কাঁঠাল আমরা সবাই খেয়ে থাকি। তাই, কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা কি তা আমাদের জানা দরকার। কাঁঠাল আমাদের দেশের বহুল পরিচিত একটি ফল।
গাছে ধরা ফলের মধ্যে কাঁঠাল সব চেয়ে বেশি বড় হয়ে থাকে।
জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল মনোনীত হওয়ার প্রধান কারণ হলো কাঁঠালের সকল অংশ খাওয়ার যোগ্য।
পাকা কাঁঠাল তো আমরা খাইই অপরদিকে কাঁচা কাঁঠাল আমরা সবজি হিসেবে তরকারি রান্না করে খেয়ে থাকি। আবার, কাঁঠালের বীজও খাওয়া যায়।
কাঁঠাল যে শুধু আমরা মানুষেরাই খাই, তাই নয় উপরন্ত, কাঁঠালের পাতা ছাগলের প্রিয় খাবার।
পাকা কাঁঠালের অবশিষ্ট্য অংশ গরুর প্রিয় খাবার।
তাহলে চলুন আর দেড়ি না করে মহা উপকারি কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
কাঁঠালের পরিচিতি:
কাঁঠালের ইংরেজি হলো Jackfruit. আর কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Artocarpus heterophyllus.
কাঁঠাল ইংরেজি নামে প্রায় সকল দেশে পরিচিত হলেও কাঁঠালের ইংরেজির নামের পাশাপাশি এটি থাইল্যান্ডে কানুন নামে এবং মালয়েশিয়াতে নাংকা নামে পরিচিত।
কাঁঠাল গাছ ও ফল পরিচিতি:
কাঁঠালের গাছ বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এজন্য কাঁঠাল গাছ একবার রোপন করলে অনেক বছর ধরে ফল পাওয়া যায়।
কাঁঠাল গাছ থেকে প্রায় ২০ বছর বা বেশি সময় যাবৎ ফল পাওয়া যায়। বড় আকারে একটি গাছে ২০০ টির মতো কাঁঠাল ধরতে পারে।
কাঁঠাল গ্রীষ্মকালীন ফল। আর কাঁঠালের ওজন হতে পারে ৪৫ কেজি অবধি। মজার ব্যাপার হলো- কাঁঠাল গাছের গোড়া থেকে মগডাল পর্যন্ত ধরে।
কাঁঠালে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
আমরা যদি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালের পুষ্টি হিসেব করি, তাহলে, কার্বোহাইড্রেড পাবো ২৪ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম, আমিষ ১ গ্রাম।
এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ভিটামিন এ রয়েছে ২১৭ মিলিগ্রাম, সি রয়েছে ৬.৭ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম রয়েছে ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে ৩৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস রয়েছে ৩০৩ মিলিগ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় ৯৪ মিলিগ্রাম।
কাঁঠাল খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা কি কি:
এতোক্ষণে আমরা বুঝে গেছি যে কাঁঠাল অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ উপকারি ফল।
এছাড়াও কাঁঠালের আরো বেশ কিছু বিশেষ বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। কি সেই উপকারিতা তা জেনে নেয়া যাকঃ
১। কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ করে:
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হলো কাঁঠারের সবচেয়ে বড় উপকারিতা। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি ব্যাকটেরিয়া থেকে দেহকে রক্ষা করার পাশাপাশি রক্তের শ্বেত কনিকার কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
২। ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয় প্রিয় কাঁঠাল:
কাঁঠালে থাকে ফাইটোনিউট্রিঅ্যান্ট। এটা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ করে সাথে এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধোক পদার্থ।
যেমন- কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, মুখ গহ্বরের সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রোসট্রেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাঁঠাল ভূমিকা রাখে।
৩। কাঁঠাল দেহের শক্তি বাড়ায়:
কার্বোহাইড্রেড এর পরিমান বেশি থাকায়, কাঁঠাল দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে।
আবার কাঁঠালে থাকে ফ্রূক্টোজ ও গ্লূকোজ। এগুলো দেহের সুগার এর মাত্রা না বাড়িয়েই দেহের শক্তি বাড়ায়।
৪। পাকা কাঁঠাল সৌন্দর্য ধরে রাখে:
কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে। ফলে বয়স বাড়লেও ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা যায় না।
এজন্য অনেকে আবার কাঁঠালের ফেসপ্যাক তৈরি করেন! কাঠালের ফেসপ্যাক সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক কার্যকরী।
৫। কাঁঠাল খাওয়া ফলে হজমে সাহায্য হয়:
খাদ্য হজমের বেলায় কাঁঠাল বিশেষ ভূমিকা রাখে। কাঁঠালে থাকে আলসার প্রতিরোধ করার বিশেষ উপদান। যা হজমেও সাহায্য করে।
৬। উচ্চ রক্ত চাপ কমায় কাঁঠাল:
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে থাকে ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। আমরা জানি পটাশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহয্য করে।
এভাবে কাঁঠাল উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্টোক থেকে রক্ষা করে।
৭। অ্যাজমা দূর করে কাঁঠাল:
কাঁঠাল মূলে মধ্যে অ্যাজমা প্রতিরোধী বিশেষ গুণ রয়েছে। এজন্য কাঁঠালের মূল বা শেকর পানিতে ফুটিয়ে নির্যাস বের করে তা সেবন করতে হবে।
৮। গর্ভ ধারণকারী মায়ের জন্য:
গর্ভ ধারণকারী মা যদি দিনে অন্তত ২০০ গ্রাম পরিমান পাকা কাঁঠাল খান, তাহলে গর্ভের শিশুর সকল পুষ্টির অভাব দূর হবে।
তাছাড়াও, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি হবে। পাশাপাশি কাঁঠালে থাকে নিয়াসিন, যা গর্ভবতী মায়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।
কাঁঠাল হরমন নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৯। রক্ত স্বল্পতায় দূর করে কাঁঠাল:
যারা রক্ত স্বল্পতায় ভূগছেন, কাঁঠাল তাদের রক্ত স্বল্পতা দূর করবে। কারন কাঁঠালে রয়েছে প্রয়োজনীয় মাত্রায় ভিটামিন এ, সি, ই, কে, ফলেট, ভিটামিন বি-৬ সহ কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম! এই উপাদান গুলো রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১০। চোখ ভালো রাখে কাঁঠাল:
আমরা সকলেই জানি যে ভিটামিন এ আমাদের চোখ ভালো রাখে। আর পাকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ রয়েছে।
তাছাড়া কাঁঠালে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের চোখের রেটিনা ভালো রাখে।
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা কি কি:
আমরা সুমিষ্ট কাঁঠালের কোষ খেয়ে, তার বিচি ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু, কাঁঠালের বীজ বা বিচির খাদ্য উপকারিতা কোনো অংশেই কম নয়।
কাঁঠালের বীজ তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। আবার অনেকে কাঁঠালের বিচি ভেজে বাদামের মতো করে খেতেও পছন্দ করেন।
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিমান:
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বীজে রয়েছে ৯৮ ক্যালরি। এছাড়াও, কার্বোহাইড্রেড আছে ৩৮.৪ গ্রাম, আমিষ আছে ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার আছে ১..৫ গ্রাম।
এছাড়াও, কাঁঠালের বিচির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১ ও বি-১২, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন, স্যাপোনিন সহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কাঁঠাল এর বিচি খাওয়ার বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা কি জেনে নিনঃ
১। কাঁঠালের বিচির মধ্যে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট। ফলে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই এন্টি অক্সিডেন্ট বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।
২। কাঁঠালের বিচির মধ্যে ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেড থাকার কারনে, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এ কারণে এটি আমাদের দেহে শক্তি যোগায়, কিন্তু আমাদের ওজন বাড়ে না।
৩। কাঁঠালের বিচির মধ্যে আমিষ/প্রোটিন বিদ্যমান। এই প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি! যাদের মাছ, মাংস বা প্রানীজ আমিষ খেতে সমস্যা, তারা কাঁঠালের বিচির মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
৪। কাঁঠালের বিচির মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। ফলে এটি ব্যাক্টেরিয়া থেকে আমাদেরে দেহকে রক্ষা করে।
৫। কাঁঠালের বিচির মধ্যে থাকে পটাশিময়াম। এটি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে।