আমরা অনেকেই জানি না যে- কিভাবে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয়, কিংবা, কিভাবে এতো সহজে আমরা বাজারে সিলিন্ডারে ভর্তি করা তৈরি অক্সিজেন গ্যাস পেয়ে থাকি?
অক্সিজেন ছাড়া জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এমনকি আমাদের দেহে মাত্র তিন থেকে চার মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য।
ঠিক এই কারনেই, আমাদের ঘুম কিংবা সচেতন ও অচেতন সকল অবস্থাতেই আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি।
অক্সিজেন গ্যাস আমরা প্রাকৃতিক ভাবে পেয়ে থাকলেও, এটা আমাদের জীবন রক্ষাকারী মহামূল্যবান উপাদান।
বিশেষ করে হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য, অথবা শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার অপরিহার্য।
রোগীদের জন্য অক্সিজেনের বিশেষ সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এজন্য বাণিজ্যিক ভাবে অক্সিজেন তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করা হয়।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি উপায়ে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয়।
প্রকৃতিতে কিভাবে সহজে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয়:
আমরা জানি যে, সকল উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে জীবন ধারন করে বেঁচে থাকে।
ফলে সালোকসংশ্লেষণ সমস্ত উদ্ভিদ কূলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রকিয়া।
আর এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মূলত উদ্ভিদ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে থাকে।
উদ্ভিদের, প্রাণীর মতো শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর জন্য বিশেষ কোনো অঙ্গ নেই।
তবে উদ্ভিদের পাতায় স্টোমাটা নামক এক ধরনের উপাদান থাকে এবং উদ্ভিদের পরিনত কান্ড বা বাকলে লেন্টিসেল থাকে, যার মাধ্যমে, উদ্ভিদ অক্সিজেন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাস অদান প্রদান করে।
উদ্ভিদের দেহে এই সকল প্রক্রিয়া ঘটে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে।
এজন্য উদ্ভিদ প্রথমে বায়ু থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহন করে এবং অক্সিজেন গ্যাস বায়ুতে ত্যাগ করে।
তবে শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ অক্সিজেন গ্রহন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে।
সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যামে যেমন করে উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস গ্রহন করে ও অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে, তেমন করে মাটি থেকে মূলের সাহায্যে পানি সংগ্রহ করে খাদ্য তৈরি করে।
ঠিক এই সময়ে উপজাত হিসেবে মূল্যবান অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয় এবং বায়ুতে মিশে যায়। আর আমরা সহজে বায়ু মন্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহন করি।
বাড়িতে বা ল্যাবরেটরিতে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করার উপায়:
ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। যেমন পানির মধ্যে ইলেক্ট্রলাইসিস করে সহজে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করা যায়।
এছাড়াও কার্বন-ডাই অক্সাইডকে বিশ্লেষন করেও অক্সিজেন পাওয়া যায়।
তবে, সবচেয়ে সহজ একটি পদ্ধতি হলো, ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রেটকে তাপ প্রয়োগ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করা।
এক্ষেত্রে কঠিন ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রেটকে তাপ প্রয়োগ করলে, যথাক্রমে ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হবে। বিক্রিয়াটি নিচে দেয়া হলোঃ
অক্সিজেন গ্যাস তৈরি পূর্ব বিশেষ সতর্কতা:
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে কিংবা বাড়িতে নিয়ম ও সতর্কতা মেনেও অক্সিজেন গ্যাস তৈরি ও সংরক্ষন করা যেতে পারে।
তবে ল্যাবরেটরি ছাড়া বাড়িতে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করা মোটেই উচিত নয়।
কারণ আমরা জানি অক্সিজেন গ্যাস আগুন জ্বলতে সাহায্য করে। ফলে সামন্য ভুল থেকে ঘটতে পারে বিড়াট বিপদ।
যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমেই অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করতে হয়, সুতরাং অক্সিজেন গ্যাস তৈরির জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ রসায়নবিদের সাহায্য নিতে হবে।
ল্যাবরেটরিতে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি সহ সকল কাজে ল্যাবরেটরির আদর্শ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।