বাংলা ভাষারীতি সাধু চলিত ও কথ্য ভাষার সংঙ্গা পার্থক্য ইত্যাদি আলোচনা

বাংলা ভাষারীতি অনুযায়ী আমরা ভাষার ৩ ধরনের রুপ দেখতে পাই, এগুলো হলো সাধু ভাষা, চলিত ভাষা এবং কথ্য ভাষা।

আজকে আমরা ভাষা কি, ভাষা কিভাবে তৈরি হয় এবং কথ্য, সাধু ও চলিত ভাষার সংঙ্গা, পার্থক্য ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবো।

ভাষা কি ও কাকে বলে?

আমরা মানুষেরা নিজেদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন উপায় যেমন- আমাদের কণ্ঠধ্বনির কণ্ঠ এবং প্রয়োজন হলে হাত, পা সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ দিয়ে ইশারা করে থাকি।

ইঙ্গিত বা ইশারার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা অনেকটা কষ্টসাধ্য। এর তুলনায় আমরা কণ্ঠধ্বানির মাধ্যমে কথা বলে সহজে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি।

ফলে, কন্ঠধ্বনির মাধ্যমে কথা বলে মনের ভাব প্রকাশের বিষয়টিকেই আমরা প্রধানত ভাষা বলে মনে করে থাকি।

কণ্ঠধ্বনি বলতে- আমাদের মুখগহ্বর, নাসিকা ও নাসিকা গহ্বর, কন্ঠ বা কথা ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত হওয়া মানুষের জন্য বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনির সমষ্টিকে বোঝানো হয়।

এই সমস্ত ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান। আবার এই সকল ধ্বনির সৃষ্টি হয় আমাদের বাগযন্ত্রের দ্বারা। এখন প্রশ্ন হলো- বাগযন্ত্র আবার কি ?

বাগযন্ত্রে সংঙ্গাঃ গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দন্ত (দাঁত) নাসিকা সহ সকল প্রকার বাক প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বাগযন্ত্র বলা হয়।

ভাষার সংঙ্গাঃ বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মানের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে বলা হয় ভাষা।

বাংলা ভাষার সংঙ্গাঃ বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক বাংলা ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মানের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে বলা হয় ভাষা।

বাংলা ভাষারীতি অনুযায়ী কথ্য, সাধু ও চলিত ভাষাঃ

আমাদের বাংলা ভাষারীতি অনুযায়ী ভাষাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- এগুলো হলো: কথ্য ভাষা, সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা।

তবে, ভাষাকে ২ ভাগেও ভাগ করা যায়। ১। লৈখিক ভাষা। ২। মৌখিক ভাষা। এক্ষেত্রে চলিত ভাষা লৈখিক ও মৌখিক উভয় হিসেবে ব্যবহার হয়।

মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, সেটা হলো মৌখিক ভাষা। যেমন- মানুষ যখন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবে ,সেটা তার মৌখিক ভাষা।

আবার কেউ যখন- চলিত ভাষায় কথা বলে, সেটাকে আমরা মৌখিক ভাষা বলতে পারি।

চলিত ভাষা লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। যেমনটি সাধু ভাষাকে আমরা লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহার করি।

সুতরাং বাংলায়, চলিত ভাষাকে, একই সাথে লেখ্য বা লৈখিক ভাষা এবং মৌখিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১। বাংলা উপভাষা বা কথ্য ভাষারীতি:

আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা বিভিন্ন রকম। আবার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা অন্য অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে না।

যেমন- চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আঞ্চলিক ভাষা, রংপুর অঞ্চলের মানুষের পক্ষে বুঝতে পারা বেশ কঠিন।

অনুরুপভাবে, বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলের মানুষ নিজস্ব যে ভাষায় কথা বলে, তাকেই বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা, উপভাষা কিংবা কথ্য ভাষা।

উদাহরণ- পানি কে অনেক অঞ্চলে বলা হয় “হানি”।
ছেলে বা পুত্র সন্তানকে অনেক অঞ্চলে বলা হয়, “পুলা, পোলা, পুত, হুত, ছাওয়াল, গ্যাদা”।

২। বাংলা সাধু ভাষারীতি:

সাধু ভাষা হলো বাংলা লেখ্য বা লৈখিক ভাষার আদর্শ রুপ। বাংলাতে কথ্য, আঞ্চলিক বা মৌখিক হিসেবে সাধু ভাষা ব্যবহার হয় না।

বাংলায় সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্যঃ

  • সাধু ভাষা লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • বাংলা লেখ্য সাধু রীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে।
  • সাধু ভাষা পদবিন্যাস সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত।
  • এই সাধু ভাষারীতি গুরুগম্ভীর।
  • সাধু রীতির ভাষা তৎসম শব্দবহুল।
  • সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তার বক্তব্য প্রদানের অনুপযোগী।
  • এই সাধু রীতি অনুযায়ী সর্বনাম ও ক্রীয়াপদ এক বিশেষ গঠনপদ্ধতি মেনে চলে।
  • সাধু রীতির উদাহরণ- “তাহারা বলিল”।

৩। চলিত রীতির বৈশিষ্ট্য:

  • চলিত রীতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি পরিবর্তনশীল।
  • চলিত রীতি তদ্ভব শব্দবহুল।
  • এ চলিত রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য।
  • চলিত রীতি নাটকের সংলাপ, বক্তব্য ও আলাপ-আলোচনার জন্য উপযুক্ত।
  • চলিত রীতিতে ক্রিয়া ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত হয় এবং অন্যান্য পদেরও বিশেষ সহজ রুপ দেখা যায়।
  • উদাহরণ- “সে বললো”, “তারা চললো”।

সাধু ও চলিত রীতির কিছু পার্থক্য ও পদের নাম উল্লেখ্য করে নিচের ছকে দেয়া হলোঃ

চলিতসাধুপদ
মাথামস্তকবিশেষ্য পদ
জুতোজুতাবিশেষ্য পদ
তুলোতুলাবিশেষ্য পদ
শুকনোশুকনা/শুষ্কবিশেষ্য পদ
বুনোবন্যবিশেষ্য পদ
তাঁরাতাঁহারাসর্বনাম পদ
ওঁরাউঁহারাসর্বনাম পদ
তাকেতাহাকেসর্বনাম পদ
ওকেউহাকেসর্বনাম পদ
তারতাহারসর্বনাম পদ
করারকরিবারক্রিয়া পদ
পেয়েছিলেনপাইয়াছিলেনক্রিয়া পদ
হলেনহইলেনক্রিয়া পদ
এসেআসিয়াক্রিয়া পদ
হল/হলোহইলক্রিয়া পদ
দেখেদেখিয়াক্রিয়া পদ
করলেনকরিলেনক্রিয়া পদ
দেননিদেন নাইক্রিয়া পদ
পেরিয়েপার হইয়াক্রিয়া পদ
পড়লোপড়িলক্রিয়া পদ
করেকরিয়াক্রিয়া পদ
আগেইপূর্বেইঅব্যয় পদ
সাথে/সঙ্গেসহিতঅব্যয় পদ
সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য ছক

কিছু প্রশ্ন-উত্তর:

ভাষা কাকে বলে?

ভাষার সংঙ্গাঃ বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মানের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে বলা হয় ভাষা।

বাংলা ভাষা কাকে বলে?

বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক বাংলা ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মানের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে বলা হয় ভাষা।

বাংলা ভাষার প্রকারভেদ কেমন?

বাংলা ভাষাকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। ১। লৈখিক ভাষা। ২। মৌখিক ভাষা। এক্ষেত্রে চলিত ভাষা লৈখিক ও মৌখিক উভয় হিসেবে ব্যবহার হয়।
আবার সাধু, চলিত ও কথ্য এই মোট ৩ ভাগেও ভাষাকে ভাগ করা যায়।

Leave a Comment