লোভনীয় ফল পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি তা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
আমাদের প্রত্যকের বাড়িতে ২-১টি পেয়ারা গাছ দেখা যায়। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যক ভাবে পেয়ারা চাষ করা হয়।
পেয়ারা পরিচিতি:
পেয়ারা একটি টক জাতীয় ফল। ইংরেজিতে পেয়ারাকে গোয়াভা বলা হয়।
সারা পৃথিবীতে পেয়ারা জন্মাতে দেখা যায় এবং বর্তমানে পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় পেয়ারার আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন রং এর পেয়ারা দেখা যায়। তবে- সবুজ থেকে হলুদ ও লাল রং এর পেয়ারা বেশি পরিচিত! পেয়ারার বাহিরের আবরণ সামন্য পুরু বা পাতলা হয়।
এজন্য, পেয়ারা আবরণ সহ খাওয়া যায়। পেয়ারাতে থাকা ছোট ছোট বীজ সহ পেয়ারা খাওয়া যায়।
একটি পেয়ারা গাছ প্রায় ৩০ বছর বাঁচে। পেয়ারা গাছ, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেশি পরিমানে ফল দেয়! আমাদের দেশে কোনো কোনো স্থানে পেয়ারাকে সবরি বলা হয়।
আমাদের দেশে বরিশাল, সরুপকাঠি, ঝালকাঠি, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা জেলাতে ব্যপকভাবে পেয়ারা চাষ করা হয়।
পেয়ারার বহু গুনের কারণে, পেয়ারাকে নিরক্ষীয় এলাকার আপেল বলা হয়।
পেয়ারার পুষ্টিমান:
প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে প্রাপ্ত পুষ্টিমান নিচের তালিকায় দেয়া হলো
উপাদান | পরিমান |
---|---|
আমিষ | ১.৪ গ্রাম |
শ্বেতসার | ১৫.২ গ্রাম |
চর্বি | ১.১ গ্রাম |
খনিজ লবন | ০.৬ গ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.২১ মি. গ্রাম |
বি২ | ০.০৯ মি. গ্রাম |
ভিটামিন সি | ২১০ মি গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২০ মি. গ্রাম |
লৌহ | ১.৪ মি গ্রাম |
ক্যারোটিন | ১০০ মাই.গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ৭৬ কি.ক্যালরি |
পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা কি কি ?
১। পেয়ারাতে লেবুর তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে । আমলকি ছাড়া এতো ভিটামিন সি পেয়ারা ছাড়া আর কোনো ফলে নেই।
তাই পেয়ারা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে পারি।
ভিটামিন সি এর অভাবে যে সমস্ত রোগ হয়, সেগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারি পেয়ারা খাওয়ার মাধ্যমে।
২। পেয়ারা খেলে হাই ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া রক্ত সঞ্চালণ প্রক্রিয়া ভালো রাখে।
৩। হার্টের সমস্যায় পেয়ারা অনেক উপকারি। হার্টের সমস্যা ছাড়াও পেয়ারা খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই, উপকারিতা পেতে নিয়মিত পেয়ারা খেতে হবে।
৪। অ্যাজমা, স্কার্ভি, ওবিটিসি রোগের বিরুদ্ধে পেয়ারা অনেক উপকারি।
৫। পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। তাই পেয়ারা খেয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি।
৬। পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। এজন্য, পেয়ারা খেলে সুগার লেভেল ঠিক থাকে।
৭। ভিটামিন সি এর পাশাপাশি পেয়ারা খেলে রেটিনল পাওয়া যায়। এজন্য যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে, তারা পেয়ারা খেয়ে চোখ ভালো রাখতে পারেন।
৮। পাকস্থলিতে ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যায় পেয়ারা অনেক উপকারি। কারণ পেয়ারাতে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবাল উপাদান থাকে।
৯। যারা ওজন কমাতে চান, পেয়ারা তাদের জন্য বেস্ট চয়েজ। কারণ, পেয়ারা খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরে যাবে সহজেই।
১০। চুলের সমস্যা সমাধান করবে পেয়ারা। যাদের চুল ঝরে যাচ্ছে, বা চুলের সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে, তারা পেয়ারা খেলে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা হবে।
পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা কি কি ?
পেয়ারার মতো পেয়ারা পাতাতেও রয়েছে অনেক উপকারিতা। যেমন, পেয়ারা পাতায় রয়েছে শক্তিশালী উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এজন্য পেয়ারা পাতার জুস খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোনটেস্টিনাল সমস্যায় উপকারিতা পাওয়া যায়।
অবার পেয়ারা পাতা থেকে তৈরি জুস খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়। এছাড়াও, পেয়ারা পাতা আয়রন ও ফাইবার সমৃদ্ধ।
মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও পেয়ারা অনেক পছন্দ করে। আমাদের দেশে পাহাড়ি অঞ্চলে বা সবুুজ বনানী অঞ্চলে প্রচুর পেয়ারা গাছ দেখা যায়।
তৃণভোজী পশু পেয়ারা পাতা খেতে পছন্দ করে। বুলবুলি ও টিয়া পাখি পেয়ারা খেতে পছন্দ করে।
পেয়ারার ইংরেজি হলো গোয়াভা (Guava).
ভিটামিন সি বেশি থাকে।
পেয়ারা বর্ষাকালীন ফল। তবে সারা বছর ফলে।
পেয়ারাকে নিরক্ষীয় এলাকার আপেল বলা হয়।