ইসলাম ধর্মের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো হজ। আজকে আমরা হজ করার গুরুত্ব ও ফজিলত সহ; হজের ৩ টি ফরজ ও ৭ টি ওয়াজিব সহ অন্যান্য সকল তথ্য জেনে নিব।
হজ কি ও হজ কাকে বলে ?
ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে হজ ৫ম স্তম্ভ। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ করলে আমরা পাই- হজ মানে সংকল্প বা ইচ্ছা করা।
ইসলামের ভাষায় মহান আল্লাহকে খুসি করার জন্য জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে আল্লাহর ঘর কাবা ও অন্যান্য স্থানে গিয়ে ইবাদত ও নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করাকে হজ বলা হয়।
হজের মধ্যে কাবা তে গিয়ে ইবাদাত করতে হয়। এছাড়াও মক্কা-মদিনার বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এমন কি কোরবানিও করতে হয়।
হজ সবার জন্য ফরজ নয়। হজ তাদের জন্য ফরজ- যে সমস্ত ধনী মুসলিমদের পবিত্র মক্কায় যাতায়াত ও হজের কাজ সম্পন্ন করার মতো আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য রয়েছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন- “মানুষের মধ্যে যার আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য রয়েছে, তার উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা অবশ্য কর্তব্য” -(সূরা ইমরান, আয়াত ৯৭)
আর তাই প্রত্যক সামর্থ্যবান মুসলমানদের জীবনে অনন্তত একবার হজ করা ফরজ! সার্মথ্য না থাকলে কোনো গুনাহ হবে না। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল।
হজের মোট ৩ টি ফরজ রয়েছে:
- ইহরাম বাঁধা বা আনুষ্ঠানিকভাবে হজের নিয়ত করা।
- জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফতের ময়দানে আবস্থান করতে হবে।
- জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ভোর থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত যে কোনো দিন কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে হবে।
হজের মোট ৭ টি ফরজ রয়েছে:
- জিলহজ মাসের ৯ তারিখ দিবাগত রাতে মুযদদালিফা নামক স্থানে অবস্থান করতে হবে।
- সাফা ও মারওয়া নামক পাহাড়ের মাঝে দৌড়ানো।
- ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ তারিখে পর্যায় ক্রমে মিনায় নির্ধারিত স্থানে ৭ টি করে পাথর বা কংকর মারতে হবে।
- কুরবানি করতে হবে।
- মাথা কামানো বা চুল কেটে ছোট করতে হবে।
- বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।(মক্কার বাহিরের লোকদের এটা করা ওয়াজিব)
- দম দেওয়া বা কোনো ভূল হলে ১টি অতিরিক্ত কোরবানি করতে হবে।

হজ করার গুরুত্ব ও ফজিলত কি ?
হজের ধর্মীয় গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা হাজ্জ নামক একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন।
এছাড়াও পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে হজের বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকেও হজ করার গুরুত্বের অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেন-
”মাকবুল বা আল্লাহর নিকট গ্রহনীয় হজের বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাত ছাড়া আর কিছুই দেন না।” – (বুখারি-মুসলিম)
এছাড়া হজের মাধ্যমে বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন; “ যে ব্যক্তি হজ করে সে যেনো নবজাত শিশুর মতো হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ)
কেউ হজ অস্বীকার করলে সে কাফির হয়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত, আল্লাহর নিকট গ্রহনীয় হজ করার ব্যাপারে আল্লহর কাছেই সাহায্য চাওয়া।
হজ করার সামাজি গুরুত্ব কি ?
হজ করার মধ্যে দিয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়। হজের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান একই জায়গায় জড়ো হন।
তাই হজ হলো বিশ্ব মুসলমানের মহা সম্মেলন। এর ফলে এক অঞ্চলের মুসলিম অন্য অঞ্চলের মুসলিমদের সাথে পরিচিত হতে পারে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন; “ এবং মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দাও; তারা তোমার নিকট (মক্কায়) আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে আরোহন করে।তারা আসবে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।” (সূরা আল হাজ্জ, আয়াত ২৭)
হজ করতে এসে সবাই একই রকম পোশাক পরে। তাই কারো মাঝে পোশাক ও পরিচ্ছদের অহংকার ও ভিন্নতা থাকে না।
এভাবে সবাই ভেদাভেদ ভুলে যায় আর বলতে থাকে- লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.. হাজির হে আল্লাহ! আমরা তোমার দরবারে হাজির।
হজ থেকে আমরা কি কি শিক্ষা পাই:
- জাতি, বর্ণ, গোত্রের ভেদাভেদ দূর করার শিক্ষা দেয় হজ।
- হজ মানুষের মধ্যেকার পার্থক্য দূর করে।
- হজ সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়।
- মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করে।
- হজ মানুষকে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ শিক্ষা দেয়।
- পারস্পারি সাংস্কৃতিক ও ভাব আদানপ্রদানের সুযোগ করে দেয়।
- আল্লাহর নৈকট্য ও প্রেমের দিকে নিয়ে যায় এবং ইমানকে আরো মজবুত করে।
সংকল্প বা ইচ্ছা করা।
জিলহজ মাসে।
হ্যাঁ। সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য হজ ফরজ।
পবিত্র কাবায়। সৌদির মক্কা-মদিনাতে যেতে হয়।
হ্যাঁ। নারী-পুরুষ সবাই হজ করতে পারবেন।