সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার (স্বর ব্যঞ্জন বিসর্গ সন্ধি ২০০+ উদাহরণ)

প্রিয় পাঠক, আমরা আজ সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার ও কি কি তা নিয়ে বিস্তাররিত আলোচনা করবো। এর পাশাপাশি সন্ধির সকল নিয়ম উদাহরণ সহ তুলে ধরব।

সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার ও কি কি তা আলোচনার পাশাপাশ ২০০+ উদাহরণ দিয়েছি। এই উদাহরণ থেকে প্রতিবছর Bank, BCS সহ বিভিন্ন চাকরি পরিক্ষায় প্রশ্ন আসতে দেখি।

সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার ও কি কি:

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সন্ধি কত প্রকার ? এর উত্তর হবে ২ প্রকার। ১ নং হলো বাংলা সন্ধি এবং ২ নং হলো তৎসম বা সংস্কৃত সন্ধি।

আবার যদি প্রশ্ন করা হয় যে, বাংলা সন্ধি কত প্রকার ? তাহলেও উত্তর হবে ২ প্রকার। ১নং হলো স্বরসন্ধি এবং ২নং ব্যঞ্জনসন্ধি।

এরপরে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তৎসম (সংস্কৃত) সন্ধি কত প্রকার, তাহলে উত্তর হবে, ৩ প্রকার। এগুলো হলো:
১। স্বরসন্ধি
২। ব্যঞ্জন সন্ধি
৩। বিসর্গ সন্ধি

অনেক ব্যাকরণে সন্ধি বলতে মূলত এই ৩ প্রকারে তৎসম সন্ধিকে বুঝানো হয়।

তবে, নবম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ (২০১৮,পৃ: ৩৪) অনুযায়ী বাংলা সন্ধি ২ প্রকার এবং তৎসম বা সংস্কৃত সন্ধি ৩ প্রকার বলা রয়েছে।

চাকরি সহ সকল পরিক্ষায় নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। নিচে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির কিছু উদাহরণ পড়ুন।

আমরা, সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার এটা জানলাম। এবার চলুন, সন্ধি বিচ্ছেদ কাকে বলে তার সংঙ্গা, সন্ধি বিচ্ছেদ করার সকল নিয়ম উদাহরণ সহ আলোচনা করি।

সন্ধি কাকে বলে:

নবম শ্রেণির বাংলা ব্যকরণের সংঙ্গা অনুযায়ী, ২টি সন্নিহিত ধ্বনির মিলনের নাম হলো সন্ধি।

সহজ ভাষায় বলতে পারি, সন্ধির মাধ্যমে ২টি ধ্বনির মিলন ঘটে। যেমন: হিম + আলয় = হিমালয়।

সন্ধির উদ্দেশ্য কয়টি ও কি কি:

সন্ধি করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ২টি। এগুলো হলো:
১। স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা এবং
২। ধ্বনির মাধুর্য সম্পাদন করা।

সহজ কথায় সন্ধি উচ্চারণকে সহজ করে। ধ্বনির মাধুর্যতা বৃদ্ধি করে। এজন্য শব্দ শুনতেও ভালো লাগে।

আর তাই, যে ক্ষেত্রে সন্ধি করলেও, ধ্বনির মাধুর্যতা রক্ষা হয় না কিংবা শুনতে শ্রুতিমধুর হয় না, সেক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই।

যেমন: কচু+আদা+আলু = কচ্চাদালু, হয় না। এটা সন্ধি করা হয় না, কারণ এখানে শ্রুতিমাধুর্যতা রক্ষা হচ্ছে না।

সন্ধি বিচ্ছেদ কাকে বলে:

সন্ধি বিচ্ছেদ আসলে সন্ধির বিপরীত প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সন্ধি জাত শব্দকে ভাঙ্গার প্রক্রিয়াকে আমরা সন্ধি বিচ্ছেদ বলতে পারি।

সমাসের ব্যাস বাক্যের সাথে আমরা সন্ধি বিচ্ছেদের তুলনা করেত পারি। সন্ধি বিচ্ছেদের মাধ্যমে একটি শব্দকে ভাঙা হয়।

যেমন: “হিমালয়” শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ করতে বললে, আমাদের লিখতে হবে, হিমালয় = হিম + আলয়।

২ প্রকার বাংলা সন্ধির সকল নিয়ম:

(ক) বাংলা স্বরসন্ধি:
স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে বলা হয় স্বরসন্ধি। এই স্বরসন্ধির সকল নিয়ম উদাহরণ সহ দেওয়া হলো।

সন্ধির ক্ষেত্রে যখন ২টি সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়, সেক্ষেত্রে:
১) অ + এ = এ (অ লোপ পেয়েছে) । যেমন: শত + এক = শতেক
২) আ + আ = আ (১টি আ লোপ) । যেমন: রুপা + আলি = রুপালি
৩) আ + উ = উ (আ লোপ) । যেমন: মিথ্যা + উক = মিথ্যুক
৪) ই + এ = ই (এ লোপ) । যেমন: কুড়ি + এক = কুড়িক

অবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাশাপাশি ২টি স্বরের শেষেরটি লোপ পায়। যেমন, নিচের উদাহরণটি লক্ষ্য করি: যা + ইচ্ছা + তাই = যাচ্ছেতাই।

(খ) বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি:

স্বরে আর ব্যঞ্জনধ্বনিতে অথবা ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে যে ধরনের সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে।

এই ধরনের বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি সমীভবনের নিয়ম অনুসরনে হয়ে থাকে। আর এগুলো কথ্যরীতিতে সিমাবদ্ধ।

১) ১ম ধ্বনি অঘোষ ধ্বনি হলে, আর পরবর্তী ধ্বনি ঘোষ হলে, দুটি মিলে ঘোষ ধ্বনি দিত্ব হয়ে থাকে। অর্থাৎ উভয়ে ঘোষ ধ্বনিতে পরিনত হয়। যেমন: ছোট + দা = ছোড়দা

২) হলন্ত র্ যদি অন্য ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকে, তাহলে র্ লোপ পেয়ে, পরের ধ্বনি দিত্ব হয়। যেমন: আর্ + না = আন্না। ধর্ + না = ধন্না।

৩) চ বর্গীয় ধ্বনির আগে কখনো ত বর্গীয় ধ্বনি আসলে, ত বর্গীয় ধ্বনি লোপ পায় এবং চ বর্গীয় ধ্বনি দিত্ব হয়। যেমন: বদ্ + জাত = বজ্জাত।

৪) প এর পরে চ আর স এর পরে ত আসলে, চ ও ত এর স্থানে শ হয়। যেমন: পাঁ + শ = পাঁশ্শ। সা + শ = সাশ্শ।

৫) হলন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে, সেই স্বরের লোপ হয় না। যেমন: বোন + আই = বোনাই। তিন + এক = তিনেক।

৬) স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি আসলে, স্বরের লোপ ঘটে। যেমন: ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড়।

প্রিয় পাঠক, আমরা এতোক্ষণ বাংলা সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার ও কি কি তা জানলাম। এখন আমরা ৩ প্রকার তৎসম সন্ধি নিয়ে আলোচনা করব।

৩ প্রকার তৎসম সন্ধির সকল নিয়ম:

বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ অপরিবর্তনীয় অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হলো তৎসম শব্দ। এই তৎসম সন্ধি ৩ প্রকার। নিচে তা আলোচনা করা হলো।

(ক) তৎসম স্বরসন্ধি:

(১) অ-কার বা আ-কারের পরে অ বা আ থাকলে, উভয়ে মিলে আ হয়ে যায়। যেমন:

অ+অ = আ, উদাহরণ: নর + অধম = নরাধম
অ+আ = আ, উদাহরণ: হিম + আলয় = হিমালয়

(২) অ বা আ কারের পরে, ই বা ঈ কার থাকলে উভয়ে মিলে এ কার হয়। যেমন:

অ+ই = এ, উদাহরণ: শুভ + ইচ্ছা =শুভেচ্ছা
আ+ই = এ, উদাহরণ: যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট

(৩) অ বা আ কারের পরে উ বা ঊ কার থাকলে উভয়ে মিলে ও কার হয়। যেমন:

অ+উ = ও, উদাহরণ: সূর্য+উদয় = সূর্যোদয়

(৪) অ বা আ কারের পরে ঋ কার থাকলে, উভয়ে মিলে অর হয় এবং যা রেফ আকারে প্রকাশ পায়। যেমন:

অ+ঋ = অর্, উদাহরণ: দেব + ঋষি = দেবর্ষি

(৫) অ বা আ এর পরে ঋত থাকলে উভয়ে মিলে আর হয়। যেমন:
শীত+ঋত = শীতার্ত

(৬) অ বা আ কারের পরে এ বা ঐ কার থাকেল উভয়ে মিললে ঐ কার হয়। যেমন: জন + এক = জনৈক।

(৭) অ বা আ কারের পরে ও বা ঔ কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ কার হয়। যেমন: বন + ওষধি = বনৌষধি।

(৮) ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ হয়।
যেমন: অতি+ইত=অতীত

(৯) ই বা ঈ কারের পরে ই বা ঈ কার ছাড়া অন্য স্বর থাকলে, উভয়ে মিলে য-ফলা হয়। যেমন: অতি+অন্ত = অত্যন্ত

(১০) উ/ঊ + উ/ঊ = ঊ কার হয়। যেমন: মরু+উদ্যান = মরুদ্যান

(১১) উ/ঊ কারের পরে উ/ঊ ছাড়া অন্য স্বর থাকলে উভয়ে ব-ফলা হয়। যেমন: সু+আগত=স্বাগত

(১২) ঋ কারের পরে ঋ ছাড়া অন্য স্বর থাকেল র হয় ও র-ফলা পূর্বের ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন: পিতৃ+আলয়=পিত্রালয়

(১৩) এ ঐ ও ঔ কারের পর এ ঐ ও ঐ স্থানে যথাক্রমে অয়, আয়, অব, আব হয়। যেমন: নে+অন = নয়ন।

(১৪) নিয়ম ছাড়াও সন্ধি হয়। যেমন: কুল+অটা=কুলটা

(খ) তৎসম ব্যঞ্জনসন্ধি:

স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে ও স্বরে বা ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যাকরণের ভাষায় বলা হয় ব্যঞ্জনসন্ধি।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যঞ্জনসন্ধিকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
১) ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
২) স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
৩) ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

আমরা এখন এই সন্ধির সকল নিয়ম উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করবো।

*ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি*
ক, চ, ট, ত, প এর পরে যদি স্বধ্বনি থাকে, তাহলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়। যেমন: ক্ + অ = গ হবে, উদাহরণ: দিক্ + অন্ত = দিগন্ত

*স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি*
স্বরধ্বনির পরে ছ থাকলে সেইখানে চ্ছ হয়। যেমন: এক + ছত্র = একচ্ছত্র। কথা + ছলে = কথাচ্ছলে।

*ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি*

(১)ত্ ও দ্ এর পরে চ্ ও ছ্ থাকলে, ত্ ও দ্ এর স্থানে চ হবে। যেমন:
সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ

(২)
ত্ ও দ্ এর পরে জ্ ও ঝ্ থাকলে, ত্ ও দ্ এর স্থানে জ্ হবে। যেমন:
সৎ+জন = সজ্জন
বিপদ+জাল = বিপজ্জাল ইত্যাদি।

(৩)
ত্ ও দ্ এর পরে শ্ থাকলে, ত্ ও দ্ এর স্থানে চ্ হবে এবং শ্ এর স্থানে ছ হবে। যেমন: উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস।

(৪)
ত্ ও দ্ এর পরে ড্ থাকলে, ত্ ও দ্ এর স্থানে ড্ হবে। যেমন: উৎ+ডীন = উড্ডীন।

(৫)
ত্ ও দ্ এর পরে হ থাকলে, ত্ ও দ্ এর স্থানে দ্ হবে এবং হ্ এর স্থানে ধ্ হবে। যেমন: উৎ+হার = উদ্ধার।

(৬)
ত্ ও দ্ এর পরে ল্ থাকলে ত্ এবং দ্ এর স্থানে ল্ উচ্চারিত হবে। যেমন: উৎ+লাস = উল্লাস।

(৭)
ক্+দ=গ্+দ হবে। যেমন: বাক্+দান=বাগদান
ট্+য=ড়্+য হবে। যেমন: ষট্+যন্ত্র=ষড়যন্ত্র
ত্+ঘ=দ্+ঘ হবে। যেমন: উৎ+ঘাটন=উদঘাটন
ত্+য=দ্+য হবে। যেমন: উৎ+যোগ=উদ্যোগ
ত্+ব=দ্+ব হবে। যেমন: উৎ+বন্ধন=উদ্বন্ধন
ত্+র=দ্+র হবে। যেমন: তৎ+রুপ=তদ্রুপ

(৮)
ঙ ঞ ণ ন ম পরে থাকলে পূর্ববর্তী অঘোষ অল্পপ্রাণ স্পর্শধ্বনি সেই বর্গীয় ঘোষ স্পর্শধ্বনি কিংবা নাসিক্যধ্বনি হয়। যেমন:
দিক্+নির্ণয় = দিগ্‌নির্ণয় বা দিঙ্‌নির্ণয়
তৎ+মধ্যে = তদ্‌মধ্যে বা তন্মধ্যে

(৯)
ম্ এর পরে যে কোনো বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিক্য ধ্বনি হয়। যেমন: শম্+কা = শঙ্কা।

(১০)
ম্ এর পরে অন্তঃস্থ ধ্বনি য র ল ব শ ষ স হ থাকলে, ম এর স্থানে ং হয়। যেমন: সম্+বাদ=সংবাদ।

(১১)
চ্ ও জ্ এর পরে নাসিক্য ধ্বনি তালব্য হয়। যেমন: রাজ+নী=রাজ্ঞী।

(১২) দ্ ও ধ্ এর পরে, ক চ ট ত প খ ছ ঠ থ ফ থাকলে, দ্ এবং ধ্ এর স্থানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হবে। যেমন: দ্ > ত্
উদাহরণ: তদ্+কাল=তৎকাল।

(১৩)
ষ্ এর পরে ত্ বা থ থাকলে, ত্ ও থ্ স্থানে ট ও ঠ হবে। যেমন: কৃষ্+তি=কৃষ্টি

(গ) তৎসম বিসর্গ সন্ধি:

সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে পদের শেষের র্ ও স্ অনেক ক্ষেত্রে অঘোষ উষ্ম ধ্বনি হয় বা হ ধ্বনি হিসেবে উচ্চারণ হয় এবং সেটি বিসর্গ (ঃ) হিসেবে লেখা হয়।

র্ ও স্ বিসর্গ ব্যঞ্জনধ্বনিমালার অন্তর্গত বলে মনে করা হয়। আর এই কারনে ব্যাকরণবিধগণ এই বিসর্গ সন্ধিকে ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্ভূক্ত বলে মনে করেছেন।

আসলে, এই বিসর্গ (ঃ) হচ্ছে র্ এবং স্ এর সংক্ষিপ্তরুপ। এজন্য বিসর্গকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: র্ জাত বিসর্গ ও স্ জাত বিসর্গ।

  • র্ জাত বিসর্গ: র্ স্থনে যে বিসর্গ হয়, তাকে র্ জাত বিসর্গ বলা হয়। যেমন: অন্তর > অন্তঃ
  • স্ জাত বিসর্গ: স্ স্থানে যে বিসর্গ হয়, তাকে স্ জাত বিসর্গ বলা হয়। যেমন: নমস্ > নমঃ

#তাহলে, বিসর্গের সাথে স্বধ্বনির বা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, ব্যাকরণের ভাষায় সেই সন্ধিকে বলা হয় বিসর্গ সন্ধি।

বিসর্গ সন্ধি মোট ২ প্রকার। এগুলো হলো:
(১) বিসর্গ + স্বরের সন্ধি: অ+ঃ+অ থাকলে সেখানে ও হয়। যেমন: ততঃ+অধিক = ততোধিক।

(২) বিসর্গ + ব্যঞ্জনের সন্ধি: যেমন: তপঃ+বন = তপোবন, পুনঃ + আয় = পুনরায়।

প্রিয় পাঠক, এতোক্ষণ আমরা সন্ধি বিচ্ছেদ কত প্রকার ও কি কি তা বিস্তারিত জানলাম। এবার চলুন কিছু উদাহরণ দেখি।

উদাহরণসহ কয়েক প্রকার সন্ধি বিচ্ছেদ:

সম্+ধি = সন্ধি
শত+এক = শতেক
কত+এক = কতেক
শাঁখা+আরি = শাঁখারি
রুপা+আলি = রুপালি
হিংসা+উক = হিংসুক
নিন্দা+উক = নিন্দুক
মিথ্যা+উক = মিথ্যুক
কুড়ি+এক = কুড়িক
ধনী+এক = ধনীক
গুটি+এক = গুটিক
আশি+এর = আশির
নদী+এর = নদীর
যা+ইচ্ছা+তাই = যাচ্ছেতাই
ছোট+দা = ছোড়দা
চার+টি = চাট্টি
দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
নাত+জামাই = নাজ্জামাই
বদ+জাত = বজ্জাত
পাঁচ+সিকা = পাঁশ্‌শিকা
চুন+আরি = চুনারি
তিল+এক = তিলেক
বার+এক = বারেক
তিন+এক = তিনেক
কাঁচা+কলা = কাঁচকলা
নাতি+বৌ = নাতবৌ
ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়
ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি
বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়
কারা + আগার = কারাগার
মহা+আশয় = মহাশয়
সদা+আনন্দ = সদানন্দ
যথা+অর্থ = যথার্থ
আশা+অতীত = আশাতীত
কথা+অমৃত = কথামৃত
মহা+অর্ঘ = মহার্ঘ
হিম+আলয় = হিমালয়
দেব+আলয় = দেবালয়
রত্ন+আকর = রত্নাকর
সিংহ+আসন = সিংহাসন
হিম+অচল = হিমাচল
নর+অধম = নরাধম
প্রাণ+অধিক = প্রাণাধিক
হস্ত+অন্তর = হস্তান্তর
হিত+অহিত = হিতাহিত
শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা
পরম+ঈশ = পরমেশ
যথা+ইষ্ট = যথেষ্ট
মহা+ঈশ = মহেশ
যথা+উচিত = যতোচিত

গৃহ+ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব
গঙ্গা+ঊর্মি = গঙ্গোর্মি
প্রশ্ন+উত্তর = প্রশ্নোত্তর
নীল+উৎপল = নীলোৎপল
যথা+উপযুক্ত = যথোপযুক্ত
হিত+উপদেশ = হিতোপদেশ
দেব+ঋষি = দেবর্ষি
মহা+ঋষি = মহর্ষি
সপ্ত+ঋষি = সপ্তর্ষি
রাজা+ঋষি = রাজর্ষি
ক্ষুধা+ঋত = ক্ষুধার্ত
ভয়+ঋত = ভয়ার্ত
শীত+ঋত = শীতার্ত
তৃঞ্চা+ঋত = তৃঞ্চার্ত
জন+এক = জনৈক
সদা+এব = সদৈব
মত+ঐক্য = মতৈক্য
মহা+ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য
বন+ওষধি = বনৌষধি
মহা+ওষধি = মহৌষধি
পরম+ঔষধ = পরমৌষধ
মহা+ঔষধ = মহৌষধ
অতি+ইত = অতীত
পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা
সতী+ইন্দ্র = সতীন্দ্র
অতি+অন্ত = অত্যন্ত
ইতি+আদি = ইত্যাদি
অতি+উক্তি = অত্যুক্তি
প্রতি+ঊষ = প্রত্যুষ
মসী+আধার = মস্যাধার
প্রতি+এক = প্রত্যেক
নদী+অম্বু = নদ্যম্বু
মরু+উদ্যাান = মরূদ্যান
বহু+ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব
বধূ+উৎসব = বধূৎসব
ভূ+ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব
সু+অল্প = স্বল্প
সু+আগত = স্বাগত
অনু+ইত = অন্বিত
তনু+ঈ = তন্বী
অনু+এষণ = অন্বেষণ
নে+অন = নয়ন
শে+অন = শয়ন
নৈ+অক = নায়ক
গৈ+অক = গায়ক
পো+অন = পবন
লো+অন = লবণ
পৌ+অক = পাবক
গো+আদি = গবাদি

পরিক্ষায় আসা সকল প্রকার সন্ধি বিচ্ছেদ:

পো+ইত্র = পবিত্র
নৌ+ইক = নাবিক
ভৌ+উক = ভাবুক
দিক্+অন্ত = দিগন্ত
ণিচ্+অন্ত = নিজন্ত
ষট্+আনন = ষড়ানন
তৎ+অবধি = তদবধি
সুপ্+অন্ত = সুবন্ত
এক+ছত্র = একচ্ছত্র
কথা+ছলে = কথাচ্ছলে
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ
বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া
বিপদ+চয় = বিপচ্চয়
সৎ+জন = সজ্জন
বিপদ+জাল = বিপজ্জাল
কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা
উৎ+শ্বাস = উচ্ছ্বাস
উৎ+ডীন = উড্ডীন
উৎ+হার = উদ্ধার
পদ্+হতি = পদ্ধতি
উৎ+লাস = উল্লাস
বাক্+দান = বাগদান
ষট্+যন্ত্র = ষড়যন্ত্র
উৎ+ঘাটন = উদ্‌ঘাটন
উৎ+যোগ = উদ্যোগ
উৎ+বন্ধন = উদ্বন্ধন
উৎ+স্থান = উত্থান
উৎ+স্থাপন = উত্থাপন
তৎ+রুপ = তদ্রুপ
দিক্‌ + নির্ণয় = দিগনির্ণয়
শম্+কা = শঙ্কা
সম্+চয় = সঞ্চয়
সম্+তাপ = সন্তাপ
সম্+গত = সংগত
অহম+কার = অহংকার
সম্+খ্যা = সংখ্যা
সম্+যম = সংযম
সম্+লাপ = সংলাপ
সম্+হার = সংহার
সম্+বাদ = সংবাদ
সম্+শয় = সংশয়
সম্+রক্ষণ = সংরক্ষণ
সম্+সার = সংসার
সম্+কৃত = সংস্কৃত
সম্+কার = সংস্কার
পরি+কার পরিষ্কার
রাজ+নী = রাজ্ঞী
যজ্+ন = যজ্ঞ
তদ্+কাল = তৎকাল
ক্ষুদ্+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা
বিপদ্+সংকুল = বিপৎসংকুল
ষষ্+থ = ষষ্ঠ
কৃষ্+তি = কৃষ্টি

বিশেষ প্রকার সন্ধি বিচ্ছেদ:

কুল+অটা = কুলটা
গো+অক্ষ = গবাক্ষ
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ়
অন্য+অন্য = অন্যান্য
মার্ত+অন্ড = মার্তন্ড
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন
বাচঃ+পতি = বাচস্পতি
ভাঃ+কর = ভাস্কর
অহঃ+নিশ = অহর্নিশ
অহঃ+অহ = অহরহ

সকল প্রকার বিসর্গ সন্ধি বিচ্ছেদ:

ততঃ+অধিক = ততোধিক
তিরঃ+ধান = তিরোধান
মনঃ+রম = মনোরম
তপঃ+বন = তপোবন
অন্তঃ+গত = অন্তর্গত
অন্তঃ+ধান = অন্তর্ধান
পুনঃ+আয় = পুনরায়
পুনঃ+উক্ত = পুনরুক্ত
অহঃ+অহ = অহরহ
নিঃ+আকার = নিরাকার
আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ
দুঃ+যোগ = দুর্যোগ
নিঃ+রব = নীরব
নিঃ+রস=নীরস
নিঃ+চয় = নিশ্চয়
শিরঃ+ছেদ = শিরোচ্ছেদ
ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুর
দুঃ+তর = দুস্তর
দুঃ+থ = দুস্থ
নমঃ+কার = নমস্কার
পদঃ+খলন = পদস্খল
নিঃ+কর = নিষ্কর
দুঃ+কর = দুষ্কর
প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া
নিঃ+স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ বা নিস্তব্ধ
দুঃ+স্থ = দুঃস্থ বা দুস্থ
নিঃ+স্পন্দ = নিঃস্পন্দ বা নিস্পন্দ

Leave a Comment