মনোবিজ্ঞান পরিচিতি (Introduction to Psychology) ২য় পর্ব ১ম অধ্যায়ের ২নং ক্লাসে যে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা হলো-
- সচেতন অভিজ্ঞতার সরুপ (Nature of conscious Experience)
- উন্ট, টিচনার এবং কাঠামোবাদ (Wundt, Tichener and structuralism)
- ম্যাক্স রিদমার এবং গ্যাস্টল মনোবিজ্ঞান (Max Wertheimer and Gestalt Psychology)
- সচেতন মনের ক্রিয়া (Function of the Conscious Mind)
মনোবিজ্ঞান সচেতন অভিজ্ঞতার সরুপ (Nature of conscious Experience)
প্রথম দিকে মনোবিজ্ঞানীদের আলোচনার বিষয় ছিলো ব্যক্তিগত চেতনার অভিজ্ঞতা।
এই মুহূর্তে তুমি যা ভাবছো তার সবই ব্যক্তিগত চেতনার অংশ।
প্রথমে মনোবিজ্ঞানীরা সচেতন মনের মূল উপাদান এবং তা একত্রে কিভাবে কাজ করে তা বোঝার চেষ্টা করেন।
উন্ট, টিচনার এবং কাঠামোবাদ (Wundt,Tichener and structuralism):
উইলিয়াম উন্ট, জার্মানিতে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপনা করতেন যিনি মানুষের চেতনা নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন।
তার এই কাজকে আরো এগিয়ে নেন তারই ছাত্র এডওয়ার্ড টিচনার! যিনি পরে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
তিনি শুধু একজন রাসায়নবিদ হয়েও , শারিরিক পদার্থ তৈরির মূল উপাদান আবিষ্কারের চেষ্টা করেন! উন্ট এবং টিচনার সচেতন অভিজ্ঞনার মূল উপাদান চিহ্নিত করতে চাইতেন।
কারন তারা এই সচেতন অভিজ্ঞতার উপাদান এবং এই উপাদানের গঠিত হওয়ার বিষয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন! তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিই কাঠামোবাদ (structuralism) নামে পরিচিত।
জে.হেনরী অ্যাস্টন:
উন্ট ও টিচনার যদিও সচেতন অভিজ্ঞতা অধ্যায়নের প্রথম মনোবিজ্ঞানী ছিলেন, তবুও তখনই আরেক জন বিজ্ঞানী এই বিষয়ে প্রচেষ্টা করেছেন! লক্ষণীয় যে, অ্যাস্টনও সমসাময়িক কাঠামোবাদী ছিলেন।
অ্যাস্টন, তার ঠান্ডা এবং গরম অনুভূতি গবেষনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি আবিষ্কার করেন যে আমরা তখনই ঠান্ডা অনুভব করি যখন ত্বকে গিয়ে শেষ হওয়া স্নায়ুর দ্বারা এটা শাণিত বা অনুভুত হয়।
আবার আমরা তখনই গরম অনুভব করি যখন ত্বকে গিয়ে শেষ হওয়া স্নায়ুর দ্বারা গরম অনুভুত হয়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, অ্যাস্টন দেখলেন যে আমরা তখনই সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা বা গরম অনুভব করি, যখন আমাদের ত্বকের ঠান্ডা ও গরম অনুভব সংগ্রাহী রিসেপ্টরে একই সাথে শানিত হয়! তিনি এ বিষয়ে ১৯২০ সালে একটা পরীক্ষাও করেন।
পরিক্ষায় তিনি, একটি পাইপের মধ্যে দিয়ে ঠান্ডা পানি এবং অন্যটির মধ্যে দিয়ে গরম পানি প্রবাহিত করেন। যখন লোকে এটা স্পর্শ করলো তারা অধিক তাপের পার্থক্য অনুভব করলো।
কারন ত্বকে এই ঠান্ডা গরম অনুভুতি একই সাথে শাণিত বা অনুরিত হয়েছিলো।
মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে জে.হেনরি অ্যাস্টন ছিলেন একজন উলেখ্যযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কারন তিনিই প্রথম আফরিকান-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী যার গবেষণা পত্র পকাশিত হয়েছিলো আমেরিকান সাকোলোজিক্যাল অ্যাসোশিয়েশনে।
ম্যাক্স রিদমার এবং গ্যাস্টল মনোবিজ্ঞান (Max wertheimer and Gestalt Psychology):
ম্যাক্স রিদমার ১৯০০ সালে ফ্রাঙ্কফুট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনিও সচেতন অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিলেন।
তার ধারণা উপরে উল্লিখিত কাঠামোবদীরে থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো।
তিনি একটি মনোবিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যারা গ্যাস্টল মনোবিজ্ঞানী নামে পরিচিত ছিলো।
গ্যাস্টল মনোবিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মানুষের চেতনা অর্থপূর্ন ভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে না, যা কাঠামোবাদীরা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন তারা বলেছিলো- গনিতের সম্পূর্ণ অংশ তার ক্ষুদ্র অংশ থেকে আলাদা।
গ্যাস্টল মনোবিজ্ঞানীরা পাই এর ঘটনাটিও দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে পাইয়ের ক্ষুদ্র অংশ থেকে সমস্ত অংশটি আলাদা।
সচেতন মনের ক্রিয়া (Function of the Conscious Mind):
উইলিয়াম জেমস এবং ক্রিয়াবাদ (William James and Functionalism):
১৮৭৫ সালে, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম জেমস নামক জীববিজ্ঞান ও দর্শনের একজন তরুন অধ্যাপক সর্বপ্রথম মনোবিজ্ঞান পড়ানো শুরু করেন। তিনি চার্লস ডারউইনের মতাদর্শী ছিলেন।
ডারউইনের ত্বত্ত বলে যে প্রতিটি বৈশিষ্টই একটি প্রজাতির মধ্যে বিবর্তিত হয় কারণ এটি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। তিনি সন্দিহান যে এই একই জিনিস মানুষের মনের বৈশিষ্ট্যর সম্পর্কে বলা যায় কিনা?
তিনি মনে করেন, চিন্তা, অনুভূতি, জ্ঞান, স্মরনশক্তি এবং অন্য মানসিক প্রক্রিয়া বিদ্যামান রয়েছে শুধু মাত্র একটি প্রজাতি হিসেবে আমাদের টিকতে সাহায্য করতে।
কারন আমরা যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করতে পারি উদাহরণ সরুপ বলতে পারি আমরা ভালোভাবে খাদ্য সংগ্রহ করতে, বিপদ আপদ এড়িয়ে চলতে এবং সন্তানদের যত্ন করতে পারি। যার সবকটি বিষয়ই মানব প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
উক্ত কাজগুলো সচেতন মনের কাজের বা ক্রিয়ার উপরই টিকে থাকে বলে, উইলিয়াম জেমস এর চিন্তা ধারাকে বলা হয় ক্রিয়াবাদ (Functionalism)।