হেরোডাটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। প্রত্যক জাতীর একটি সুনির্দিষ্ট ইতিহাস রয়েছে। এজন্য ইতিহাস কাকে বলে, ইতিহাস শব্দের উৎপত্তি হলো কিভাবে এবং এর সংঙ্গা ও ব্যাখ্যা আমাদের জানা উচিত।
ইতিহাস কি ও কাকে বলে – তার সংঙ্গা:
ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ইতিহ নামক একটি শব্দ থেকে যার অর্থ হলো “ঐতিহ্য”। ঐতিহ্য হচ্ছে মানব জাতীর অতীত জীবনের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি যা ভবিষ্যতের জন্য সংক্ষিত থাকে।
এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় ইতিহাস। তাহলে বোঝা যায় যে ইতিহাস আমাদের ঐতিহ্যকে ধারন করে।
ই. এইচ, কার এর মতে ইতিহাসের সংঙ্গা- “বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ হলো ইতিহাস।”
ইতিহাসবিদ ড. জনসন, কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ইতিহাস বলেছেন। তিনি আরো বলেন- যা কিছু ঘটে তাই ইতিহাস আর যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়।
ইতিহাসবিদ র্যাপসন বলেছেন- “ইতিহাস হচ্ছে ঘটনার বৈজ্ঞানিক ও ধারাবাহিক বর্ণনা”
আধুনিক ইতিহাসের জনক হলেন জার্মান ঐতিহাসিক লিওপোন্ড ফন র্যাংকে। তার মতে “আসলে যা ঘটেছিলো তার অনুসন্ধান করা ও তার সত্য বিবরণই হলো ইতিহাস।”
বর্তমান সময়ের সকল বিষয়ই অতীতের ক্রমবিবর্তন হয়ে এবং অতীতের ঐতিহ্যর উপর নির্ভর করেই সৃষ্টি হয়েছে।
আর তাই আমরা বলতে পারি যে- “ অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যর বস্তুনিষ্ঠ বিবরনকেই ইতিহাস বলা হয়।”
আবার, এখন বর্তমান সময়ে এসেও আমরা ইতিহাস রচনা করে থাকি। আমাদের লেখা এই ইতিহাস সাম্প্রতিক ইতিহাস নামে পরিচিত।
ইতিহাস শব্দের উৎপত্তি ও ব্যাখ্যা:
ইতিহাস শব্দকে ভাঙ্গলে বা এর সন্ধিবিচ্ছেদ করলে আমরা পাই- ইতিহাস = ইতিহ + আস। এর মানে হলো- এমনই ছিলো বা এরকম ঘটেছিলো।
গ্রিক শব্দ ‘হিস্টরিয়া (Historia) থেকে ইংরেজি হিস্টরি (History) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো ইতিহাস।
হিস্টরিয়া নামক শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস। হেরোডোটাসই ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত।
তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণা কর্মের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হলাে সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা।
তিনি মনে করতেন ইতিহাস আসলে- যা সত্যিকার অর্থে ছিল বা যা আসলেই সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা।
তিনি তাঁর গবেষণায় গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করেছেন! এর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং গ্রিসের বিজয়গাঁথা লিখে রাখেন।
এর কারণ হলো- যাতে করে পরের প্রজন্ম কখনো এ ঘটনা ভূলে না যায়; আর এই ঘটনা যেনো তাদের উৎসাহ দেয় ও দেশপ্রেম বৃদ্ধি করে।
এভাবে হেরোডোটাস ইতিহাস অনুসন্ধান এর ধারনাকে যুক্ত করেন। এর ফলে ইতিহাস হয়ে ওঠে বিজ্ঞানময়, তথ্যনির্ভর ও গবেষনার একটি বিষয়।
আসলে, মানব সমাজের অনন্ত কাল ধরে চলমান ঘটনাপ্রবাহ হলো ইতিহাস।
সুতরাং ইতিহাস হলো মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারাবাহিক ও সত্যনিষ্ঠ বিবরণ। সঠিক ইতিহাস সর্বদা সত্যকে নির্ভর করে রচিত হয়।
হেরোডোটাস।
লিওপোন্ড ফন র্যাংকে।
এমনই ছিলো বা এরকম ঘটেছিলো।
ইতিহ + আস।
হিস্টোরি বা History.