আজকে আমরা এই মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে সে সংক্রান্ত কয়েকটি মতবাদ সম্পর্কে জানবো।
মানুষের নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এবং উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় প্রকৃতিকে জয় করার প্রচেষ্টার ফসল হলো সভ্যতা।
নব্যপ্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ নতুন নতুন হাতিয়ার আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং নদী তীরবর্তী ভূমিতে কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকার পথ সুগম করেছিলো।
কিন্তু তার অনেক আগেই মানুব ইতিহাস রচিত। মানুষের সেই উৎপত্তি আমাদের জানতে হবে।
মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে সে সংক্রান্ত কয়েকটি মতবাদ:
মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে তা নিয়ে আদিকাল থেকেই অনেক চিন্তাভাবনা ও গবেষণা হয়ে আসছে।
ফলে এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টিও হয়েছে। এসব মতবাদগুলােকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা:
১. মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বজনীন ধর্মীয় মতবাদ;
২. মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে পৌরাণিক বিশ্বাস ও কাল্পনিক সৃষ্টি মতবাদ;
৩. মানুষের উৎপত্তি নিয়ে আদর্শবাদী দর্শন ও অধিবিদ্যার মতবাদ;
৪. মানুষের উৎপত্তি বিষয়ে বিজ্ঞানীদের দেয়া মতবাদ সমূহ।
আপাতদৃষ্টিতে প্রথম তিনটি মতবাদ যদিও একই বৈশিষ্ট্যের মনে হলেও এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে! নিম্নলিখিত ভাবে এ মতবাদ গুলাে ব্যাখ্যা করা হলাে :
মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে সর্বজনীন ধর্মীয় মতবাদ :
মানুষ উৎপত্তি সম্পর্কে প্রধান প্রধান ধর্মীয় ব্যাখ্যা সর্বজনীন।
এসবের ভিত্তিতে ধর্মপ্রচারকগণ ঐশীবাণী সম্বলিত ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ঐশীবাণী অবলম্বনে মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কিত মতবাদ ব্যাখ্যা করেছেন। খ্রিস্ট ও ইহুদি উভয় ধর্মই সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী।
জাবুর শরীফে হযরত দাউদ (আ) এর উপর অবর্তীণ সৃষ্টি মতবাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, মাবুদের কালামে আসমান তৈরি হয়েছে যার মধ্যে যা আছে সেসব কিছু তৈরি হয়েছে তার মুখের শ্বাসে (৩৩ : ৬)।
এ সম্পর্কে অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে যে তিনি বললেন, আর সমস্ত কিছু সৃষ্টি হলাে তিনি হুকুম দিলেন আর সমস্ত কিছু প্রতিষ্ঠিত হলাে (৩৩.৯)!
কুরআনে অবতীর্ন প্রথম আয়াত হচ্ছে, “পড় তােমার প্রতিপালকের। নামে, যিনি তােমাকে সৃষ্টি করেছেন।
কুরআন ও বাইবেলে উল্লেখ আছে, আল্লাহ মানুষকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন! হযরত আদম (আ) ছিলেন প্রথম মানব এবং পৃথিবীতে তাদের বংশধররা মানুষ হিসেবে পরিচিত।
কুরআনে প্রায় একই মত পােষণ করা হয় যে; “তােমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি আরসে সমাসীন হন।”
হিন্দুদের বিশ্বাস মতে, সৃষ্টির আদিতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রাণী বা অন্য কিছুই ছিল না।
কিন্তু সমস্ত শূন্যকে ব্রহ্মা পূর্ণ করেন এবং তিনিই ঈশ্বর। সৃষ্টি বিস্তারের জন্য তিনি তার মানস পুত্র ঋষিদের সৃষ্টি করলেন।
কিন্তু বংশবিস্তারে মনােযােগ না দিয়ে ঋষিরা তপস্যায় মগ্ন হলেন। ফলে তখন ব্রহ্মার মূর্তি থেকে নারী ও পুরুষের জন্ম হয়।
পুরুষের নাম স্বয়ম্ভর মুন এবং নারীর নাম শতরূপা। মনুর সন্তানেরা মানব নামে পরিচিত হয়।
মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে সে সংক্রান্ত পৌরাণিক বিশ্বাস ও কাল্পনিক সৃষ্টি মতবাদ :
এ তত্ত্বের ভিত্তি হচ্ছে পৌরাণিক বিশ্বাস, লােককাহিনী, উপকথা, জনশ্রুতি। এগুলাের অনেকগুলাে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত।
যেমন প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতাগুলাে সৃষ্টি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্নভাবে মতামত ব্যক্ত করেছে। সুমেরীয়দের বিশ্বাস মতে “ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন মারদুক মাটি ও ড্রাগনের রক্ত দিয়ে।
ব্যাবিলনীয়দের বিশ্বাস মতে পৃথিবী প্রথমে জলময় ছিল! তখন পৃথিবীতে মানুষ, তৃণলতা বা বৃক্ষাদি কিছুই ছিল না। একসময় শুধু দেবতাদের সৃষ্টি হয়।
দেবতাদের অধিপতি ছিলেন মারদুক! নিজের সহায়তার জন্য তিয়ামত দৈত্য সৃষ্টি করলে তাদেরকে মারদুক শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখে।
মারদুক শেষ পর্যন্ত তিয়ামতের দেহ দ্বিখণ্ডিত করেন। দেহের এক খণ্ড পৃথিবী এবং অন্য খণ্ড থেকে স্বর্গের সৃষ্টি হয়।
প্রাচীন মিশরীয়দের মতে প্রথমে সৃষ্টিকর্তা ডিম্বাকার পৃথিবী ও পরে মানুষ সৃষ্টি করেন।
আবার চৈনিক লোক কাহিনীর মতে, “ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রথম মানুষের নাম পানকু। এভাবে সৃষ্টি তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিন ও রূপকথায দেয়া হয়েছে।
মানুষের উৎপত্তি সংক্রান্ত আদর্শবাদী দর্শন ও অধিবিদ্যার মতবাদ:
মানুষের উৎপত্তি ব্যাখ্যায় আদর্শবাদী দর্শন ও অধিবিদ্যা হলাে তৃতীয় ধরনের মতবাদ।
আদর্শবাদীরা মনে করেন কোন অদৃশ্য ঐশী শক্তি দ্বারা পৃথিবী পরিচালিত। ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়ালাসা এ মতের প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি যথাসম্ভব ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তন মতবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে ঈশ্বরের ইচ্ছাই সৃষ্টির বিবর্তন মূলে সক্রিয়।
আরেক বিজ্ঞানী ওয়েস্টার হােফার এর মতে মানুষের ডজনখানেক মূত্রাশয় শিখর রয়েছে গরিলার ১টি, শিম্পাঞ্জীর ৭টি, গীবনদের ৪টি।
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তার মতবাদের বিরােধিতা করেন। মূলত এসব বিজ্ঞানীরা আদর্শবাদ ও বস্তুবাদের মিলন ঘটাতে চেয়েছেন।
মানুষের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের দেয়া মতবাদ সমূহ:
দুই ভাবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের উৎপত্তি খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমত প্রাণিবাদী মতবাদ।
এই মতবাদ অনুযায়ী পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি হয়নি! কোন দূর প্রান্তের উৎস থেকে সম্ভবত জীব জন্ম নিয়েছে।
লর্ড কেলভিন এ মতের সমর্থক ছিলেন! দ্বিতীয়ত যান্ত্রিকতাবাদী মতবাদ। এ মত অনুযায়ী, বিভিন্ন উপাদানের প্রাকৃতিক মিশ্রণে জীব এসেছে।
তাদের মতে কোন স্রষ্টা কর্তৃক পৃথিবী, প্রাণী ও বস্তুর সৃষ্টি হয়নি! বরং এগুলাে বিরামহীন ভাবে বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন জীববিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, সমাজবিজ্ঞানীরা এ মতের অনুসারী।
গ্রিক বিজ্ঞানী এরিস্টটল যীশু খ্রিস্টের জন্মের আগেই মানুষের শরীর সম্পর্কে খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করেছেন এবং মানুষের স্থান জীবজগতে নির্দেশ করেছেন।
পরে বিজ্ঞানী ক্লডিয়াসা গ্যালেন মানুষ ও বানরের মধ্যে শরীরের গড়নের দিক থেকে যে একটা মিল রয়েছে তার বিবরন দিয়েছেন।
উনিশ শতকের গােড়ার দিকে বেশ কয়েকটি বই বনমানুষ সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছিলো। এতে; বনমানুষ ও মানুষের সাথে মিলের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
চার্লস লিয়েল ও চার্লস ডারউইন নতুন নতুন মতবাদ দিতে থাকেন! এভাবে বিবর্তনবাদ প্রতিষ্ঠা করে চার্লস ডারউইন ইতিহাসে স্থায়ী আসন লাভ করেন।
ডারউইন এর সূত্র মতে বলা যায়, যত প্রাণীর জন্ম হয়, মুষ্টিমেয় বেঁচে থাকে আর বাকিরা মরে যায়। জীবন সংগ্রামে যারা জয়ী হয় তারাই বেঁচে থাকে।
পরিবেশের সাথে যারা নিজেদের ঠিকমতাে খাপখাইয়ে নিতে পারে কেবল তারাই জয়ী হয়, বেঁচে থাকে এবং বংশবিস্তার করে।
অধিকাংশই মরে যায়, অল্প কয়েক জন বাঁচে! যারা বাঁচে, তাদের থেকে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় তাদের বংশধররা।
এমনি বংশের পর বংশের জন্মধারা চলছে। এটিই হচ্ছে ডারউইনের ক্রমবিকাশের মতবাদ।
ডারউইনের এ মতবাদের পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতবাদের সৃষ্টি হয়। অনেকে বিরােধিতা করলেও আজও মানুষের কাছে, ডারউইনের মতবাদ সমাদৃত।
বিশ্বের উল্লেখ্যযোগ্য মানবের উদ্ভব ও পরিচয়:
রোডেশীয় মানব / মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে জেনে নিন:
দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাক মানবের কিছু মাথার খুলি ও জীবাশ্য পাওয়া গিয়েছে।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এরা নিয়ান্ডার্থাল মানব ও সম্পূর্ণ মানবের মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিল। আর এদের মগজের আধার নিয়ান্ডার্থাল মানবের চেয়ে উন্নতর ছিল।
পিছনের দিকের তুলনায় সামনের মগজের পরিমাণ ছিল বেশি! সম্পূর্ণ মানুষের মতােই রােডেশীয় মানব মেরুদণ্ডের উপর ভারসাম্য রক্ষা করে মাথা সােজাভাবে রাখতে পারত।
এছাড়া তাদের দাঁত ও হাড়ের অবস্থানও প্রায় সম্পূর্ণ মানুষের মতােই।
এজন্য বিজ্ঞানীদের মতে; নিয়ান্ডার্থাল মানবের চেয়ে রােডেশীয় মানব সম্পূর্ণ মানুষের নিকটতম আত্মীয়।
এতোক্ষণ বিভিন্ন মানবের অবস্থান উল্লেখে আমরা লক্ষ্য করছি যে এপ মানব (Ape man) বা প্রায় মানব (Sub man) গােষ্ঠী সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে নিজেদের উন্নততর করে তুলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে মৌলিক ক্রমবিকাশের ধারায় এ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
ক্রোমেনিয়ন মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে জেনে নিন:
ক্রোমেনিয়ন মানুষেরা উচ্চতায় প্রায় ৬ ফুট লম্বা ছিলো! তাদের মগজের পরিমাণ আধুনিক ইউরােপীয় মানুষদের চেয়েও বেশি ছিল।
হিসেব মতাে পরিমাণ হচ্ছে, ১,৬০০ ঘন সেন্টিমিটার! তাদের কপাল ছিল চওড়া ও মসৃণ, নাক ছিল সরু, ভ্রু জোড়া স্বাভাবিক আকারেও অবস্থানে ছিল। এছাড়াও তাদের চিবুক ছিল চমৎকার গড়নের।
ক্রোমেনিয়ন মানুষের অবস্থান ২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের তৈরি প্রচুর ব্যবহার্য দ্রব্য ও অলংকার পাওয়া গিয়েছে।
আদিম ভাস্কর্য ও দেয়াল চিত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের শৈল্পিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।
অলংকার হিসেবে তারা বন্য পশুর দাত ও ঝিনুক ব্যবহার করতাে। শিকারের জন্য তারা ব্যবহার করতে তীর ধনুক, ছুরি এবং হাপুন।
বুদ্ধি বিচারের তারা উন্নততর ছিল। মানুষ একে অন্যের সাথে সহযােগিতার মাধ্যমে সহাবস্থান করতো!
সম্পর্ণ মানষের মস্তিষ্ক হচ্ছে একটি শক্তি, যা তাকে চিন্তা ও কল্পনা করতে সাহায্য করে এবং সে তার চিন্তা ও কল্পনাকে কাজে পরিণত করার চেষ্টা করতো।
এ গুণাগুণের জন্যই সম্পূর্ণ মানুষ প্রায় মানবকে অতিক্রম করে একদিন বিশ্বের নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ক্রোমেয়নদের সংস্কৃতি ছিল উন্নত। জীববিজ্ঞানীরা বলেন “ক্রোম্যাগনন মানুষকে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এইচ. এ. ডেভিস বলেন; তারাই ছিল পৃথিবীর প্রথম মানব সন্তান।
হাইডেলবার্গ মানুষের উদ্ভব ও পরিচয়:
জার্মানির হাইডেলবার্গ অঞ্চলে মাটির ষাট ফুট গভীরে ১৯০৭ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সাধিত হয়।
এর সূত্র ধরে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক মাটির ৮২ ফুট গভীরে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত একটি মানুষের চোয়াল খুঁজে পান।
এর আশপাশে বেশকিছু আদিম প্রাণীর দেহাবশেষও আবিষ্কৃত হয়েছে।
এসব থেকে ধারণা করা হয়, হাইডেলবার্গ মানব প্রথম অথবা দ্বিতীয় আন্তঃবরফ যুগে জীবিত ছিল। এ মানবের দাঁতের অবস্থান অনেকটা আধুনিক মানুষের কাছাকাছি ছিলো।
সম্ভবত এদের ভাষা কিছুটা উন্নতরূপ লাভ করেছিল। মানুষের উদ্ভব ও ক্রম বিকাশের ধারায় এগিয়ে চলা হাইডেলবার্গ মানব সাধারণভাবে হােমাে ইরেকটাস (Homo Erectus) নামে পরিচিত।
অস্ট্রালােপিথকস মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে:
১৯২৪ সালে অস্ট্রেলীয় নবিদ রেমন্ড ডার্ট কর্তৃক দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহরি।
মরুভূমির উত্তর সামাতে দক্ষিণ-পশ্চিম ট্রান্সলে চুনাপাথর অঞ্চলে অস্ট্রালােপিথিকাস আফ্রিকানসাসের একটি মাথার খুলি, মুখ এবং চোয়ালের অংশ বিশেষ আবিষ্কার করেন।
পরে ১৯৪৮-৪৯ সালে অস্ট্রালােপিথিকাস রােবােস্টাসের প্রথম জীবাশ পাওয়া যায়। শারীরিক গঠনে রােবােটাস আফ্রিকানাস অপেক্ষা বড়।
কিন্তু উভয়ের পা, পায়ের পাতা, নিচের অস্থি ও মেরুদণ্ডের আকৃতি অনুরূপ! এরা দু’পায়ে সােজা হয়ে হাঁটতে পারত এদের হাত, বাহু স্বন্ধের সাথে আধুনিক মানবের সাদৃশ্য আছে।
কোন কোন নৃতত্ত্ববিদ অস্ট্রালােপিথিকাসের গােষ্ঠীকে আরও দু’ভাগে ভাগ করেছেন। ১৯৬০ সালে বিশ্বখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ এল, এস, বি, লাকি তানজানিয়ার ওলড়ভাই গিরিখাতে আবিষ্কার করেন।
তিনি এ মানবের নামকরণ করেন। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী অরােবােস্টাস এবং বাইসেই একই গােত্রভুক্ত করে তাদের সাদৃশ্যের জন্য।
তবে লিকিবলেছেন, এদের করােটির ধারণক্ষমতা ৭০০ ঘন সে. মি.। ফলে মানবজাতির বৈশিষ্ট্য এরা বহন করে।
তিনি আরও বলেছেন এরা হাতিয়ার প্রস্তুত করতে পারে। তাই তিনি একে ‘হেমাে’ গােষ্ঠীভুক্ত করেছেন।
জাভা মানবের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ:
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মেলাে নদীর তীরে ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে জাভা মানবের জীবাশ্ম পাও যায়।
ডকুয়স নামের হল্যান্ডের ডাক্তার এটি আবিষ্কার করেন! তিনি অশীভূত কিছু দাঁত, মাথার খুলির অংশ এবং এক জংঘস্থি উদ্ধার করেন।
তিনি একে পিথিক্যানথােপাস নামকরণ করেন। তারপরে ৪০ বছরে আর কোন জীবাশ্ম পাওয়া যায় নি। ১৯৩০ সালে ফন ক্যোনিগস ওয়ালথ ঐ একই স্থানে আরও জীবাশ্ম পান।
জাভা মানবের ভূঅস্থি বেশ সুস্পষ্ট ও উঁচ ছিল এবং কপাল ঢালুভাবে অপসত হয়ে চ্যাপ্টা মাথার সাথে মিলে যেত।
মাথার উপরের অংশ ত্রিকোণাকৃতির এবং মাথার পশ্চাৎ ভাগ চওড়া এবং হাড় ভারি ও শক্ত।
করােটির ধারণ ক্ষমতা ৭৭৫ থেকে ৯৭৫ ঘন সে. মি.। মুখের তালু অত্যন্ত বড়; এবং দাঁতের কপাটি ও চোয়াল বেশ শক্ত ও খানিকটা সম্মুখভাগে প্রক্ষিপ্ত ছিলো।
তার সাথে আধুনিক মানুষের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায়। তাই পিথিক্যানথ্রোপাস নাম বাদ দিয়ে হেমাে রাখা হয়।
এরা পৃথিবীতে পাঁচ লক্ষ বছর আগে বসবাস করত! এ প্রাণী বরফ যুগের প্রথম পর্যায়ে জীবিত ছিল। প্রকৃত অর্থে এ এপ মানব আধুনিক মানুষের পূর্বসূরি নয়।
একে আবার সাধারঙ্গ এপও বলা চলে না। বরং জাভা মানব মূলত শিম্পাঞ্জি ও মানুষের মাঝামাঝি পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
পিকিং মানবের উৎপত্তি ও পরিচয়:
জাভা এবং পিকিং মানুষের সাদৃশ্যের জন্য এদেরকে হােমিনিড গাষ্ঠীতে ফেলা হয়। অবশ্য পিকিং মানব জাভা মানবের উন্নত সংস্করণ বলে মনে হয়।
চীনের প্রাক্তন রাজধানী শহর পিকিং থেকে ৪০ মাইল দূরে চুকুতিয়েন গ্রামের একটি বিরাট গুহায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পিকিং মানুষের আবিষ্কার হয়।
একটি ফুটবল মাঠের মত এলাকা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দাঁত, খুলি, মুখের অস্থি, হাত পাওয়া গেছে। তাতে স্পষ্ট ভ্রু, অস্থি, ঢালু কপাল ও সম্মুখ দিকে প্রক্ষিপ্ত চোয়াল ছিল।
পিকিং মানবের মাথার খুলি বৃহৎ ও অপেক্ষাকৃত গােলাকার। পিকিং মানবের করােটির ধারণক্ষমতা ১০৭৫ ঘন সে. মি।
আবার এরা জাভা মানবের তুলনায় অধিক দক্ষ এবং মানসিক দিক দিয়ে উন্নত ছিল।
পিকিং মানুষের ছেদক দাঁত আধুনিক মানুষের চেয়ে বড়! অস্থি এবং পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করতে পারত।
তারা দক্ষ শিকারি এবং চতুর ছিল। যেমন- হাতি, গণ্ডার, মহিষ প্রভৃতি শিকার করত। প্রাকৃতিক উপায়ে সংগঠিত হলে তারা তা গ্রহণ করত।
তারা নানারকম হাতিয়ার যা মসৃণ করা, চিরাকাটা, ছিদ্র করা প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়, তা তৈরি করতে পারত! এরা আবার স্বভােজীও ছিল, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওরা নিজ গােত্রের লােকদের খেত।
পিকিং মানবকে অনেকে আধুনিক মানুষের পূর্বসূরি মনে করেন। কারণ তাদের মধ্যে খুব প্রাথমিক ধরনের ভাষার প্রচলন ছিল।
পিকিং মানুষ প্রায় ৫ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত।
নিয়ানডারথাল মানুষের উৎপত্তি হলো কিভাবে:
আধুনিক মানুষের মাত্র এক পর্যায় পূর্বের এ মানবগােষ্ঠীকে নিয়ানডারথাল মানব বলে। ১৯৫৬ সালে সর্বপ্রথম নিয়ানডারথাল মানবের অশ্মীভূত কঙ্কাল পাওয়া যায়।
এই জীবাশ্মের প্রাপ্তিস্থান জার্মানির নিয়ানডারথাল। উপত্যকার নামে নামকরণ করা হয়! এ গােষ্ঠীর সংস্কৃতি ও কঙ্কালের বেশি লক্ষণ দেখা যায় ইউরােপে।
এটা থেকে অনুমান করা হয় যে তারা সেখানে ব্যাপকভাবে বসবাস করত। এছাড়া উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং জাভা দ্বীপেও এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
নিয়ানডারথাল মানবের স্থিতিকাল মােটামটি ১ লক্ষ বছর থেকে ৪০ হাজার বছর।
এ সময় তৃতীয় আন্তঃহিম যুগের সূচনা হয় এবং শেষের দিক হিম যুগের পর্ণ আবির্ভাব ঘটে।
আধুনিক মানবের সাথে এদের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। সােজা হয়ে দাঁড়াত এবং হাঁটার কাজ তারা পারতাে।
সম্মুখভাগ থেকে তাদের চেহারা বেশ বড় মনে হতো চোখের কোটার, বড় কপাল বেশ নিচ এবং ঢাল! চোখের উপর প্রক্ষিপ্ত ভ্রু আস্থি এবং ছােট চিবুক ছিলো।
এদের করােটির বলতে এর করােটির ধারণক্ষমতা আধুনিক মানুষের ন্যায় ৩০০ – ১৫০০ ঘন সে. মি. ছিলো! আগে এ কাঠীকে বনমানুষ মনে করা হয়।
কিন্তু বিশ্লেষণের পরে হােমেস্যাপিয়েন্স গােষ্ঠীভুক্ত করা হয়েছে।
সংস্কৃতির দিক দিয়ে এরা বেশ পারদর্শী ছিল। তারা পাথরসহ অন্যান্য বস্তু ব্যবহার করে হাতিয়ার নির্মাণ করতো।
তার নমুনা হিসেবে পাথর হাতিয়ার পাওয়া গেছে যা ফান্সের যে মুষ্টরীয় স্থানের সাথে মুস্তরীয় সংস্কৃতি নামকরণ করা হয়েছে। এর প্রধানত ফলক হাতিয়ার তৈরি করত।
এছাড়া তারা ছােট ও তীক্ষ্ণ ধাতব ফলক তৈরি করতে পারত। তারা মৃতদেহকে সমাধিস্থ করতো।
সাথে সাথে মতব্যক্তির ব্যবহার্য নানা জিনিস তারা কবরে রাখত। তবে তারা অনুষ্ঠানের খাবারে স্বভােজী ছিল বলে প্রমাণিত হয়।