প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম আশ্চর্য্য স্থাপনা হচ্ছে পিরামিড! পিরামিড এর গঠন ও নির্মান শৈলীর বদৌলতে, মিশরীয় সভ্যতা, বিশ্ব সভ্যতার আসরে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে।
আজকে আমরা পিরামিডের পরিচয়, পিরামিডের ইতিহাস, পিরামিডের বিকাশ সহ পিরামিড বিষয়ে চমৎকার তথ্য জানার চেষ্টা করবো।
মিশরীয় সভ্যতার পিরামিড পরিচিতি:
সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন মিশরের পরিচিতি প্রতীক হচ্ছে তাঁর স্থাপত্য শিল্প। মিশরীয়দের বলা হয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা! প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম অনুসারে, মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবন পাওয়া যায়। সেই জীবনে আবার ফারাওদের নেতৃত্ব সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো।
তাই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মনুষ দেহ সংরক্ষণ করার প্রয়োজন অনুভব করে। ফলে, তারা দেহ সংরক্ষনের জন্য মমি করে! মমি করে, সমাধিস্থ করার প্রথা চালু করে।
পর জীবনের প্রয়োজনে মৃত দেহের সাথে প্রচুর ধন-রত্ন দেয়া হতো। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পদ রাখার জন্য চোর-ডাকাতের ভয় ছিল।
তাই ধন সম্পদ রক্ষা করার জন্য শক্ত পাথরের ত্রিকোণাকৃতি প্রকাণ্ড এক সৌধ নির্মাণ করা হয়। একে বলা হয় পিরামিড।
মিশরে এখনও প্রায় ৭০ টি পিরামিড রয়েছে। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড নির্মাণ করেন বিখ্যাত ফারাও খুফু! ফারাও খুফু ছিলেন চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় ফারাও। তাকে কিওপস বলা হয়।
কায়রো শহরের দক্ষিণ পশ্চিমের মরুময় গিজে অঞ্চলে এ বিখ্যাত পিরামিড অবস্থিত। পিরামিড তৈরিতে প্রয়োজন ছিল গ্রানাইড এবং চুনাপাথর।
শ্রমিকরা পাহাড় থেকে বৃহৎ আকারের পাথর টুকরো টুকরো করে শ্লেজ গাড়িতে করে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসত। এভাবে করে এক একটি পাথরের উপর পাথর বসিয়ে বসিয়ে পিরামিড তৈরি করা হতো। এক একটি পাথরের ওজন ছিল প্রায় ৭০ মণ।
তবে পিরামিডের ভিতরের দেওয়ালের পাথরগুলো ছিল সবচেয়ে বড়! এদের ওজন ছিল প্রায় ৪৪০ মন।
খুফুর পিরামিড তৈরি করতে লেগেছিল প্রায় ২৩ লাখ পাথর থন্ড! এ পিরামিড তৈরি করতে এক লাখ শ্রমিকের ২০ বছর সময় লেগেছিল।
পিরামিড এর ক্রম বিকাশ:
পিরামিড শুরুতেই ত্রিকোণ আকৃতির বিশাল আকারে তৈরি করা হতো না। প্রথমে মমি করে সমাধিস্থ করা হতো! সেগুলা আবার বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলো। যেমন স্টেপ পিরামিড, মাস্তাবা পিরামিড।
স্টেপ ও মাস্তাবার পরে ক্লাসিক্যাল পিরামিডের সূচনা হয়। এর মধ্যে ফারাও খুফুর পিরামিড উল্লেখ্যযোগ্য! ত্রিকোণাকার বিশালাকার পিরামিড সমূহ সবার কাছে বর্তমানের পিরামিড হিসেবে পরিচিত!
ফারাও খুফুর পিরামিড এর বর্ণনা:
মিশরীয় সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলোর মধ্যে ফারাও খুফুর পিরামিড সবচাইতে বড়! ফারাও খুফুর পিরামিড কে বলা হয় ”কিওপম”।
কায়রো শহরের দক্ষিণ পশ্চিমের গিজে অঞ্চলে এই বিখ্যাত ফারাও খুফুর পিরামিড অবস্থিত।
বছরের শুরু থেকেই খুফু তার সমাধি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন। একদল শ্রমিক পাথর বেঁধে এনে জমা করতো আর অপরদিকে অন্যদল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সেই পাথর গুলো ব্যবহার যোগ্য করত।
এভাবে করে পাথরের উপর পাথর বাসিয়ে এই ফারাও খুফুর পিরামিড তৈরি করা হতো। এক খন্ড পাথরের ওজন ছিল প্রায় ৭০ মণ করে।
খুফুর পিরামিড তৈরি করতে লেগেছিল ২৩ লক্ষ খন্ড পাথর। মাটি হতে পিরামিড চূড়ার উচ্চতা ছিল সাড়ে চারশ ফুট উঁচু।
খুফুর পিরামিডের ভিত্তির পরিধি ছিল প্রায় ১৩ একর! পিরামিডের ভেতরটি রাজপুরীর মতোই ঐশ্বর্যশালী ও সৌন্দর্য সমৃদ্ধ ও হলদেটে চুনাপাথরের আস্তরণে তৈরি ছিলো।
ভেতরে দেয়াল সহ ঝকঝকে ছোট ছোট অনেক ঘর ছিল। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ফারাওদের দাস-দাসীদের জন্য এসব ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছিল।
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি হলো এই ফারাও খুফুর পিরামিড। ফারাও খুফুর পিরামিড ছিল মিশরীয় জাতির স্থায়িত্বের প্রতীক।