পবিত্র কুরআনের দার্শনিক শিক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক চিন্তাভাবনা

প্রিয় পাঠক, সারা বিশ্ব-জাহানে পবিত্র কুরআন এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ। আজকে আমরা পবিত্র কুরআনের দার্শনিক শিক্ষা (philosophical teaching of the Quran) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে যাচ্ছি।

মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে সর্বকালের, সকল স্তরের মানুষের জন্য। আল কুরআন মূলত মহান আল্লাহর বাণী বা কথা।

পবিত্র কুরআন সকল মানুষ্য ও জীন জাতীর জন্য একটি আদর্শ গাইডলাইন এবং শিক্ষা। এই মহাগ্রন্থকে মানব জাতীর পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা বলা হয়।

কুরআন মাজিদ মহান আল্লার কালাম। কালাম অর্থ- কথা বা বাণী। মহান আল্লাহ কুরআনকে অবতীর্ত করেছেন- সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী ও রাসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর।

অপর দিকে পবিত্র কুরআন হলো মহান আল্লার নিকট হতে প্রাপ্ত সর্ব শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব।

ধর্ম, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, দার্শনিক শিক্ষা সহ সকল ক্ষেত্রে কুরআনের মুযিজা অবিশ্বাস্য।

পবিত্র কুরআনের দার্শনিক মহত্ত্বঃ

মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিলের পূর্বে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের উপর বহু আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে।

খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের উপর আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছিলো, এজন্য তারা মুসলিমদের নিকট বিশেষ সম্মানের; তবে, পবিত্র কুরআন নাজিলের পরে ঐ সমস্ত আসমানি কিতাব রহিত হয়ে যায়।

যেমন পবিত্র কুরআন ছাড়াও পুর্বে তাওরাত, যাবূর ও ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছিলো এবং পবিত্র কুরআন নাজিল করার মাধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ ঐ সকল কিতাবকে রহিত বলে ঘোষণা করেন।

এজন্য ঐ সমস্ত আসমানি কিতাবের উপর মুসলিমদের বিশ্বাস রয়েছে, তবে পবিত্র কুরআনুল কারিম হলো সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ধর্মগ্রন্থ।

পবিত্র কুরআনের দ্বারা প্রচারিত বাণী বা শিক্ষা একেবারেই নতুন নয়, কেননা, পূর্বেও এমনভাবে নবীদের উপর বাণী প্রেরিত হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের বাণী ও শিক্ষা হলো সর্বাধুনিক। নূহ (আঃ) ও ইব্রাহিম (আঃ) এর উপরও এরুপ বাণী নাজিল হয়েছিলো তেমনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাজিল হয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাতৃভাষা ছিলো আরবী এবং তৎকালিন আরবের ভাষাও ছিলো আরবী, যেখানে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়; তাই পবিত্র কুরআনের ভাষাও আরবী।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে, জুলুম ও অন্যায়কারীদের জন্য উপদেশ এবং সৎকর্মশীলদের জন্য সুসংবাদ প্রদান করেছেন।

কুরআনের বাণী নির্ভূল এবং অপরিবর্তনযোগ্য এবং আল্লাহ নিজেই পবিত্র কুরআনের হেফাজতকারী।

আল-কুরআন মূলত ধর্মীয় একটি বই! এটি কোনো দর্শন বা দার্শনিক শিক্ষার বই নয়।

তবুও দর্শন ও দার্শনিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সুন্দর ও সহজ সমাধান রয়েছে পবিত্র কুরআনে! জীবন ও জগৎ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক প্রশ্নের সরাসরি উত্তর রয়েছে পবিত্র কুরআনে।

জগৎ সৃষ্টির রহস্য, মানুষ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রভৃতি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে! মহান আল্লার অস্তিত্ব সম্পর্কে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে, ব্যক্তি ও আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টি মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে।

মানুষের মৃত্যুর পর রুহ বা আত্মার কি হয়, কোথায় যায়, কোথায় থাকে, এই সমস্ত দার্শনিক প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয় মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন ।

পবিত্র কুরআনের বিষয় ভিত্তিক দার্শনিক আলোচনাঃ

ভালো ও মন্দ, হক ও বাতিল (good and evil); ইচ্ছার স্বাধীনতা (free of will) এবং মৃত্যুর পরের জীবন বা আখিরাত (life after death) সম্পর্কে কুরআনে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

বিভিন্ন প্রকার দার্শনিক বইয়ে এই সমস্ত প্রশ্নের সরাসরি কোনো সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না, অথচ পবিত্র কুরআন নিজেই এই সমস্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদান করতে সক্ষম।

প্রত্যক্ষণ ও বাস্তব (appearance and reality), অস্তিত্ব ও গুণাবলী (existence and attributes); মানুষের উৎপত্তি (Human origin), সত্য ও ভূল (truth and error) ইত্যাদি নৈতিক আলোচনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে।

এছাড়াও স্থান ও কাল (space and time), স্থায়ীত্ব ও পরিবর্তন (permanence and change); অসীম ও অনন্ত (eternity and immortality) ইত্যাদি বিভিন্ন দার্শনিক সমস্যার আলোাচনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে।

উক্ত বিষয় সমূহ দর্শনের মৌলিক আলোচনা হলেও, আমরা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে উক্ত দার্শনিক শিক্ষা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারি।

দর্শন বা দার্শনিক শিক্ষার একটি বই সকল স্তরের মানুষের নিকট বোধগম্য হয় না।

কিন্তু পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ও বাণী বোঝা সকল স্থানের ও সকল সময়ের মানুষের জন্য অধিক সহজতর! এজন্যই বলা হয় পবিত্র কুরআন প্রজ্ঞার বই (Book of wisdom)

উক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, দার্শনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের তাৎপর্য অপরিসিম, এবং পবিত্র কুরআন থেকে অর্জিত দার্শনিক শিক্ষা আমাদের চিন্তার জগতকে আরো উন্নত ও প্রসারিত করবে।

  • উক্ত পবিত্র কুরআনের দার্শনিক শিক্ষা A History of Muslim Philosophy vol-1 বই থেকে অনুবাদকৃত।

দার্শনিক শিক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরঃ

প্রশ্নঃ দর্শন কি?

উত্তরঃ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষনিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো দর্শন।

প্রশ্নঃ মুসলিম দর্শন কাকে বলে?

উত্তরঃ কুরআন ও হাদিসের আলোকে- আল্লাহ অস্তিত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব, জীবন, আত্মা, ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রভৃতি সম্পর্কে যৌক্তিক ও বিশ্লেষনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে মুসলিম দর্শন বলে।
ড. আমিনুল ইসলাম বলেছেন; “মুসলিম দর্শন বলতে বুঝায় এমন এক মূল্যবোধ ও জীবন আদর্শকে যার উৎপত্তি কুরআন ও হাদিস থেকে এবং যা ক্রমবিকশিত হয়েছে পরবর্তীকালে আবির্ভূত বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের জীবন ও জগতের জিঙ্গাসার ফলশ্রুতিতে।

প্রশ্নঃ মুসলিম দর্শনের উৎস কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ মুসলিম দর্শনের উৎস ২টি। যথাঃ (১)অভ্যান্তরিন দিক, যেমন: কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস। (২) বাহ্যিক দিক।

পবিত্র কোরআনের হেফাজতকারী কে?

মহান আল্লাহ।

কুরআনে মোট কয়টি সূরা রয়েছে?

১২৮ টি।

পবিত্র কুরআন কার বাণী?

মহান আল্লাহ।

পবিত্র কুরআন কার উপর নাজিল হয়েছে?

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর।

পবিত্র কুরআন কাদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ?

মুসলিমদের। তবে সারা বিশ্বের সকল মানুষের মুক্তির পথ হলো কুরআন।

কুরআনের মূল ভাষা কি?

আরবি ভাষা।

পবিত্র কুরআন কোথায় সংরক্ষিত আছে?

লাওহেমাহফুজে।

Leave a Comment