বাংলা বর্ণমালা বা অক্ষর কার ফলা ইত্যাদি পরিচিতি

প্রিয় পাঠক, বাংলা ভাষায় বর্ণমালা বা মোট অক্ষর সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে ১১ টি হলো স্বরবর্ণ এবং ৩৯ টি হলো ব্যঞ্জনবর্ণ।

আজকে আমরা বাংলা ভাষার স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, কার, ফলা, বর্ণের উচ্চারণ স্থান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করবো।

বাংলা ভাষার ১১টি স্বরবর্ণ বা অক্ষর:

প্রিয় পাঠক, আমাদের বাংলা বর্ণমালায় মোট ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে। এগুলো ঠিক ইংরেজির ভাউয়েল (vowel) এর মতো কাজ করে।

এই ১১টি স্বরবর্ণকে আবার হ্রসস্বর ও দীর্ঘস্বর নামক ২টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

বাংলা ভাষার এই ১১টি স্বরবর্ণ নিচে তালিকায় দেয়া হলো:

(বাংলা ভাষার ১১ টি স্বরবর্ণ)

প্রিয় পাঠক, বাংলা স্বরবর্ণের মধ্যে ঐ এবং ঔ কে দ্বিস্বর বা যুগ্ন স্বরধ্বনির প্রতীক বলা হয়। কারণ এগুলো ২টি করে ধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। যেমন: অ+ই= ঐ বা অই।

বাংলা ভাষার ৩৯টি ব্যাঞ্জনবর্ণ বা অক্ষর সমূহ:

প্রিয় পাঠক, বাংলা বর্ণমালা বা অক্ষর সমূহের মধ্যে ৩৯টি হলো ব্যাঞ্জনবর্ণ। এই ৩৯টি বর্ণের মধ্যে ৩৫টিকে বলা হয় প্রকৃত এবং ৪টিকে বলা হয় অপ্রকৃত।

এই ৩৯টি ব্যাঞ্জনবর্ণের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

বাংলা ভাষার ৩৯টি ব্যাঞ্জনবর্ণের তালিকা।

বাংলা স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রুপ:

স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রুপকে বলা হয় কার। বাংলা স্বরবর্ণের ২ রুপ রয়েছে। প্রাথমিক রুপ এবং সংক্ষিপ্ত রুপ।

স্বরবর্ণ যখন নিরপেক্ষ বা স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়, কিংবা কোনো বর্ণের সাথে যুক্ত না হয়ে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে বলে প্রাথমিক বা পূর্ণ রুপ। যেমন: অ, আ, ই ইত্যাদি।

এই রুপে স্বরবর্ণ শব্দের আদি, অন্ত বা মধ্যে বসতে পারে। যেমন: ম, বই, যায়া, খায়া, ইত্যাদি।

আর স্বরধ্বানি যখন ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হয়, তখন সেই স্বরধ্বনিটির বর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়।

যেমন: এর সংক্ষিপ্ত রুপ হলো “া”

স্বরবর্ণের এই রকম মোট ১০টি সংক্ষিপ্ত রুপ বা কার রয়েছে। স্বরবর্ণ মোট ১১ টি। এর মধ্যে শুধু এর কোনো সংক্ষিপ্ত রুপ নেই। এজন্য কার মোট ১০টি।

এই ১০ টি কার হলো:

  1. আ-কার (া)
  2. ই-কার ( ি)
  3. ঈ-কার (ী)
  4. উ-কার (ু)
  5. ঊ-কার (ূ)
  6. ঋ-কার (ৃ)
  7. এ-কার ( ে)
  8. ঐ-কার ( ৈ)
  9. ও-কার (-ো)
  10. ঔ-কার (-ৈৗ)

এই ১০ টি কারের ব্যবহার:
মা, মি, মী, মে, মৈ, মু, মূ, মৃ, মো, মৌ।

বাংলা বর্ণমালা বা অক্ষরে মোট ৬টি ফলা:

প্রিয় পাঠক, বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রুপ হলো ফলা। আমরা দেখেছি, স্বরবর্ণ যখন ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয় তখন এর রুপ পরিবর্তন হয়।

ঠিক তেমনিভাবে, কোনো ব্যঞ্জনবর্ণও কোনো স্বর বা ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তার আকৃতির পরিবর্তন হয়। আবার তা কখনো কখনো সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

ব্যঞ্জনবর্ণের এই সংক্ষিপ্ত বা পরিবর্তিত রুপকে বলা হয় ফলা। যেমন: ম্র, ম্য ইত্যাদি।

ম এর সাথে র যুক্ত হলে তাকে উচ্চারণ করা হয় “ ম এ র ফলা = ম্র”

বাংলা বর্ণমালার ২৫টি স্পর্শধ্বনি:

প্রিয় পাঠক, বাংলা বর্ণমালার ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫ টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি। এগুলোকে উচ্চারণ স্থানের দিক থেকে ৫টি গুচ্ছে বা বর্গে ভাগ করা হয়েছে।

আবার প্রতিটি গুচ্ছের প্রথম ধ্বনিটির নাম অনুসারে সে গুচ্ছের সবগুলো ধ্বনিকে বলা হয় ঐ বর্গীয় ধ্বনি। বর্গভুক্ত হওয়ায়, সেই ধ্বনির প্রতীকগুলোকে সেই বর্গীয় নামে ডাকা হয়।

নিচের ছকে সুন্দর ভাবে ২৫টি স্পর্শধ্বনির শ্রেণি দেয়া হলো:

ক খ গ ঘ ঙধ্বনি হিসেবে কন্ঠ ধ্বনিবর্ণ হিসেবে বর্গীয় বর্ণ
চ ছ জ ঝ ঞধ্বনি হিসেবে তালব্য ধ্বনিবর্ণ হিসেবে বর্গীয় বর্ণ
ট ঠ ড ঢ ণধ্বনি হিসেবে মূর্ধন্য ধ্বনিবর্ণ হিসেবে বর্গীয় বর্ণ
ত থ দ ধ নধ্বনি হিসেবে দন্ত্য ধ্বনিবর্ণ হিসেবে বর্গীয় বর্ণ
প ফ ব ভ মধ্বনি হিসেবে ওষ্ঠ ধ্বনিবর্ণ হিসেবে বর্গীয় বর্ণ
(বাংলা ২৫ টি স্পর্শ ধ্বনি)

কিছু প্রশ্ন-উত্তর:

বাংলা ভাষায় মোট স্বরবর্ণ কয়টি?

১১ টি।

বাংলাতে ব্যঞ্জণবর্ণ কয়টি?

৩৯টি।

ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫ টি বর্ণ বা ধ্বনিকে কি বলা হয়?

স্পর্শধ্বনি বলা হয়।

বাংলা ভাষায় কার মোট কয়টি?

১০ টি।

বাংলায় ফলা কয়টি?

৬ টি।

বাংলা বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রার বর্ণ কয়টি?

৩২ টি।

বাংলা বর্ণমালায় অর্ধমাত্রার বর্ণ কয়টি ?

৮ টি অর্ধমাত্রার বর্ণ রয়েছে।

মাত্রাহীন বর্ণ মোট কয়টি?

বাংলা বর্ণমালার মধ্যে মাত্রাহীন বর্ণ রয়েছে মোট ১০টি।

বাংলা ভাষার ব্যঞ্জনবর্ণকে মোট কয়টি বর্গে ভাগ করা হয়েছে ?

ব্যঞ্জনবর্ণকে মোট ৫ টি বর্গে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ক বর্গ, চ বর্গ, ট বর্গ, ত বর্গ এবং প বর্গ।

Leave a Comment