মিশরীয় সভ্যতার পরিচয় ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা মিশরীয় সভ্যতার পরিচয় ইতিহাস এবং প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা করবো! নদীমাতৃক সভ্যতা গুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মিশরীয় সভ্যতা। 

খ্রিস্টের জন্মের ৫ হাজার বছর পূর্বে মিশরের নীল নদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রাচীনকালে মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করত।

তাই যেখানে প্রচুর ফসল ফলতো, সেখানেই মানুষ বসতি স্থাপন করত এবং এভাবেই নদী বিধৌত এলাকাগুলো সমৃদ্ধশালী জনপদে পরিণত হতো।

মিশর নীল নদের তীরে অবস্থিত ছিল বলে সেখানে গড়ে উঠেছিল এক উন্নত সভ্যতা। আর ইতিহাসে এটাই মিশরীয় সভ্যতা নামে আজ আমাদের কাছে পরিচিত।

মিশরীয় সভ্যতার পরিচয় ইতিহাস ও ভৌগোলিক বর্ণনা:

মিশর উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত। দেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিনে নবিয়ান মরুভূমি, পূর্বে লোহিত সাগর এবং পশ্চিমে লিবিয়ার মরুভূমির।

মরুভূমির উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম নীল নদ! নদীর নিম্ন ভূমির উপর দিয়ে প্রায় ৪ হাজার মাইল প্রবাহিত হয়ে অবশেষে গিয়ে মিশেছে ভূমধ্যসাগরে।

আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও মিশরে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে! গ্রীষ্মকালে আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পানি যখন নীল নদ বেয়ে নেমে আসে, তখন দ্রুত নদী স্ফীত হয়ে উঠে এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।

বন্যার ফলে উপত্যাকা অঞ্চলের মাটি আদ্র ও উর্বর পলিযুক্ত হয়ে উঠে। এভাবে মিশর প্রাচীন কাল থেকে উর্বর ভূমিতে পরিণত হয় এবং জনবসতির উপযোগী হয়ে ওঠে।

প্রাচীন মিশরের আয়তন ছিল ১০ হাজার বর্গমাইলেরও কম! মিশরের বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত করে।

মিশরীয় সভ্যতা ও এর বৈশিষ্ট্য সমূহ:

১। মিশরীয় সভ্যতার সামাজিক অবস্থা:

মিশরীয় সভ্যতায়- ক্ষমতা, ধর্ম, আমলা, কৃষক, শ্রমজীবী ও দাসত্বের উপর ভিত্তি করে সামাজিক শ্রেণী গড়ে উঠেছিল! সমাজের শিরোমনি ছিল রাজপরিবার। আর তার নিচে ছিল পুরোহিত এবং সামন্ত নৃপ্রতি।

আবার তার নীচে ছিল লিপিকার, কারিগর, কৃষক এবং সর্বনিম্নে ছিলো ভূমিদাস এবং শ্রমজীবী মানুষেরা।

ভূমিদাস ছিল সমাজের পরাধীন শ্রেণী এবং অন্যান্য শ্রেণি ছিলো স্বাধীন। তাই বলা যায়, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমাজে বর্ণ বৈষম্য বিদ্যমান ছিলো।

২। মিশরীয় সভ্যতার রাজনৈতিক অবস্থা:

প্রাচীন মিশরের রাজাকে ফারাও বলা হতো। রাজা নিজেকে দেবতার বংশধর বলে দাবি করতেন এবং রাজার ক্ষমতা ছিল নিরঙ্কুশ।

মিশরের বিখ্যাত রাজাদের মধ্যে প্রথম বাটমোস, তৃতীয় বাটমোস এবং দ্বিতীয় রামেসিস এবং তৃতীয় রামেসিসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মন্দিরের পুরোহিত সম্প্রদায়ের যথেষ্ট ধন সম্পদ ছিল। এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

৩। মিশরীয় সভ্যতার অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা:

প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতির প্রধান উৎস ছিল কৃষিকাজ। সেখানে সামন্ত পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হতো। অর্থাৎ দাসেরা কৃষি কাজ করতো এবং মুনিবগণ উৎপাদিত ফসল ভোগ করত।

এমনকি মনিবগন দাসদের উপর অত্যাচারও করত। নীলনদের বন্যার কারণে মিশরের জমি বেশি উর্বর ছিল। তাই সেখানে প্রচুর পরিমাণে গম, যব, পেঁয়াজ, শাকসবজি ইত্যাদি উৎপাদন হতো। মিশরের রাজা বা শাসক ছিলেন জমির মালিক।

৪। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ধর্মীয় বিবরণ:

মিশরীয়দের সামাজিক জীবন ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। তারা পুর্নজন্মতে বিশ্বাসী ছিল। তাই মৃতদেহকে মমি করে রাখতো।

তাদের ধর্মীয় জীবনে বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়! তারা সমাধি ও মন্দিরে, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, অলংকার, মণিমুক্তা, ও নানা ধরনের খাদ্য, পানীয় সরবরাহ করত।

তাদের মধ্যে টোটেম বিশ্বাস বিদ্যমান ছিল! তারা কোনো গাছপালা বা পশুপাখির নামে নিজেদের গোত্রের পরিচয় দিত।

৫। মিশরীয় সভ্যতার স্থাপত্য শিল্প:

প্রাচীন মিশরে শিল্পকর্মের চরম বিকাশ ঘটেছিল। মিশরীয় সভ্যতায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের যে চরম বিকাশ ঘটেছিল তার নিদর্শন হল প্রাচীন মিশরের পিরামিড ও মন্দির। এই স্থপনা সমূহ আজও টিকে রয়েছে।

৬। মিশরীয় সভ্যতার লিখনী ও সাহিত্য:

মিশরের ভাষা ছিল সেমেটিক। তৎকালীন মিশরীয়দের উল্লেখযোগ্য অবদান হলো লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার। ধর্মকে ভিত্তি করে মিশরীয়রা সাহিত্যকর্মে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

শিক্ষাকে মিশরীয় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করত। ৩৬৫ দিনে ১ বছর হয়, ১ বছরে ১২ মাস এবং ১ মাসে ৩০ দিন- এটা মিশরীয়রাই আবিষ্কার করেছিল।

৭। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা:

মিশরীয়রা জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেছিল। তারা গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্রে বেশ পারদর্শী ছিল।

তারা পিড়ামিড ও মন্দির নির্মাণের জন্য প্রকৌশল বিদ্যা অর্জন করেছিল। প্রথমে তারা চন্দ্র মাসের হিসাবে বছর গণনা করত।

কিন্তু পরে সৌর মাস হিসেবে বছর গণনা করতে শুরু করে।

প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে মিশরীয় সভ্যতা ছিল অন্যতম জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, সভ্যতা এবং নব নব আবিষ্কারে মিশর ছিল বিশ্বসভ্যতায় অগ্রগামী।

তবে একথাও ঠিক যে মিশরীয় সভ্যতার পেছনে রয়েছে নীলনদের অবিস্মরণীয় অবদান! নীল নদের অববাহিকায় কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি লাভ করেছিল বলেই প্রাচীন মিশরকে নীলনদের দান বলা হয়।

সূত্র- https://bn.wikipedia.org/

Leave a Comment