আজকে আমরা জানবো, সুষম খাদ্য কত প্রকার ও কি কি?
সুষম খাবারে ৬ টি উপাদান থাকে।
তাই সুষম খাদ্য হিসেবে ভাগ করলে ৬ রকমের খাদ্য পাওয়া যায়।
যেমনঃ
১) আমিষ বা প্রটিন জাতীয় খাদ্য
২)শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য
৩) স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য
৪) ভিটামিন জাতীয় খাদ্য
৫) খনিজ পদার্থ জাতীয় খাদ্য
৬) পানি।
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন খাবারে উক্ত খাদ্য উপাদান গুলো বেশি পরিমানে থাকে বা কোন খাদ্য খেলে আপনার সুষম খাদ্যর চাহিদা পূরণ হবে।
১) আমিষ বা প্রটিন জাতীয় খাদ্য কত প্রকার ও কি কি:
প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য গুলো হলোঃ
দুধ, ডিম, সকল প্রকার মাছ, মুরগির মাংস, কচি ছাগলের মাংস, সকল প্রকার ডাল, ঢেকি ছাঁটা চাল (ঢেকিতে ভাঙ্গানো চাল), বরবটি, শিমের বীজ ইত্যাদি।
আমিষ জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহ গঠনে ও দেহের ক্ষয় পূরনে ভূমিকা রাখে।
আমিষ জাতীয় খাদ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
১) প্রানীজ আমিষ খাবার
২) উদ্ভিজ্জ আমিষ খাবার।
প্রানীজ আমিষঃ
প্রানী থেকে যে সকল আমিষ জাতীয় খাবার পাওয়া যায় তাদের কে প্রানীজ আমিষ বলে।
যেমন: দুধ, ডিম, মাছ হলো প্রাণীজ জাতীয় আমিষ খাদ্য।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মাছ হলো আমাদের প্রানীজ আমিষের প্রধান উৎস। কেননা মাছ আমাদের আমিষের সিংহ ভাগ চাহিদা পূরণ করে।
উদ্ভিজ্জ আমিষঃ
উদ্ভিদ জাতীয় খাবার থেকে আমরা যে সকল আমিষ গ্রহণ করি, সেগুলো হলো উদ্ভিজ্জ আমিষ।
যেমনঃ সকল প্রকার ডাল, ঢেকি ছাঁটা চাল (ঢেকিতে ভাঙ্গানো চাল), বরবটি, শিমের বীজ ইত্যাদি হলো উদ্ভিজ্জ আমিষ।
২) শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য কি কি:
শর্করাকে মানুষের প্রধান খাবর বলা হয়। অক্সিজেন, কার্বন ও হাইড্রোজেন মিলিয়ে তৈরি হয় শর্করা জাতীয় খাদ্য।
শক্তি প্রদানকারী খাবার গুলো হলো শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য। যেমনঃ ভাত, রুটি,আলু, মিষ্টি আলু, ময়দা, পাউরুটি, কেক, যব, গম, ভূট্টা ইত্যাদি।
এ শর্করা জাতীয় খাবার গন্ধবিহীন, বর্ণবিহীন এবং সামান্য মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। শর্করা জাতীয় খাবারই আমাদের সারা দিনভর কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরীর যোগান দেয়।
তাই শর্করা জাতীয় খাদ্য আমাদের জন্য অপরিহার্য। বেশি পরিমানে আমাদের শর্করা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
- আরো পড়ুন
৩) স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য কি কি:
তেল এবং চর্বি হলো স্নেহ পদার্থের সেরা উদাহরণ। স্নেহ যখন কঠিন অবস্থায় থাকে তখন তাকে বলে চর্বি আর তরল আবস্থায় থাকলে তাকে বলে তেল।
উৎস অনুযায়ী স্নেহ জাতীয় খাদ্যকেও ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
প্রানীজ স্নেহঃ চর্বিযুক্ত মাংস, ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম বা ডিমের হলুদ অংশ, পনির হলো প্রানীজ স্নেহের প্রধান উৎস।
উদ্ভিজ্জ স্নেহঃ বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিজ্জ তেল যেমন; সরিষার তেল, তিলের তেল, তিসি তেল, সয়াবিন তেল, পাম, ভূট্টা, নারিকেল, সূর্যমুখী তেল হলো উদ্ভিজ্জ স্নেহ পদার্থের প্রধান উৎস।
এছাড়াও জলপাই ও জলপাই তেল বা অলিভ ওয়ের, কাজু বাদাম, চীনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, এবং এ সকল বাদামের তেলও স্নেহের প্রধান উৎস।
- আরো পড়ুন-
৪) ভিটামিন জাতীয় খাদ্য কত প্রকার ও কি কি:
ভিটামিনের গুরুত্বের কারনে ভিটামিনকে খাদ্য প্রান বলা হয়। আমরা জানি ভিটামিন মোট ৬ প্রকার। যেমনঃ ভিটামিন A, ভিটামিন B, ভিটামিন C, ভিটামিন D, ভিটামিন E এবং ভিটামিন K
এবার চলুন দেখে নেয় যাক, কোন কোন খাবারে, কোন কোন ভিটামিন রয়েছে:
০১) ভিটামিন A জাতীয় খাদ্য কি কি: কলিজা, মাছের তেল, দুধ, ডিম, দই, ঘি, সবুজ শাকসবজি, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে। কড মাছের তেল ভিটামিন এ এর প্রধান উৎস।
০২) ভিটামিন B জাতীয় খাদ্য কি কি: চাল, আটা, কচি শাক সবজি, সবজির বীজ, ডাল, যকৃৎ, ছোলা, মাশরুম ইত্যাদিতে ভিটামিন বি রয়েছে।
০৩) ভিটামিন C জাতীয় খাদ্য কি কি: পেয়ারা, আমলকি, লেবু, কমলালেবু, আনারস সহ বিভিন্ন টাটকা ফলে ভিটামিন সি থাকে।
সবুজ শাক সবজিতেও ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি তাপে নষ্ট হয়ে যায় বলে শুকনা ও রান্না করা খাবারে ভিটামিন সি থাকে না।
০৪) ভিটামিন D খাদ্য কি কি : ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ, মাখন, বাঁধাকপি ভিটামিন ডি এর উৎস। এছাড়া সূর্যর আলোর সাহায্যে ভিটামিন ডি দেহে তৈরি হয়।
০৫) ভিটামিন E জাতীয় খাদ্য কি কি: সরিষার তেল, তিলের তেল, তিসি তেল, সয়াবিন তেল, সহ বিভিন্ন প্রকার ভোজ্য তেলে ভিটামিন ই রয়েছে।
০৬) ভিটামিন K জাতীয় খাদ্য কি কি: স্নেহ জাতীয় খাবারে ভিটামিন কে থাকে। যেমন: তেল, চর্বি, ঘি, মাখন ইত্যাদি খাদ্যে ভিটামিন কে থাকে।
৫) খনিজ জাতীয় খাদ্য কত কি কি:
খনিজ জাতীয় উপাদান হলো লৌহ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। সামুদ্রিক খাবার, ভূ-গভীরের পানি, ফলমূল, শুঁটকি, ইত্যাদিতে খনিজ পদার্থ থাকে।
৬) পানি:
পানি পান না করলে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না হয়তো।
আমাদের দেহের ৬০% থেকে ৭৫% ভাগই পানি। পানি আমাদের জন্য অপরিহার্য।
আমরা ভূ-পৃষ্ঠের পানি, চা, দুধ, কফি, শরবত, ফলমূল, শাকসবজি, ডাব ও ড্রিংস সহ বিভিন্ন উৎস থেকে পানি পেয়ে থাকি।
কিছু প্রশ্ন-উত্তর:
যে খাদ্যের মধ্যে ৬ টি উপাদান সুষম পরিমানে থাকে, তাকে সুষম খাদ্য বলে।
লেবু, পেয়ারা, আমলকি ইত্যাদিতে।
দুধ, ডিম, দই, ঘি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে।
বাঁধাকপি, ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছে।
বিভিন্ন প্রকার তেলে।