বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ। এই চর্যাপদে নিম্নবর্গীয় মানুষের পরিচয় বিশেষভাবে চিত্রিত হয়েছে ও আলোচিত হয়েছে।
আজকে আমরা চর্যাপদের নিম্নবর্গীয় মানুষের সমাজের দুঃখ দুর্দশা এবং সেই সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবনাচার ও পরিচয় নিয়ে আলোকপাত করব।
সেই সময়ে সমাজে উচ্চবর্গীয় মানুষেরা থাকলেও চর্যাপদে সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষরাই স্থান পেয়েছে বিশেষভাবে।
যেমন মানুষের পেশা, মানুষের আচার আচরণ, মানুষের নৃত্যকর্ম, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই চর্যাপদে।
এছাড়া অভাব অনটন নিয়েও চর্যাপদে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে চর্যাপদের নিম্নগর্গীয় মানুষের বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
চর্যাপদে নিম্নবর্গীয় মানুষের পরিচয় আলোচনা:
চর্যাপদে বলা হয়েছে:
”টালত ঘর মোর নাহি পড়বেষী
হাড়িত ভাত নাহি নীতি আবেশী”।
এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে টিলার উপরে আমার ঘর আমার কোনো প্রতিবেশী নেই। আমার হাড়িতে ভাত নেই। আমি নীতিকথা দিয়ে কী করবো?
অর্থাৎ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, মানুষের বাসস্থান ছিল অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের এবং তা ছিল টিলার উপরে অবস্থিত। এছাড়াও বোঝানো হয়েছে যে, গরীব মানুষের কোনো প্রতিবেশী নেই।
সমাজের মানুষগুলোর বিভিন্ন পেশা ছিলো। যেমন মাঝি, ডোম, চণ্ডাল, তাঁতী, জেলে, শিকারী, কাঠুরে, ছুতার ইত্যাদি।
আবার সমাজে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও স্বাধীনভাবে কাজ করত বলে চর্যাপদে তার প্রমাণ পাওয়া যায়ি।
যেমন সে সময় নারীরা তাত ও চাঙারি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাব করত। এছাড়াও নারীরা মাঝির কাজ করত, নৌকা পরাপার ও নৌকায় জল সেচ দিত এবং জমিতে জল কৃষি কাজ করত।
এছাড়া পুরুষেরা নগরে তাঁত বিক্রি করত। তাদের মাঝে চারত্রিক স্খলনটা প্রবল আকার ধারণ করেছিল।
আবার গৃহবধূরা কীভাবে সংসারে কাজ করত এবং তাদের সংসারে জীবনের চিত্র এই চর্যাপদে ফুটে উঠেছে।
যেমন সমাজে নিম্নবর্গীয় নারীদের ছলনা ও ছলচাতুরীর কথাও এখানে ফুটে উঠেছে।
তারা পরকীয়া সহ মন্দ কাজের সাথে যে জড়িত ছিল তাও ফুটে উঠেছে এই চর্যাপদে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, চর্যাপদে সে সময়ের সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবন জীবিকা বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:
সমাজে তখন বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করত। যেমন: কেউ ছিলো জেলে, কেউ ডোম, কেউ তাঁতি, কেউ ছুতার, কেউ বা ছিলো আবার চন্ডাল। সমাজের নিম্নবর্গীয় মেয়েরাও পুরুষের মতো স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করত। তাঁত কাজে পারদরর্শী ছিলো মেয়েরা।
সেই সমাজের নারীদের ছলচাতুরীর কথা রয়েছে চর্যাপদে। যেমন বর্ণনা করা হয়েছে যে দিনের বেলা নারীরা কাক দেখে ভয় পায়, কিন্তু রাতের বেলা তারা কামে মেতে উঠে। পাশাপাশি পুরুষের চরিত্র স্খ-লনের ইঙ্গিত রয়েছে চর্যাপদে।
টিলার উপর। টিলার উপর ঘর তৈরি করে একা একা বসবাস করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তার কোন প্রতিবেশি নেই।
বলা হয়েছে তারা এতই অভাবী যে হাড়িতে ভাত নেই। হাড়িতে ভাত না থাকলেও তাদের আত্মীয় কিংবা প্রেমিক এসে হাজির হয় বাড়িতে।