আজকে আমরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে ১০টি পার্থক্য জেনে নিব। কেননা বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে ভালো করে জানতে হলে, সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যেকার মূল পার্থক্য জানা থাকা আবশ্যক।
সংস্কৃতি বা কালচার:
সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত, আচার-আচরণ, ব্যবহার, জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিপ্রথা, আইন ইত্যাদির সমাবেশকে বলা হয় সংস্কৃতি বা কালচার।
সহজ কথায় বলা যায়, মানুষ সমাজে বাস করতে গিয়ে যে চিন্তা-চেতনা, শিল্পকলা, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণ, উৎপাদন কৌশল, আইন, আদালত, নীতি ইত্যাদি অর্জন করে বা সৃষ্টি করে তার সমষ্টি হলো সংস্কৃতি।
সভ্যতা বা সিভিলাইজেশন:
কোনো অঞ্চল বা অঞ্চল সমূহে যখন একটি জনগোষ্টি নগরপত্তন করে, উন্নততর জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তখন তার ঐ অগ্রগতির সহায়ক হিসেবে উদ্ভাবিত হয়- লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সুস্পষ্ট ধর্মীয় দর্শন।
মানব জাতীর এসকল আচরণের সম্মিলিত সমন্বয়কেই সভ্যতা বলা হয়। সহজ কথায়, আমাদের যা আছে তাই আমাদের সভ্যতা।
সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে ১০টি পার্থক্য:
(১) আমরা যা আছি বা যেমন আছি তা হলো কালচার বা সংস্কৃতি। কিন্তু আমাদের যা আছে তাই আমাদের সভ্যতা।
(২) সকল সোসাইটির সংস্কৃতি আছে; কিন্তু কিছু কিছু সোসাইটির সভ্যতা রয়েছে।
(৩) সংস্কৃতি আগে কিন্তু সভ্যতা পরে।
(৪) সংস্কৃতি হলো সভ্যতা গঠনের পূর্ব শর্ত।
(৫) সংস্কৃতি অতি জৈব (culture is super organic), কিন্তু সভ্যতা বাস্তব সংস্কৃতির একটি অংশ।
(৬) সংস্কৃতি হলো সম্পূর্ণ ঐতিহ্যগত, কিন্তু, সভ্যতা হল মহান এবং ছোট ঐতিহ্য।
(৭) সংস্কৃতি আমাদের অভ্যন্তরীণ সত্তাকে বিকশিত করতে সাহায্য করে, যেখানে সভ্যতা আমাদের বাইরের রূপের জন্য কাজ করে।
(৮) সংস্কৃতি কঠোর ভাবে আমাদের জীবন ও জীবন যাত্রার উপর প্রভাব ফেলে! কিন্তু সভ্যতা এতো কঠোর ভাবে আমাদের জীবন ও জীবন যাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
(৯) সংস্কৃতি সহজে শিখার বিষয় নয়। কিন্তু, সভ্যতা অপেক্ষাকৃত করায়ত্ত করা সহজ।
(১০) নকল সভ্যতা তৈরি করা সহজ। অপর দিকে সংস্কৃতিকে নকল করা একদম অসম্ভব।
সভ্যতা আর সংস্কৃতির মধ্যে আমরা যতই পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করি না কেনো, প্রকৃতপক্ষে সভ্যতা ও সংস্কৃতি একটি অপরটির সাথে জরিত।
যেমন, আমরা উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি যে- মিশরীয় সভ্যতার রয়েছে মিশরীয় সংস্কৃতি, আবার গ্রীক সভ্যতার রয়েছে গ্রীক সংস্কৃতি।