র থেকে ডাঙ্গায় উঠে এসেছে।

যার ফলে তারা নিজেদের শরীলের সাথে করেই সমুদ্রের লবনাক্ত জল বহন করে এনেছে।

নোনতা এই তরলই দেহের কোষের ফাঁকা স্থানে অবস্থান করে। এই কারনেই ভিতরের ঋণাত্মক আয়নরে সাথে বাহিরের ধনাত্মক আয়নের সমতা থাকে।

সুতরাং নিউরন স্বাভাবিক/বিশ্রাম অবস্থায় বৈদ্যুতিভাবে সমবর্তিত (Electrically polarized) থাকে।

স্নায়বীয় তাড়না প্রবাহের আরো আলোচনা:

ঝিল্লি (Membrane) তার সংলগ্ন নিউরন দ্বারা উদ্দীপিত হলে, নিউরন ঝিল্লির অর্ধভেদ্যতা তৎক্ষনাৎ বন্ধ হয়ে যায়।

ধনাত্মকভাবে চার্জিত গুরুত্বপূর্ণ সোডিয়াম আয়ন প্রচন্ড গতিতে নিউরনের দিকে ধাবিত হয়।

এর ফলে নিউরন আর ঋণাত্মক(-) থাকে না, এই প্রক্রিয়টিকে বলা হয় ডিপোলারাইজেশন (depolarization)।

ডিপোলারাইজেশন (depolarization) এক অদ্ভুদ প্রবাহ শিকল তৈরি করে যাকে বলা হয় এ্যাকশন পটেনশিয়্যাল (action potential).

একবার রেস্টিং মেমব্রেন পটেনসিয়াল থেকে যাত্রা শুরু করে আবার সম্পূর্নভাবে রেস্টিং পটেনশিয়ালে ফিরে আসা পর্যন্ত যে ইলেক্ট্রিকাল সিগ্যনাল সৃষ্টি হয়, তাই একটি সম্পূর্ণ অ্যাকশন পটেনশিয়াল।

এর মাধ্যমে নিউরন উদ্দীপনা ধারণ, প্রকৃতি, তীব্রতা, সময় ইত্যাদি ইত্যাদি যাবতীয় তথ্যাদি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে অথবা প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

রমন ই কাজল (Ramon y Cajal) মনে করতেন স্নায়ুবিক তাড়না প্রবাহ(neural transmission) সর্বদা হয় সব না হয় কিছুই না (all-or-none principle) নীতির উপর নির্ভর করে পরিচালিত হতো।

এর মানে হলো যে স্নায়ু তাড়না প্রবাহের সংকেত তখনই এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে যাবে যখন এ্যাকশন পটেনশিয়্যালকে চালাতে ডিপোলারাইজেশনের যথেষ্ট শক্তি থাকবে।

তিনি আরো মনে করতেন যে একবার এ্যাকশন পটেনশিয়্যাল শুরু হয়ে গেলে তারা সব একই রকম হয়। এই ধারণাতে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ১০০ বছর বিশ্বাস করে এসেছেন কিন্তু বর্তমানে এসে জানা গেছে নিউরনের বার্তা সর্বদা শ্রেণীবদ্ধ বৈদ্যুতিক বিভবের(graded electrical potentials) মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।

মায়েলিন সিথ এবং স্নায়ুবিক তাড়না প্রবাহ (Myelin Sheath and Neural Transmission):

অ্যাক্সনের গায়ে স্নেহ বা চর্বির যে সাদা আবরণ থাকে তাকে মায়েলিন সিথ বলে।

এটা অ্যাক্সনকে জেলীর স্তর দিয়ে আবৃত করে রাখে।

মায়েলিনের এ স্তর থেকেই অ্যাক্সন বের হয়ে আসে এবং এ স্তরটি অ্যাক্সনকে নিউরনের স্পন্দন পরিচালনার গতি বৃদ্ধি করে।

মায়েলিন সিথের পুরুত্ব যৌবনে এসে বৃদ্ধি পায়।

মজার বিষয় হলো শিশুকাল থেকে যৌবন কাল পর্যন্ত মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশের মায়েলিনের পুরুত্ব ছেলেদের চাইতে মেয়েদের বেশি থাকে।

যার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়বিক প্রক্রিয়ায় মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।

Leave a Comment