Research methods in Psychology Bangla গবেষনা পদ্ধতি ৩য় পর্ব ২য় অধ্যায়ের ১নং ক্লাসে আমরা যে যে বিষয় আলোচনা করেছি তা হলোঃ
- ভূমিকা (Prologue)
- গবেষণার মূল ধারণা (Basic Concepts of Research)
- পরীক্ষামূলক প্রমান এবং কার্যকরী সংজ্ঞা (Empirical Evidence and Operational Definition)
- তত্ত্ব ও অনুমিতি (Theories and Hypotheses)
- গবেষণা পদ্ধতি (Research Methods)
- বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Studies)
- জরিপ পদ্ধতি (Survey Method)
- স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ (Naturalistic Observation)
- চিকিৎসাত্মক পদ্ধতি (Clinical Method)
- পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Studies)
- আনুষ্ঠানিক পরিক্ষা (Formal Experiments)
- আনুষ্ঠানিক পরিক্ষার উপাদান ও যুক্তি (Elements and Logic of Formal Experiments)
ভূমিকা (Prologue)
সকল বিজ্ঞানীরাই মনে করেন যে আমাদের প্রকৃতি নিয়মতান্ত্রিক এবং সুশৃঙ্খল। যদি জর্তিবীদরা ধরে নিতো যে মহাশূণ্যে গ্রহগুলো লক্ষ্যহীন এবং এলোমেলো ভাবে রয়েছে তবে তারা গ্রহের কক্ষপথ গবেষণার খুবই সামান্য উপায় পেতো। মানুষের বেলাতেও তা সমান ভাবে প্রযোজ্য।
মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মনে করা হয় মানুষের আচরণ কিছুটা হলেও আন্দাজ বা অনুমান করা যায়! যদিও আমরা প্রায়শই স্বাভাবিক নিয়মের অধীনে না থেকে, নিজেরা যা করতে পছন্দ করি তাই করতে নিজেকে সক্ষম ভাবি।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে; আমাদের ধারণার চেয়ে আমাদের আচরণ অনেক সুশৃঙ্খল এবং অনুমান যোগ্য।
Research methods in Psychology এই অধ্যয়ে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে মনোবিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মানুষের আচরণ এবং মানসিক প্রক্রিয়ার গবেষণা করে থাকেন।
এ বৈজ্ঞনিক পদ্ধতিতে ২ ধরনের পরিক্ষা পদ্ধতি – বর্ণনামূলক পদ্ধতি এবং আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি এবং কিছু নির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করা হয় যেগুলো গবেষকরা প্রয়োগ করে থাকেন।
গবেষণার মূল ধারণা (Basic Concepts of Research)
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল ভিত্তি হলো নিয়মানুগ উপায়ে পর্যবেক্ষন করা প্রমানের (Evidence) নিয়মকানুন যথাযথ অনুসরণ এবং এই প্রমানের (Evidence) বিষয়ে জটিল ভাবে চিন্তা করা।
প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান হলো কাজকর্মে জটিল চিন্তাভাবনা।
মনোবিজ্ঞানীরা জানতে চায়- প্রমান কী? প্রমান (Evidence) কত ফলপ্রসূ? প্রমানের (Evidence) বিকল্প ব্যাখ্যা কি হতে পারে? পরবর্তীকে জানার কি দরকার? এই অধ্যয়ে, মনোবিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কতিপয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা হবে।
পরীক্ষামূলক প্রমান এবং কার্যকরী সংজ্ঞা (Empirical Evidence and Operational Definition)
অন্য বিজ্ঞানীদের মতো মনোবিজ্ঞনীরাও পরীক্ষামূলক প্রমান/ আলামত নিয়ে কাজ করেন। যা প্রকাশ্য পর্যবেক্ষনযোগ্য আচরনের আলামত/প্রমান! সকল বিজ্ঞানেই আলামত/প্রমান জনসাধারনের মতামতের পর্যবেক্ষন থেকে আসে যাতে অন্য বিজ্ঞানীরা যাচাই করে, পর্যবেক্ষনে নিশ্চিত হতে পারে। মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রকাশ্য আচারণ পর্যবেক্ষন করা হয় এবং সেই পর্যবেক্ষনগুলো ব্যবহার করে অপ্রকাশ্য (Private) মানসিক প্রক্রিয়া বোঝা যায়।
যখন বিজ্ঞানীরা তাদের পরিক্ষামূলক প্রমান/ আলামত বর্ণনা করে তখন তারা কার্যকরী সংজ্ঞা (Operational Definition) ব্যবহারে সতর্ক থাকে। এর মানে হলো যে তারা তাদের পর্যবেক্ষনগুলো কৃতকর্মের পরিমাপের (the operations of measurement) শর্তে ব্যবহার করে থাকে।
যদি একটা প্রকল্পিত উদাহরণ দেয়া যায় তবে এই ভাবমূলক বাক্যংশের অর্থ বোঝা যাবে।
যেমন মনোবিজ্ঞানীদের একটি দলকে শহরের বাসগুলোর মারাত্মক দূর্ঘটনার কারণ অনুষন্ধান (study) করতে বলা হলো।
এই কল্পিত অনুষন্ধানের একটি বিবৃতিতে কার্যকরী সংজ্ঞা (Operational Definition) ব্যবহার করা হয়েছে এবং অন্যটিতে ব্যবহার করা হয়নিঃ যেমন:
A. শিকাগো শহরের ৬০% বাস চালক দিনের বেলা, বাস চালানোর সময় ঘুমায়।
B. শিকাগো শহরের ৬০% বাস চালক “হ্যাঁ” বোধক জবাব দিয়েছিলো যখন তাদের প্রশ্ন করা হলো; “দিনের বেলা কি কখনো ঘুমাও, যখন বাস চালাও ?”
উপরের কোন বিবৃতিতে কার্যকরী সংজ্ঞা (Operational Definition) ব্যবহার করা হয়েছে? B বিবৃতিতে কার্যকরী সংজ্ঞা ব্যবহৃত হয়েছে।
কারণ B বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে দিনে ঘুমানোর পরিমাপের কাজের উল্লেখ রয়েছে কিন্তু A বিবৃতিতে তা উল্লেখ নেই।
এই বিষয়টা গুরুত্বর্পূণ কেনো? এটি কর্মে জটিল চিন্তার উদাহরণ। তাই এ বিষয়ে জানলে প্রমান/আলামতের গুন বিচার করা যাবে।
তত্ত্ব ও অনুমিতি (Theories and Hypotheses)
বিজ্ঞান তত্ত্ব নিয়ে কাজ করে করে, “সত্যি” নিয়ে নয়। বিজ্ঞানে তত্ত্ব হলো পর্যবেক্ষনের পরিক্ষামূলক বিশ্লেষন।
বিজ্ঞানের প্রদত্ত কোনো জ্ঞান সর্বদাই পরিক্ষামূলক কারন তত্ত্ব হলো সর্বদা পরির্বতনশীল বিষয়।
তাদের বারবার সংশোধন করা হয় কারণ বিজ্ঞানীরা তা প্রতিনিয়তই পরিক্ষা করেন।
একটি তত্ত্ব সেই তত্ত্বের ভবিষ্যৎ বাণীর উপর ভিত্তি করে পরিক্ষা করা হলে তাকে একটি অনুমিতি বা Hypotheses বলেএবং একটি গবেষণা চালিয়ে অনুমিতিটি (Hypotheses) যাচাই করা হয়।
উদাহরন দিয়ে বলা যায়, মনোবিজ্ঞানী টেরী মফিট ১৯৯৩ সালে একটি কিশোর অপরাধ সংঘটনের ঘটনা উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রকাশ করেন যে ব্যক্তিটি বয়ঃসন্ধির আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো, যে বয়ঃসন্ধি পর পর্যন্ত কোনো অপরাধই করেনি।
টেরি মফিটের এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আরেকটি কিশোর অপরাধের উপর গষেণা করে দেখা যায় উক্ত গবেষণারে সাথে মিলে যায়! যাইহোক, এর মানে এই না যা টেরি মফিটের তত্ত্ব বা গবেষণাটি একেবারে সত্যি! এমনও হতে পারে অন্যর করা গবেষণা উক্ত তত্ত্বের সাথে মিললোনা! যদি এমনটাই ঘটতো তবে টেরি মফিটের তত্ত্বটি সংশোধন অথবা বাতিল করতে হতো।
গবেষণা পদ্ধতি (Research Methods )
মনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন প্রকার গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার সুবিধা – অসুবিধা উভয়ই রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রত্যক পদ্ধতিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই এগুলো মনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন বিশেষত্বে ব্যবহার হয়।
যাইহোক,সকল গবেষণা পদ্ধতি (Research Methods ) নিয়মানুগ পর্যবেক্ষনের সম্পর্কের জটিল ভাবনার উপর নির্ভর করে।
বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Studies)
বর্ণনামূলক গবেষণা হলো সবচেয়ে সহজ বৈজ্ঞানিক গবেষণা! যাদের উপর গবেষনা করা হয় তাদের জীবনযাপন গবেষনায় জরিত থাকে যাতে তাদের আচরন এবং মানসিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করা যায়।
দোকানে জিনিস কেনার সময় তাদের লক্ষ করা হয় সাইকোথেরাপি দেয়ার সময় তাদের কথা শোনা হয় এবং আরো বিভিন্ন ভাবে তাদের পর্যবেক্ষন করা হয়।
বর্তমানে মনোবিজ্ঞানে ৩ প্রকার বর্ণনামূলক গবেষণা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
যেমন:
১) জরিপ পদ্ধতি
২) স্বাভাবিক পর্যবেক্ষন পদ্ধতি
৩) চিকিৎসাত্মক পদ্ধতি
জরিপ পদ্ধতি (Survey Method)
লোকজনকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে মানুষের আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা করার একটি সরাসরি সহজ পদ্ধতি হলো জরিপ পদ্ধতি (Survey Method).
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, কোমল পানীয়, রাজনৈতিক প্রার্থী, এরুপ আরো বিষয় সম্বন্ধে লোকজনের মতামত বর্ণনা করতে মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাপকভাবে জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ্ এর একটি গবেষক দল একটি জরিপ পরিচালনা করার মাধ্যমে, জরিপ পদ্ধতিতে চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত রাখে।
তারা মানুষের মেজাজের তারতম্য জানতে বেশ আগ্রহী ছিলো। তারা জানতে চেয়েছিলো বছরের কোন সময়টায় মানুষের মেজাজ বেশি খারাপ থাকে? তারা শীতকালে কী করে?
এই গবেষক দল মারিয়ানাল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত ৪১৬ ব্যক্তির উপর টেলিফোন করে জরিপ চালায়! তারা প্রত্যক বাসার একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের কাছে জানতে চায় যে, তারা বিগত শীতের বছরগুলোতে কোন মাসে বেশি কষ্টে ভোগেছেন? বেশিরভাগ লোকই জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারী মাসের কথা জানায়।
অল্প পরিমান লোক জানায় যে, নিম্ন তাপমাত্রা এবং দীর্ঘসময় ধরে সূর্যর আলো না পেলে তাদের মেজাজ অনেক খারাপ হয়! এই গবেষনার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সকল মানুষই শীতে দূর্ভোগ পোহান না।
যেমন অনেকেই শীতকালে অনেক সতেজ এবং আরাম অনুভব করেন। মানে এ গবেষণার দ্বারা বোঝা যায় যে বেশিরভাগ লোকই গরমকালের তুলনায় শীতে বেশি কষ্ট পান।
জরিপ পদ্ধতির সবচেয়ে প্রধান একটি সুবিধা হলো তুলনামূলক কম সময়ে অনেক তথ্যদি সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে জরিপ পদ্ধতির প্রধান অসুবিধাগুলো ৩ টি ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সেগুলো হলোঃ
১. জরিপের লোকদের অবশ্যই পক্ষপাতিতা ত্যাগ করে প্রতিনিধিত্ব মূলক হতে হবে। যেমন কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের জবাবে, একটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীর উত্তর এবং সাধারণ মানুষের উত্তরের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নতা থাকবে।
২. কাউকে যৌন বা মাদকের মতো সংবেদনশীল (sensitive) বিষয়ে প্রশ্ন করে বসলে সকলের কাছেই সর্বদা সৎ জবাব পাওয়া যাবেনা।
৩. জরিপটি যে উপায়/পদ্ধতিতে করা হয় জরিপ করার সে উপায়টিও জরিপের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
এগুলো বিবেচনা করে এ কথা বলা কখনোই ঠিক হবে না যে জরিপ পদ্ধতি মূল্যহীন। কেননা গবেষণার অন্যান্য পদ্ধতির ন্যায় জরিপ পদ্ধতিরও যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়।
স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ (Naturalistic Observation)
বাস্তবিক জীবনের ঘটনাকে সতর্কতার সহিত পর্যবেক্ষণ করাই হলো স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ (Naturalistic Observation).
বিজ্ঞানী জেনী গুডঅল (Jane Gooall) আফ্রিকার জঙ্গলে উল্লুক/বনমানুষের একটি দলকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।
তিনি অনেক দীর্ঘ সময় ধরে তাদের স্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলেন এবং তিনি যা যা দেখলেন তা সতর্কতার সাথে লিপিবদ্ধ করলেন।
যতক্ষন পর্যন্ত তিনি আলামতগুলো থেকে একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে না পৌছলেন ততক্ষন তিনি পর্যবেক্ষন করে গেলেন।
এই পদ্ধতির ব্যবহার কারে তিনি এবং তার সহকর্মীরা বুঝলেন যে মানুষের আচরনের সাথে উল্লুকদের আচরনের পুরো মিল রয়েছে।
তিনি আরো যা আবিষ্কার করলেন তা হলো উল্লুকরা অন্য উল্লুকদের হত্যাও করে ফেলে, যেমন গোপনে ওৎ পেতে থাকে আর সুযোগ পেলেই হত্যা করে।
এমনিভাবে মানুষের আচরনকে জানতে বা বুঝতেও স্বাভাবিক পর্যবেক্ষন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
যেমন আমরা অন্যদের অভিবাদন/সম্ভাষণ জানাতে যে ইঙ্গিত ব্যবহার করি সেই বিষয়ে গবেষনা করতে ১৯৬৮ সালে একজন জার্মান বিজ্ঞানী পর্যবেক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি দেখলেন যে হাসি, ঘাড় নাড়ানো, চোখের ভ্রূ কুঁচকানো, সংকেত/অভিবাদন মূলক আচারনগুলো বিশ্বের বিভিন্ন সমাজেই বিদ্যামান।
পরিশেষে বলা যায় স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি গবেষনার যথাযথ এক পদ্ধতি।
চিকিৎসাত্মক পদ্ধতি (Clinical Method)
চিকিৎসাত্মক পদ্ধতি স্বাভাবিক পর্যবেক্ষনের এক গুরুত্বপূর্ণ রুপান্তর। মানসিক/মনোঃস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পরে কোনো মানুষ যখন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর নিকট যায়, তখন তাদের পর্যবেক্ষন করা হয়।
যেমন মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড বহু বছর ধরে তার নিকট আসা রোগীদের উপর গবেষনা করেন।
এভাবে তিনি গবেষনায় উন্নতি সাধন করেন। সুতরাং বলা যায় চিকিৎসাত্মক পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ এক পদ্ধতি।
পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Studies):
দুটি পর্যবেক্ষনের মধ্যে প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা অনুষন্ধান করা পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত (Correlational Studies) পদ্ধতির লক্ষ্য।
পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত পদ্ধতিকে ভালো ভাবে বুঝতে, উদাহরন হিসেবে কিশোর ও ছোট বাচ্চাদের উপর মিডিয়া জগতের কুফলের সম্ভাব্য কারনগুলো দেখানো যেতে পারে।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, সিনেমা, ভয়ংকর ইলেক্ট্রনিক গেম সমূহ বাচ্চাদের সহিংসতায় জরিত করে কিনা এ বিষয়ে বিগত ২৫ বছর ধরে বিজ্ঞানী এবং রাজনীতিবীদদের মাঝে বিতর্ক হয়ে আসছে; “মিডিয়ায় সহিংসতা দেখে কি বাচ্চারাও নিজেদের সহিংস করে তোলে?”
ভার্জিনিয়া টেকের যে ছাত্রটি ২০০৭ সালে ৩২ জনকে হত্যা করেছিলো তার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে সে মারাত্মক সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেম খেলতো।
তাহলে এটাই কি তাকে হিংস্র করে তুলেছিলো?
অনেক মনোবিজ্ঞানীরাই মনে করেন অধিক পরিমানে সহিংসতামূলক জিনিস মিডিয়ায় দেখার ফলে ২০ শতকে বাচ্চাদের মাঝে সহিংসতামূলক অপরাধের পরিমান বেড়ে গিয়েছিলো।
আনুষ্ঠানিক পরিক্ষা (Formal Experiments):
আনুষ্ঠানিক পরীক্ষাগুলি মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্যগুলি বোঝার এবং আচরণকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। কেননা এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সতর্কতার সাথে একটি পরিক্ষা পরিচালনা করে কার্য ও কারন সম্পর্কের ফলাফল বের করতে গবেষকদের সাহায্য করে! এই আনুষ্ঠানিক পরিক্ষা পদ্ধতিতে কারো আচরণকে গবেষকরা নিজেদের তৈরি করা শর্তের সাথে তুলনা করেন।
যেমন উদাহরণ দিয়ে বলা যায় 30 বছরেরও বেশি আগে মনোবিজ্ঞনী জিন পিয়েরে লায়ানস (Jean Pierre Leyans) হিংস্র চলচ্চিত্র দেখা কিশোরদের আচরণের প্রভাবের উপর আনুষ্ঠনিক পরিক্ষা চালান! কিশোর আপরাধ করার কারণে যে বালকেরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো তাদের আটক রেখে গবেষনায় অংশ গ্রহন করানো হয়।
অর্ধেক বালকদের সহিংসমূলক মারামরির সিনেমা দেখানো হয় এবং বাকি অর্ধেক বালকদের প্রকৃতি নিয়ে নির্মিত ভালো সিনেমা দেখানো হয়।
পর্যবেক্ষকরা দিনে দুইবার করে বালকদের ভাষাগত এবং শারিরীক আচরণগত আগ্রাসন পর্যবেক্ষন করতে থাকেন।
এভাবে ২ সপ্তাহ চলার পরে দেখা গেলো যেসকল বালকদের সহিংসমূলক মারামরির সিনেমা দেখানো হয়েছিলো তারা অন্যদের চেয়ে বেশি পরিমানে ভাষাগত এবং শারিরীক আচরণগত হিংস্রতা/সহিংসতা দেখাচ্ছে।
পরবর্তীতে, ওয়েন্ডি জোসেফসন (Wendy Josephson) ১৯৮৭ সালে বাচ্চাদের মনে মিডিয়ার প্রভাব পরার উপর একই রকম আনুষ্ঠানিক পরিক্ষা চালান।
এই ক্ষেত্রে তিনি ৬ থেকে ৮ বছর বয়সের ৪০০ জন বালক নেন যাদের কেউই কখনো কোনো কিশোর আপরাধমূলক কোনো আপরাধ সংঘটিত করেনি।
গবেষণায়, নিয়মিত ফ্লোর হকি খেলার আগে, বালকদের সিনেমা দেখানো হয়।
অর্ধেক বালকদের দেখানো হলো মারাত্মক সহিংসমূলক সিনেমা/ফিল্ম যেখানে দেখানো হয় একজন পুলিশ অফিসার প্রতিহিংসার কারনে অন্য পুলিশ অফিসার ও তার দোষরদের কাছে মার ও গুলি খেয়ে মারা গেলো।
বাকি অর্ধেক বালকদের ভালো অহিংসামূলক সিনেমা দেখানো হলো।
এরপরে বালকদের দুটি দলকে হকি খেলতে দেয় হলো এবং কোন বালক দল কোন ধরনের সিনেমা দেখেছে এটা জানেনা এমন একজন পর্যবেক্ষকে, পর্যবেক্ষন করতে বলা হলো।
গবেষনার ফলাফল:
জিন পিয়েরে লায়ানস এর গবেষনার মতোই, ভালো সিনেমা দেখা বালকদের চেয়ে মারামারির সিনেমা দেখা বালকদের আচরনে বেশি উগ্রতা দেখা গেলো।
জিন পিয়েরে লায়ানস এবং ওয়েন্ডি জোসেফসনের গবেষনার অনুরুপ ফলাফল আসে।
এই আনুষ্ঠানিক পরিক্ষাগুলো (Formal Experiments) মিডিয়ায় দেখা অপরাধের কারনে বাস্তব জীবনে অপরাধ করার কারনকে সমর্থন করে! অধিকাংশ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাই অনেক বেশি মিডিয়ায় অপরাধমূলক জিনিস দেখে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই কোনোই অপরাধ করে না।
যদি মিডিয়ার অপরাধ বাস্তব জীবনের অপরাধের কারন হয় তবে তারা কেনো অপরাধ করছে না?
উপরের দুটি পরিক্ষাটিতেই বালকদের দুটি দল করা হয়েছ দুটি দলের মধ্যে অপরাধমূলক সিনমা দেখা বালকদের মধ্যে বেশি উগ্রতা দেখ গেছে। মিডিয়ার অপরাধ তাদেরকেই বেশি উগ্র করে তোলে যারা বেশি শক্তিশালী। মিডিয়ার অপরাধ সবার উপরে সমানভাবে প্রভাব ফেলে না।
বরং মিডিয়ার অপরাধ তার উপরই প্রবল প্রভাব ফেলে ইতিমধ্যেই অপরাধ করার প্রবণতা যার আছে।
আনুষ্ঠানিক পরিক্ষার উপাদান ও যুক্তি (Elements and Logic of Formal Experiments):
প্রত্যক আনুষ্ঠানিক পরিক্ষার অন্ততপক্ষে ২টি চলক (variable) থাকে-
১. স্বাধীন(independent)
২. অধীন(dependent).
স্বাধীন চলকে গবেষকরা আলাদা শর্তের অধীনে অংশগ্রহণকারীদের আচরন তুলনা করে থাকেন।
যেমন; উপরে বর্ণিত মিডিয়া অপরাধের দুটি পরিক্ষা স্বাধীন চলকের উদাহরণ।
অধীন চলক হলো নির্দিষ্ট আচরণের আগ্রহের পরিমাপ, যার স্বাধীন চলকের সাথে সম্পর্ক থাকতেও পারে নাও পারে।
উপরের উদাহরণে, বালকদের করা উগ্র আচরনের পরিমানই হলো অধীন(dependent) চলক।