আমি বীরাঙ্গনা বলছি বই রিভিউ (লেখক ড. নিলীমা ইব্রাহিম)

ড. নিলীমা ইব্রাহিম এর লেখা বই – আমি বীরাঙ্গনা বলছি – এই বইটি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি বই।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হয়েছে ৫০ বছর! এতোগুলো বছর পরেও যুদ্ধে অবদান রাখা ও আত্মত্যাগ করা অনেকের গল্প আমরা জানিনা।

মুক্তিযুদ্ধের ভিড়ে, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পাশবিকতার ভিড়ে হয়তো কোথাও কোথাও আড়াল হয়ে যায় এই মানুষ গুলোর কথা।

তাদের অবদান এবং তোদের আত্মত্যাগ এবং তাদের ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতন ও নির্যাতনের গল্প গুলো থেকে যায় সবার অজানা।

এই অজানা গোষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের বীরাঙ্গনারা।

আমি বীরাঙ্গনা বলছি বই এর গল্প ও রিভিউ:

আমাদের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কথা বলেছেন ড. নিলীমা ইব্রাহিম।

“আমি বীরাঙ্গনা বলছি ” ড. নিলীমা ইুব্রাহিমের এই উপন্যাস টি পড়ে আমরা জানতে পারি যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অবদানটা শুধুমাত্র আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বা রাজনীতিবিদ যারা যুদ্ধের ছক কষেছেন তাদের ছিলোনা।

আমাদের মুক্তি যুদ্ধে অবদান  ছিলো এদেশের অগণিত মা-বোনদের।

যারা নিজেদের সম্ভ্রম ও ইজ্জত হারিয়েছেন পাকিস্তানি ঘাতক বাহীনির হাতে।

একটা বাহিনী কি পরিমানে নির্মম ও পাশবিক হতে পারে, সেটা আমরা জানতে পারি “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” এই বইটি পড়ে।

এই বইটিতে ড. নিলীমা ইব্রাহিম, যুদ্ধ চলাকালীন সময় এমন কিছু মানুষকে নিয়ে কথা বলেছেন।

যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনিদের ক্যাম্পে।

সেই সময় তাদের ওপর যে পাশবিত ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে; সেটা বিশ্বের ইতিহাসে সব থেকে বর্বরোচিত নির্যাতন গুলোর একটি।

সব জায়গায় বলা হয় মৃত্যু হয়তো সবচেয়ে কঠিন পরিণতি কিন্তু এই মানুষগুলোকে মারা যাওয়ারও কোনো সুযোগ দেওয়া হতো না।

তাদের ওপর নির্যাতন করো হতো দিনের পর দিন, রাতের পরে রাত ধর্ষন করা হতো এবং তাদের মধ্যে কেউ যদি সন্তান সম্ভাবা হয়ে যায় তাহলে তাকে নির্মম ভাবে মেরে ফেলা হতো।

তাদের মধ্যে সেই সময় যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং যারা পরবর্তীতে ফেরৎ এসেছেন, তাদের অবস্থা ছিলো খুবই ভয়াবহ।

এরকম কয়েক জন নারীকে নিয়ে লেখা হয় উপন্যাস “আমি বীরাঙ্গনা বলছি”।

বই এর মূল কাহিনী:

এই উপন্যাসের মাধ্যমে ড. নীলিমা ইব্রাহিম সেই কয়েকজন নারীর মাধ্যমে আমাদের সমাজে বড় নির্যাতিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

আমি বীরাঙ্গনা বলছি – এই বই তে আমরা বিভিন্ন চরিত্র দেখব- মেহেরজান, মিনা, ফাতেমা এই চরিত্রগুলো যে শুধু তাদের নির্যাতন ও নীগৃহিত হওয়ার ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিংবা পাক হানাদার বাহিনীর হাতে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, আমাদের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এই মানুষগুলো নিগৃহীত হয়েছে একই ভাবে।

পার্থক্য তখন নির্যাতিত হয়েছে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে এবং এদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তারা লাঞ্ছিত হয়েছে আমাদের দেশের নিজস্ব মানুষের দ্বারা।

এই সমাজ, এই পুরুষ শাষিত সমাজ এবং সমাজের মানসিকতা তাদেরকে মেনে নেয়নি।

তাদেরকে প্রতিটি ধাপে ধাপে অপমান করা হয়েছে।

তাদের শুনতে হয়েছে নোংরা কথা এবং শেষ পর্যন্ত অনেকেই এই কথাগুলো ছাপিয়ে হয়েছেন সাবলম্বী।

তাদের সাবলম্বী হওয়ার গল্প আমরা পাব – “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” এই উপন্যাসটিতে।

সমাজের সব দিক থাকে, একই কাতারে সবাইকে ফেলা যায় না।

সে রকম “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” উপন্যাসে ড. নীলিমা ইব্রাহিম সবাইকে এক কাতারে না ফেলে কিছু এমন মানুষেকে দেখিয়েছেন যারা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং পরম মমতায় এই নারীগুলোকে গ্রহণ করেছেন।

সেই পুরুষদের উদাহরন হচ্ছেন- নিয়েলসন, শফিক এরা।

“আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইয়ের মূল কথা:

আমাদের সমাজে সব ধরণের মানুষ থাকে, কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে চোখে পড়ে মোটা দাগের মানুষের যে আচারণ।

সেই জায়গা থেকে বলতে গেলে এখন পর্যন্ত হয়তো আমরা বীরাঙ্গনাদেরকে মেনে নেওয়ার যে মানসিকতা, সেই মানসিকতার খুব বেশি বিকাশ ঘটাতে পারিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বা মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত অন্যকিছুর যে পরিমানে সমাদরে গ্রহণ করা হয় বীরাঙ্গনাদেরকে নিয়ে সে পরিমানে কথা আমরাদের সমাজে এখন পর্যন্ত হয় না।

তাদের সম্মান ও আত্মত্যাগকে আমরা ঠিক কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছি এটা খুবই ভাববার বিষয়।

“আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইয়ের ভুমিকাতে ড. নীলিমা ইব্রাহিম কিছু কথা বলেছেন, সেই কথার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলো উগ্রধর্মান্ধতা বা আমাদের সমাজের হঠাৎ করে অতিরিক্ত রক্ষণশীল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, সেটা নিয়ে।

এই ধর্মান্ধতা আমাদেরকে পশ্চাৎপদ করে তুলেছে।

এই ধর্মান্ধতার কবলেই অনেক খানি আমাদের সমস্ত দিকের উন্নতির যে অগ্রযাত্রা সেই পথে প্রধান একটা বাধা।

শুধু তাই নয়, এই ধর্মান্ধতার কবলে পড়েছে আমাদের সমাজের অনেক মানুষ। 

আশা করা যায় ধর্মান্ধতার এই করাল গ্রাস থেকে বের হয়ে এসে সবাইকে মেনে নিয়ে সুন্দর দেশ গড়ার একটি মানসিকতায় আমরা এগিয়ে যাব।

ড. নীলিমা ইব্রাহিমের “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটাকে শুধু গ্রন্থে না রেখে বীরাঙ্গনাদের প্রকৃত সম্মান।

তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে এই মানুষ গুলোর যে অবদান, সেই অবদানকে স্বীকৃতি দেব।

আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইয়ে লেখক কে?

ড. নীলিমা ইব্রাহিম।

ড. নীলিমা ইব্রাহিমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই কোনটি?

আমি বীরাঙ্গনা বলছি।

বইটিতে কাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে?

বীরাঙ্গানাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।

বীরাঙ্গনা কাদের বলা হয়?

যেসকল নারীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরত্ত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন বা যুদ্ধে সাহায্য করেছিলে কিংবা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন তাদেরকে বীরাঙ্গনা বলা হয়েছে।
তবে, সার্বজনীনভাবে, বীর শব্দের বিপরীত লিঙ্গ অর্থে নারীদের বেলায় বিরাঙ্গনা শব্দ ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment