Biological Foundations of Behavior (আচরণ) ৫ম পর্ব

Biological Foundations of Behavior ৫ম পর্ব ৩য় অধ্যায়ের ১নং ক্লাসে আমরা যে যে বিষয়ে আলোচনা করেছিঃ

  1. ভূমিকা (Prologue):
  2. স্নায়ুতন্ত্রঃ জৈবিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Nervous System: Biological Control Center):
  3. নিউরন: স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক একক (Neurons: Primary Units of the Nervous System)
  4. নিউরনের অংশ (Parts of Neurons)

ভূমিকা (Prologue):

জৈবিক জীবন মনস্তাত্ত্বিক জীবনের উপর নির্ভরশীল।

মানুষের যদি হাত না থাকতো তবে তারা লিখতে, আঁকতে বা Racket বল খেলতে পারতো না।

আমাদের যে চোখ রয়েছে তার যদি কোনো রং সনাক্ত করার ক্ষমতা না থাকতো তবে আমরা পৃথিবীর সবকিছু সাদা কালো দেখতাম।

মনোস্তাত্ত্বিক জীবনের সাথে শরীলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্ক খুবই অন্তরঙ্গভাবে সংযুক্ত।

কানাডার একজন ব্রেইন সার্জন/শূল্যচিকিৎসক ডাঃ পেনিফিল্ড ১৯৩০ সালে গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষার দ্বারা এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

ডাঃ পেনিফিল্ড একজন রোগীর প্রায় জাগ্রত অবস্থায় তার মস্তিষ্কের উপরিভাগ সেরিব্রাল কর্টেক্সে সার্জারি চালান।

পেনিফিল্ড মস্তিষ্কের বিপরীতে সেখানে মৃদু তড়িৎ প্রবাহের ছোট একটি দন্ড স্থাপন করলেন।

এরপর রোগী রান্নাঘরে রয়েছেন এমনটা অনুভব করলেন।

তিনি আরো তার ছোট্ট ছেলেরে উঠানে খেলার শব্দ এবং রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলেন।

ডাঃ পেনিফিল্ডের পরিক্ষা প্রমাণ করে যে সেরিব্রাল কর্টেক্সই আমাদের মনস্তাত্ত্বিক (psychological) অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত।

এটি ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে আমরা জানতে পরি যে আমাদের মস্তিষ্ক এবং মনস্তাত্ত্বিক জীবন অন্তরঙ্গভাবে জড়িত।

এ অধ্যয়ে, মানুষের আচরণ বুঝতে সরাসরি প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র, জিনগত পদ্ধতি ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। আমরা এই জীববৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অধ্যায়ন করব কেননা আমরা মনস্তাত্ত্বিক জীব আর বাস করি জৈবিক মেশিনে (Biological Machine).

ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ঠিক যেভাবে বৈদ্যুতিক তার, ট্রানজিস্টার ও আরো উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি হয়, তেমনি ভাবে স্নায়ুতন্ত্রও নিউরন (Neurons) নামক বিশেষ কোষ (Cell) দিয়ে তৈরি হয়।

কোটি কোটি নিউরন এক জটিল প্রক্রিয়ায় তথ্য আদান-প্রদান করার মাধ্যমে আমাদের দেহে কম্পিউটার এবং কমিউনিকেশন নেটওর্য়কের মতো স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System) তৈরি করেছে।

এই স্নায়ুতন্ত্রের জৈবিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হলো মস্তিষ্ক(Brain)! মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করলেও স্নায়ুতন্ত্র পরিচালনার কাজ মস্তিষ্ক একত্রে সমন্বিত উপায়ে পরিচালনা করে।

চিত্রঃমানুষের স্নায়ুতন্ত্র

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র
চিত্রঃমানুষের স্নায়ুতন্ত্র – Human Nervous System (Biological Foundations of Behavior)

দুটি বড় অংশ নিয়ে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। একটি অংশের নাম মস্তিষ্ক এবং অপরটি মেরুরজ্জু (Spinal Cord) যেটি শিরঁদাড়াতে থাকা স্নায়ুগুচ্ছ যা করোটির পর এবং মেরুদন্ডের কশেরুকার ভিতরে অবস্থিত।

অনেক স্নায়ু মস্তিষ্কের বহিরে ছড়িয়ে থাকে এবং মেরুদন্ড স্নয়ুতন্ত্রের দ্বিতীয় অংশ তৈরি করে যেটি দেহের শেষ প্রান্ত পর্য়ন্ত ছড়িয়ে থাকে। এই অংশকে বলা হয় প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (peripheral nervous system).

দেহে ছড়িয়ে থাকা বিভেন্ন অঙ্গের সাথে মস্তিষ্ক স্নায়ুর মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে।

মস্তিষ্ক দেহের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে অন্তর্গ্র্রন্থিও (Endocrine Gland) ব্যবহার করে।

এই গ্রন্থিগুলো হরমোন নামক গুপন রাসায়নিক বাহকের মতো কাজ করে। হরমোন দেহের রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে চলাচল করে।

হরমোন শরীলের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম তড়ান্বিত করার মাধ্যমে আমাদের আচার ব্যবহাকে প্রবাহিত করে।

হরমোন মস্তিষ্কের একটি শক্তিশালী উপাদন কিন্তু এটা আমাদেরকে সুর্নিদিষ্ট উপায়ের চেয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবেই বেশি প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

স্নায়ুতন্ত্রঃ জৈবিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Nervous System: Biological Control Center):

স্নায়ুতন্ত্র কম্পিউটারের মতো খুবই শক্তিশালী দেহের যোগাযোগের মাধ্যম। মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতো শুধু চিন্তা ও হিসাবই করে না অনুভূতি ও আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রণও করতে পারে! মস্তিষ্ক মেরুরজ্জুর সাথে যুক্ত থাকে একগুচ্ছ লম্বা স্নায়ু মেরুদন্ডের ভিতরে অবস্থান করে।

প্রত্যকটি স্নায়ু মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জু থেকে বের বা প্রবেশ করে মস্তিষ্কর সাথে দেহের প্রত্যকটি অঙ্গকে সংযুক্ত করে। এর কিছু স্নায়ু শরীলে কি হচ্ছে সে সব বার্তা শরীল থেকে মস্তিষ্কে প্রেরন করে থাকে।

অন্য স্নায়ুগুলো মস্তিষ্ক থেকে বার্তা/নির্দেশ মতো শরীলের কার্যক্রম এবং ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রন করে থাকে। স্নায়ুতন্ত্র না থাকলে দেহ এমন এক অসাড় বস্তুু হয়ে যেতো যা কিনা কান্ডজ্ঞাশূন্য অনুভূতিহীন ও কোনো কাজই করতে পারতো না।

অন্য কথায় স্নায়ুতন্ত্র ছাড়া কোনো মনোস্তাত্ত্বিক জীবন (psychological Life) থাকতো না।

নিউরন: স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক একক(Neurons: Primary Units of the Nervous System):

কম্পিউটার, টেলিফোন সিস্টেম এবং আরো অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি তার, মাইক্রাফোন, ট্রানজিস্টর এবং অন্য ইলেকট্রনিক উপাদানে তৈরি যেগুলো যেগুলো বিদ্যুৎ পরিবহন ও তড়ান্বিত করতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রও ঠিক একই রকম উপাদান দিয়ে তৈরি।

স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সতন্ত্র এককটি হলো স্নায়ুকোষ বা নিউরন।

১৯০০ সালে বিজ্ঞানী সান্তিয়াগো(Santiago) নিউরন আবিষ্কার করেন। তার সময় থেকেই স্নায়ুতন্ত্র গঠনের এই উপাদানের বহু গবেষণা হয়ে আসছে।

নিউরনের অংশ (Parts of Neurons):

নিউরন আকারে সর্বনিম্ন এক মিলিমিটারেরও কম হতে সর্বোচ্চ এক মিটরের বেশিও দৈর্ঘ্যর হয়ে থাকে কিন্তু সকল নিউরনকেই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়ে থাকেঃ

নিউরনের অংশ (Parts of Neurons)
চিত্রঃ নিউরনের অংশ – Parts of Neurons (Biological Foundations of Behavior)
  1. কোষ দেহ (The cell body): নিউক্লিয়াস, প্লাজমামেমব্রেন, সাইটোপ্লাজম নিয়ে গঠিত নিউরনের গোলাকার বা ডিম্বাকার অংশটির নাম কোষদেহ। কোষদেহ উক্ত উপাদান সংরক্ষন করে রাখার জন্য ও কোষের জন্য পুষ্টিও ধারন করে।
  2. ডেনড্রাইট(Dendrites): কোষদেহ থেকে যে শাখা বের হয় এবং অন্য নিউরন থেকে যেটি বার্তা গ্রহন করে থাকে; তাকে ডেনড্রাইট বলে।
  3. অ্যাক্সন(Axons): কোষদেহ থেকে উৎপন্ন খানিকটা লম্বা তন্তুুর মতো অংশটির নাম অ্যক্সন। এই অ্যাক্সনের চারিদিকে যে পাতলা আবরন থাকে তাকে বলে নিউরিলেমা। এই অ্যাক্সননিউরিলেমার ঠিক মাঝখানে একটি স্তর থাকে, যাকে বলা হয় মায়েলিন(Myelin)! অ্যক্সনের শেষ মাথা, শাখায় অ্যাক্সন টার্মিনালে বিভক্ত হয়ে যায়। এই টার্মিনালগুলো দিয়েই সিন্যাপস্ দ্বারা অন্য নিউরনের ডেন্ড্র্রাইটে স্নায়ু তাড়না বা বার্তা পাঠানো হয়।

নিউরন একত্রে বাচ্চাদের খেলনার মতো এক জটিল বিশাল নিয়ন্ত্রন সিস্টেম তৈরি করে। মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ১০০ লক্ষ কোটি নিউরন নিয়ে গঠিত! যা প্রায় আমাদের গ্যালাক্সির সব তারার সংখ্যার থেকেও অধিক।

প্রত্যক নিউরন ১,০০০ বার থেকে ১০,০০০ বার পর্যন্ত অন্য নিউরনের সাথে বার্তা গ্রহন বা প্রেরন করতে পারে। বলা হয়ে থাকে আমাদের দেহে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নিউরনের সংযোগ রয়েছে।

এই সংখ্যাটি প্রধান বিষয় নয় গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো যে নিউরন শক্তিশালী যোগাযোগের অন্তর্জাল তৈরির মাধ্যমে আমাদের বানিয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ।

আমাদের বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে নিউরন(neuron) আর nerve বা স্নায়ু এক নয়। এটা অনেকেই ভুল করে।

আসলে একটা স্নায়ু (nerve) হলো অসংখ্য বা কখনো হাজার হাজার নিউরনে(neurons) একটি গুচ্ছ।

Leave a Comment