ইতিহাসের উপাদান কি কি ও ইতিহাস পুনঃগঠন হলো কিভাবে

ইতিহাসের উপাদান কি কি বা ইতিহাস পুনঃগঠন হলো কিভাবে এই বিষয়টি আমাদের অনেকের অজানা। আজ আমরা ইতিহাস পুনঃগঠনের সকল উপাদান নিয়ে আলোচনা করবো।

যে সকল তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিক্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, সে সকল উপাদান সমূহকেই ইতিহাসের উপাদান বলে। ইতিহাসের উপাদানকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(১) লিখিত উপাদান।
(২) অলিখিত উপাদান।

ইতিহাসের লিখিত উপাদান কি কি:

ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশিবিদেশি সাহিত্যকর্মেও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

যেমন বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কলহনের রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ-উল-সিরাজের তবকাত-ই-নাসিরী, অবুল ফজল-এৱ আইন-ই-আকবরী ইত্যাদি।

বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়েছে।

যেমন- ৫ম থেকে ৭ম শতকে বাংলায় আগত চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং ও ইৎসিং-এর বর্ণনা।

পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বতুতা সহ অন্যদের লেখাতেও এ অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া গিয়েছে।

এসব বর্ণনা থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।

ইতিহাস পুনঃগঠনের সাহিত্য উপাদান:

(ক) জীবনী গ্রন্থ:
সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত।

(খ) দেশীয় সাহিত্য:
কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী, কালিদাসের মেঘদূত ইত্যাদি।

(গ) বিদেশীদের বিবরণী:
মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা, ফা-হিয়েনের ‘কো-কুয়াে-কি; হিউয়েন সাং এর “সি-ইউ-কি ইত্যাদি।

(ঘ) প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ:
রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ইত্যাদি।

(ঙ) অন্যান্য উৎস:
প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, সন্ধি-চুক্তি, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি।

ইতিহাসের অলিখিত উপাদান কি কি:

প্রত্নতাত্নিক উপাদান:
যে সকল বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই, সে সকল বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ মূলত অলিখিত উপাদান।

(ক) প্রাচীন লিপিমালা:
সরকারি লিপি: যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিদান, রাজার আদেশ, রাজার নাম, রাজ্য জয়, রাজ্যত্ব কাল, ধর্মীয় বিশ্বাস প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

বেসরকারি লিপি: বেসরকারি বলতে জনসাধারণে দ্বারা খোদাই যেমন পাথরে বা মন্দিরের গায়ে লেখা হতো।

(খ) প্রাচীন মুদ্রা:
মুদ্রায় রাজার নাম, সন তারিখ, রাজার মূর্তি, নানান দেব-দেবীর মূর্তি খােদাই করা থাকত। যা থেকে রাজার সময়কাল, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সমাজব্যবস্থা ও ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

(গ) বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ:
প্রত্ন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন সমাধি, স্মৃতি স্তম্ভ, প্রাচীন শিল্পকীর্তি, দেব-দেবীর মূর্তি, মৃৎশিল্প, মৃৎপাত্র; তৈজসপত্র ইত্যাদিকে প্রাচীন ভারতের প্রত্নত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যেগুলাে থেকে সভ্যতার উৎকর্ষ যেমন বােঝা যায়, তেমনি এতে নাগরিক জ্ঞানের সৌন্দর্যভাব ও সাংস্কৃতিক মনােভাবও সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে।

ঘ) বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষঃ
বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহারপুর, ময়নামতি নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর ইত্যাদি।

(ঙ) সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস বা প্রথা:

অতিকথন, রূপকথা, গান, কাহিনিমালা ইত্যাদি। বেদ প্রথম দিকে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। এজন্য একে শ্রুতি’ বলা হতাে।

পরবর্তীকালে একাধিক রচয়িতা যেমন- ঋষি বশিষ্ট, বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ, রামদেব, ভৃগু প্রমুখ দীর্ঘদিন ধরে বেদ রচনা করেন।

(চ) পুঁথি:
একসময় পুঁথিও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। এ সমস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ধারণা করা সম্ভব হয়- প্রাচীন অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, নগরায়ণ, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের কথা।

নতুন নতুন প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে পারে একটি জাতির ইতিহাস। যেমন- সম্প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার!

ঐ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশে আড়াই হাজার বছর পূর্বেও নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল।

এই আবিষ্কারের ফলে বাংলার প্রাচীন সভ্যতার নবদিগন্ত উন্মােচিত হতে যাচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে অনেক ধারণা। অদূর ভবিষ্যতে নতুন ভাবে লিখতে হবে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:

ইতিহাসের উপাদান বলতে কি বোঝো?

যে সকল উপাদান থেকে ইতিহাসের সত্যকে পুনঃগঠন করা যায়, তাকে ইতিহাসের উপাদান বলে।

ইতিহাসের উপাদান কয়টি?

২ টি।

কি কি ?

লিখিত ও অলিখিত উপাদান।

লিখিত উপাদান কি কি?

জীবনী গ্রন্থ, সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ ইত্যাদি।

ইতিহাসের অলিখিত উপাদানগুলো কি কি?

স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মুদ্রা, লিপিমালা, পুঁথি ইত্যাদি।

ইন্ডিকা কে রচনা করেন?

মেগাস্থিনিস

রামচরিত কে রচনা করেন?

সন্ধ্যাকর নন্দী।

মেঘদূত কে রচনা করেন ?

কালীদাস।

কয়েকটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ কি কি?

মহাসস্থানগর, পাহাড়পুর, ময়নামতি, ওয়্যারী-বটেশ্বর।

Leave a Comment