প্যাপিরাস কাকে বলে ? প্যাপিরাসের উদ্ভব ও অবদান জেনে নিন

প্রাচীন লিখন পদ্ধতিতে প্যাপিরাসের নামটি বিশেষ ভাবে জরিত। আজ আমরা জানবো প্যাপিরাস কি ও কাকে বলে এবং মিশরীয় লিখন ও সাহিত্য ক্ষেত্রে প্যাপিরাসের অবদান আসলে কি ছিলো?

মিশরীয়রা প্রাচীনকালে লেখা খোদায় করতে পাথর ও কাঠ ব্যবহার করত। পাথরে লেখা যতদিন সীমাবদ্ধ ছিল ততদিন, তারা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র শুধুমাত্র পাথরের উপরে লিখতো।

সাহিত্য বিষয়ক লেখা ছিল দীর্ঘ। ফলে পাথর বা কাঠের উপর সাহিত্য রচনা সম্ভব ছিলনা।

প্যাপিরাস কি ও কাকে বলে:

লেখার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে আদি মিশরীয় সভ্যতার মানুষ। তারা ধীরে ধীরে নলখাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ থেকে তৈরি করে লেখার উপকরণ।

আর লেখার এই উদ্ভিদের নাম হলো ”সাইপেরাস প্যাপিরাস”। এটাকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্যাপিরাস বলে। তবে প্যাপিরাস নামক উদ্ভিদ থেকে লেখার জন্য উদ্ভাবিত বস্তুকেও প্যাপিরাস বলে ডাকা হতো।

নীল নদের জলাভূমিতে প্যাপিরাস নামক উদ্ভিদ জন্মাতো। সেখান থেকে, প্যাপিরাস গাছের গোড়ার মজ্জা লম্বালম্বি করে কেটে নেওয়া হতো।

এরপর দুই কিংবা তিন স্তরে আড়াআড়ি ভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে চাপা দিয়ে পলিশ করে, তারপরে লেখার উপযোগী প্যাপিরাস তৈরি করা হতো।

নলখাগড়ার সহজলভ্যতার কারণে ও সহজে নির্মাণ কৌশল এর জন্য প্যাপিরাস অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে! এছাড়া, প্যাপিরাসের উৎপাদন খরচ ছিল খুবই কম। এটাও প্যাপিরাসের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ।

প্যাপিরাসকে লেখার উপযোগী করে তুলতে আরও কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন হয়। আর এর মোকাবেলায় মিশরীয়রা বিভিন্ন প্রকার রং তৈরি করতে থাকে।

এই রং তৈরি করা হতো নরম কার্বন, আঠা আর পানি মিশিয়ে। এভাবে মিশরীয়রা কালো কালি তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল।

পরে এভাবে তারা লেখার পাশাপাশি রং তুলির পূর্ণ ব্যবহার রপ্ত করে।

আরো ধরনা করা হয়, প্যাপিরাস থেকে পেপার এর উদ্ভব ঘটে। পেপার বা কাগজ আজো লিখন পদ্ধতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মিশরীয় সাহিত্য ও লিখন পদ্ধতিতে প্যাপিরাসের অবদান:

বিভিন্ন সময় মিশরীয়দের ব্যবহার করা লেখার উপকরণসমূহ, যেমন- হার, কাদামাটি হাতির দাঁত, চামড়া ,কাপড়, গাছের ছাল ইত্যাদির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলো প্যাপিরাস।

কারন, হাড়-চামড়া বা পাথর পাথরে, লেখা খোদাই করার চাইতে প্যাপিরাস ব্যবহার করে লেখা, তাড়াতাড়ি ও সুন্দর হয়।

কারণ, পাথর, কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করে, বড় সাহিত্য লেখা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো এবং লেখার নিরবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করা সম্ভব হতো না।

কাজেই এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে প্যাপিরাস ছিল একমাত্র অবলম্বন।

প্যাপিরাসের একটি মাত্র মাথা অন্যটির সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে দীর্ঘ কোণ তৈরি করা হতো।

ফলে এটিতে দীর্ঘ লেখার সুযোগ যেমন ছিল তা সংরক্ষন করাও অনেক সহজ ছিলো।

প্যাপিরাস অধিকাংশ আবিষ্কৃত হয়েছে পিরামিডের অভ্যান্তরে। মিশরের শুষ্ক আবহাওয়া ও সযত্ন সংগ্রহের জন্য প্যাপিরাস ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

প্যাপিরাসের আবিষ্কার বিশ্বদরবারে লিখনীর ক্ষেত্রে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটায়।

তাই বলা যায় প্যাপিরাসের উদ্ভাবন করা ছিলো মিশরীয়দের জন্য এক সূর্য দীপ্ত গৌরবের অধ্যায়।

Leave a Comment