মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা ১ম পর্ব ১ম অধ্যায়ের ১নং ক্লাস (Introduction to Psychology) এর এই পর্বে আমরা যা আলোচনা করেছি-
- ভূমিকা
- মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা (Definition of Psychology)
- মনোবিজ্ঞান এর লক্ষ্য (Goals of Psychology)
আত্মা/মন + বিজ্ঞান = মনোবিজ্ঞান।
মনোবিজ্ঞানের অধ্যায়নে আপনাকে স্বাগতম।
ভূমিকাঃ
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকদের, জীবনের প্রকৃতি সম্পর্কে লেখনি থেকে মনোবিজ্ঞানের উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায় বিশেষ ভাবে অ্যারিস্টটলের কর্ম থেকে।
অ্যারিস্টটল খ্রি.পূ. ৩৮৪ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি জীবন্ত জিনিস সম্পর্কে খুবই আগ্রহী ছিলে! তিনি বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সংগ্রহ করতেন এবং তা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেখতেন যে তারা কিভাবে প্রণের অস্তিত্ব বজায় রাখছে।
প্রত্যক প্রজন্মর বংশগতির ধারা টিকিয়ে রাখার পদ্ধতি দেখে তিনি প্রজনন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।
তিনি আরো জীবিত মানুষের প্রত্যাহিক কাজ লক্ষ্য করে, তাদের ভাষা, যুক্তি, সরণশক্তি, শিক্ষা সমন্ধে জ্ঞান লাভ করেন।
এর পরবর্তী বছরেই অ্যারিস্টটল তার ছাত্রদের সাথে দর্শনের আলোচনা করেন।
তার স্কুলের নাম ছিলো লাইসিয়াম! জীবনের প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি তার ছাত্রদের সাথে যা আলোচনা করেছিলেন তা ছিলো এরুপ-
“ জীবন কি তা তুমি তখনই বুঝবে, যদি মারা যওয়ার বিষয়ে চিন্তা করো! যখন আমি মারা যাবো, তখন আমার কি ধরনের পরিবর্তন ঘটবে যা আমি এখন আছি? মৃত্যুর প্রথম মুহূর্তে, আমার দেহ শারীরিক ভাবে তেমনই থাকবে যা মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেও ছিলো! কিন্তু আমি আর চলতে পারবো না, অনুভব করতে পারবো না, বলতে পারবো না। এই বিষয়গুলিই জীবন। যে মুহূর্তে আত্মা শেষ নিঃশ্বাসের সাথে চলে গেছে। ”
মনোবিজ্ঞান কি:
অ্যারিস্টটল জীবনকে বোঝাতে আত্মা (psyche) কথাটি ব্যবহার করেন। এই আত্মা শব্দটি প্রাচীন গ্রীক “মন”(মাইন্ড) এর অনুবাদ।
কিন্তু শব্দটি খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে নিঃশ্বাস এর সাথে সম্পর্কিত। অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন যে, আত্মা শেষ নিশ্বাসের সাথেই চলে যায়! আধুনিক মনোবিজ্ঞানিরাও একই কাজ, চিন্ত-চেতনা, অধ্যয়ন করেছেন যা অ্যারিস্টটলকে মুগ্ধ করেছিলো।
প্রকৃতপক্ষে, অ্যারিস্টটলের ব্যবহৃত শব্দ আত্মা (psyche) এবং গ্রীক শব্দ “লগো” (Logos) মিলে হয়েছে মনোবিজ্ঞান (psychology) যার মানে “গবেষণা” (the study of).
অ্যারিস্টটল প্ল্যাটাের কাছে থেকে মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু তিনি প্ল্যাটোর মতের সাথেই দ্বিমত পোষন করেন; “যে একজন মানুষ শুধু চিন্তার মাধ্যমেই সহজেই কোনো একটি বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারে।”
অ্যারিস্টটল মনে করেন যে কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে হলে, বিষয়টিকে অবশ্যই দেখতে, শুনতে এবং তার স্পর্শও আসতে হবে।
যদিও, অ্যারিস্টটল বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মতো ছিলেন না, তবুও তার সমসাময়িক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, পর্যবেক্ষনের উপরই জোর দিতেন।
অ্যারিস্টটলের সময় থেকে, আধুনিক বিজ্ঞানীরা, পর্যবেক্ষনের আরো যথাযথ ও কার্যকর উপায় বিকাশ করেছেন।
অ্যারিস্টটল এইভাবে জীবনের অধ্যয়ন শুরু করেন, যা অবশেষে পরিনত হয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানে।
মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা (Definition of Psychology)
মনোবিজ্ঞানীরা এখনো মনোবিজ্ঞানকে জীবনের অধ্যায়ন বলেই সংজ্ঞাইত করেন। যাহোক, উক্ত সংজ্ঞাটি মনোবিজ্ঞানের অধুনিক নিয়মকে, জীবনের অধ্যায়ন সম্পর্কিত অন্যান্য বিজ্ঞান, যেমন- জীব বিজ্ঞান থেকে আলাদা করতে যথেষ্ঠ নয়।
অতএব, মনোবিজ্ঞানকে মানসিক-প্রক্রিয়া এবং আচরণের বিজ্ঞান বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
লক্ষণীয় যে, এই সংজ্ঞায় ৩টি শব্দ/পদ রয়েছে, তা হলো- বিজ্ঞান, আচরণ এবং মানসিক-প্রক্রিয়া। এই ৩টি পদকে আলাদা ভাবে দেখলে মনোবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারন মনোবিজ্ঞানীদের লক্ষ্য থাকে, সযত্নে জটিল ভাবে চিন্তা এবং সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ব্যক্তিকে বোঝা। এই সুনির্ভর ও কঠোর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন পদ্ধতি, মনোবিজ্ঞান সহ সকল বিজ্ঞানেরিই মুল ভিত্তি।
আচরণ বলতে বোঝানো হয়, কোনো ব্যাক্তির প্রত্যক্ষ কাজকর্ম, যা অন্যরা সরাসরি পর্যবেক্ষন করতে পারে।
তুমি যখন চলাফেরা করো, কথা বলো, বা বেস বল নিক্ষেপ করো, তুমি এই অর্থে আচরন করছো।
মানসিক-প্রক্রিয়া কথাটির দ্বারা, গোপন চিন্তা-ভাবনা, আবেগ, অনুভুতি, অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য বোঝায়, যেগুলো অন্য ব্যক্তিরা সরাসরি পর্বেক্ষণ করতে পারে না। তাই মানোবিজ্ঞানীরা করো প্রকাশ্য ব্যবহার পর্বেক্ষন করে, তার মানসিক-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনুমান করেন।
মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য ( Goals of Psychology )
মনোবিজ্ঞানের চারটি লক্ষ্য রয়েছে। যেমন- কারো মানসিক প্রক্রিয়াকে বর্ণনা করতে পারা, পূর্বানুমান করতে পারা, বোঝা এবং প্রভাবিত করতে পারা।
- বর্ণনা (Describe)– কারো আচরন ও মানসিক প্রক্রিয়াকে সঠিক ভাবে বর্ণনা করতে, বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ মনোবিজ্ঞানীদের খুবই সাহায্য করে থাকে।
- পূর্বানুমান (Predict)- কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কারো ভবিষৎ অনুমান করতে, গবেষনা মনোবিজ্ঞানীদের উপায় বলে দেয়। যেমন, এই পদ্ধতিতে মনোবিজ্ঞানীরা চাকরি দাতাদের সাহায্য বা উন্নত করেছেন যাতে করে চাকরি দাতারা খুব নিখুত ভাবে অনুমান করতে পারেন যে চাকরি প্রার্থীদের ভিতর কে বেশি উপযুক্ত।
- বোঝা (Understand)– যখন কাউকে ব্যাখ্যা করা যায় তখনই তাদের আচরন ও মানসিক প্রক্রিয়ার ধারনা পাওয়া যায়। কারণ বোঝার বা শিখার জন্য আরও অনেক কিছু রয়েছে, বর্তমান ব্যাখ্যাগুলি সর্বদা অস্থায়ী হয়। অন্য কথায় ব্যাখ্যাগুলো সত্যি নাও হতে পারে কারন ভবিষতের গবেষণায় এই পরিক্ষার উন্নতিও হতে পারে অথবা একেবারে বাতিলও হতে পারে।
- প্রভাব (influence)- চূড়ান্ত পর্যায়ে, মনোবিজ্ঞানীরা বর্ণনা, বোঝার এবং পূর্বাভাসের বাইরেও প্রত্যাশার মাধ্যমে আচরণকে প্রভাবিত করার আশা করেন।