আজকে আমি আপনাদের সাথে ৬টি কিশোর উপন্যাস বই নিয়ে আলোচনা করবো।
এই বই পড়ে আমার নিজের মতামত ও রিভিউ দেয়ার চেষ্টা করবো।
আপনাদের সুবিধার জন্য এর pdf দিয়ে দিলাম।
সাইজ ২৮ এমবি মাত্র।
ডাউনলোড করে নিন নিচের লিংক থেকে
(বিঃদ্রঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফ্রি ফ্রি বই ডাউনলোডের সাইট থেকে পিডিএফ বই টি শেয়ারকৃত)
৬টি কিশোর উপন্যাস বই কাহিনী সংক্ষেপঃ
১। ইসকুল বাড়ি:
আমাদের ইসকুল-বাড়ির প্রধান জনাব আসাদ আঙ্কেল তুহিনকে পাঠিয়েছিলেন আমাদের এই ইসকুলবাড়িতে। সহজ-সরল ছেলে তুহিন।
প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিনের কথা আজো আমার চোখে ভাসে। প্রথম দিন থেকেই সবার সাথে মানিয়ে নিয়েছিল ও।
আমাদের ইসকুল বাড়ি সকল কাজ তদারকি করেন জুলিখালা আর রহমান খালু।
তাদের দুজনের স্নেহ আর সহপাঠী বন্ধুদের ভালবাসায় ইসকুল বাড়িতে দিনগুলো ভালই কাটে আমাদের। তো যাবে নাকি আমি আর আমার বন্ধুদের সাথে আমাদের প্রিয় ইসকুল বাড়িতে?
২। ছোটকুমার:
মায়ের সাথে কলকাতার এক পাড়াতে বসবাস করে কলি। কলির বাবা সাঈদ রেজা চোধুরী ছিলেন বাংলাদেশের লোক।
কলকাতায় ডাক্তারী পড়তে এসে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল কলির মায়ের। পরিচয় থেকে প্রণয় এরপর বিয়ে।
সাঈদ রেজা চৌধুরীর বাবা ছেলের এই আকষ্মিক বিবাহ্ কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। তাই রাগে তিনি রেজাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দেন।
কলির জন্মের কিছুদিন পরেই কলির বাবা রেজা চৌধুরী ধরাধামের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
হঠাৎ একদিন বাংলাদেশ থেকে একজন উকিল কলকাতায় কলিদের বাড়িতে উপস্থিত। সে বলে কলির দাদা নাকি কলিকে নিতে তাকে কলকাতায় পাঠিয়েছেন।
কিন্তু কেনো?
৩। ঘরের শত্রূ (২০০৪):
কদমতলি নামের কোন এক মফস্বল শহরের ছেলে আলম। পড়াশোনা এবং খেলধুলা দুটিতেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী সে।
তাদের শহরের তোরাবালি মাদবরের ছেলে পিন্টুর সাথে দা-কুমড়া সম্পর্ক আলমের। পিন্টু সবকিছুতেই তাকে নিয়ে হিংসেতে জ্বলে।
এদিকে হঠাৎ করেই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন আলমের মা। মৃত্যুশয্যায় ছেলের কাছে কিছু নির্মম সত্য বলে যান তিনি। যা শুনে স্তদ্ধ হয়ে যায় আলম।
৪। ফুলবাগান:
নয় বছর বয়সের ছোট্ট মেয়ে কান্তা। তার বাবা হাসান সাহেব জেলা প্রশাসক আর মা মিসেস হাসান একজন সঙ্গীত শিল্পী।
হঠাৎ সড়ক দূর্ঘটনায় দুজনের আকস্মিক মৃত্যু হলে এতিম হয়ে যায় কান্তা। আত্মীয়-স্বজন সবাই তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
শেষে ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হন তার বড় খালু জনাব রাজি উদ্দিন ভূইয়া। ভূইয়া সাহেব বিশাল সহায়-সম্পত্তির মালিক।
তার বিশাল এই সম্পত্তির মধ্যে বাড়ি-গাড়ি, জমি-জমা ছাড়াও রয়েছে কিছু ফুলবাগান। সবগুলো ফুলবাগানের পরিচর্যা করা হলেও একটি বাগান সবসময় পরিত্যক্ত থাকে।
কিন্তু কেনো? আর কি বা রহস্য?
৫। ক্লাস এইট:
মফস্বল শহরের নামজাদা এক মডেল স্কুলের ছাত্র সৈকত, আতিক, তপু, কামরুল সহ আরো অনেকে। সৈকত পড়াশোনায় সবচেয়ে ভাল তবে পারিবারিকভাবে অনেক অস্বচ্ছল।
আতিকের নেশা গল্পের বইয়ের প্রতি। মা-বাবা থেকেও নেই তার। তবে, তার এক ক্যাপ্টেন মামা আছে যে তাকে মা-বাবার চেয়েও বেশী স্নেহ করেন।
তপু ছেলেটা একটু ভীতু টাইপের। কিন্তু একদিন সে সবাইকে দেখিয়ে এমন এক কান্ড ঘটাল যে সবাই পুরো থ’ বনে গেল।
কামরুলের আসক্তি বক্সিংয়ের প্রতি। আরো আছেন ওদের হোস্টেল সুপার হারুন স্যার আর প্রতিবেশী ডাক্তার চুরুট। এদের সুখ-দুঃখ নিয়েই ক্লাস এইট।
৬। ইতিকথা (৬টি কিশোর উপন্যাস বই এর শেষ কাহিনী ২০০৩):
শামীম ও তার বোন নাসিমা শিকদার। শান্তিনীড় নামক বাড়িতে তাদের শান্তিময় আবাস। ভাই-বোন দুইয়েরই বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও বিয়ে থাঁ আর করা হয়নি।
শামীম শিকদার তার গেরস্থালী কাজে সাহায্যের জন্য এতিমখানা থেকে একটি ছেলেকে দত্তক নেবার চিন্তা ভাবনা করেন।
এতিমখানায় যোগাযোগ করলে এতিমখানার সুপার ছেলের বদলে এক ছোট্ট মেয়েকে পাঠায় তার কাছে। মেয়েটিকে আনতে স্টেশনে যায় শামীম। তার নাম ইতি।
শৈশবেই মা-বাবাকে হারিয়ে শেষে এতিমখানাই হয়েছিল তার শেষ ঠিকানা। রাস্তায় শামীম শিকদারের সাথে নানা গল্প-কথার শেষে শান্তি নীড়ে হাজির হয় সে।
শিকদার সাহেবের বোন প্রথমে ইতিকে রাখতে না চাইলেও শিকদার সাহেবের অনুরোধ আর ইতির আকুতির কাছে হার মানেন তিনি। তাদের ভালবাসা আর মায়া নিয়েই এই উপাখ্যান।
২০০২-০৪, এ দু’বছের মাঝেই আলাদা মলাটে এই ছয়টি কিশোর উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল। তবে, এক মলাটের ভেতর প্রথমবারের মত ২০১৬ এর শেষের দিকে পৃরকাশিত হয়।
অনেক খোজাখুজির পর শেষে কমলাপুর থেকে বগলদাবা করেছিলাম এই বই। তবে, এই বুড়ো বয়সে ‘কিশোর উপন্যাস’ ভাল লাগবে কিনা এ ধরনের একটা দ্ব্যর্থবোধকতা ছিল।
৬টি কিশোর উপন্যাস বই পড়ে আমার মন্তব্য:
ইসকুল-বাড়ি গল্পটি একটি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের সুখ-দুঃখ, চঞ্চলতা ইত্যাদি নিয়ে আবর্তিত হয়েছে! সালাম নামের একটি সহ চরিত্রের আগমনের মধ্য দিয়ে গল্প আরো জমে উঠে।
ছোটকুমার-গল্পটির প্রধাণ চরিত্র কলিকে ঘিরে কলির সাথে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষের অসম বন্ধুত্ত্ব। তার আগমনে তার দাদার হঠাৎ বদলে যাওয়া এ নিয়েই গল্প এগিয়েছে।
ঘরের শত্রু গল্প আলম নামের এক কিশোর ছেলের। ঢাকা শহরে নতুন এসে কাজ খুজতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়া। কিছু ভাল মানুষের সঙ্গ পেয়ে টিকে থাকার লড়াই নিয়েই এ গল্প।
কান্তা নামের এক বদরাগী মেয়ের হঠাৎ করেই জীবনে আমূল পরিবর্তন আসা। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ে ওঠা।
ভাল মানুষের সঙ্গ পেয়ে নিজে বদলে যাওয়া এবং আশেপাশের মানুষকে বদলে দেয়া এ নিয়েই গল্প।
ক্লাস এইটের কিছু ডানপিটে ছেলের স্কুল জীবনের গল্প নিয়েই এগিয়েছে উপন্যাসিকা। তাদের বন্ধুত্ত্ব, ভালবাসাই গল্পের মূখ্য উপজীব্য।
গল্পটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন আমি নিজেই ওদের সাথে ক্লাস এইটে পড়াশোনা করছি আর আমিও ওদেরই একজন।
এই বই সর্বশেষ গল্প হচ্ছে ফুলবাগান নামের এই উপন্যাসিকাটি! ইতি নামের এক এতিম মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে নাসিমা নামের এক চিরকুমারীর মাতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ গল্পে আর ইতির ডানপিটে কাজকারবার তো আছে।
ভাল লাগার দিক দিয়ে একটি গল্প আরেকটি থেকে কোন অংশেই কম নয়; অসাধারণ সব জীবন দর্শনে ভরপুর প্রায় প্রতিটি গল্প।
ঘরের শত্রু গল্পটিতে যদিও কিছুটা সিনেমাটিক আবহ্ আছে তবে, বাকিগুলো নিখুঁত। সবচে’ ভাল লেগেছে শেষের ‘ইতিকথা’ গল্পটি।
বইটির কিছু দূর্বল দিক হচ্ছে এর ছাপা অতি নিম্নমানের। বাইন্ডিং একেবারে যাচ্ছেতাই।তারিখ: ২৮-৯-২০১৭ থেকে ০১-১০-২০১৭
রিভিউটি লিখেছেন-
মুন্না হাসান