বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার ৫টি সুবিধা ও অসুবিধা

বিসিএস ২৬টি ক্যাডার লিস্টের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার ৫টি বড় সুবিধা ও কিছু অসুবিধা নিয়ে আজ আলোচনা করব।

অভিজ্ঞ বড় ভাইদের থেকে সবচেয়ে বেশি যে কথা আমি শুনেছি তা হলো বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়া অনেক বেশি সহজ।

সহজ বলতে এমন নয় যে, যে কেউ চাইলেই শিক্ষা ক্যাডার পাবেন বা শিক্ষা ক্যাডার হয়ে যাবেন।

বরং সবাই বলে থাকে যে শিক্ষা ক্যাডার অনেক কম লিখিত নম্বর পেলেও হওয়া যায় আবার প্রিলিতেও নাকি নম্বর কম পেলেও টেকা যায়।

যাইহোক, আমাদের আলোচনার বিষয় শিক্ষা ক্যাডার হওয়া সহজ না কঠিন সেটি নয় বরং শিক্ষা ক্যাডার পেলে এর সুবিধা ও অসুবিধা কি কি তা নিয়ে আলোচনা করব।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার ৫টি বড় সুবিধা:

১। শিক্ষা ক্যাডারে ছুটি সবচেয়ে বেশি:

হ্যাঁ এই কথা সত্য যে বাংলাদেশে যত ধরনের চাকরি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি বেশি বলা যায়।

আপনি নিজেও এটি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন। শুধু কলেজ নয় বরং বাংলাদেশের যত প্রকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে ছুটির তারিখ অতি দীর্ঘ।

এমনকি স্বাভাবিক সময়েও পরিক্ষা জনিত ছুটি, আবহাওয়া জনিত ছুটি সহ অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের ছুটি তো রয়েছেই।

তাই আমার কাছে শিক্ষা ক্যাডার পেশায় অনেক বেশি ছুটির বিষয়টিকে বড় সুবিধা বলে মনে হয়েছে।

২। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মঘন্টার চাপ কম:

একজন বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকের নির্দিষ্ট সময়ে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিতে হয়। এর বাহিরে তিনি অফিসে বসে ব্যক্তিগত সময় কাটাতে পারেন।

এছাড়াও বছরের শেষ দিকে বর্ষিক পরিক্ষা, পাবলিক পরিক্ষার সময় ক্লাস বন্ধ থাকে।

আবার কোনো কোনো দিন রুটিনে ১টি ক্লাসও থাকতে না পারে।

তাই প্রতিষ্ঠানে ঘড়ির কাটা ধরে সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত অবস্থান করার সমস্যা আপাতত শিক্ষা ক্যাডারে নেই।

৩। উপভোগ্য ও সম্মানী একটি চাকরি:

একজন শিক্ষক সর্বদা তার শিক্ষকতা পেশাকে উপভোগ করে থাকেন এটা আমরা সবাই দেখি।

কর্মঘন্টার সময়ে শিক্ষকগণ সর্বদা শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমের পাঠদান করাতে থাকেন।

বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সাক্ষাৎ হতে থাকে। ফলে শিক্ষকতার চাকরিকে আপনার বোরিং মনে হবে না।

এছাড়াও আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে এসেও শিক্ষকগণই সমাজে বেশি সম্মানী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হন।

স্বাধীনতা সকল সরকারি চাকরিতে রয়েছে। কিন্তু শিক্ষদের মাঝে আমলাতান্ত্রিক টানাপরা নেই।

নিজেদের স্বার্থ ঊদ্ধারে শিক্ষকদের কেউ সাধারণত ব্যবহার করতে পারেনা বা ব্যবহার করা যায় না।

আবার শিক্ষদেরকে অন্যদের তেল দিয়ে চলতে হয়না। আর শিক্ষদেরও কেউ ঘাটাতে যান না।

তাই অনেকেই মনে করেন যে পেশাগত জীবনে নির্ভেজাল সময় পার করার অন্যতম ক্যাডার হতে পারে শিক্ষা ক্যাডার।

৫। পরিবার ও সন্তানদের সময় দেয়া যায়:

শিক্ষা ক্যাডার হলে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি আপনি আপনার সন্তানদের পড়াশোনার বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করতে পারবেন।

অর্থাৎ আপনি একজন সরকারি কলেজের শিক্ষাক। সুতরাং আপনি এমন জায়গায় পোস্টিং পাবেন, যেখানে মোটামুটি সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে।

তাই সন্তানের দেখাশোনা ও পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবেন শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি পেলে।

এতো সকল সুবিধা থাকলেও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার অনেক অসুবিধা রয়েছে।

তাই নিচে শিক্ষা ক্যাডারের কিছু প্রধান প্রধান অসুবিধার কথা তুলে ধরলাম।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কিছু অসুবিধা:

শিক্ষা ক্যাডারের কথা বললেই সবাই ১ম যে কথা বলেন সেটি হলো, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি সবচেয়ে কম।

আবার পদোন্নতি হতেও অনেক সময় লাগে। অন্যান্য কাডারগণ দ্রুত পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ক্যাডার পদোন্নতি হতে কয়েক বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

আবার পদোন্নতি হয় সাধারণত ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত।

শিক্ষক হওয়া বড়ই মজা, কিন্তু পরিক্ষার খাতা দেখা অনেক বিরক্তির কারণ। পরিক্ষার খাতা দেখাকে অনেক শিক্ষক প্যারা মনে করেন।

বলা হয়ে থাকে যে শিক্ষা ক্যাডারে পাওয়ার প্র্যাক্টিসের সুযোগ নেই।

অন্যান্য ক্যাডারগণ দেশের নীতিনির্ধারণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডােরে সে সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।

এছাড়াও শিক্ষা ক্যাডারকে ২৬টি ক্যাডারের নিচের দিকে স্থান দিতে চান অনেকেই।

অনেক বিসিএস ক্যাডার রয়েছেন যারা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার পেয়েও হীনমন্যতায় ভোগেন।

যাইহোক, বিসিএস ক্যাডার কোনোটিই খারাপ নয়। সকল চাকরির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা থাকবে।

তাই আমি মনে করি দেশের সকল বিসিএস ক্যাডারগণই বিশেষ সম্মানের অধিকারী। আর তাদের পেশাও তাদের মতো সম্মানের।

Leave a Comment