ক্যান্সারের প্রধান কারন কি আমরা স্পষ্ট জানি না। আজ আমরা জানবো কোন কোন খাবার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
আমাদের মধ্যে এমন মানুষ আছে, যারা কিনা খাবারের মান বিচার না করেই সামনে যে খাবার পায় তাই খায়।
বিশেষ করে মুখরোচক খাবারের বেলায় এমনটা ঘটে বেশি।
কিন্তু আপনি কি জানেন এসব স্বাদের খাবার থেকেই হতে পরে মরণঘাতি ক্যান্সারের মতো ব্যাধি।
তো চলুন একে একে জেনে নেয় যাক কোন ১৪টি খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন হতে পারে।
১। আলুর (পটেটো) চিপস:
আমরা যে পটেটো চিপস খাই তাতেও ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।
এগুলো দামে সস্তা বা সহজলভ্য হতে পারে কিন্তু ঝঁকি মুক্ত নয়।
কেননা এই চিপগুলিতে শুধু ফ্যাট/চর্বি এবং সোডিয়ামের মাত্রা অত্যধিক বেশি তায়ই নয়, এগুলিতে কৃত্রিম স্বাদ, প্রিজারভেটিভস এবং খাবারের রং মেশানো থাকে।
যা শরীল শুধু খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে না বরং ক্যান্সার তৈরির উপাদান হিসেবে গ্রহন করে।
২। মাইক্রোওয়েভে ভাজা পপকর্ন:
সাধারণভাবে পপকর্ন একটি তুলনা মূলক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিমেবে ধরা হয়।
কিন্তু তার পরেও পপকর্ন খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে।
এর কারন হল, যে ওয়েভে কর্ন ভাজা হয় সেই মাইক্রোওয়েভ ব্যাগগুলিতে পারফুলোরোওকোটানোয়িক এসিড (পিএফওএ) নামক একটি রাসায়নিক রয়েছে।
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পিএফওএ গ্রহণের ফলে দেহে কিডনি, মূত্রাশয়, যকৃত, অগ্ন্যাশয় এবং অণ্ডকোষের ক্যান্সার হতে পারে।
৩। টিন জাত খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন:
টিনজাত খাবারের সমস্যা হল এটা সংরক্ষন করে রাখা থাকে। প্রায় সমস্ত অ্যালুমিনিয়াম ক্যান/কৌটা থেকে বিসফেনল বা সংক্ষেপে বিপিএ তৈরি হয় যা ক্যান্সারের কারন।
তাই টিনজাত খাবার বাদ দিয়ে তাজা বা হিমশীতল পণ্য কিনুন, যদি না ক্যানটির গায়ে বিপিএ-মুক্ত হিসাবে লেবেল লাগানো না থাকে।
৪। খাওয়ার সোডা:
আমরা সবাই জানি যে সাধারণভাবে খাওয়ার সোডায় উচ্চ মাত্রার চিনির কারণে স্বাস্থ্যকর নয়, যা ওজন বৃদ্ধি, প্রদাহ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধে করে।
আপনি বুঝতে পারবেন না যে সোডায় কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক পদার্থও রয়েছে।
যেমন ডেরিভেটিভ 4-মেথিমিলিমিডাজল (4-এমআই), যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য পরিচিত।
৫। লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন:
এই তালিকায় স্টেক, হ্যামবার্গার, হট ডগ, বেকন, সসেজ এবং লাল মাংসের মতো কিছু খাবার রয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত মাংসর একটি প্রধান সমস্যা হলো এগুলিতে সোডিয়াম নাইট্রেটের মতো প্রিজারভেটিভ রয়েছে যা মাংসটিকে সতেজ রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কিন্ত এটিই ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সাধারন ভাবে লাল মাংস প্রতিদিন খাওয়ার ফলে, আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি 22% বেড়ে যেতে পারে।
৬। খামারে চাষ করা সালমন মাছ:
আমাদের শরীলে মাছের থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর ওমেগা-3 ফ্যাট খুবই প্রয়োজন।
তবে খামারে চাষ করা সালমন মাছকে, কীটনাশক, রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য পরিচিত কার্সিনোজেন পূর্ণ একটি অপ্রাকৃত খাদ্য দিয়ে বড় করা হয়।
যার ফলস্বরূপ, তাদের মাংস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পিসিবি, পারদ এবং ডাইঅক্সিনে পূর্ণ থাকে।
যদিও আমাদের দেশে সালমন মাছ খুব একটা খাওয়া হয় না। তবুও আপরি যদি কখনো বাহিরের দেশে যান তবে চাষকৃত সালমন মাছ এড়িয়ে চলবেন।
৭। হাইড্রোজেনেটেড তেল:
উদ্ভিজ্জ তেল স্বাস্থ্যকর হওয়া উচিত। সমস্যা হল এটি প্রাকৃতিকভাবে এটি উৎস থেকে বের করার পরে রাসায়নিক নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেনেট করা হয়।
তেলটিকে আরও বর্ণযুক্ত এবং ডিওডোরাইজ করা হয় যাতে এটি লোকেদের কাছে আরো স্বচ্ছ বলে মনে হয়।
ফলে তা শরীলের কোষগুলির গঠন এবং নমনীয়তাকে প্রভাবিত করে, এবং যা ক্যান্সারের কারণ হয়ে যায়।
- আরো পড়ুন:
৮। সাদা ময়দা:
শোধন প্রক্রিয়ায় সাদা আটা তৈরি করা হয় যা কিনা শস্য থেকে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া বেশিরভাগ পুষ্টিকে ধ্বংস করে দেয়।
আরও দুঃখের কথা হলো ময়দার মিলগুলো এর পরে ময়দাকে ক্লোরিন গ্যাস দিয়ে ব্লিচ করে সাদা করে তোলে।
এটি এমন একটি রাসায়নিক যা খুবই ভয়াবহ পরিমাণে মারাত্মক, যা ক্যান্সারের কারণ হয়ে যায়।
৯। GMO খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন
GMO মানে হলো জেনেটিক্যালি মডিফাইড।
জেনেটিক্যালি ভাবে সংশোধিত খাবারগুলি পোকা-মাকড়ের ক্ষেত্রে প্রতিরোধী হতে পারে।
তবে এই খাবারগুলি মানুষের পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর সে সম্পর্কে কোনও পরীক্ষা হয়নি।
আমরা জানি যে ইঁদুর নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের সবার গবেষণায় প্রথম ১০ দিনের মধ্যে ক্যান্সার যুক্ত কোষের বৃদ্ধি পেয়েছিল।
আমেরিকায় প্রায় সমস্ত শস্য (সয়াবিন, গম এবং ভুট্টা) জিএমও করা হয়, তবে ইউরোপের অনেক দেশেই এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১০। উচ্চমাত্রার মিষ্টি সিরাপ:
মিষ্টি ক্যান্সার কোষের প্রিয় খাদ্য! উচ্চমাত্রার মিষ্টি সিরাপ প্রচুর পরিমাণে সেবন ক্যান্সারের কারণ নাও হতে পারে।
তবে এটি দীর্ঘ দিন ধরে সেবন করে গেলে ক্যান্সারের কারন হতে পারে।
১১। কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন:
মানুষের ওজন কমাতে সহায়তা করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম মিষ্টি, কিন্তু আসলেই এটি মিষ্টির বিকল্প নয়।
এগুলি রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং আপনার দেহকে দৈনিক ক্যালোরির খরচ সঠিকভাবে করতে বাধা দেয়।
এর ফলে আপনি আরও বেশি মিষ্টি খেতে চাইবেন এবং অবশেষে, কৃত্রিম মিষ্টিতে থাকা রাসায়নিক উপাদান, বিশেষত অ্যাস্পার্টাম, দেহে DKP নামক একটি মারাত্মক বিষে পরিণত হয়।
হজমের সময়, ডিকেপি আরও ক্যান্সারজনিত রাসায়নিক উপাদানে পরিনত হয়।
১২। মদ/অ্যালকোহল:
মুখ, খাদ্যনালী, লিভার, কোলন, মলদ্বার এবং স্তনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির জন্য খুব বেশি অ্যালকোহল সেবনকে দ্বায়ি করা হয়।
আসলে, অ্যালকোহল সেবনকে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের দ্বিতীয় প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। (প্রথমে রয়েছে তামাক)।
১৩। আচার জাতীয় খাবার ক্যান্সারের প্রধান কারন:
আচার জাতীয় খাবার খাবারগুলি সাধারণত নাইট্রেটস বা নাইট্রাইটস, লবণ এবং ভিনেগার সংমিশ্রণ দিয়ে বানানো হয়।
কৃত্রিম রঙও যুক্ত করা হয়। ভিনেগারে কিছু স্বাস্থ্যকর গুণাগুন রয়েছে তবে উচ্চমাত্রার লবনের স্তর এবং আচারযুক্ত খাবারগুলিতে নাইট্রেটস বা নাইট্রেটগুলি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ন।
ফলে আচার জাতীয় খাবার প্রতিদিন খাওয়ার কারনে কলোরেক্টাল এবং পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়
- আরো পড়ুন:
১৪। অতিরিক্ত গরম পানীয়:
এটা শুনে আপনি সম্ভবত এই মুহুর্তে অবাক হয়েছেন যে আপনার অনেক প্রিয় খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিকারী তালিকায় রয়েছে।
তাই আসুন আজ থেকে এটি এড়িয়ে চল যাক।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত খুব গরম পানীয় সেবন করার ফলে আপনার খাদ্যনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এবং গলা ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
খুব গরম? কত গরম? বিজ্ঞানীরা প্রায় 65 সেন্টিগ্রেড এর কথা বলেছেন যা আমাদের জন্য ক্ষুবই ক্ষতিকর।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে উপরের উক্ত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী খাবার গুলো আমরা নিয়মিতই খেয়ে থাকি।
এখন আমাদের এটা মনে হতে পারে যে আমরা তো উক্ত খাবার গুলো খাই তাহলে আমরা কেনো এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হইনি?
এর কারন হলো আমাদের শরীলে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে।
তাই আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিঃশেষ হওয়ার আগেই সচেতন হতে হবে এবং উক্ত খাবার সমূহ পরিহার করে চলতে হবে।
- আরো পড়ুন: