ধর্মীয় ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতার অবদান বিস্তারিত জেনে নিন

ধর্মীয় ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতার অবদান, বৈশিষ্ট্য অন্য সকল সভ্যতার থেকে আলাদা ও রহস্যময়।

প্রাচীন মিশর আদিম নবোপলীয় সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নগর সভ্যতার পতন ঘটায় প্রায় খ্রিষ্ট্রপূর্ব ৫ হাজার অব্দে।

মিশরের সভ্যতা বিশ্বের সুপ্রাচীন সভ্যতার অন্যতম ছিল বলে একে মানবসভ্যতার আদিভূমি বলা হয়। সুদূর ৫ হাজার খ্রীষ্টপূর্বাব্দেও মিশরীয় সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞানে সমগ্র বিশ্বকে ছাড়িয়ে গিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল।

আর ধর্মীয় বিষয়ে মিশর ছিলো যেনো রহস্যপুরী। ধর্মচিন্তার ক্ষেত্রে মিশরীয়দের মধ্যে অন্যান্য বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতার অবদানঃ

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার শাসন ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়! সাম্রাজ্য যুগের ফারাওরা দেবতার নামে শাসন করতেন।

দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ন্ত্রিত হত ধর্ম মন্দিরে গড়ে ওঠা প্রশাসন মহল থেকে! প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় ধারণা বহুবাদ থেকে একেশ্বরবাদ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আবর্তিত হয়েছে।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাকে বিশ্লেষন করে অনেক দেবদেবীর বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন- তাদের প্রধান দেবতা ছিল “রো” অথবা ”রা”।

কিন্তু; পরবর্তীতে থিবসে মিশরের রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সূর্য দেবতার নাম পরিবর্তিত হয়ে যায় “আমন রা” বা “আমনরে”।

আবার অপরদিকে প্রাকৃতিক শক্তির দেবতা ও নীল নদের দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওসিরিস। মিশরীয়দের ধারণা মতে এই দুই দেবতা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালনা করেন।

এ ধর্মীয় ধারণা থেকে মিশরীয়রা ফারাও এবং রাজাদের দেহ-মমি করে রাখা শুরু করেছিলো। মিশরীয়রা ওসিরিসকে শস্য ও নীল নদের দেবতা বলে মনে করত।

এ সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি আছে। এই কিংবদন্তি থেকে ধারণা করা হয় যে শরৎকালের নীল নদের পানি শুকিয়ে যাওয়া এবং বর্ষায় আবার নতুন করে নীল নদের নতুন জীবন প্রাপ্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এছাড়া কিংবদন্তি অনুযায়ী দেবতা “সেট” কে হত্যা করে “হোরাসের” বিজয় অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের কথা ঘোষিত হয়েছে! এ কিংবদন্তির মধ্য দিয়ে দেবতাদের মানবীয় গুণ এর প্রতিফলন ঘটেছিল। পরে অবশ্য ওসিরিস মৃত্যুর দেবতা এ পরিণত হন।

দেবতা রে এর অস্তিত্ব থাকলেও তিনি দ্বিতীয় সারির দেবতা পরিণত হন! তারা মৃত্যু সম্পর্কে যে ধারণার সাথে পরিচিত ছিলেন তার ওপর আস্থা স্থাপন করে মৃতদেহ কে মমি করে রাখে।

মধ্য রাজবংশের শেষ থেকে সাম্রাজ্যর যুগের আরম্ভ পর্যন্ত সময়কালে মিশরীয় ধর্ম পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এ সময়ে দেবতা “রে” এবং “ওসিরিসি” একই সমান মর্যাদাযর আসনে আসীন হন।

সাম্রাজ্যবাদের যুগে ধর্মচিন্তার ক্ষেত্রে মিশরীয়দের অবক্ষয় লক্ষ্য করা যায়! পরে “এটন” নামে এক দেবতার পূজার প্রচলন দেখা যায়। ইতিহাসে এই “দেবতা এটন” ইখনাটন নামে পরিচিতি লাভ করে।

পরকাল সম্পর্কে মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস:

মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, মানুষের দেহের মধ্যে একটা ”বা” ও একটা “কা” আছে। “বা” হলো আত্তা আর কা হলো দ্বিতীয় সত্তা।

তাদের মতে, মৃত্যুর পর দেহ ছেড়ে বা ও কা চলে যায়।

কিছু দিন পরে “বা” এবং “কা” এসে  মৃত দেহকে পুনরায় জীবিত করতে পারে।

এজন্যই মিশরীয় সভ্যতায় মৃত দেহকে মমি করে রাখার প্রচলন করে। মিশরে সর্বপ্রথম ওসিরিসের দেহ মমি করে রাখা হয়।

এরপরে বিভিন্ন সম্রাট, মন্ত্রী, রাজাদের দেহ মমি করার প্রথা চালু হয়। জেনে রাখা ভালো যে মমি শব্দের অর্থ হলো- মম বা আলকাতরা।

মিশরীয় সভ্যতার মানুষ আরো বিশ্বাস করতো যে- মৃত্যুর পরে সকল মানুষকে দেবতা ওসিরিসের সামনে উপস্থিত হতে হবে।

শুধু তাই নয় তারা আরো বিশ্বাস করতো যে, পৃথিবীতে কৃত কর্মের জন্য প্রত্যেক আত্মাকে ওসিরিসের সামনে হিসাবের জন্য দাড়াতে হবে।

এরপরে চুরি, ছিন্তাই, মানুষ হত্যা, লোভ, হিংসা, মিথ্যা বলা সহ মোট ৪২টি পাপ কাজ করেনি মর্মে সবাইকে এর প্রমাণ দিতে হবে।

আবার আরো কয়েকটি ভালো কাজ করার প্রমাণ দিতে হতো।

এরপরে মৃত হৃদয়কে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পরিমাপ করা হয়।

এসবই ছিলো- প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস।

পরিশেষে বলা যায় যে প্রাচীন মিশরীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা যায়।

দেখা যায় ধর্মীয় ধারণা থেকে তারা মমি করে রাখার অনুপ্রেরণা পায় এমন কি পিরামিড নির্মাণ করাও আরম্ভ করে।

সুতরাং বলা যায় ধর্মীয় ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতার অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment