আজকে আমরা সাইকোলজিতে ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি কি ও কত প্রকার এবং ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটির বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি তা নিয়ে আলোচনা করবো।
আমাদের আলোচনায় যে যে টপিক থাকছেঃ
- ভূমিকা (Prologue)
- ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটির কি তার সংঙ্গা (Definition of Personality)
- বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব: ব্যক্তিত্বের ধারাবাহিকতা বর্ণনা (Trait Theory: Describing the Consistencies of Personality)
- অ্যালর্পোটের বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব (Allport’s Trait Theory)
- ব্যক্তিত্বর পাাঁচটি আদর্শ ফ্যাক্টর (Five-Factor Model of Personality)
- ব্যক্তিত্বর বৈশিষ্ট্য সমূহের গুরুত্ব (Importance of Personality Traits)
- সাইকোঅ্যানালিটিক বা মনোবিশ্লেষ্য তত্ত্ব: (Psychoanalytic Theory: Sigmund Freud)
- ফ্রয়েডের ধারণা/মন: সচেতনতার ৩ টি স্তর (Freud’s Mind: Three Levels of Consciousness
- ফ্রয়েডের ধারণা: আইডি, ইগো এবং অতিইগো (Freud’s Mind: Id, Ego, and Superego)
- আইডি: স্বার্থপর জীব (Id: The Selfish Beast)
- ইগো: ব্যক্তিত্বর পরিচালক (Ego: The Executive of Personality)
- সুপারইগো: বিবেক ও আদর্শ ইগো (Superego: The Conscience and Ego Ideal)
- বৃদ্ধি/বিকাশ: মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের পর্যায় সমূহ (Growing Up : The Stages of Psychosexual Development)
- মৌখিক পর্যায় – জন্ম থেকে ১ বছর পর্যন্ত (Oral Stage – Birth to 1 Year)
- পায়ু পর্যায় – ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত (Anal Stage – 1 to 3 Years)
- ফালিক পর্যায় – ৩ থেকে ৬ বছর (Phallic Stage – 3 to 6 Years)
- বিলম্ব পর্যায় – ৬ থেকে ১১ বছর (Latency Stage – 6 to 11 Years)
- জেনিটাল/যৌন পর্যায়- ১১ বছর থেকে আজীবন (Genital Stage – 11 Years On)
- সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব: আলবার্ট বান্দুরা (Social Learning Theory: Albert Bandura)
- ব্যক্তিত্বতে শিক্ষণের ভূমিকা (Role of Learning in Personality)
- ব্যক্তিত্বতে জ্ঞানের ভূমিকা (Role of Cognition in Personality)
- পরিস্থিতিবাদ ও মিথস্ক্রিয়াবাদ (Situationism and Interactionism)
- মানবতাবাদী ত্ত্বত : ম্যাসলো এবং রগার্স (Humanistic Theory: Maslow and Rogers)
- অভ্যন্তরিন দিকনির্দেশনা ও আত্মনিষ্ঠা (Inner-Directedness and Subjectivity)
- স্ব-ধারণা (The Self-Concept)
- স্ব-বাস্তবায়ন (Self-Actualization)
ভূমিকা (Prologue)
মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি বলতে সাধারনত আচরণ, চিন্তাভাবনা ও অনুভুতির বিভিন্ন দিক বোঝানো হয় যা একজন ব্যক্তিকে আরেক জনের থেকে আলাদা করে তোলে।
অনেক মনোবিজ্ঞানী আমাদের ব্যক্তিত্বকে বর্ননা করার জন্য শুধু মাত্র ৫ টি প্রাথমিক ধারণা ব্যবহার করে থাকেন।
ব্যক্তিত্বর এই ৫ টি ধারণা বা মাত্রাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করবো তা দেখে নেয়া যাক।
প্রথম মাত্রায় তুমি যদি নিজে খুব আনন্দ ও নিরাপদ অনুভব করো তবে নিজেকে ১ পয়েন্ট দাও। আবার তুমি যদি নিজেকে উত্তেজনাপূর্ণ ও অনিরাপদ মনে করো তবে নিজেকে ৩ পয়েন্ট দাও।
আবার তুমি যদি খুব বেশি উত্তেজনা অথবা খুব বেশি আনন্দ অনুভব না করো তবে নিজেকে ২ পয়েন্ট দাও।
ঠিক এভাবে তুমি যদি ১ ও ২ এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করো তবে নিজেকে ১.৫ পয়েন্ট দাও।
কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে- মানুষের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটির বিরাট বিস্তার এই ৫টি মৌলিক মাত্রার কম বা বেশি পয়েন্টের সংমিশ্রণ ভাবা যেতে পারে।
এই অধ্যায়ে ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটিকে বোঝার জন্য ও বর্নণা করার জন্য চারটি তাত্ত্বিক পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে।
পার্সোনালিটির ৪টি বৈশিষ্ট্য তত্ত্বের নাম:
বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব (Trait Theory)
মনোবিশ্লেষক তত্ত্ব (Psychoanalytic Theory)
সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব(Social Learning Theory)
মানবতাবাদী তত্ত্ব (Humanistic Theory).
মনোবিশ্লেষণিক তত্ত্ব (Psychoanalytic Theory) টি সিগমন্ড ফ্রয়েড সর্বপ্রথম বর্ণনা করেছিলেন।
ফ্রয়েড মনে করতেন যে- আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি হলো আমাদেরই মনের ভিতরের শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ফলাফল।
আমরা স্বার্থপর প্রবৃত্তি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করি। কিন্তু সমাজের সাথে আমাদের মেলামেশার কারণে বাস্তব চিন্তাভাবনার ক্ষমতা অর্জন করি সমাজ আমাদের অদর্শ ও মূল্যবোধ দেয়, যার মাধ্যমে স্বার্থপরতাকে দমন করতে পারি।
ফ্রয়েডের মতে এই বিশেষ পদ্ধতি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটিকে সতন্ত্র করে তুলে।
ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটির সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বটি (Social Learning Theory) ব্যক্তিত্ব বিকাশের খুবই সাধারণ একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
যেমন- এই দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজেরে সাথে মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগের মাধ্যমে শেখা সাধারণ কিছুই হলো ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি।
অর্থাৎ মানুষ ভালো বা মন্দ এমন কিছু শিখে তারপরে জন্ম গ্রহণ করে না, যা কিনা সমাজের সাথে সংঘর্ষ তৈরি করে।বরং মানুষ সমাজের অন্যদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব অর্জন করে।
মানবতাবাদী মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তিত্বের বিকাশকে প্রায় সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিতে দেখেন। মানবতাবাদীরা মনে করেন যে সুস্থ সুন্দর ও ইতিবাচক ভাবে জন্মগ্রহণ করি কিন্তু সমাজই আমাদের উপর হস্তক্ষেপ করে।
তারা আরো মনে করেন যে আমাদের সমাজ প্রায়ই ভালোর জন্য এমন সব অবাস্তব নীতি নির্ধারণ করে, যার কারনে নিজেকে প্রত্যক্ষ করাই কঠিন হয়ে যায়, এমনকি ব্যাক্তির কার্যক্রমকেও বাধা প্রদান করে।
ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি কি তার সংঙ্গা (Definition of Personality)
যখন আমরা ব্যক্তি শব্দটি ব্যবহার করি তখন আমরা এর মাধ্যমে কি বোঝায়? ব্যক্তি শব্দটি নিজেই ব্যক্তিত্বর মধ্যে রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিত্ব, জৈবিক অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ থেকে ব্যক্তিকে নিদির্ষ্ট ভাবে প্রকাশ বা উপস্থাপন করে।
অর্থাৎ কারো ব্যক্তিত্ব হলো তার সমস্ত আচরণ, চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির মোট সমষ্টি বা যোগফল এবং তা সেই ব্যক্তির জন্য আদর্শ যার দ্বারা এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি থেকে আলাদা করা যায় ।
কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি এমন সকল অপেক্ষাকৃত অপরিবর্তনীয় মনস্তাত্তিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত হয় যা হলো সেই ব্যক্তির জন্য আদর্শ।
যেমন- কিছু ব্যক্তি সাধারনত উদার হয়; আবার কেউ সাধারনত আবেগী হয়, আবার কেই লাজুক প্রকৃতির হয়।
কারো যদি নিদির্ষ্ট কোনো গুণাবলী না থাকে, তবে আমরা তার কাছে কি আশা করবো তা আমরা নিজেরা বুঝতে পারবো না।
অর্থাৎ; নিদির্ষ্ট গুণাবলী নেই এমন কোনো বন্ধুর সাথে আমাদের দেখা হলেও, কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে দেখা হওয়ার মতো মনে হবে।
অপর দিকে বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে আমরা কি আশা করতে পারি তা আমাদের জানা থাকে।
প্রতিটি ব্যক্তিই সাধারণ ভাবে তাদের কাজকর্ম, চিন্তাভাবণা ও আবেগ দ্বারা নিজেকে অন্যদের চাইতে একক/সতন্ত্র করে তুলে।
আমরা প্রত্যেকেই সতন্ত্র বা ইউনিক, কারণ কেউই মনস্তাত্তিক গুণাবলির দিক দিয়ে একে অন্যর সমান হতে পারে না।
এমনকি যদি সকল মানুষের চোখ, মুখ, ওজন, উচ্চতা, কন্ঠস্বর ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য একই হয় তবুও প্রত্যক ব্যক্তিকে তাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি দ্বারা আলাদা করা যাবে।
বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব: ব্যক্তিত্বের ধারাবাহিকতা বর্ণনা (Trait Theory: Describing the Consistencies of Personality)
আমরা ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি বোঝোতে বিভিন্ন ধরণের শব্দ ব্যবহার করে থাকি, যেমন- বন্ধুত্বপূর্ণ, আনন্দময়, ভয়ঙ্কর কিংবা আক্রমণাত্মক।
আমরা একে অপরকে এই ধরণের শব্দে বর্নণা করার জন্য এতোই ওস্তাদ যে ইংরেজি ভাষায় এই ধরনের ১৭০০০ এরও বেশি শব্দ রয়েছে।
মনোবিজ্ঞানে ‘বৈশিষ্ট্য বা Traits’ বলতে এই শব্দ গুলোকেই বোঝানো হয়।
এই বৈশিষ্ট্য সমূহ আচরনে তুলনামূলক ভাবে স্থায়ী মান হিসেবে সংঙ্গায়িত হয় যা কিনা বিভিন্ন পরিস্থিতিতেও অপেক্ষাকৃত স্থায়ী থাকে।
অর্থাৎ আমরা যখন কাউকে বলি যে কেউ একজন বন্ধুসূলভ বা ফ্রেন্ডলী, তখন এর মানে দাঁড়ায় তার হয়ত অনেক বন্ধু রয়েছে এবং সময়ের সাথে সাথে তার এই বন্ধুসূলভ আচরণ খুব বেশি একটা পরিবর্তন হবে না।
যদিও ব্যক্তিত্ব বা পর্সোনালিটির অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব বা Trait Theory রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তত্ত্ব হলো- গর্ডন অলর্পোটের ক্লাসিক্যাল থিওরী বা তত্ত্ব এবং সমসাময়িক ফাইভ-ফ্যাক্টর ব্যক্তিত্ব তত্ত্ব।
অ্যালর্পোটের বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব (Allport’s Trait Theory)
গর্ডন অলর্পোটের মতে, আমাদের মূল্যয়নের সঙ্গেই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা Traits সম্পর্কযুক্ত।
অলপোর্ট বলেন- কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে কেমন আচরণ তা বোঝার ও অনুমান করার সেরা উপায় হলো, প্রথমে খুজে দেখতে হবে যে উক্ত ব্যক্তি কোন জিনিস বেশি মূল্যয়ন করে অথবা কি অর্জন করতে বেশি চেষ্ট করে।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়- যে ব্যক্তি টাকাকে পারিবারিক জীবনের থেকে বেশি মূল্য দিবে, চাকরিতে তার পদোন্নতি হলে বাড়ির বাহিরেই বেশি সময় কাটাতে বা কাজ করতে পারবে।
আবার যে ব্যক্তি টাকার থেকে পারিবারিক জীবনকে বেশি মূল্যয়ন করবে, তার ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনা ঘটবে।
সকল বৈশিষ্ট তত্ত্ববীদদের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- বৈশিষ্ট সমূহ (Traits) একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংগঠিত।
অলর্পোট এর মতে, বৈশিষ্ট্যকে (Traits) এর গুরুত্ব অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ
- প্রধান বা Cardinal.
- কেন্দ্রীয় বা central.
- গৌণ বা Secondary.
যে বৈশিষ্ট্য কোনো ব্যক্তির জীবনে আধিপত্য বিস্তার করে তা হলো প্রধান বা Cardinal বৈশিষ্ট্য।
যেমন জ্ঞান অনুসন্ধানকে প্রধান বা Cardinal বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে, যা কিনা আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবনে আধিপত্য বিস্তার করেছিলো।
গর্ডন অলর্পোটের মনে করেন, খুব কম ব্যক্তির মধ্যেই এই প্রধান বা Cardinal বৈশিষ্ট্য থাকে।
অনেক সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্রীয় বা central বৈশিষ্ট্য। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আমাদের আচরনকে অনেক প্রভাবিত ও সংগঠিত করতে পারে, তবে প্রধান বা Cardinal বৈশিষ্ট্যর থেকে বেশি পারে না।
উদাহরন সরুপ বলা যায়, কেন্দ্রীয় বা central বৈশিষ্ট্যর কারনে কোনো ব্যক্তির মধ্যে যৌন তৃপ্তি লাভের লক্ষ্য থাকবে পারে।
আবার কারো মধ্যে যৌন তৃপ্তির বদলে, সমাজে শক্তি ও সম্মান বৃদ্ধির দৃঢ় লক্ষ্য থাকতে পারে।
গৌণ বা Secondary বৈশিষ্ট্য হলো আরো কম গুরুত্বপূর্ণ ও সুনিদির্ষ্ট।
যেমন- কারো মোবাইল সেবাদানকারী কর্মীর সাথে অভদ্র হওয়া হচ্ছে গৌণ বা Secondary বৈশিষ্ট্য।
ব্যক্তিত্বর পাাঁচটি আদর্শ ফ্যাক্টর (Five-Factor Model of Personality)
বিগত বছরগুলোতে ফাইভ ফ্যাক্টর মডেল ও অলর্পোটের বৈশিষ্ট্য তত্ত্ব, ব্যক্তিত্ব বর্নণার জন্য প্রস্তাব করা হয় যেখানে আলাদা আলাদা ভাবে ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্নণা করা হয়েছে।
কিন্তু কয়েক বছর আগে এই সকল বৈশিষ্ট্য তত্ত্বগুলো খুব একটা গ্রহণ করা হয়নি।
কিন্তু বর্তমানে এসে ফাইভ ফ্যাক্টর মডেলটি ব্যক্তিত্বর সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য বর্নণা করতে পারে বলে, সকল তত্ত্ববীদেরা একমত পোষণ করেছেন।
ব্যক্তিত্বকে বর্নণা করার ৫টি প্রধান মাত্রাকে প্রথমেই ভূমিকার মধ্যে বর্নণা কররা হয়েছে।
যাইহোক ব্যক্তিত্বর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে একটি করে প্রধান বৈশিষ্ট্যর অধিনে নিয়ে এসে মোট ৫ টি বৈশিষ্ট্য তৈরি করা হয়েছে।
যার নাম দেয়া হয়েছে ব্যক্তিত্বর ফাইভ ফ্যাক্টর মডেল (Five-Factor Model of Personality)। এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব পরিক্ষা করে বোঝা যায় যে ব্যক্তিটি কেমন।
যেমন- একজন ব্যক্তি শান্ত নাকি উত্তেজিত অথবা আনন্দপূর্ণ নাকি অস্থিতিশীল ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সমূহ থেকে একটি সামগ্রিক স্কোর বা পয়েন্টের মধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা যায়।
হাই নিউরোটিসিজম সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের অনিরাপদ, উত্তেজনাপূর্ণ, নার্ভাস ও আত্মচেতন বলে মনে করে।
আবার ব্যক্তিত্ব পরিক্ষায় যাকে শান্ত, সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, নিরাপদ দেখা যাবে, সে নিম্ন নিউরোটিসিজমের অন্তর্ভূক্ত।
বেশির ভাগ মানুষই এই সকল বৈশিষ্ট্যর মধ্যে থাকেন। ব্যক্তিত্বর এই ৫ টি বৈশিষ্ট্য আমাদরে বংশগতি এবং অভিজ্ঞতার দ্বারাও পরিবর্তিত হয়।
ব্যক্তিত্বর এই ৫ টি বৈশিষ্ট্য গুলো হলোঃ
- Openness
- Agreeableness
- Conscientiousness
- Extraversion
- Neuroticism.
Openness:
Openness ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি তে এমন একটা বৈশিষ্ট্য যেখানে আমাদের কল্পনাশক্তি এবং অন্তর্দৃষ্টিটা খুবই প্রবল থাকে।
এই কল্পনাশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টি যাদের খুব প্রবল তারা নানা বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে; তারা মানুষ ও জগৎ সম্পর্কে আগ্রহী হয় নতুন নতুন কাজ করতে তাদের ইচ্ছা করে।
যাদের Openness খুব বেশি হয়, তারা খুব বেশি রোমাঞ্চকর হয়, ভ্রমণপ্রিয় হয়, সৃজনকর হয়।
আর যাদের Openness খুব কম হয়, তারা একটু সেকেলে হয়। তারা বিমূর্ত চিন্তাগুলো সহজে করতে পারে না, পরিবর্তন পছন্দ করে না; তারা বাস্তবিক জিনিস পছন্দ করে।
Conscientiousness:
এরা খুবই চিন্তাশীল হয়। এরা নিজেদেরকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এরা কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় আর সে লক্ষ্যও তাদের স্থির থাকে এবং সে অনুযায়ী তারা চলতে থাকে।
যাদের conscientiousness খুব বেশি হয়, তারা সংগঠক হয়। যেকোনো কাজ শুরুর আগেই তারা সেটার পরিকল্পনা করে থাকে। নিজের চিন্তা ও কাজ দ্বারা অপরকে প্রভাবিত করে।
সে সময়ের কাজ সময়ে করে, অলস মানুষদের সে পছন্দ করে না। আর যাদের Conscientiousness কম, তারা অলস হয়।
সময়ের কাজ সময়ে করে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো কাজ করে না। তাদের চিন্তা ক্ষমতা কম।
Extraversion:
যাদের মধ্যে Extraversion থাকে, তারা সবসময় উত্তেজিত থাকে। তারা নিজের কথা না ভেবে অন্যদের জন্য কাজ করে। তারা অনেক বেশি সামাজিকীকরণ হয়।
ফলে তারা অনেক আবেগপ্রবণ হয়। Extraversion বেশি হলে, তারা সমাজের মানুষদের সাহায্য করে খুব খুশি হয়।
তারা নতুন নতুন মানুষদের সাথে মিশতে পছন্দ করে। কোনো কিছুর ফলাফল ভালো হবে নাকি খারাপ হবে, তা না ভেবেই কাজ শুরু করে দেয়।
Extraversion যাদের কম হয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের শক্তির পরিমাণ খুব কম হয়। সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলোকে তারা পছন্দ করেনা। কেউ তার প্রতি মনোযোগী হলে সে বিরক্ত হয়।
Agreeableness:
এরা খুবই বিশ্বস্ত হয়। সবসময় তারা অন্যের ভালো চায়। কেউ তাদের কষ্ট দিলেও তারা তার জন্য প্রার্থনা করে।
তাদের স্নেহ মায়া বেশি থাকে, যারা খুব বেশি Agreeableness হয়, তারা খুব সহযোগি হয় অন্যের উপকার করার মাধ্যমে তারা নিজেকে খুশি রাখে। তারা যেকোনো কাজ করে দেখায়।
আবার যাদের Agreeableness কম থাকে, তারা খুব প্রতিযোগিতামূলক হয়, খুব চতুর হয়। অন্যদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে।
অন্যের অনুভূতিকে মূল্যায়ন করেনা। নিজের স্বার্থের জন্য তারা সব কিছু করে।
Neuroticism:
প্রতি মূহুর্তে তারা তাদের চিন্তা ভাবনার বিষয় পরিবর্তন করে। তারা অনেক মেজাজি হয়। তারা প্রচুর হতাশায় ভুগে।
যাদের Neuroticism বেশি থাকে, তাদের মেজাজ অতিরিক্ত হয়। তারা কোনো কথায় স্থির থাকে না। সবসময় তারা দুশ্চিন্তা করে। হঠাৎ করেই তারা রেগে যায়, আবার হঠাৎ করেই খুশি হয়।
তবে তারা খুব বুদ্ধিমান ও সৃজনশীল হয়। তারা অন্যের ব্যাপারে কথা বলে না।
যাদের Neuroticism কম থাকে, তারা মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়। তারা তাদের দুঃখগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তারা কোনো বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করে না।
এই পাঁচ ধরনের ক্যাটাগরির ব্যক্তিত্ব মিলেই একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। যাই হোক মানুষেরই কি শুধু ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি রয়েছে?
আমাদের পোষা কুকুর বিড়ালদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি বলে কি কিছু নেই, যা তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে ?
প্যাভলভের সময় থেকেই স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, স্তন্যপায়ী প্রণীদেরও মানুষের মতো ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি রয়েছে।
সম্প্রতিক সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, মানুষ ছাড়াও অন্য প্রণীদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটিও ফাইভ ফ্যাক্টর মডেল দ্বারা বেশ ভালো ভাবেই বর্ণনা করা যায়।
ব্যক্তিত্বর বৈশিষ্ট্য সমূহের গুরুত্ব (Importance of Personality Traits):
ব্যক্তির ব্যক্তিত্বর বৈশিষ্ট্য সমূহ জানা খুবই জরুরী, কেননা এটি ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক বুঝতে সাহায্য করে।
বড় একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সাথে বিশেষ ভাবে জড়িত।
বিশেষ করে হাই নিউরোটিসিজম সম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনে মানসিক রোগ হওয়ার সম্ভাবণা বেশি থাকে।
তাদের সুখী হওয়ায় সম্ভাবণা কম আবার তাদের ডায়াবেটিকস সহ হার্টের/হৃদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক তাড়াতারি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবার যারা হাই কনসিয়েনসিয়াসনেস (Conscientiousness) এর অন্তর্ভূক্ত তাদের অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়।
কনসিয়েনসিয়াসনেস (Conscientiousness) স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে কারণ হলো এটি ভালো পুষ্টি, শারীরিক ব্যায়াম ও শরীলের যত্নের সাথে সম্পর্কিত।
আবার নিউরোটিসিজমের ২ টি কারণে শরীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমনঃ
- যে সকল ব্যক্তিরা হাই নিউরোটিসিজম সম্পন্ন তারা চাপ সংবেদনশীল এবং তারা দুঃশ্চিন্তা বা চাপে পড়লে তাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম ও অ্যান্ড্রোক্রাইন গ্রন্থি অনেক বেশি সারা দেয়, যার ফলে তাদের স্বাস্থ্যর উপর এর প্রভাব পরে। আবার এসকল ব্যক্তিরা নিজেরা নিজেদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- নিউরোটিসিজমের অন্তর্ভূক্তদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমূহ একই ধরনের কিছু জিনগত কারণে ঘটে বলে মনে করা হয়।
আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর চেয়ে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহ আমাদের জীবনের সাথে বেশি জড়িত।
ব্যক্তিত্বর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমূহ আমাদের জীবনের অনেক অনেক প্রধান বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।
সাইকোঅ্যানালিটিক বা মনোবিশ্লেষক তত্ত্ব: সিগমুন্ড ফ্রয়েড (Psychoanalytic Theory: Sigmund Freud)
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৮০০ সালের শেষের দিকে ভিয়েনার একটি হাসপাতালে তরুন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বিশেষ করে মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে বেশি পছন্দ করতেন।
কিন্তু এ সময় তার জ্ঞানের কমতি থাকার কারণে তিনি একটু হতাশ ছিলেন।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড যদিও অনেক বছর ধরেই মানুুষের ব্রেইন ও স্নায়ু নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তবুও তিনি যা শিখেছেন সেই জ্ঞান দিয়ে রোগীদের সুস্থ্য করা যাচ্ছিল না।
সুতরাং তিনি অনেক বুদ্ধিমান ও আত্নবিশ্বাসী হওয়ার কারণে, তার রোগীদের সুস্থ্য করার জন্য তার নিজেরই তৈরি করা চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন।
মানুষের সাধারণ আচরণ কেনো অনন্য/সতন্ত্র হয় তা ব্যাখ্যা করার জন্যই সিগমুন্ড ফ্রয়েড একটি থিওরী বা তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন।
যেই তত্ত্বটিই আজ আমাদের কাছে সাইকোঅ্যানালিটিক বা মনোবিশ্লেষ্য তত্ত্ব (Psychoanalytic Theory) নামে পরিচিত।
ফ্রয়েড ব্যক্তিত্বের গবেষণা, কিছু নিদির্ষ্ট ও অস্বাভাবিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি কনভার্সন ডিজঅর্ডার নামক একটি পদ্ধতিতে রোগীদের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করতেন।
এক্ষেত্রে হাসপাতালে প্যারালাইসিসেরে মতো রোগীরা আসতো, কিন্তু এই ধরনের রোগ হওয়ার কোনো চিকিৎসা জনিত কারণ পাওয়া যেতো না।
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের থিওরী বা তত্ত্বটি জানলে চমকে উঠতে হয়। কারণ তিনি বার্থা পেপেনহেম নামের একটি মেয়েকে চিকিৎসা করার বদলে, মেয়েটির চিকিৎসকে সাহায্য করেছিলেন।
যা কিনা, ফ্রয়েডের সাইকোঅ্যানালিটিক বা মনোবিশ্লেষ্য তত্ত্ব তে একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিলো।
বার্থা পেপেনহেম নামের মেয়েটির ২১ বছর বয়সে সমস্যা শুরু হয়। তার জটিল ও নাটকীয় এক রোগের কাহিনী ঘটেছিলো…..।
ফ্রয়েডের ধারণা/মন: সচেতনতার ৩ টি স্তর (Freud’s Mind: Three Levels of Consciousness):
সিগমুন্ড ফ্রয়েড যেভাবে বার্থা পেপেনহেম নামক মেয়েটির জটিল ও নাটকীয় সমস্যা বুঝতে পেরেছিলেন তেমনি করে চেতন সচেতনতাকে ৩ টি ভাগে ভাগ করেন।
যেমনঃ
সচেতন মন (the conscious mind)
অবচেতন মন (the preconscious mind)
অচেতন মন (the unconscious mind)।
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের কাছে মানুষের মনকে বরফের খন্ডের মতো মনে হয় যেখানে সচেতন মনটি কেবল উপর থেকে দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ চিন্তাভাবণা মনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে য বোঝা যায় না।
বরফ খন্ডের নিচের দিকের সাথে সিমুন্ড ফ্রয়েড অবচেতন মনকে (the preconscious mind) তুলনা করেছেন।
এটি এমন এক ধরেনের স্মৃতি নিয়ে তৈরি, যা বর্তমানে সচেন নয়। কিন্তু তাকে চাইলেই সহজেই চেতনায় আনা যায়।
যেমন কেউ একজন তার প্রিয় খাবার কি তা নিয়ে এখন ভাবছে না কিন্তু ইচ্ছা করলেই তার প্রিয় খাবারের নাম চেতনায় আনতে পারে।
অবচেতন মন হলো আমাদের স্মৃতি শক্তি জমা রাখার গুদাম ঘরের মতো; যেখানে চাইলেই প্রবেশ করা যায়।
অচেতন মন (the unconscious mind) পূর্বের কোনো সহজাত উদ্দেশ্য জমা করে রাখে। আবার যে সকল স্মৃতি ও আবেগ সচেতন মনের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলোকে অচেতন মনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। এই অচেতন মনের মধ্যে চাইলেই অবচেতন মনের মতো প্রবেশ করা যায় না।
ফ্রয়েডের ধারণা: আইডি, ইগো এবং অতিইগো (Freud’s Mind: Id, Ego, and Superego):
সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনকে আলাদা ভাবে ৩ টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। ফ্রয়েডের তত্ত্বে দেখানো হয় যে, মনের প্রত্যকটি আলাদা কার্যক্রম সহ তা ৩ টি কার্যকরী ভাগে বিভক্ত।
যেমনঃ
আইডি,
ইগো এবং
সুপারইগো।
আইডি: স্বার্থপর জীব (Id: The Selfish Beast)
যখন একটি শিশু জন্ম গ্রহণ করে তখন তার মনের মধ্যে শুধু একটিই অংশ থাকে তা হলো আইডি। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে এই আইডির মধ্যে আবার জীবন ও মৃত্যু নামক ২ টি প্রবৃত্তি রয়েছে।
ফ্রয়েড মৃত্যর প্রবৃত্তি নিয়ে সামান্য কিছু বলে গেছেন। তিনি মনে করতেন যে- মানুষের আগ্রাসী মনোভাব এবং আত্মহত্যা করার ইচ্ছা এই মৃত্যুর প্রবৃত্তি থেকে জাগ্রত হয়।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড জীবন প্রবৃত্তিকে লিবিডো নাম দেন যেখান থেকে আমাদের ক্ষুধা লাগা, আত্মরক্ষা ও যৌন চাহিদা জাগ্রত হয়।
ফ্রয়েড এখন পর্যন্ত ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি বর্নণায় আগ্রাসন ও যৌন চাহিদাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন।
শুনতে অবাক লাগেলেও, ব্যক্তিত্বের ভালো মন্দের পেছনে সিগমুন্ড ফ্রয়েড আগ্রাসন ও যৌনতাকেই বিশদ ভাবে দায়ী করেছেন।
ফ্রয়েডের মতে, মানুষ জন্ম থেকেই যৌন আনন্দ উপভোগ ও অন্যর ক্ষতি করার, এই ২ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়।
আইডি সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের মনের অচেতনে কাজ করে বলে, আমরা এই উদ্দেশ্য বুঝতে পারি না। তাই কেবল নিরাপদ অবস্থায় আমাদের যৌনতা ও আগ্রাসন প্রকাশ পায়।
আইডি সম্পর্কে ফ্রয়েডের বক্তব্য:
মানুষের মনের গোপন দিক সম্পর্কে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বেশির ভাগ লোকের পক্ষেই মেনে নেয়া অসম্ভব।
ফ্রয়েড বলেন যে, আমাদের প্রত্যকের সাথেই একটি স্বার্থপর ও নিষ্ঠূর পশু বাস করে! আইডির এই পশুটি শুধুৃ আনন্দ পওয়ার জন্য কাজ করে।
আইডি তাৎক্ষণিক আনন্দ পেতে ও ব্যাথা মুক্ত থাকতে চায় এতে অন্যর কি ক্ষতি হলো না হলো এটা তার দেখার বিষয় নয়।
তবে, আইডির এই ধরণের স্বার্থপরতা আমাদের কাছে একদম অপরিচিতও নয়! ফ্রয়েডের মতে, আইডি এমন ভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়, সেটার বাস্তবের সাথে মিল নেই।
এমনিকি আইডির বাস্তব সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই! আইডি যেটার মাধ্যমে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে চান, ফ্রয়েড সেটাকে বলেছেন প্রাথমিক প্রক্রিয়ার ভাবনা, যেখানে মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মানসিক চিত্র তৈরি হয়।
যেমন এই প্রক্রিয়ায় ভালো চকলেট খাওয়ার কথা কিংবা আমাদের শত্রূকে কিভাবে শাস্তি দেবো, মনে এসবের চিত্র তৈরি হয়। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়াতে বাস্তবের বদলে, কল্পনাতেই আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায়।
আসলে কোনো ব্যক্তিই উক্ত ইচ্ছা পূরণের প্রক্রিয়া ছাড়া দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারবে না। সৌভাগ্যবশত শিশুকালে আমাদের মধ্যে শুধু আইডি থাকে।
তখন, আমাদের চারপাশের বড়রা আমাদের দরকারি ও নিরাপদ জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু, আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে এবং জগতের সাথে যোগাযোগের কারণে আমাদের আইডি অন্য ২টি অংশ- ইগো ও সুপারইগোতে ভাগ হয়ে যায়।
ইগো: ব্যক্তিত্বর পরিচালক (Ego: The Executive of Personality):
যখনই আইডি, বাস্তবিক উপায়ে এবং বিপদ ছাড়াই নিজের প্রয়োজন পূরণের উপায় খুঁজে পায়, তখনই ইগো তৈরি হয়।
ইগো বাস্তবতার নীতিতের পরিচালিত হয়। এর মানে হলো; যতক্ষণ না পর্যন্ত নিরাপদ ও বাস্তব উপায়ে এর উদ্দেশ্যকে সন্তুষ্ট করতে পারে, ততক্ষণ ইগো আইডিকে দমন করে রাখে।
অর্থাৎ আইডির প্রয়োজন মেটানোই ইগোর লক্ষ্য! ইগোকে ব্যক্তিত্বে পরিচালক ভাবা যেতে পারে কারণ, ইগো তার দক্ষ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আইডিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে পরে এবং বাস্তবতা ও সুপারইগোর বিরুদ্ধে আইডির আকাঙ্খাকে স্থিতিশীল রাখতে পারে।
সুপারইগো: বিবেক ও আদর্শ ইগো (Superego: The Conscience and Ego Ideal):
আইডি এবং ইগোর কোনো নৈতিকতা নেই! কারণ এরা অন্যর ক্ষতি করে হলেও আইডির উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
যেমন এর উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ইগো বাস্তবে কাজ করে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত এর উদ্দেশ্য হাসিল হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে চিন্তাই করে না যে, আইন ভঙ্গ, মিথ্যা কথা বলা বা কোনো অন্যায় হলো কিনা। যখনই সুপারইগোর আগমন ঘটে, তখনই আইডি ও ইগোর কাজে বাধা পরে যায়।
অর্থাৎ সুপারইগো আমাদের মনের সেই অংশ যা আইডিকে বাধা দিয়ে নৈতিকতার মাধ্যমে উদ্দেশ্যকে হাসিল করতে চায়।
সুপার ইগো তৈরিতে মাতা-পিতার ভূমিকা বেশি। তারা শাষণের মাধ্যমে সন্তানদের নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
এই শাষণের অভিজ্ঞতা গুলো- বিবেক ও আদর্শ ইগো নামক ২ টি অংশে ভাগ হয়ে, সন্তানদের মনে স্থান পায়।
সিমুন্ড ফ্রয়েডের মতে পিতা-মাতার শাস্তি নৈতিকতার বিধিনিষেধ হিসেবে বিবেক, এবং তাদের আদর বা পুরষ্কার আদর্শ ইগো নামক সুপার ইগোতে ভালো চরিত্রের মানদন্ড হিসেবে স্থান পায়।
সুপার ইগোর এই দুটি অংশ আমাদের আচরণে কাজ করে। সিমুন্ড ফ্রয়েডের মতে- আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই চুরি, খুন বা ধর্ষণ করতে চায় না, কিন্তু তা করে কারণ হলো, আমাদের ইগো তা করার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ উপায় খুজে পায় না।
বৃদ্ধি/বিকাশ: মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের পর্যায় সমূহ (Growing Up : The Stages of Psychosexual Development):
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, আমরা শৈশব থেকে বেড়ে যৌবনের দিকে এগিয়ে চলার সাথে সাথে আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি সুগঠিত হতে থাকে।
এই পথ অতিক্রম করার পাশাপাশি যে ঘটনাগুলো আমাদের সাথে ঘটে তা আমাদের ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটিতে প্রভাব রাখে এবং এক পর্যায়ে এই প্রভাবগুলো স্থির হয় এবং ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটির উপর আজীবন প্রভাব রাখে।
ফ্রয়েডের মতে, আমাদের দেহের এক অংশ থেকে অন্য অংশে আইডির প্রথমিক যৌন আকাঙ্খার শক্তি নির্গত হয়।
দেহের যে অংশে এটা ঘটে সেই অংশকে বলা হয় ইরোজেনাস জোন (Erogenous Zones), যৌ*ন আকাঙ্খার উপর এই পর্য়ায় নির্ভর করে বলে, সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর নাম দিয়েছেন মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের পর্যায় বা সাইকোসেক্সূয়াল স্টেজ (Psychosexual Stages)
মৌখিক পর্যায় – জন্ম থেকে ১ বছর পর্যন্ত (Oral Stage – Birth to 1 Year):
মৌখিক পর্যায় হলো সাইকোসেক্সূয়াল স্টেজের ১ম ধাপ। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে- জন্মের পর থেকে ১ বছর বয়স পর্যন্ত এই মৌখিক পর্যায় বা Oral Stage বিরাজ করে।
এই মৌখিক পর্যায়ে আইডির সম্পূর্ন পরিতৃপ্ত ও অকাঙ্খা শুধু মাত্র মুখের উপরেই থাকে।
পায়ু পর্যায় – ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত (Anal Stage – 1 to 3 Years):
পায়ু পর্যায় হলো সাইকোসেক্সূয়াল স্টেজের ২য় ধাপ ! সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, ১ থেকে ৩ বছর বয়স পর্যন্ত এই পায়ু পর্যায় বা Anal Stage বিরাজ করে।
এই পায়ু পর্যায়ে সম্পূর্ন পরিতৃপ্ত ও অকাঙ্খার লক্ষ্য থাকে শুধু মাত্র মলদ্বারের(Anal) উপর।
ফালিক পর্যায় – ৩ থেকে ৬ বছর (Phallic Stage – 3 to 6 Years):
ফালিক পর্যায় হলো সাইকোসেক্সূয়াল স্টেজের ৩য় ধাপ। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, ৩ বছর থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত এই ফালিক পর্যায় বা Phallic Stage বিরাজ করে।
এই ফালিক পর্যায়ে সম্পূর্ন পরিতৃপ্ত ও সন্তুুষ্টির লক্ষ্য থাকে শুধু মাত্র যৌ*না*ঙ্গে*র উপর।
বিলম্ব পর্যায় – ৬ থেকে ১১ বছর (Latency Stage – 6 to 11 Years):
বিলম্ব বা ল্যাটেন্সি পর্যায় হলো সাই*কোসেক্সূয়াল স্টেজের ৪র্থ ধাপ! সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, ৬ বছর থেকে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত এই বিলম্ব বা Latency Stage বিরাজ করে।
এই বিলম্ব বা ল্যাটেন্সি পর্যায়ে যৌন শক্তি হস্তান্তরি হয় এবং সামাজিক মল্যায়নের কাজে পরিনত হয়।
জেনিটাল/যৌন পর্যায়- ১১ বছর থেকে আজীবন (Genital Stage – 11 Years On):
সাইকোসেক্সূয়াল স্টেজের সর্ব শেষ ও ৫ম ধাপ হলো জেনিটাল/যৌ*ন পর্যায়। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, ১১ বছর থেকে আজীবন এই জেনিটাল পর্যায় বিরাজ করে।
এই পর্যায়ে সমবয়সীদের প্রতি আগ্রহ ও রোমান্টিক আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব: আলবার্ট বান্দুরা (Social Learning Theory: Albert Bandura)
ব্যক্তিত্বের সামাজিক শিক্ষনের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোবিশ্লেষক (Psychoanalytic) তত্ত্ব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
অর্থাৎ এখানে সচেতন মন, অচেতন মন বা ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিভিন্ন ধাপকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
অর্থাৎ সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ববীদদের কাছে ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি হলো এমন কোনো কিছু যা সহজেই শেখা যায় এবং এটি আমাদের আবেগ, কাজকর্ম ও চিন্তাভাবনার মোট সমষ্টি বা যোগফল।
ইভান প্যাভলভ, জন.বি.ওয়াটসন, এবং বি.এফ.স্কিনারের মাধ্যমে এই সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের (Social Learning Theory) বিকাশ ঘটে।
তাদের মতে ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি হলো শিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করা একটি আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
ব্যক্তিত্বতে শিক্ষণের ভূমিকা (Role of Learning in Personality):
সামাজিক শিক্ষণের দৃষ্টিতে, কোনো ব্যক্তি যদি উপযুক্ত পরিবেশে আসেন, ও তাকে যদি উপযুক্ত এবং পর্যাপ্ত ব্যক্তিত্ব শেখানোর জন্য জোড় করা হয় তবে সে উপযুক্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন।
অপরদিকে, অপর্যাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ থেকে অপর্যাপ্ত ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি শিখে থাকবে।
সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের একজন অন্যতম প্রবক্তা হলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী আলবার্ট বান্দুরা।
ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি হলো শিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত আচরণের মোট সমষ্টি- এই ধারনার সাথে তিনি একমত। বান্দুরা প্রথাগত আচরণ তত্ত্ব কে ২ টি প্রধান ভাগে ভাগ করেন-
- তিনি দেখেছেন যে, মানুষ শিক্ষণের পরিবেশ দ্বারা নিষ্ক্রিয় আচরণ করার চাইতে তাদের নিজস্ব আচরণ নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
- তিনি ব্যক্তিত্বে শিক্ষণের গুরুত্বের উপর জোড় দিয়েছেন।
বান্দুরার মতে, আমরা যে পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি তা মানুষেরই তৈরি। আমরা যদি কারো সাথে ভীতু বা আক্রমণত্মক অথবা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করি, তবে তারও আলাদা প্রতিক্রিয়া জানাবে সুতরাং সমাজ আমাদের আলাদা আলাদা জিনিস শিক্ষা দিবে।
ব্যক্তিত্বতে জ্ঞানের ভূমিকা (Role of Cognition in Personality):
সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব অনুসারে আমাদের অর্জিত জ্ঞান আমাদের আচরণ নির্ধারণ করে। আমাদের জীবনের প্রয়োজন মেটাতে, আমাদের শিক্ষণের দক্ষতা যে ভূমিকা রাখে তার উপর বান্দুরা বিশেষ জোড় দিয়েছেন।
বান্দুরার তত্ত্ব মতে- কারো স্ব-কার্যকারিতা হলো এমন একটি ধারণা যে সেখানে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কি করতে হবে তা করেতে সক্ষম।
যে সকল ব্যক্তিরা নিজেকে বেশি কার্যক্ষম বলে মনে করে, তারা বেশি চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করে, ফলে তারা বেশি সফল হয়।
বান্দুরা ব্যক্তিত্বের মধ্যে মূল্যবোধের গুরুত্বকে এবং ব্যক্তিত্বের মানে অনেক বেশি জোড় দিয়েছেন। আমরা অন্য ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বের আদর্শ মান দেখে আমাদের আচরণের মান শিখি।
যেমন অন্যরা আমাদের শাস্তি অথবা পুরষ্কৃত করার সময় যে মানদন্ড ব্যবহার করে, সেগুলো দেখে আমরা আমাদের মানদন্ড শিখি।
এগুলো শিখে আমরা যখন নিজেদের জন্য ব্যবহার করি, বান্দুরা এটাকে তখন বলেছেন স্ব-নিয়ন্ত্রণ ।
যখন উক্ত মানদনন্ড গুলো নিজের আচরনের সাথে মিলে যায়, তখন আমরা খুশি হই এবং নিজেদের আচরণের সাথে মিলাতে না পারলে ব্যথিত হই।
এভাবে, স্ব-নিয়ন্ত্রণের এই প্রক্রিয়া সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সুপার ইগোর মতো কাজ করে।
পরিস্থিতিবাদ ও মিথস্ক্রিয়াবাদ (Situationism and Interactionism)
কেউ একজন হাসিখুশি নাকি মনমরা তা অনেকটা নির্ভর করে যে, সে কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে। কারণ, কিছু পরিস্থিতি আমাদের প্রফুল্ল রাখে এবং কিছু পরিস্থিতি আমাদের বিষন্ন করে তোলে।
আচরণবীদ বি. এফ. স্কিনার যুক্ত দিয়ে বলেন যে, কারো আচরণ তার বৈশিষ্ট্য দিয়ে নয় বরং তা পরিস্থিতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গিই পরিস্থিতিবাদ (Situationism) নামে পরিচিত। এর দ্বারা বোঝায় যে পরিস্থিতির সাথে আচরণ স্থির থাকে।
যেমন কোনো মহিলা যখন, তার পরিবারের সাথে থাকেন তখন তিনি সবার সাথে হাসিখুশি ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকেন।
আবার তার সমবয়সী বন্ধুদের সাথে খোস গল্প করার সময় অন্য রকম থাকেন, আবার তার অফিসে কাজ করার সময় তিনি আনুষ্ঠানিক ও কঠোর থাকেন।
সুতরং বলা যায় পরিস্থিতি(Situation) আচরণকে বৃহৎপরিসরে নিয়ন্ত্রণ করে।
মানবতাবাদী ত্ত্বত : ম্যাসলো এবং রগার্স (Humanistic Theory: Maslow and Rogers)
মনোবিজ্ঞানে মানবতাবাদী তত্ত্বকে প্রয়শই মনোবিজ্ঞানের ৩য় শক্তি বলা হয়। যদিও দর্শনে অনেক আগে থেকেই ঐতিহাসিক ভাবে মানবতাবাদের গভীর অস্তিত্ব রয়েছে।
তবে শুধু মাত্র ১৯৫০ এর দশক থেকে মনোবিজ্ঞানে এর আলোচনা শুরু হয়। এই মানবতাবাদ তত্ত্বটি মাত্র কয়েজন ব্যক্তির লেখা থেকে বিকশিত হয়।
এদের মধ্যে কার্ল রগার্স, আব্রাহাম ম্যাসলো, ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কলো, ভার্জিনিয়া স্যাটিন অন্যতম।
অভ্যন্তরিন দিকনির্দেশনা ও আত্মনিষ্ঠা (Inner-Directedness and Subjectivity):
মানবতাবাদীরা মনে করেন যে, মানুষ একটি অভ্যন্তরিন দিকনির্দেশনা ও অভ্যন্তরিন শক্তির অধিকারী যা তাদের বড় ও বিকশিত বা উন্নত হতে সাহায্য করে।
মানুষের ব্যক্তিগত ভাবে কোনো কিছু পছন্দ করার স্বাধীনতা রয়েছে; এবং মানুষ নিজের বুদ্ধি দিয়ে কোনো কিছু ভালো ভাবেই বাছাই করতে পারে।
এই অভ্যন্তরিন দিকনির্দেশনাই হলো ব্যক্তিত্ব বিকাশের পেছনে মূল শক্তি।
স্পষ্টভাবেই মানবতাবাদীদের, মানব জাতী সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টভঙ্গি রয়েছে।
তারা এই সত্য কথাটিও জানেন যে, আমাদের জীবনে সবাইকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় এবং অনেকেই তাদের জীবনকে আস্তে আস্তে বিশৃঙ্খল বানিয়ে দেয়।
ফলে এভাবে আমরা আমাদের ভালো/সঠিক জিনিস বাছাই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি! ম্যাশলো বলেন যে, আমরা যখন আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্যই পূরণ করতে পারি না তখন উচ্চ কিছুর আশা করাই বাদ দিয়ে দেই।
মানবতাবাদীদের কাছে, বাস্তবতা হলো বিষয়গত বাস্তব ( subjective reality). সকলেই জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে।
অর্থাৎ; একজনের কাছে যা বাস্তব অন্যজনের কাছে তা বাস্তব নাও হতে পারে! আবার আপনি একজনকে অসৎ হিসেবে দেখছেন কিন্তু অন্যজনের কাছে সেই ব্যক্তি অসৎ নাও হতে পারে।
অর্থাৎ; প্রত্যকটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মধ্যে সরাসরি বাস্তবের দৃষ্টির নিজস্ব প্রতিফলন ঘটে।
স্ব-ধারণা (The Self-Concept):
কার্ল রগার্স এবং অন্যান্য মানবতাবাদীদের ব্যক্তিত্ব তত্ত্বের মূলে রয়েছে স্ব-ধারণা (The Self-Concept)।
আমাদের স্ব-ধারণা হলো আমরা কে এবং আমরা কেমন? আমাদের জীবনে যত রকমের বিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তার মধ্যে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ব্যক্তিত্ব।
অন্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগের মাধ্যমে স্ব-ধারণাটি শিখে নেয়া যায়। কার্ল রগার্স স্ব-ধারণাকে ২ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
একটি হলো আমি নিজেই জানি আমি কেমন এবং অন্যটি হলো আমার নিজের যা ইচ্ছা হয়।
যেমন আমি নিজেই জানি যে- আমি বল খেলায় “সি” ক্লাসের থেকে ভালো করতে পারবো না। অথচ আমার “এ” ক্লাশের খেলার টুর্ণামেন্ট জিততে ইচ্ছা করে।
অধিক ক্ষেত্রেই, নিজেকে ভালো ও সুন্দর ব্যক্তি মনে করি অবার সময় সময় একটুু স্বার্থপরও হই।
কার্ল রগার্সের এই আদর্শ স্ব-ধারণাটি সিগমুন্ড ফ্রয়েডের আদর্শ ইগোর সাথে অনেক মিল রয়েছে।
স্ব-বাস্তবায়ন (Self-Actualization):
মানবতাবাদী মনোবিজ্ঞানের একটি বড় মতোবাদ হলো যে মানুষের উন্নতি, বিকাশ ও তাদের ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করার একটি অভ্যন্তরি চালক রয়েছে।
আব্রাহাম ম্যাশলো এর নাম দেন স্ব-বাস্তবায়ন (Self-Actualization)! স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিরা ব্যক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারেন এবং মানুষ হিষেবে নিজেদের সম্পূর্ণ ক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে পারেন।
একজন স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি কেমন হবেন, ম্যাশলো তার নিম্নরুপ বিবরন দিয়েছেনঃ
- স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিরা নৈতিক ভাবে অনেক উন্নত হোন। তারা নিজের চাইতে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রিয় জনদের বেশি মঙ্গল কামনা করেন। তারা টাকার জন্য কাজ না করে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভালো কাজ করেন।
- তাদের কেউ বলুুক বা না বলুক, স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিরা অন্যদের জন্য গভীর ভাবে চিন্তা করে। তার সৎ হয় এবং অপ্রিয় হলেও সঠিক কাজই করে। স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিরা জাকজমকপূর্ণ সামাজিকতা পছন্দ করে না।
- মানুষের জীবন সম্পর্কে তারা খুব তোষামুদে না হয়ে সঠিক ও বাস্তবতায় বিশ্বাসী হয়। জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা ইতিবাচক।
- স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তির কাছে জীবন সব সময় সতেজ ও চ্যালেঞ্জিং। তারা তাদের কাজে সর্বদা স্বভাবিক থাকে।
ম্যাশলোর মতে, জগতে স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তির সংখ্যা অনেক কম।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, এলিয়েনার রুজভেল্ট, ও লুডভিগ ভ্যানবিথোভেন সহ কয়েক জনকে তিনি স্ব-বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।
FAQ:
একজন মনোবিজ্ঞানী।
৫টি।
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের।
৩টি।
৫টি।
আলবার্ট বান্দুরা সামজিক শিক্ষণ তত্ত্ব দিয়েছেন।
ম্যাসলো এবং রগার্স মানবতাবাদী তত্ত্ব দিয়েছেন।