উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন ৫০+ উদাহরণ সহ

উপসর্গ দিয়ে বাংলা শব্দ গঠন বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

সরকারি চাকরি, স্কুল কলেজের পাবলিক পরিক্ষা সহ প্রায় সকল পরিক্ষায় উপসর্গ থেকে প্রশ্ন আসে।

৫০টির বেশি উদাহরণ সহ উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন করার উপায় ও নিয়ম বর্ণনা করব।

উপসর্গ কাকে বলে:

যেসব অর্থহীন শব্দাংশ অন্য শব্দের শুরুতে বসে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে ব্যাকরণের ভাষায় উপসর্গ বলা হয়।

নিচের কিছু উদাহরণ লক্ষ করুন:
অ + জানা = অজানা
অভি + যোগ = অভিযোগ
বে + তার = বেতার
বি + বাদ = বিবাদ

উপরের ৪টি উদাহরণে অ, অভি, বে, বি হলো উপসর্গ। এই উপসর্গ সমূহ মূল শব্দের শুরুতে বসেছে।

তবে, অনেক সময় কোনো শব্দের শুরুতে এক সাথে অনেকগুলো উপসর্গ একসাথে বসতে পারে।

যেমন:
সম্ + প্র + দান = সম্প্রদান
বি + নির্ + মান = বিনির্মান
উপরের সম্প্রদান ও বিনির্মান শব্দের শুরুতে ২টি করে উপসর্গ বসেছে।

উপসর্গের বৈশিষ্ট্য ও কাজ কি:

উপসর্গের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো উপসর্গের নিজস্ব অর্থ নেই। কিন্তু অর্থদ্যোতকতা বা দ্যোতনা রয়েছে।

অর্থাৎ উপসর্গের নিজের অর্থ না থাকলেও অন্য শব্দের পূর্বে বসার মাধ্যমে নতুন নতুন অর্থ তৈরি করতে পারে।

এছাড়াও উপসর্গ মূল শব্দের পূর্বে বসে, এটিও উপসর্গের একটি বৈশিষ্ট্য।

নতুন নতুন শব্দ তৈরি করার পাশাপাশি উপসর্গের আরেকটি কাজ হলো শব্দের অর্থ পরিবর্তন করা।

অর্থাৎ উপসর্গ ব্যবহার করার মাধ্যমে শব্দ সংকোচন, প্রসারণ বা সম্প্রসারণ, বিপরীত অর্থ প্রকাশ করতে পারে।

যেমন:
সু + নজর = সুনজর (অর্থের সংকোচন ঘটেছে)
সম্ + পূর্ণ = সম্পূর্ণ (অর্থের সম্প্রসারণ ঘটেছে)
গর্ + হাজির = গরহাজির (বিপরীত অর্থ তৈরি হয়েছে)

যাইহোক, বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের উপসর্গ রয়েছে। এগুলো হলো:
১) বাংলা উপসর্গ
২) তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
৩) বিদেশী উপসর্গ

বাংলা উপসর্গ:
বাংলা উপসর্গ মোট ২১টি। এগুণো হলো:

  • অঘা
  • অজ
  • অনা
  • আড়
  • আন
  • আব
  • ইতি
  • ঊন বা ঊনা
  • কদ
  • কু
  • নি
  • পাতি
  • বি
  • ভর
  • রাম
  • সা
  • সু
  • হা

তৎসম উপসর্গ:
তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ মোট ২০টি। এগুলো হলো:

  • প্র
  • পরা
  • অপ
  • সম
  • নি
  • অনু
  • অব
  • নির
  • দুর
  • বি
  • অধি
  • সু
  • উৎ
  • পরি
  • প্রতি
  • অতি
  • অপি
  • অভি
  • উপ

আ সু বি নি এই ৪টি উপসর্গ বাংলা এবং তৎসম উভয় ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। তবে বাংলা ও সংস্কৃত উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, যে শব্দটির সাথে উপসর্গ যুক্ত হয়, সেই শব্দটি বাংলা হলে উপসর্গটি হবে বাংলা উপসর্গ। আর সেই শব্দটি তৎসম বা সংস্কৃত হলে সে উপসর্গ হবে তৎসম উপসর্গ।

যেমন: আকাশ, সুনজর, বিনামা, নিলাজ এই ৪টি হলো বাংলা শব্দ। এজন্য এখানে ব্যবহৃত আ সু বি নি উপসর্গ ৪টি বাংলা উপসর্গ।

আকন্ঠ, সুতীক্ষ্ণ, বিপক্ষ ও নিদাঘ এই ৪টি শব্দ হল তৎসম শব্দ। এখানে ব্যবহৃত আ, সু, বি, নি হচ্ছে তৎসম উপসর্গ।

উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন করার উদাহরণ:

নিচের ছকে ২১টি খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন করে দেখানো হল:

ক্রমউপসর্গশব্দ গঠন করার উদাহরণব্যবহৃত অর্থ
অকেজো, অচেনা, অপয়ানিন্দিত অর্থে
অচিন, অজানা, অথৈঅভাব অর্থে
অঝোর, অঝোরেক্রমাগত অর্থে
অঘাঅঘারাম, অঘাচন্ডীবোকা অর্থে
অজঅজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুরমন্দ অর্থে বা
নিতান্ত অর্থে
অনাঅনাবৃষ্টি, অনাদরঅভাব অর্থে
অনাছিষ্টি, অনাচারছাড়া অর্থে
অনামুখোঅশুভ অর্থে
আকাঁড়া, আধোয়া, আলুনিঅভাব অর্থে
আকাঠা, আগাছানিকৃষ্ট অর্থে বা
বাজে অর্থে
আড়আড়চোখে, আড়নয়নেবক্র অর্থে
আড়ক্ষ্যাপা, আড়মোড়া, আড়পাগলাআধা অর্থে বা
প্রায় অর্থে
আড়কোলা, আড়গড়া, আড়কাঠিবিশিষ্ট অর্থে
আনআনকোরানা অর্থে
আনচান, আনমনাবিক্ষিপ্ত অর্থে
আবআবছায়া, আবডালঅস্পষ্টতা অর্থে
ইতিইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বেএ বা এর অর্থে
ইতিহাস, ইতিকথাপুরনো অর্থে
১০ঊন/ঊনাঊনপাঁজুরে, ঊনিশকম অর্থে
১১কদ্কদবেল, কদর্য, কদাকারনিন্দিত অর্থে
১২কুকুঅভ্যাস, কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গকুৎসিত
১৩নিনিখুঁত, নিখোঁজ, নিলাজ, নিভাঁজ, নিরেটনাই/নেতি অর্থে
১৪পাতিপাঁতিহাঁস, পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়োক্ষুদ্র অর্থে
১৫বিবিভূঁই, বিফল, বিপথভিন্নতা/নাই অর্থে
নিন্দনীয় অর্থে
১৬ভরভরপেট, ভরসাঁঝ, ভরদুপুর, ভরপুর, ভরসন্ধ্যোপূর্ণতা অর্থে
১৭রামরামছাগল, রামদা, রামশিঙ্গা, রামবোকাবড়/উৎকৃষ্ট অর্থে
১৮সরাজ, সরব, সঠিক, সজোর, সপাটসঙ্গে অর্থে
১৯সাসাজিরা, সাজোয়ানউৎকৃষ্ট অর্থে
২০সুসুনজর, সুখবর, সুদিন, সুনাম, সুকাজউত্তম অর্থে
২১হাহাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরেঅভাব অর্থে
(২১টি খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন উদাহরণ সহ)

জেনে রাখা দরকার যে, বাংলা উপসর্গ সাধারণ বাংলা শব্দের পূর্বেই বসে।

খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে বাক্য তৈরি:
আমি অবেলাতে দিলাম পাড়ি অথৈ সাগরে। অঘারাম বাস করে অজপাড়াগাঁয়ে। ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকঁড়া। আকাঠার নায়ে দিলাম কাঁঠালের গলুই। মা বলিতে প্রাণ করে অনচান, চোখে আসে জল ভরে। ইতিহাস কথা কয়। ঊনাভাতে দুনা বল। নিনাইয়ার শতেক নাও। ভরদুপুরে কোথায় যাও। এতোদিন কোথায় নিখোঁজ ছিলে?

তৎসম উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠনের উদাহরণ:

  1. প্র উপসর্গ দিয়ে শব্দ:
    • প্রভাব, প্রচলন, প্রস্ফুটিত => প্রকৃষ্ট অর্থে
    • প্রসিদ্ধ, প্রতাপ, প্রভাব => খ্যাতি অর্থে
    • প্রগাঢ়, প্রচার, প্রবল, প্রসার => আধিক্য অর্থে
    • প্রবেশ, প্রস্থান => গতি অর্থে
    • প্রপৌত্র, প্রশাখা => ধারা-পরম্পরা বা অনুগামী অর্থে
  2. পরা দিয়ে শব্দ:
    • পরাকাষ্ঠা, পরাক্রান্ত, পরায়ন => আতিশয্য অর্থে
    • পরাজয়, পরাভব => বিপরীত অর্থে
  3. অপ দিয়ে শব্দ:
    • অপমান, অপকার, অপচয়, অপবাদ => বিপরীত অর্থে
    • অপসংস্কৃতি, অপকর্ম, অপসৃষ্টি, অপযশ => নিকৃষ্ট অর্থে
    • অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন=> স্থানান্তর অর্থে
    • অপমৃত্যু=> বিকৃত অর্থে
  4. সম্ উপসর্গ দিয়ে শব্দ:
    • সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর=> সম্যক রুপে অর্থে
    • সমাগত, সম্মুখ=> সম্মুখ অর্থে
  5. নি উপসর্গ:
    • নিবৃত্তি=> নিষেধ অর্থে
    • নিবারণ, নির্ণয়=> নিশ্চয় অর্থে
    • নিদাঘ, নিদারুন=> আতিশয্য অর্থে
    • নিষ্কলুষ, নিষ্কাম=> অভাব অর্থে
  6. অব উপসর্গ:
    • অবজ্ঞা, অবমাননা=> হীনতা অর্থে
    • অবরোধ, অবগাহন, অবগত=> সম্যকভাবে অর্থে
    • অবতরণ, অবরোহণ=> নিম্নে অর্থে
    • অবশেষ, অবসান, অবেলা=> অল্পতা
  7. অনু উপসর্গ:
    • অনুশোচনা, অনুগামী, অনুজ, অনুচর, অনুতাপ, অনুকরণ=> পশ্চাৎ অর্থে
    • অনুবাদ, অনুরুপ, অনুকার=> সাদৃশ্য অর্থে
    • অনুক্ষণ, অনুদিন, অনুশীলন=> পৌনঃপুন অর্থে
    • অনুকূল, অনুকম্পা=> সঙ্গে অর্থে
  8. নির উপসর্গ:
    • নিরব, নির্জীব, নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়, নির্ধন=> অভাব অর্থে
    • নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর=> নিশ্চয় অর্থে
    • নির্গত, নিঃসরণ, নির্বাসন=> বাহির অর্থে
  9. দুর উপসর্গ:
    • দুর্ভাগ্য, দুর্দশা, দুর্নাম=> মন্দ অর্থে
    • দুর্লভ, দুর্গম, দুরতিক্রম্য=> কষ্টসাধ্য অর্থ
  10. বি উপসর্গ:
    • বিধৃত, বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র, বিশুষ্ক=> বিশেষ রুপ অর্থে
    • বিনিদ্রি, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল=> অভাব অর্থে
    • বিচরণ, বিক্ষেপ=> গতি অর্থে
    • বিকার, বিপর্যয়=> অপ্রকৃতস্থ অর্থে
  11. সু উপসর্গ:
    • সুকন্ঠ, সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল=> উত্তম অর্থে
    • সুগম, সুসাধ্য, সুলভ=> সহজ অর্থে
    • সুচতুর, সুকঠিন, সুধীর, সুনিপুণ, সুতীক্ষ্ণ=> আতিশয্য অর্থে
  12. উৎ উপসর্গ:
    • উদ্যম, উন্নতি, উৎক্ষিপ্ত, উদ্গ্রীব, উত্তোলন=> ঊর্ধ্বমুখিতা অর্থে
  13. অধি উপসর্গ:
    • অধিকার, অধিপতি, অধিবাসী=> আধিপত্য অর্থে
  14. পরি উপসর্গ:
    • পরিপক্ক, পরিপূর্ণ, পরিবর্তন=> বিশেষ রুপে
  15. প্রতি উপসর্গ:
    • প্রতিমুর্তি, প্রতিধ্বনি=> সদৃশ্য অর্থে
  16. উপ উপসর্গ:
    • উপকূল, উপকন্ঠ=> সামীপ্য অর্থে
  17. অভি উপসর্গ:
    • অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত=> সম্যক অর্থে
  18. অতি উপসর্গ:
    • অতিকায়, অতিশয়, অত্যাচার=> আতিশয্য অর্থে
  19. আ উপসর্গ:
    • আকন্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র=> পর্যন্ত
    • আরক্ত, আভাস=> ঈষৎ অর্থে
    • আদান, আগম=> বিপরীত অর্থে
  20. অপি উপসর্গ:
    • অপিনিহিতি=> ব্যাকরণের সুত্র অর্থে

Leave a Comment