প্রিয় পাঠক, বাংলা ভাষার ব্যাকরণে ধ্বনির উচ্চারণ বিধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ, স্কুল, কলেজ, ভর্তি পরিক্ষা, চাকরি সহ বিভিন্ন পরিক্ষায় ধ্বনির উচ্চারণ বিধি থেকে প্রশ্ন করা হয়।
আমরা আগেই জেনেছি যে, বাংলা ভাষায় ২ ধরনের ধ্বনি রয়েছে। স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
আমরা প্রথমে বাংলা স্বরধ্বনির উচ্চারণ বিধি নিয়ে আলোচনা করবো এবং পরে ব্যঞ্জন ধ্বনির উচ্চারণ বিধি নিয়ে আলোচনা করবো।
বাংলা স্বরধ্বনির উচ্চারণ বিধি:
১। ই এবং ঈ ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় আমাদের জিহবা এগিয়ে আসে এবং উচ্চে অগ্রতালুর কঠিনাংশের কাছাকাছি পৌঁছে।
২। এ ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহবার অবস্থান ই ধ্বনির মতো সম্মুখে হয়, তবে একটু নিচে হয় এবং আ ধ্বনির বেলায় আরো নিচে হয়।
৩। ই ঈ এ (অ) ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা এগিয়ে সম্মুখভাগে দাঁতের দিকে আসে বলে এগুলোকে হয় সম্মুখ ধ্বনি।
৪। ই এবং ঈ এর উচ্চারণের সময় জিহবা উচ্চে থাকে বলে ই এবং ঈ ধ্বনিকে উচ্চসম্মুখ ধ্বনি বলা হয়।
৫। আবার, এ ধ্বনিকে মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি বলা হয় এবং অ ধ্বনিকে নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি বলা হয়।
৬। উ এবং ঊ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবা পিছিয়ে আসে এবং পশ্চাৎ তালুর কোমল অংশের কাছাকাছি ওঠে আসে। ও ধ্বনির উচ্চারণের সময় জিহবা আরো নিচে আসে। অ ধ্বনির বেলায় আরো নিচে আসে।
৭। উ ঊ ও অ এই ৪টি ধ্বনির উচ্চারণের সময় জিহবা পিছিয়ে আসে বলে এই ৪টি ধ্বনিকে বলা হয় পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
৮। উ এবং ঊ এই ২ টি ধ্বনির উচ্চারণের সময় জিহবা উচ্চে থাকে বলে এই ২ টি ধ্বনিকে বলা হয় উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
৯। ও ধ্বনিকে বলা হয় মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
১০। অ ধ্বনিকে বলা হয় নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
১১। আ ধ্বনিকে বলা হয় কেন্দ্রীয় নিম্নাবস্থিত স্বরধ্বনি। আবার, আ ধ্বনিকে বিবৃত স্বরধ্বনিও বলা হয়।
বাংলা স্বরধ্বনির উচ্চারণ ছক:
— | সম্মুখ, ওষ্ঠাধর প্রসৃত | কেন্দ্রীয়, ওষ্ঠাধর বিবৃত | পশ্চাৎ, ওষ্ঠাধর গোলাকৃত |
---|---|---|---|
উচ্চ | ই ঈ | উ ঊ | |
উচ্চমধ্য | এ | ও | |
নিম্নমধ্য | অ্যা | অ | |
নিম্ন | আ |
শব্দের অবস্থানভেদে অ ২ ভাবে লিখিত হয়:
১। স্বাধীনভাবে লিখিত অ। যেমন: অমর, অনেক ।
২। শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সাথে বিলিন ভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: কর, বল। এখানে ক এবং র আর ব এবং ল বর্ণের সাথে অ বিলীন হয়ে রয়েছে। যেমন: ক্ + অ + র্ + অ = কর
শব্দে অ ধ্বনির ২ রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়:
১। বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ। যেমন: অমল, অনেক, কত।
২। সংবৃত বা ও অ ধ্বনির মতো উচ্চারণ। যেমন: অধীর, অতুল মন। এখানে অ ধ্বনির উচ্চারণ ও এর মতো হয়েছে। (যেমন: ওধীর, ওতুল, মোন।)
অ ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ:
- শব্দের আদিতে:
- শব্দের আদিতে না বোধক “অ” যেমন: অটল, অনাচার।
- “অ” আথবা “আ” যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন: অমানিশা, অনাচার, কথা।
- শব্দের মধ্যে এবং অন্তে:
- পূর্ব স্বরের সাথে মিল রেখে স্বরসংঙ্গতির কারণে বিবৃত “অ” হয়। যেমন: কলম, বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।
- ঋ ধ্বনি, এ ধ্বনি, ঐ ধ্বনি, এবং ঔ ধ্বনির পরবর্তী অ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমনধ তৃণ, দেব, ধৈর্য, নোলক, মৌন ইত্যাদি।
- অনেক সময় ই ধ্বনির পরের “অ” বিবৃত হয়। যেমন: গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
- সোর্স:
বাংলা ধ্বনির উচ্চারণ বিধি বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর:
বাংলাভাষায় বর্ণমালার মোট সংখ্যা ৫০ টি। এর মধ্যে ১১ টি স্বরবর্ণ। আর বাকি ৩৯ টি ব্যঞ্জনবর্ণ।
উ, ঊ, ও, অ এই ৪টি স্বরবর্ণকে বলা হয় পশ্চাৎ স্বরবর্ণ।