১৯০৭ সালে চর্যাপদ আবিষ্কার হওয়ার পরে থেকে এর ভাষা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
কেউ বলেছেন যে চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরুপী। আবার হিন্দি, অসমিয়া বা উড়িষ্যার ভাষাবিদগণ চর্যাপদের ভাষা নিজেদের বলে দাবি করেছেন।
সুনীতিকুমারের মতে চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত হয়েছে:
ভাষাবিদ ও পন্ডিত সুনীতিকুমার ১৯২৬ সালে ODBL নামক গ্রন্থে চর্যাপদের পদ প্রকাশ করেন এবং সাথে তা বিশ্লেষণ করেন।
যেমন, চর্যাপদের ব্যাকরণিক বৈশিষ্ট্য, এর পদকর্তারা কতজন ও তাদের নাম ও পরিচয়, চর্যাপদের ধ্বনিতত্ত্ব ও ছন্দ বিশ্লষণ সহ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও সুনীতিকুমার প্রথম ভুসুকুপার রচিত ৪৯ নং পদে উল্লেখ করা পদ্মা নদীর নাম যা চর্যাপদে পউয়া খাল নামে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি বর্ণনা করেন।
এতে করে সুনীতিকুমার বোঝাতে সমর্থ হন যে চর্যাপদ বাংলার আদি নিদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়।
অর্থাৎ সুনীতিকুমার প্রমান করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন।
শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদ যে ভাষায় রচিত:
সুনীতিকুমারের ঠিক ১ বছর পরেই, ১৯২৭ সালে শহীদুল্লাহ ফ্রান্সের প্যারিস থেকে “Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha” নামক গ্রন্থে, সুনীতিকুমারের মতকে সমর্থন করেন।
অর্থাৎ সুনীতিকুমারও চর্যার ভাষাকে প্রাচীন বাংলার আদি নিদর্শন সমর্থন করে এটিকে বঙ্গকামরুপী ভাষা বলেছেন।
তবে এর আবিষ্কারক হলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নিজেও চর্যাপদকে বাংলার আদি নিদর্শন বলে দাবি করেন।
চর্যাপদের ভাষা নিয়ে বিতর্কের সমাধান:
চর্যাপদ যখন ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার থেকে আবিষ্কার হয়, ঠিক তারপর থেকেই এর ভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়” “ডাকার্ণব” “সরহপাদের দোহা” ”কৃঞ্চপাদের দোহা” গ্রন্থকে একত্রে করে তা ”হাজার বছরের পুরাণ বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে প্রকাশ করেন।
আর তখনই শুরু হয় এর ভাষা নিয়ে তুমুল চর্চা। এই অঞ্চলের প্রায় সকল ভাষার পন্ডিতরাই এটিকে নিজেদের বলে দাবি করতে থাকে।
অবশেষে সুনীতিকুমার তার ODBL নামক গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে প্রমান করেন যে এটি বাংলার আদি নিদর্শন।
*তারপরেও এটিকে আমরা সান্ধ্য ভাষা বলতে পারি।
কারণ এই ভাষাকে আলো আঁধারির সাথে তুলনা করা যায়।
যেমন এই ভাষার অর্থ বুঝতে কষ্ট হয়।
এজন্যই এর ভাষাকে সন্ধ্যা বেলার সাথে তুলনা করে সন্ধ্যা বা সান্ধ্য বা আলো-আঁধারি ভাষা বলা হয়েছে।
উত্তর: সুনীতিকুমার
উত্তর: ১৯২৬ সালে
উত্তর: বঙ্গকামরুপী
উত্তর: সন্ধ্যা ভাষা বা সান্ধ্য ভাষা, যা আলো-আঁধারি ভাষা নামেও পরিচিত।
উত্তর: ১৯০৭ সালে