শব্দ ও পদের গঠন পার্থক্য উদাহরণ সহ আলোচনা

আজকে আমরা বাংলা ব্যাকরণের শব্দ ও পদের গঠন নিয়ে আলোচনা করব।

এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে তৈরি শব্দের মূল অংশকে শব্দমূল বলা হয়। শব্দ মূলের অন্য নাম প্রকৃতি।

প্রকৃতি দুই ধরনের নাম, নামপ্রকৃতি ও ক্রীয়াপ্রকৃতি। এই ক্রীয়াপ্রকৃতির আরেকটি নাম রয়েছে। সে নামটি হল ধাতু।

নামপ্রকৃতি ও ধাতুর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়। নাম প্রকৃতির উদাহরণ: মা, গাছ, শির লতা ইত্যাদি।

ধাতুর উদাহরণ: কর্, যা, চল্, ধৃ, পট্ ইত্যাদি।

নাম প্রকৃতি ও ধাতুর সাথে যেসব শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় সেগুলোর নাম হলো: উপসর্গ ও প্রত্যয়।

উপসর্গ কাকে বলে: বাংলা ব্যাকরণের ভাষায় যেসব শব্দাংশ, শব্দ মূলের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সেগুলোকে উপসর্গ বলা হয়।

যেমন পরিচালক শব্দের পরি অংশ একটি উপসর্গ।

প্রত্যয় কাকে বলে: যেসব শব্দাংশ শব্দমূলের পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সেগুলোকে প্রত্যয় বলে।

যেমন সাংবাদিক শব্দের ইক অংশ একটি প্রত্যয়।

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম উপসর্গ শব্দমূলের পূর্বে বসে এবং প্রত্যয় শব্দমূলের শেষে বসে।

উপসর্গ ও প্রত্যয় দিয়ে তৈরি শব্দকে সাধিত শব্দ বলা হয়।

উপসর্গ ও প্রত্যয় ছাড়াও শব্দ গঠনের আরও কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রক্রিয়া হলো সমাস। যার মাধ্যমে একাধিক শব্দ এক শব্দে পরিণত তাকে সমাস বলে।

যেমন: হাট ও বাজার = হাটবাজার (সমাস এর উদাহরণ)

এছাড়াও কোনো শব্দের দ্বৈত ব্যবহারে নতুন শব্দ গঠিত হলে তাকে বলে শব্দদ্বিত্ব।। যেমন ঠক ও ঠক মিলে গঠিত হয় ঠকঠক।

একইভাবে অঙ্ক ও টঙ্ক উভয় মিলে গঠিত হয় অঙকটঙ্ক।

শব্দ যখন বাক্যের মধ্যে থাকে তখন তার নাম হয় পদ। অর্থৎ আমরা বলতে পারি যে বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যক শব্দকে এক একটি পদ বলা যায়।

পদে পরিণত হওয়ার সময়ে শব্দের সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত হয়। এগুলোর নাম লগ্নক। চার ধরনের লগ্নক রয়েছে। নিচে ৪ ধরণের লগ্নক আলোচনা করা হলো।

পদের গঠনে ৪ ধরনের লগ্নক:

এই ৪ ধরনের লগ্নক হলো:
১) বিভক্তি
২)নির্দেশক,
৩) বচন
৪) বলক।

(১) বিভক্তি কাকে বলে:
ক্রিয়ার কাল নির্দেশের জন্য এবং কারক বোঝাতে পদের সঙ্গে যেসব শব্দাংশ যুক্ত থাকে সেগুলোকে বিভক্তি বলে।

বিভক্তি দুই প্রকার। যথা: ক্রীড়াবিভক্তি ও কারক বিভক্তি

ক্রিয়া বিভক্তির উদাহরণ: করলাম ক্রিয়াপদের লাম শব্দাংশ হল ক্রীয়াবিভক্তি।

কারক বিভক্তির উদাহরণ: “কৃষকের” এই পদের এর শব্দাংশ কারক বিভক্তি।

(২) নির্দেশক কাকে বলে:
যে সব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদকে নির্দিষ্ট করে সেগুলোকে নির্দেশক বলে। যেমন লোকটি বা ভালটুকু পদের টি বা টুকু হলো নির্দেশক।

নির্দেশকের আরও উদাহরণ ,হল ,টিটা ,খানা ,খানি, টুকু, টুকুন ইত্যাদি।

(৩) বচন কাকে বলে:
যেসব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদের সংখ্যা বোঝায় সেগুলোকে বচন বলে। যেমন ছেলেরা, বইগুলো এই দুটি শব্দের রা এবং গুলো হলো বচনের উদাহরণ।

(৪) বলক কাকে বলে:
যেসব শব্দাংশ পদের সঙ্গে যুক্ত হলে বক্তার বক্তব্য জোরালো হয় সেগুলোকে বলক বলে। যেমন তখনি, এখনি, এখনও, ইত্যাদি শব্দে ই ও হলো বলকের উদাহরণ।

আমরা উপরে ৪ ধরণের লগ্নক এর সংঙ্গা উদারহণ সহ পড়লাম।

জেনে রাখা ভালো যে, বাক্যের যে সব পদে লগ্নক থাকে সেগুলোকে সংলগ্নক পদ বলা হয়। আর লগ্নক না থাকলে সেগুলোকে অলগ্নক পদ বলা হয়।

যেমন: মেয়েরা ফুটবল খেলে।
উক্ত বাক্যে “মেয়েরা” এবং “খেলে” সংলগ্নক পদ এবং “ফুটবল” হলো অলগ্নক পদ।

শব্দ ও পদের গঠন এর মধ্যে ৫টি পার্থক্য:

নিচের ছকে শব্দ ও পদের মধ্যেকার উল্লেখযোগ্য ৫টি পার্থক্য দিলাম।

শব্দপদ
১। প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব শব্দভান্ডার থাকে। যা কিনা সাধারণত অভিধানের মাধ্যমে সংকলন করা হয়।শব্দ যখন বাক্যে স্থান পায় তখন তার নাম হয় পদ। অর্থাৎ বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই এক একটি পদ।
২। অভিধানে শব্দগুলো বিচ্ছিন্ন ও পরস্পর সম্পর্কহীন ভাবে থাকে।বাক্যের মধ্যে পদগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকে।
৩। শব্দের অংশ হলো উপসর্গ ও প্রত্যয়।পদের অংশ হলো ৪টি। যথা: বিভক্তি, নির্দেশন, বচন বলক।
৪। গঠনগত দিক থেকে শব্দ ২ প্রকার। যথা: মূলশব্দ ও সাধিত শব্দ।গঠনগত ভাবে পদ ২ প্রকার। যথা: সংলগ্নক পদ ও অলগ্নক পদ।
৫। শব্দ শুধু মাত্র ব্যাকরণের রুপতত্ত্বের অলোচ্য বিষয়।পদ একই সাথে রুপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
(শব্দ ও পদের ৫টি পার্থক্যের টেবিল)

Leave a Comment