মনোবিজ্ঞান পরিচিতি ৩য় পর্ব

মনোবিজ্ঞান পরিচিতি ৩য় পর্ব ১ম অধ্যায়ের ৩নং ক্লাসে আমরা আলোচনা করবোঃ

  1. আচরণবাদ ও সামাজিক শিক্ষা তত্ত্ব (Behaviorism and Social learning theory)
  2. অবচেতন মনের সরুপ বা প্রকৃতি (nature of Unconscious mind)
  3. আর্থসংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ (Sociocultural Perspective)

আচরণবাদ ও সামাজিক শিক্ষা তত্ত্ব (Behaviorism and Social learning theory)


১৮৯০ এর শেষদিকে মনোবিজ্ঞানীদের একটি তৃতীয় গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে মনোবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিল।

উইলিয়াম জেমসের মতো, ইনারাও মনোবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া শিক্ষায় ডারউইনের অনুসারি ছিলেন, যেটা টিকে থাকতে কার্যকর।

জেমসের বিপরীতে তারা সচেতন অভিজ্ঞতার ক্রিয়ায় আগ্রহী ছিলো না। তাদের এ ধারণা আচরনবাদ (Behaviorism) নামে পরিচিত ছিলো।

কারন তারা মনে করতো যে, সচেতন অভিজ্ঞতাকে বৈজ্ঞনিকভাবে অধ্যায়ন করা সম্ভব নয়।

অপরদিকে আচরণবাদীরা অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত অভিযোজিত মানের গবেষণা করেন।

ইভান পাভলভ:
ইভান পাভলভ হলেন হজম অধ্যয়নের বিষয়ে আগ্রহী একজন রাশিয়ান ফিজিওলজিস্ট। তিনি তার পরীক্ষাগারে কুকুরদের খাওয়ানোর সময় লালা সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। তা লিপিবদ্ধ করার সাথে সাথে তিনি খেয়াল করলেন যে খাবারটি আসার আগেই তারা আসলে লালা ক্ষরণ শুরু করেছিলো! তিনি ভাবলেন, এটি প্রাকৃতিক নয়।

কুকুররা জানত যে খাবার আসছে, কারণ খাবার আসার সাথে সাথে পায়ের শব্দ শুনছে এটি শিখে নেওয়া প্রতিক্রিয়াটিকে “শর্তযুক্ত” প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

পাভলভ এই বিষয় নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, খাবার দেওয়ার আগে একটি ঘণ্টা বাজাতে শুরু করলেন।

নিশ্চিতভাবেই, বেশ কয়েকবার এই ঘণ্টা বাজাতে থাকার পরে, কুকুরগুলোকে ঘণ্টা বাজিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করালেন।

ঘণ্টা বাজানো এমন একটি ঘটনায় পরিণত হয়েছিল যেখানে ঘণ্টা বাজানো শুরু করলেই কুকুর গুলোর মুখ থেকে লালা ঝরা শুরু হতো! এমন কি তাদের খাবার না দিয়ে ঘণ্টা বাজালেও তাদের মুখ থেকে লালা ঝরতো! কারণ ঘণ্টা বাজানোর সাথে সাথেই তাদের খাবার খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো।

এটার মাধ্যমেই পাভলভ দেখানোর চেষ্টা করেন যে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের কারণে স্বজাতীয় প্রতিক্রিয়া নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।

অবচেতন মনের সরুপ বা প্রকৃতি (nature of Unconscious mind):

যখন অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতারা মস্তিষ্কের গঠন অথবা মানসিক চেতন প্রক্রিয়ার উপর বা প্রত্যক্ষ আচরনের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন অনেকে তখনও ভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলেন। তারা মনে করেন মানসিক প্রক্রিয়া অথবা সচেতন ভাবে করা ব্যবহার কোনােটিই, মানব মনোবিজ্ঞানের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে না।

বরং তারা মনে করেন অজ্ঞাত বশত করা প্রক্রিয়াই মুখ্য। এই কারণে, মনোবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার এই দলটি অবচেতন মনের (Unconscious mind) উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড এবং মনোঃসমীক্ষন (Sigmund Freud and Psychoanalysis):

সিমুন্ড ফ্রয়েড অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক ছিলেন। তিনি স্নায়ুবিজ্ঞান বা স্নায়ুতত্বের চিকিৎসা করতেন।

১৮৯০ সালের শুরুর দিকে সিমুন্ড ফ্রয়েড নিয়মিত ভাবে সাময়িকী লিখেন।

যেখানে তিনি বলেন যে অবচেতন মনে করা কাজের তুলনায় সচেতন ভাবে করা কাজের গুরুত্ব খুবই নগন্য।

মনোবৈজ্ঞানিক মূল সমস্যার সমাধান, তিনি, সহজাত অকাঙ্খা দিয়ে করার টেষ্টা করেন। বিশেষ করে কারো আগ্রাসীভাব ও যৌনতা অবচেতন মনের অংশ হিসেবে অবস্থান করে। তিনি মনে করেন যে এই অবচেতন আকাঙ্খাগুলো ও তাদের ঘিরে যে দ্বন্দ, এদের অস্তিত্ব আমাদের জানা না থাকলেও আমরা এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনোঃসমীক্ষন পদ্ধতিটি তার মৃত্যুর পরে বহু বার সংশোধিত করা হয়েছে।

আধুনিক মনোঃসমীক্ষনবীদরা এখনো ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে চলেন যা হলো মনোবৈজ্ঞানিক সমস্যার প্রধান উৎস অবচেতন মনের দ্বন্দ।

কিছু আধুনিক মনোঃসমীক্ষণবীদরা ফ্রয়েডের সকল ধারণাকেই মেনে নিয়েছেন।

মনুষ্য – মনোবিজ্ঞান ও অবচেতন মন ( Humanistic Psychology and Unconscious Mind):
১৯৫০ সালে অন্য একটি আন্দোলনে মনুষ্য মনোবিজ্ঞানের অজ্ঞাত উদয়নের নিয়মের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতারা, যেমনঃ আব্রাহাম ম্যাসলো, কার্ল রোগারস, ভিক্টর ফ্রাঙ্কলরা ফ্রয়েডের সাথে একমত হতে পারেননি, যে শুধু অবচেতন প্রক্রিয়াই মুখ্য।

অপর দিকে এরা মনে করেন যে, মানুষ সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারন করে থাকে, অবচেতন মনে নয়

আর্থসংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ (Sociocultural Perspective)

আর্থসংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একই আচারনকে দুটি সংস্কৃতিতে দুইভাবে দেখা যায় আর্থসংস্কৃতিক-দৃষ্টিকোণ ভালো ভাবে বুঝতে আমরা উদাহরণ দেখবো জাপান দেশটি আয়তনে বেশ ছোট।

কিন্তু এর জনসংখ্যা অধিক। তাই জাপানিরা যখন অফিস টাইমে লোকাল ট্রেনে যাওয়ার জন্য উঠে তখন প্রায়ই ট্রেনে যায়গা হয়না। তাই তখন ট্রেনের কর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ভিতরে পাঠায়।

এই ধাক্কা দেয়ায় তারা খুশি হয় এবং তাদের ধন্যবাদ জানায়।

অপর দিকে নিউর্য়াক সিটির নাগরিকদের ধাক্কা দিয়ে ট্রেনে উঠালে তারা কখনোই খুশি হবে না বরং তারা রাগ করবে এবং জাপানিদের তুলনায় ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

Leave a Comment