গার্মেন্টস চাকরির ১২টি সুবিধা ৩০ রকম পদ ও বেতনের বিস্তারিত

দিন দিন আমাদের দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। তো আজকে আমার অলোচনা করবো গার্মেন্স চাকরির পদ কতটি ও যোগ্যতা কি এবং বেতন কেমন?

অনেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরেও পাচ্ছে না চাকরি।

বর্তমানে তাই বেশ শিক্ষিত তরুন-তরুনিও বেছে নিচ্ছেন বেসরকারি চাকরি।

এর মধ্যে গার্মেন্টসের চাকরির বাজার সব চাইতে বিশাল।

বর্তমান পোশাক শিল্পে (2019-20) আমাদের দেশ দ্বিতীয়।

দেশে পোশাক কারখানা বেড়েই চলেছে।

তাই আপনিও সহজেই এই পোশাক শিল্পতে চাকরি করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

চলুন একে একে জেনে নেয়া যাক গার্মেন্টস চাকরির পদ যোগ্যতা কি লাগে? এ চাকরির সুবিধা কি কি? গার্মেন্টস চাকরির বেতন ভাতা কেমন হয়? কোন পদের বেতন কেমন সব বিস্তারিত।

গার্মেন্টস চাকরির ১২টি সুবিধা সমূহ:

  1. সহজেই গার্মেন্টস চাকরিতে জয়েন করা যায়।
  2. গার্মেন্টস চাকরিতে কোনো প্রকার ঘুষ দিতে হয় না।
  3. গার্মেন্টসের চাকরিতে বেশির ভাগ পদে অভিজ্ঞতা লাগে না।
  4. গার্মেন্টস চাকরিতে দ্রুত পদোন্নতি ঘটে।
  5. গার্মেন্টসের চাকরিতে ওভার টাইম এর মাধ্যমে বেশি বেতন লাভের সুযোগ রয়েছে।
  6. গার্মেন্টস চাকরিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব একটা বড় বিষয় নয়।
  7. সরকারি চাকরির মতো গার্মেন্টস চাকরিতে উৎসব ভাতা রয়েছে। যেমনঃ দুই ঈদে ঈদ বোনাস হিসেবে দেয়া হয়।
  8. কোন কোন গার্মেন্টসে মধ্যহ্নভোজের ব্যবস্থা রয়েছে।
  9. পরিবহন সুবিধাও রয়েছে।
  10. গার্মেন্টস চাকরিতে হাজিরা বা উপস্থিত বোনাস রয়েছে। যা বাড়তি বেতনের নিশ্চয়তা দেয়।
  11. গার্মেন্টসে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পরিবেশে কাজের সুযোগ রয়েছে।
  12. ফায়ার ড্রিল সহ কর্মীদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এই গার্মেন্স চাকরির বেতন, পদ সমূহ, যোগ্যতা, কাজ, গার্মেন্টস মেশিন পরিচিতি জানার জন্য নিচের দেয়া, গার্মেন্টস চাকরির উপর রচিত ফ্রি pdf বই ডাউনলোড করুন:

গার্মেন্স চাকরির ৩০টি পদ, যোগ্যতা ও বেতন জানতে নিচের লেখা পড়ুন:

অন্যান্য চাকরির ন্যায় গার্মেন্টস চাকরির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পদ রয়েছে। আবার বিভিন্ন পদ ভেদে তাদের বেতন ভাতার ধরনও আলাদা হয়ে থাকে।

নিচের লেখাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই গার্মেন্টসের পদের ও বেতন ভাতার ক্যাটাগরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন!

তো চলুন গার্মেন্টস চাকরি বিভিন্ন পদ ও বেতন ভাতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাকঃ

১। অপারেটর : প্রথমেই অপারেটরের কথা বলা যাক। গার্মেন্টসে উৎপাদন মূলত অপারেটর এর উপর নির্ভর করে। তারা বিভিন্ন প্রকারের সেলাই মেশিন চালনায় দক্ষ হয়ে থাকে।

সরাসরি পূর্ব অভিজ্ঞতা ছারা কেউ অপারেটর হতে পারে না, এর জন্য হেলপার হয়ে জয়েন করতে হয় অথবা বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে অপারেটর হতে হয়।

অপারেটররা হলেন একটি গার্মেন্টস তথা একটি পোশাক শিল্পের প্রধান শক্তি।

গার্মেন্টস অপারের বেতন কেমন ? বর্তমান ২০২১ সাল থেকে অপারেটরদের বেতন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন।

তবে, একজন নতুন অপারেটরের বেতন বর্তমানে ৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয় এবং সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এটা হলো মূল বেতন। গর্মেন্সে অভার টাইম কাজে করার সুযোগ থাকে, ফলে মূল বেতন থেকে আরো অনেক বেশি টাকা ইনকামের সুযোগ থাকে।

২। হেলপার : হেলপারের কাজ মূলত অপারেটর কে সাহায্য করা ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই খুব সহজেই আপনি এই পদে চাকরি পেতে পারবেন।

গার্মেন্টস হেলপারের বেতন কেমন ? হেলপার বলতে সাধারনত যারা নতুন তাদের বোঝানো হয়। এজন্য তাদের বেতন সব চেয়ে কম হয়ে থাকে। তাদের বেতন প্রায় ৮ হাজার থেকে শুরু হয়ে থাকে।

৩। সুপারভাইজার : নাম থেকেই বোঝা যায় ,যার কাজ সুপারভাইজ করা। ইনি অপারেটর ও হেলপার এর কাজ দেখাশোনা করেন এবং কাজের পরিমান হিসাব রাখেন এবং তার অধিনে কিছু অপারেটর ও হেলপার কাজ করেন।

তিনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। বলে রাখা ভালো যে, গার্মেন্টসে বিভিন্ন ক্যাটাগরির সুপারভাইজারের পদ রয়েছে।

যেমন জুনিয়র বা সিনিয়র সুপারভাইজার এবং অপরদিকে সুইং সুপারভাইজার, কাটিং সুপারভাইজার, ফিনিশিং সুপারভাইজার সহ; সুপারভাইজারেরই বিভিন্ন রকমের পদ রয়েছে।

গার্মেন্টস সুপারভাইজারের বেতন কেমন:

গার্মেন্টস চাকরির সুপারভাইজার পদ টির বেতন ১২ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৪। লাইনচিপ্স : তার অধীনে কয়েকটি লাইন কাজ করে! তিনি সুপারভাইজার, অপারেটর, হেলপারগনের কাজ দেখাশোনা ও তদারকি করেন।

তিনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। লাইনচিপ্সদের বেতন ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার হয়ে থাকে।

৫। ইনচার্জ: একটি ফ্লোরের সমস্ত দ্বায়িত্বে নিযুক্ত থাকেন ইনচার্জ। ইনচার্জের অধিনে ফ্লোরের সবাই কাজ করে! ইনচার্জের বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার হয়ে থাকে।

৬। মার্কারম্যান : মার্কারম্যানের কাজ কাগজে নকশার ছাপ তৈরি করা, যা দিয়ে থাক কাপর বা লে পোশাক তৈরি মাপ অনুযায়ী কাটা হয়। অভিজ্ঞতা লাগে।
মার্কারম্যানের বেতন অপারেটরদের অনুরুপ হয়ে থাকে।

৭। লে ম্যান: ইনারা কাপড়ের রোল থেকে কাপড় বিছিয়ে রাখেন। তার ওপর নকশা রেখে কাপড় কাটা হয়! অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়! লে ম্যানের বেতন হেলপারের অনুরুপ হয়।

৮। কাটার ম্যান : গার্মেন্টসে ইনার নকশার উপরে মেশিন রেখে কাপড় কাটেন। অভিজ্ঞতা লাগে! কাটার ম্যান মূলত সিনিয়র অপারেপটর। সুতরং কাটার ম্যানের বেতন সিনিয়র অপারেটর মতো ১২ থেকে ১৪ হাজার হয়।

৯। নাম্বারম্যান: গার্মেন্টসে ইনাদের কাজ নাম্বার করা। অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি পাওয়া যায়। হেলপারের মতো বা হেলপারের চেয়ে সামান্য বেশি বেতন হয়ে থাকে।

১০। বান্ডিলম্যান : বান্ডিলম্যানের কাজ হলো নাম্বার করা বডি বা কাপড় বান্ডিল করে সেলাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে দেয়া! সাধারনত পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় না। বান্ডিল ম্যানের বেতন, হেলপারের সমপরিমান বেতন হয়।

১১। ইনপুটম্যান : ইনারা বিভিন্ন কাজের হিসাব রাখেন । প্রয়োজনে সেলাইয়ে জন্য কাপড় ইনপুট দেন! অভিজ্ঞতা লাগে।

অনভিজ্ঞকেও মাঝে মাঝে নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষ দেয়া হয়। ইনপুট ম্যানের বেতন অপারেটর বেতনের কাছাকাছি হয়।

গার্মেন্টস চাকরির আরো পদ যোগ্যতা ও বেতন সমূহ আলোচনাঃ

১২। আইরন ম্যান : ইনারা কাপড় আইরন বা ইস্ত্রী করেন। অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দেয়া হয়! আইরন ম্যানের বেতন, হেলপারের সমপরিমান বা একটু বেশি বেতন হয়।

১৩। সিজার ম্যান : বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিজার করার কাজ করতে হয়। অভিজ্ঞ লোকের গুরুত্ব দেয়া হয়! সিজারম্যানের বেতন অপারেটরদের সমপরিমান হয়।

১৪। কোয়ালিটি : কোয়ালিটিরা পোশাক বা কাপড়ের কোয়ালিটি বা গুনাগুন পরিক্ষা করে থাকেন! অচল পোশাক চিহ্নিত করেন । অভিজ্ঞতা না থাকলেও শিক্ষিত লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়। কোয়ালিটির বেতন অপারেটরদের বেতনের সমপরিমান হয়।

১৫। কোয়ালিটি কন্ট্রলার : ইনারা সুপারভাইজার এর মতো দায়িত্ববান। অভিজ্ঞতা লাগে! কোয়ালিটিদের বেতন, সুপারভাইজারদের অনুরুপ হয়।

১৬। মেকানিং: এরা বিভিন্ন মেকানিং এর দায়িত্ব পালন করেন! মেকানিকের বেতন প্রায় সুপারভাইজারের বেতনের কাছাকাছি হয়।

১৭। HR ও এ্যাডমিন : এদের কাজ লোক নিয়োগ কাজ পরিচালনা করা। বিভিন্ন কাজের হিসাব রাখাসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

অভিজ্ঞতা না লগলেও প্রযুক্তি জ্ঞান, কম্পিউটা জ্ঞান ও শিক্ষিত হতে হয়! গার্মেন্টস চাকরির HR ও এ্যাডমিন প্যানেল পদ এর বেতন একটু বেশি হয়ে থাকে। তাদের বেতন ২০ থেকে ৫০ হাজার হয়ে থাকে।

১৮। ম্যানেজার : প্রতি ইউনিটের জন্য ম্যানেজার থাকেন। যেমন; কাটিং ম্যানেজার, কোয়ালিটি ম্যানেজার, সুইং ম্যানেজার ইত্যাদি। ম্যানেজারের বেতন ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এছাড়া গার্মেন্স চাকরির বিভিন্ন যোগ্যতা সাপেক্ষে আরো অনেক পদ রয়েছে। যেমনঃ

  • গার্মেন্টস সিকিউরিটি গার্ড,
  • নিরাপত্তা কর্মী,
  • মেডিকেল MBBS ডাক্তার,
  • পরিচ্ছনতা কর্মী,
  • আয়া বা ঝাড়ুদার
  • সুইপার,
  • টাইম কিপার,
  • মালী,
  • ড্রাইভার, ইত্যাদি।

উপরে উল্লেখিত পদ ছাড়াও গার্মেন্টস এ আরো পদ রয়েছে! আপনার কাজের দক্ষতা ও কাজের মান এবং যোগত্য দেখে গার্মেন্টস আপনার চাকরির পদ সাথে বেতন নির্ধারন করবে।

তবে Garments job এর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে, পেশাগত যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়! তাই আপনার যদি Garments job এর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা তাকে তবে আপনি এ গার্মেন্টস চাকরিতে সাফাল্য অর্জন করতে পারবেন।

মন্তব্য:

Garments job এ 2019 থেকে সর্বনিম্ন বেতন ৮৫00 টাকা। তবে, বিভিন্ন গার্মেন্ট শিল্প কারখানাতে বেতন কাঠামো ভিন্ন হয়ে থাকে।

শুনতে অবাক লাগলেও, আমাদের দেশে পোশাক কারখানাতে নারীর চাইতে, পুরুষের বেতন কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।

এছাড়া এলাকা ও পরিবেশ ভেদে গার্মেন্টস চাকরির পদ অনুযায়ী বিভিন্ন স্কেলের বেতন কাঠামো বিদ্যামান।

গার্মেন্টস চাকরির পদ যোগ্যতা ও বেতন কাঠামো নিয়ে আমাদের এ পোষ্ট টি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

পোষ্টটি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ৭রং এর সাথে থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

আপনি গার্মেন্টসে কিভাবে চাকরি পেতে পারেন সেটি জানতে নিচের পোষ্ট পড়তে পারেন।

কিছু প্রশ্ন-উত্তর:

গার্মেন্টসে কতক্ষন কাজ করতে হয়?

সকাল ৮ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।
তবে ওভার টাইম করলে- রাত ৮ টা বা ১০ পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

গার্মেন্টেসে কি ছেলেরা কাজ করতে পারে?

হ্যাঁ।

গার্মেন্টেস চাকরি নিতে কি চাকরির পরিক্ষা দিতে হয়?

বেশির ভাগ গার্মেন্টেস দিতে হয় না। তবে, চাকরির শর্ত পূরণ করতে হয়।
যেমন; শারিরীক সক্ষমতা, বয়স, পড়াশোনার সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

বাংলাদেশের কোথায় সব চেয়ে বেশি গার্মেন্টস রয়েছে?

গাজীপুরের কোনাবাড়ি, চৌরাস্তা, টঙ্গি, চন্দ্র, আশুলিয়া, শ্রীপুর, ঢাকা ইপিজিডে, বাইপাইল এলাকা, সাভার, মিরপুর, মুগদা, কেরানিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম ইত্যাতি।

নাইট ডিউটি কাকে বলে?

কোনো কোনো গার্মেন্টেসে ২৪ ঘন্টার ৩ শিফ্ট আকারে ৮ ঘন্টা করে কাজ করতে হয়। তখন রাতের শিফ্টকে নাইট শিফ্ট বা নাইট ডিউটি বলে। এছাড়া সিকিউরিটি গার্ডদের সর্বদা নাইট ডিউটি করতে দেখা যায়।

গার্মেন্টেসের কাজ কি খুবই কঠিন?

গার্মেন্টেসের কাজ ওজন তোলার মতো কঠিন নয়। তবে- এখানে ধৈর্য, সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতার পরিচয় দিতে হয়।

উপজাতিরা কি গার্মেন্টে কাজের সুযোগ পায়?

হ্যাঁ। তাদের সম্মানের সাথে চাকরি দিতে দেখা যায়।

Leave a Comment