কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়ার ৬০টি উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, কলা আমাদের অতি পরিচিত একটি ফল! আজকের পোষ্টে আমরা কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়ার ৬০টি বিশেষ উপকারিতা, কলার খাওয়ার অপকারিতা, কলার জাত পরিচিতি, পুষ্টিমানের তালিকা সহ বিভিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

কলা পরিচিতি

কলার বৈজ্ঞানিক নাম-Musa Sapientum, এবং কলার ইংরেজি নাম হলো Banana. বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে কলা উৎপন্ন হয়।

আমাদের দেশে কলা সরাসরি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোনােভাবে এর ব্যবহার তেমন লক্ষ্য করা যায় না।

প্রক্রিয়াজাতকরণ কলাকৌশল ও বাজার চাহিদার অনুপস্থিতি এর জন্য দায়ী। বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে যদি উপযুক্ত কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তবে, দেখা যাবে কলা প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্মকাণ্ড ও ব্যবসায়িক সাফল্যসহ এগিয়ে যাবে।

কলা গাছ ও কাঁচা কলা
কলা গাছ ও কাঁচা কলা

কলা এদেশের একটি প্রধান বারমাসি ফল। এটিই একমাত্র ফল যা বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং সকলে খাওয়ার সুযােগ পায়।

বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, যশাের, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ প্রভৃতি এলাকার ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়।

কলা ক্যালরি, খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এবং কেবল পুষ্টিকরই নয়, এর ফলনও অন্যান্য ফল ও সবজি হতে অনেক বেশি।

ধান, গম ও মিষ্টি আলু হতে যেখানে হেক্টরপ্রতি যথাক্রমে ১১.২, ৬.৬ ও ৯.৮ লক্ষ কিলাে ক্যালরি খাদ্য শক্তি উৎপাদন হয় সেখানে কলা থেকে ৫০ লক্ষ কিলাে ক্যালরি পাওয়া যায়।

কলার কয়েকটি পরিচিত জাতের নাম:

বাংলাদেশে কমবেশি প্রায় ১৯টি জাতের কলা পাওয়া যায়! পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, বন কলা, মামা কলা ইত্যাদি নামেও কলার কিছু বুনাে জাত দেখতে পাওয়া যায়। ক্রমশ কলার জাতের সংখ্যা বাড়ছে।

গাছের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের কলা গাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- (১) লম্বা জাতের গাছ ও (২) খাটো জাতের গাছ।

পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত ৪ প্রকার যথা:

১। সম্পূর্ন বীজমুক্ত কলা:
সম্পূর্ন বীজমুক্ত কলা হলো- সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর ইত্যাদি।

২। দু-একটি বীজযুক্ত কলা:
চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি হলো দু-একটি বীজযুক্ত কলা।

৩। বীজযুক্ত কলা:
এটেকলাতে বীজ থাকে। যেমন- বতুর আইটা, গােমা, সাংগী আইটা ইত্যাদি।

৪। আনাজী কলাসমুহ:
যেমন- ভেড়ার ভােগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়ের বাতি ইত্যাদি।

কাঁচা কলা ও পাকা কলার পুষ্টিমানের তালিকা:

১০০ গ্রাম কাঁচা কলা থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিমান:

কাঁচা কলার পুষ্টির উপাদানপরিমান
পানি৭৮.৭ গ্রাম
প্রোটিন২.৬ গ্রাম
কার্বহাইড্রেট১৭.৩ গ্রাম
ফ্যাট০.৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম০.০ গ্রাম
লৌহ০.৬ মিলিগ্রাম
থায়ামিন০.০৯ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন০.০৬ মিলিগ্রাম
বিটা ক্যারোটিন৩০ মাইক্রোগ্রাম
শক্তি৮৩ কি. ক্যালরি
১০০ গ্রাম কাঁচা কলার পুষ্টিমান

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলা থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিমান:

পাকা কলার পুষ্টির উপাদানপরিমান
পানি৬২.৭ গ্রাম
প্রোটিন০.৭ গ্রাম
কার্বহাইড্রেট২৫ গ্রাম
ফ্যাট০.৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম১৩ মিলিগ্রাম
লৌহ০.৯ মিলিগ্রাম
থায়ামিন০.১০ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন০.০৫ মিলিগ্রাম
বিটা ক্যারোটিন৭৮ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি২৪ মিলিগ্রাম
শক্তি১০৯ কি.ক্যালরি
১০০ গ্রাম পাকা কলার পুষ্টিমান

কাঁচা ও পাকা কলা থেকে কি কি খাবার তৈরি করা যায় ?

কলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলাে যে, সারা বছর কলার ব্যবহার হয়। আমাদের দেশে কলা দুইপর্যায়ে ব্যবহার করা হয়।

কাঁচা অবস্থায় ও পাকা অবস্থায়। কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করা হয় এবং পাকা কলা ফল হিসেবে সরাসরি ব্যবহার করা হয়।

প্রক্রিয়াজাতকৃত কলা খুব কমই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিপস ও মিক্সড ফুট জ্যাম তৈরিতে কাঁচা ও পাকা কলা ব্যবহার করা হয়।

পাকা কলার ছবি
পাকা কলার ছবি

ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু পণ্য কলা থেকে তৈরি করা যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য ১২টি খাবারের নাম দেয়া হলোঃ

  1. কলার ঝাল চিপস,
  2. মিষ্টি চিপস (তেলে ভাজা),
  3. মিষ্টি চিপস (ড্রায়ারে শুকানাে),
  4. কলার জ্যাম,
  5. কলা দিয়ে ক্যান্ডি,
  6. কলার স্কোয়াশ,
  7. পাকা কলা দিয়ে পিঠা,
  8. পাকা কলা দিয়ে বড়া পিঠা,
  9. কলার কাবাব,
  10. কাঁচা কলা দিয়ে কোফতা,
  11. পাকা ও কাঁচা কলা দিয়ে রুটি,
  12. কাঁচা কলার খোসা দিয়ে ভর্তা।

কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ:

১। কলা খেলে অবসাদ দূর হয়:
অবসাদে ভােগা কিছু মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে কলা খেলে সুস্থ্য বােধ করেন তারা। কলার মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান প্রােটিন মানুষের শরীরে পরিণত করে সিরােটোনিন হরমােনে।

সিরােটোনিন হরমােন অফ হ্যাপিনেস নামে পরিচিত! শরীরে এই হরমােনের মাত্রা বাড়লে মুড ভাল হয়ে, রিল্যাক্স বােধ করে মানুষ।

মুড অফ একটি অতি পরিচিত প্রি-মেন্সট্রয়াল সিনড্রোম! কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরে গ্লুকোজের সামঞ্জস্য বজায় রেখে মুড ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

২। ডিপ্রেশান দূর করে কলা:
কলায় থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক প্রােটীন এটি শরীরে গিয়ে সেরােটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরােটোনিন আমাদের মনকে রিলাক্স করে; মুড ভাল করে তােলে, আপনাকে সুখীবােধ করতে সাহায্য করে।

৩। প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোম নারীদের জন্য:
পিল খাওয়া বাদ দিন! কলা খান। ভিটামিন বি৬ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা আপনার মন মানসিকতা চাঙ্গা করে তুলবে।

৪। ফেসপ্যাক তৈরিতে পাকা কলা:
বিভিন্ন ধরনের বিউটি ফেসপ্যাক হিসেবে পাকা কলা ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকে পুষ্টি যোগান দেয়। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

৫। বুকজ্বলা দূর হবে কলা খেলে:
কলায় প্রাকৃতিক এন্টাসিড থাকে৷ ফলে কলা খেলে বুক জ্বলা দূর হবে।

৬। মাথা গােলানাে:
সকাল ও দুপুরের মাঝে সকাল ১০টায় একটা কলা খেতে হবে। ফলে; আপনার রক্তে সুগার লেভেল ঠিক রাখবে এবং মাথা গােলানাে থেমে যাবে।

৭। অ্যানিমিয়া দূর করে কলা:

কলার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমান আয়রন রক্তে হিমােগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে; অ্যামিনিয়ার সম্ভবনা কমে। এমনকী, অ্যামিনিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা।

৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
কলার মধ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি অথচ নুনের মাত্রা কম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর করে কলা।

ইউ ফুড ও ড্রা*গ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কলার এই গুণের কথা মাথায় রেখে স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে কলার ব্যবহার সুপারিশ করেছে।

৯। মস্তিষ্ক ও মেধা বৃদ্ধি করে কলা:
টানা ১ বছর ধরে পরীক্ষা চালানাে হয়েছিল ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ওপর।

পরীক্ষার আগে টানা ব্রেকফাস্ট, ব্রাঞ্চ ও লাঞ্চে কলা খাওয়ানাে হয় তাদের! দেখা গিয়েছিল কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম তাদের মনসংযােগ বাড়ানাের ফলে অন্যদের থেকে পরীক্ষায় ভাল করেছিলেন ওই ২০০ জন পড়ুয়া।

১০। কলা খাওয়ার ফলে উত্তেজনা বা স্নায়ুচাপ কমে:
ভিটামিন বি আপনার স্নায়ুকে শান্ত করে তুলতে সাহায্য করে। এজন্য পরিক্ষার আগে একটা কলা খান।

১১। কলা অতিরিক্ত ওজন কমাবে:
অনেকে মন খারাপ থাকলে কাজের অতিরিক্ত চাপ থাকলে নিজের অজান্তেই জাংক ফুড খেতে থাকেন।

এরকম চাপে থাকলে আমাদের ব্লাড সুগার লেভেল ঠিক রাখা প্রয়ােজন; যা প্রতি দুই ঘন্টায় একটি কলা খেলে সুগার ঠিক রাখা সম্ভব।

১২। সিজনাল এফেক্টিভ ডিসঅর্ডার দূর করে:
এই রােগের ভুক্তভােগীরা কলা খেতে পারেন। কারণ এতে আছে মুড এনহ্যান্সার প্রােটিন ট্রিপটোফ্যান।

১৩। কনসটিপেশন:
কলার মধ্যে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকায় পেট পরিষ্কার রাখতে কলা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

১৪। হ্যাংওভার কাটাতে কলা খাওয়ার উপকার:

আগের রাতের অতিরিক্ত মদগ্রহণ করে হ্যাংওভার কাটাতে, বানানা মিল্কশেকের কোনও তুলনা নেই।

সঙ্গে যদি থাকে ১ চামচ মধু কলা শরীরের অস্বস্তি কমায় সাথে দুধ পেট ঠান্ডা করে ও মধু বজায় রাখে রক্তে শর্করার মাত্রা। ফলে অম্বলের হাত থেকেও রেহাই পায় শরীর।

১৫। শক্তির উৎস কল:
কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালােরী আছে। তাই মাত্র একটি কলা খেলেই অনেক সময় পর্যন্ত সেটা শরীরে শক্তি যােগায়।

১৬। কলা দূর্বলতা কাটায়:
অতিরিক্ত জ্বর কিংবা হঠাৎ ওজন কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এসময়ে; কলা খেলে শরীরে শক্তি সঞ্চার হবে এবং তাড়াতাড়ি দুর্বলতা কেটে যায়।

১৭। হাড়ের জন্য:
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য পাকা কলা খাওয়া অনেক উপকারী।

১৮। কলা খেলে হজম ও পেট ফাঁপা কমে:
কলা অ্যান্টাসিডের মত কাজ করে। অর্থাৎ কলা হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফাঁপা সমস্যা সমাধান করে।

এছাড়াও কলা পাকস্থলীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রােধ করে।

১৯। কলা খেলে রক্ত উৎপন্ন হয়:
কলায় প্রচুর আয়রণ বা লৌহ আছে যা রক্তে হিমােগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে।

ফলে যারা রক্ত শূন্যতায় ভুগছেন, তাদের জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী।

২০। কলা খাওয়ার ফলে পাকস্থলী ভালো থাকে:
কলা খাওয়ার ফলে বুক জ্বালা পােড়া কমে যায়; এবং পাকস্থলীতে ক্ষতিকর এসিড হতে দেয় না।

তাই বুক জ্বালাপােড়া সমস্যায় প্রতিদিন ভরা পেটে একটি করে কলা খেলে উপকার হবে।

২১। ডায়রিয়া হলে কলা খাওয়ার উপকারিতা:

ডায়রিয়া হলে শরীর পানি শূন্য হয়ে যায় এবং শরীর থেকে প্রয়ােজনীয় পটাশিয়াম বের হয়ে যায়।

তাই এসময়ে কলা খেলে শরীরে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং হার্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।

২। কলাতে ফ্যাটি এসিডের চেইন আছে:
কলায় ফ্যাটি এসিডের চেইন আছে যা ত্বকের কোষের জন্য ভালাে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও এই ফ্যাটি এসিড চেইন পুষ্টি গ্রহণ করতেও সাহায্য করে।

২৩। কলা মর্নিং সিকনেস দূর করে:
কাজের চাপ, মানসিক চাপে অনেক সময়ই সকালে ঘুম থেকে উঠে অসুস্থ বােধ করি আমরা।

রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকায় এনার্জির মাত্রাও থাকে। এই সময় কলা খাওয়ার ফলে বজায় থাকে রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা।

২৪। মশার কামড়:
মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার আগে কলার খােসা ঘষে দেখুন ত্বকের ফুলে ওঠা অংশের বিশেষ উপকার হবে।

২৫। কলা স্নায়ু শান্ত রাখে:
কলায় থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি যা আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করে। আবার, মানসিক চাপ কাটাতে ফ্যাটি ফুডের থেকে বেশি প্রয়ােজনীয় কলা।

কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ হওয়ায় কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়বিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

২৬। কলা নিকোটিনের প্রভাব দূর করে:
ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং, ধূমপান ছেড়ে দেবার জন্য কলা খাওয়ার জুড়ি নেই।

২৭। স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে:
গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিনকার খাদ্যা অভ্যসে কলা রাখলে ৪০% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

২৮। স্ট্রেস কমাতে কলা:

পটাশিয়াম আপনার হার্টবিট ঠিক রাখে। অক্সিজেন, মস্তিষ্কে নিয়মিত পৌঁছে দেয় শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে! আর কলাতে পটাশিয়াম প্রচুর আছে।

২৯। কলা আঁচিল ‍দূর করে:
কলা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক ভাবে আচিল থেকে মুক্তি পাওয়ার এটা একটি প্রাচীন উপায়! ১মে একটি পাকা কলা নিন।

আপনার আচিলের ওপর, উপুড় করে স্থাপন করুন। এবার তার ওপরে সার্জিক্যাল টেপ পেচিয়ে রাখুন।

৩০। আলসার হলে:
পাকা কলা নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায়, এটি খুবই উপকারী খাবার।

অত্যন্ত খারাপ পেটের রােগেও কলাই একমাত্র ফল; যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে। কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।

৩১। দেহের তাপমাত্রা নিয়নন্ত্ৰণ করে কলা:

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানাে হয় কলা।

থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, গর্ভবতী মায়েদের কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

৩২। কলা মাংসের তরকারীর স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়া:
কোনাে কোনাে এলাকায় মাংসকে নরম ও আরো সুস্বাদু করতে রান্নার সময় কলাপাতা দিয়ে পেঁচিয়ে রান্না করা হয়।

এই একই ফলাফল আপনি তরকারীতে কলা ব্যাবহার করেও পেতে পারেন।

বাজার থেকে কলা কিনে এনেছেন কিন্তু এখনও তা কাঁচাই আছে? চিন্তা কি? মাংসের তরকারিতে কলা দিয়ে রেধে ফেলুন।

এতে করে বাড়িতে পড়ে থাকা কাঁচা কলাগুলাে যেমন কাজে লাগবে, তেমনি তরকারিতে ভিটামিন ও ফাইবার এর পরিমানও অনেক বেড়ে যাবে।

৩৩। কলা চুলকে আরও আকর্ষনীয় করে তােলে:
চুল পরিচর্যায় কসমেটিকস এর পরিবর্তে কলা অন্যতম বিকল্প হতে পারে। হেয়ার মাস্ক হিসেবে কলা চুলে ব্যাবহার করতে পারেন।

কারন, কলায় রয়েছে ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিড সহ আরও অনেক পুষ্টিগুন। তাই এটি চুলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।

আবার, কলার সাথে চুলের সৌন্দর্যবর্ধক অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করে আপনি আরও ভালাে ফলাফল পেতে পারেন।

এর জন্য আপনার প্রয়ােজন কলা, দুধ এবংমধু। উপাদানগুলাে একত্রে ভালােভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর তা চুলে দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে তা ধুয়েফেলুন।

৩৪। প্রতিদিন ব্যায়াম করার আগে ২ টি কলা খেয়ে নিন। কারণ কলার উপাদান আপনার দেহের রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখবে ও ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রনে রাখবে।

৩৫। ব্যায়ামের আগে কিংবা পরে কলা খেলে তা আপনার দেহের পেশী সমস্যা দূর করবে এবং রাতের বেলায় পায়ের মজবুত পেশী গঠনে সাহায্য করে।

৩৬। অনেকেরই মূত্র ত্যাগ করার সাথে সাথে দেহ থেকে ক্যালসিয়ামও বের হয়ে যায়। তাই এই সমস্যা দূর করতে ও দেহের হাড় মজবুত করতে কলা খাওয়া উচিত।

৩৭। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কলার ব্যবহার:

কলা ব্যবহার করে খুব সহজেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়। শুধু কলা থেঁতলে নিয়ে মুখে লাগান।

এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কলায় রয়েছে ভিটামিন-এ যা মুখের দাগ দুর করে।

এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন-ই যা ত্বকে আনে তারুন্যের ঝলক! বিশেষ কোনাে উপলক্ষ্যে বা অনুষ্ঠানের আগের রাতে মুখের দাগ দুর করতে চাইলে পুরাে মুখে কলা ব্যবহার করুন। এতে ভালাে ফলাফল পাবেন।

৩৮। কলা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে:
মুখের ব্রণ দূর করতে কলার খােসা উপকারী! এর মাধ্যমে একবার সেরে গেলে ব্রণ আর ফিরে আসে না।

এজন্য মুখে ভালাে করে পাকা কলা ঘষে সারারাত রেখে দিলে ব্রণের সমস্যা সেরে যাবে।

৩৯। দেহে প্রােবায়টিক এর যােগান দেয়:
আমাদের দেহের অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রােবায়টিক গ্রহন করা প্রয়ােজন। আর অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি হওয়া মানেই পুরাে দেহেই এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়া।

প্রােবায়টিক এর একটি অন্যতম প্রাকৃিতিক উৎস হলাে কলা, কেননা কলাতে রয়েছে ভ্রুক্টোওলিগােস্যাকারাইড (FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৪০। দুশ্চিন্তা দুর করে:
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও কলা মানসিক চাপ কমায় এবং একই সাথে মানসিক কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে।

এর কারন হলাে এটি কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমােন নিয়ন্ত্রন করে! তাই যেকোনাে গুরুত্বপূর্ণ বা স্ট্রেসফুল কাজ শুরু করার আগে একটি কলা খেয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৪১। কলা শারিরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শক্তি যােগায়:

বড় ধরনের শারিরিক পরিশ্রম এর জন্য প্রয়ােজন ভিটামিন-সি। কেননা এটি শরীরের পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে তােলে।

কলায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। যেহেতু এটি শারিরিক পরিশ্রমে প্রচুর সহায়তা করে, তাই ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়ার অভ্যাস অত্যন্ত উপকারী।

৪২। কলা পায়ের গােড়ালি পরিচর্যায় সহায়তা করে:
পায়ের গােড়ালি ফেটে গেলে কলা অনেক উপকার করে। শুধু কলা থেতলে নিয়ে আপনার পায়ের গােড়ালিতে লাগিয়ে নিন।

এরপর কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, যেন তা ধীরে ধীরে চামরার ভেতর প্রবেশ করতে পারে! এখন থেকে আপনাকে আর ফাঁটা গােড়ালী নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

৪৩। ঘুমের জন্য সহায়ক:
রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করেন; কিন্তু ঘুম আসে না ? কলা হলাে এই সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান। কলা ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার অ্যামিনাে অ্যাসিড এর খুবই ভালাে উৎস।

এই ট্রিপটোফেন সেরােটিন নামক হরমােন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই হরমােন মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে এমনকি মেজাজ খারাপ থাকলে তাও ভালাে করে দিতে পারে।

তাই, ঘুমানাের প্রায় এক ঘন্টা আগে একটি কলা খেয়ে নিন যাতে আপনার শরীর তা হজম করে ট্রিপটোফেন তৈরি করতে পারে! আর আপনাকে উপহার দিতে পারে আকটি শান্তিময় ঘুম।

৪৪। মাইগ্রেন দুর করে:
মাথাব্যাথা ও মাইগ্রেন এর ভয়ানক ব্যাথা আপনার সারাটা দিন মাটি করে দিতে পারে।

কিন্তু কলা-ই পারে এই অবস্থা প্রতিরােধ করতে। কলায় প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি মাথাব্যাথার প্রকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে।

তাই এখন থেকে যে কোনাে সময় আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হতে চাইলেই চট করে একটি কলা খেয়ে ফেলুন।

কলার খােসার উপকারিতাঃ

কলা খেয়ে কলার খােসাটা আমরা ফেলে দিলেও, এই ফেলনা জিনিসটি কিন্তু লাগে অনেক কাজে।

জেনে নিন পাকা এবং কাঁচা কলার খােসার অভিনব কিছু ব্যবহার।

৪৫। ত্বকের চিকিৎসায়:
খােসার ভেতরের অংশ ব্রণ ও বলিরেখা দূর করতে উপকারী। এটি ত্বককে পরিপূর্ণ পুষ্টি দিতে সাহায্য করে! ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় খােসা দিয়ে আধা ঘণ্টা ঘষতে পারেন, উপকার পাবেন।

৪৬। সাদা দাঁত পেতে:
দাঁত সাদা করতে কলার খােসা বেশ উপকারী। নিয়মিত কলার খােসার ভেতরের অংশটি দাঁতে ঘষলে দাঁত হবে আরাে সাদা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারে আপনি এর ফলাফল পাবেন। কলা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার সঠিক পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

৪৭। সােরিয়াসিস রােগে:
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সােরিয়াসিসের মতাে কঠিন ত্বকের রােগের প্রতিষেধক হিসেবে কলার খােসা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বকে এটি ব্যবহার করার ১০ মিনিটের মধ্যে সােরিয়াসিসের লক্ষণগুলাে চলে যাবে।

৪৮। ব্যথা নাশক হিসেবে কলার ব্যবহার:
ত্বকে কি কোনাে বিরক্তি বােধ বা ব্যথা বােধ করছেন? তাহলে কলার খােসা ঘষতে পারেন।

এর ব্যবহারে ১০ মিনিটের মধ্যে আপনি ত্বকে ভালাে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আর ব্যথা কমে যাবে।

৪৯। পােকা মাকড়ের কামড়ে:
পােকা মাকড়ের কামড়ে ত্বক ফুলে গেলে বা ত্বকের জ্বালাপােড়া হলে এটি কমাতে কলার খােসা ঘষলে উপকার পাবেন।

৫০। মুখের দাগ দূর করতে:
কলার খােসা ব্যবহার করে সহজেই মুখের দাগ দূর করা যায়! এজন্য মধুর সঙ্গে কলার খােসা মিশিয়ে মুখে ভালাে করে ঘষলে এই দাগ দূর হয়।

৫১। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়:

চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কলার খােসা। চুলকানি ও চোখের অবসাদ দূর করতে চোখের ওপর কলার খােসা মেখে নিতে পারেন।

কলার খােসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লুটিন থাকে। অতিবেগুনি রশ্মির ছােবল থেকে চোখকে বাঁচায় এই লুটিন।

৫২। কলা বলিরেখা দূর করে:
ত্বকের জন্যও কলার খােসা অনেক উপকারী। কলার খােসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বলিরেখা ঢাকতে পারে। এটি সজীব ত্বকে সাহায্য করতে পারে।

৫৩। দাদের ওষুধ:
কলার খােসা দাদের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। চুলকালে সেই অংশে কলার খােসা ঘষে দিলে চুলকানি বন্ধ হবে এবং দ্রুত দাদ সেরে যাবে।

৫৪। মসৃণ ত্বকের জন্য:
মুখমণ্ডল যদি শুষ্ক আর খসখসে হয়, কলার খােসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।

তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক মসৃণ ও মােলায়েম হয়ে গেছে।

৫৫। কলা খােসপাঁচড়া দূর করে:
ত্বকে কোথাও পাঁচড়া-জাতীয় কিছু হলে সেই জায়গায় কলার খােসা মেখে রাখুন অথবা কলার খােসা পানির মধ্যে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে সংক্রমিত জায়গা কয়েক দিন ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।

৫৬। কলা কালো ঠোঁট গলাপি করে:
কালচে ঠোঁটকে গােলাপি করতে সামান্য কলার পেস্টের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে লাগান।

৫৭। জুতা চকচকে করে তুলতে:
শু পলিশের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন কলার খােসা। প্রথমে জুতায় ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে নিন।

এবার পাকা কলার খােসার ভেতরের অংশটা দিয়ে জুতা ওপরে ঘষুন। অন্তত ৫ মিনিট ঘুষতে হেবে।

নিজেই দেখবেন যে চকচকে হয়ে উঠতে শুরু করেছে জুতা। এবার একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে জুতা জোড়া ভালাে করে মুছে নিন।

৫৮। সিডি বা ডিভিডির স্ক্র্যাচ দূর করতেঃ
সিডি বা ডিভিডিতে কিছুদিনের মধ্যেই স্ক্র্যাচ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে সিডি চলতে চায় না আবার ডিভিডির ভিডিও আটকে আটকে যায়।

এ সমস্যা সমাধান করতে পারে কলার খােসা! কলার খােসার ভেতরের অংশটি দিয়ে সিডি বা ডিভিডিটি ভালাে করে ঘষে নিন।

তাহলে, দেখবেন স্ক্র্যাচ একেবারেই চলে গিয়েছে; এবং সিডি বা ডিভিডি চলবে আগের মতােই।

৫৯। কাঁচা কলা ও কাঁচকলার গুণাগুণ :

কাঁচকলা আমাদের পরিচিত সবজি। পেটের পীড়া বা রক্তশূন্যতায় এই সবজি বেশি খাওয়া হয়। নানাভাবে কাঁচকলাকে খাওয়া যায়! সবভাবেই এর খাদ্যগুণ ঠিক থাকে।

শক্তি জোগায় এতে প্রচুর ক্যালােরি থাকে। মাত্র ১০০ গ্রাম কাঁচকলায় ক্যালােরি থাকে ৮৩ গ্রাম। তাই শরীরের ক্ষয় পূরণে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে কাঁচকলা কার্যকর সবজি।

  • পটাশিয়ামের উৎস: কাঁচকলার পটাশিয়াম স্নায়ু ভালাে রাখতে ও মাংশপেশির কর্মক্ষমতাকে সচল রাখতে কাজ করে! তাই নিয়মিত কাঁচকলা খেলে মাংসপেশিতে জড়তাজনিত রােগ সহজেই এড়ানাে যায়।
  • হজমে সহায়ক: পরিপাকতন্ত্রে গােলযােগ দেখা দিলে কাঁচকলা খেলে উপকার পাওয়া যায়! কাঁচকলার উপাদানগুলাে খাদ্যবস্তু হজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়রিয়ার পথ্য: এটি ডায়রিয়া নিরাময়ে যেমন সক্ষম, তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্য রােগেরও ওষুধ।
  • রক্তশূন্যতা এড়াতে: রক্তশূন্যতায় নিয়ম করে কাঁচকলার তরকারি খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • ক্লান্তি দূর করতে : এই সবজিতে আছে হজমযােগ্য শর্করা; যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায় এবং শরীর থেকে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে।
  • কাঁচকলা হাড়ের সুরক্ষা: কাঁচকলাতে ক্যালসিয়াম থাকে প্রচুর। এই ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে এবং হাড়ের সুরক্ষায় কার্যকর।

৬০। কলার খােসা দিয়ে দাঁত সাদা করা:

পাকা কলার খােসা সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞান সম্মতভাবে আপনার দাঁত সাদা করতে সক্ষম। সুতরাং ভুলে যান দাঁতের ডাক্তারের কাছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করার ভাবনা।

আর ঘরে বসেই নিজের দাঁত গুলােকে রাখুন ঝকঝকে। তবে হ্যাঁ, কাজটা করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে, আর আজ জানানাে হচ্ছে সেটাই।

পাকা কলার খােসায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান। বিশেষ করে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ।

আর এরাই দাঁতকে সাদা করে তুলবার প্রধান হাতিয়ার। এছাড়াও কলার খােসায় আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি।

যা দাঁতকে মজবুত করে তােলার পাশাপাশি খনিজ উপাদান গুলাে শােষণ করতেও সহায়তা করে।

দাঁত সাদা করার জন্য ঠিক ভাবে পাকা কলা হওয়া জরুরী। খুব বেশি পাকাও নয়, খুব বেশি কাঁচাও নয় এমন কলা বেছে নিন যারা কিনা এখন নিচের দিকে একটু একটু সবুজ।

কেননা, এই ধরনের কলায় পটাশিয়াম থাকে উচ্চ মাত্রায়। আর এই পটাশিয়ামই দাঁত সাদা করার দায়িত্ব নেবে।

কলার খোসা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার নিয়ম:

কলা উলটো করে ছিলে নিন। হ্যাঁ, যেভাবে আপনি ছিলে থাকেন কলা ঠিক তার উলটো দিক থেকে ছিলে নিন।

দেখবেন যে, কলার গায়ে লম্বা লম্বা সুতার মতন আঁশ থাকে, উলটো করে ছিলে নিয়ে এই আঁশ গুলাে থাকবে খােসার সাথেই।

খােসা থেকে চারকোনা করে দুটি টুকরাে কেটে নিন। আপনার সুবিধা মতন আকারেই কেটে নিন।

চাইলে এই কাটা খােসা ফ্রিজেও সংরক্ষণ করতে পারেন! এবার সকালে দাঁত ব্রাশ করবার পূর্বে এই কলার খােসার ভেতরের অংশটি দিয়ে আপনার দাঁত খুব ভাল করে ঘষুন।

প্রথম টুকরােটি দিয়ে পুরাে এক মিনিট ঘষুন। তারপর সেটা বদলে দ্বিতীয় টুকরােটি দিয়ে আরও এক মিনিট। অর্থাৎ; পুরাে দুই মিনিট দাঁতকে ঘষুন।

দাঁতের প্রত্যেকটি অংশে যেন পৌছায় এমন ভাবে ঘষতে হবে! দাঁত ঘষা হলে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

১৫ থেকে ২০ মিনিট করতে পারলে ভালাে হয়! এই সময়ে পানি বা অন্য কিছু খাবেন না কিংবা কুলিও করবেন না।

সময়টা পেরিয়ে গেলে আপনার নিয়মিত ব্যবহারের টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে নিন।

এবার আয়নায় তাকিয়ে দেখুন তাে লাগছে না দাঁত একটু বেশি পরিষ্কার?

৪/৫ দিন এমন করার পরেই দেখবেন আগের চাইতে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আপনার দাঁত! হলদে ভাব যেমন কমে গেছে তেমনি কালাে ছােপটাও অনেকটাই সরে গেছে।

যারা ধূমপান করেন, তাদের ক্ষেত্রেও কাজ করবে এই পদ্ধতি। তবে ব্যবহার করতে হবে বেশ দীর্ঘদিন এবং সঠিক নিয়েম মেনে।

অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এটা কোনও ম্যাজিক নয়। তাই ভালাে ফল পেতে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে।

কাঁচা ও পাকা কলার অন্যান্য ব্যবহার:

কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়া ছাড়াও কলার আরো ব্যবহার রয়েছে। কলার পাতা পশুর ভালো খাদ্য।

বিশেষ করে গরু ও ছাগলের জন্য কলার পাতা একটি আদর্শ খাবার। কলার পাতা ছাড়াও, কলার গাছ গরুর পছন্দের খাবার।

গৃহপালিত পশু ছাড়াও হাতি ও হরিণ কলার গাছ ও পাতা খেতে পছন্দ করে।

কাঁচা ও পাকা কলার খোসা ছাগলের আরেকটি প্রিয় খাবার। পোষা টিয়া পাখির জন্য পাকা কলা আদর্শ খাবার! আবার বন্য পশু পাখি পাকা কলা খেয়ে বেঁচে থাকে।

কলাগাছের ভেলা আমরা সবাই চিনি। বর্ষাকালে ফসল ঘরে আনতে কলা গাছ দিয়ে তৈরি ভেলা বিশেষ কাজে লাগে।

একবার কলা গাছের ভেলা বানিয়ে একমাস ব্যবহার করা যায়। তাই, নৌকার পরিবর্তে কলা গাছের ভেলা উপকারে আসে।

গ্রামে ঐতিহ্যগত ভাবে কলা পাতায় ভাত খাওয়ার রেওয়াজ আছে। কলা পাতায় খাওয়া একদিকে যেমন আনন্দের অপর দিকে অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব।

সুতরাং কোনো খাওয়ার অনুষ্ঠান বা পিকনিকে ওয়ান টাইম থালা ব্যবহার না করে, কলা পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কাঁচা কলা যেমন সবজি হিসেবে খাওয়া যায়, তেমনি করে, কলার মোচা আরেকটি মজার খাবার।কলার মোচা ভাজি সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া যায়।

এছাড়াও কলা গাছের ঠিক মাঝখানে আরেকটি লম্বা দন্ডাকার বস্তু রয়েছে, সেটাও অনেক মজার খাবার। এটা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়।

অনেকে দেশে আনারস ও কলাগাছকে সূতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আমাদের দেশে কলা গাছের শুকনো ডাটা দড়ির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছা্ড়া, কলা গাছের শুকনো অংশ উত্তম জ্বালনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কাঁচা ও পাকা কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা:

  • পাকা কলা খেলে সর্দি বাড়তে পারে। তাই যাদের সর্দি আছে, তাদের পাকা কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
  • কলাতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। তাই, যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কলা মুখে দিবেন না।
  • এক সাথে অনেক কলা খেলে পটাশিয়ামের কারণে কিডনি ব্লক হয়ে যেতে পারে।
  • কাঁচা কলা বা কলা গাছে প্রচুর আঠা থাকে। এটা কাপড়ে লাগলে সহজে ওঠতে চায় না। তাই; কলা বা কলা গাছ কাটার আগে সাবধান থাকতে হবে।
  • পাকা কলার খোসা অনেক পিচ্ছিল। তাই, পাকা কলা খাওয়ার পরে, এর খোসা নিদির্ষ্ট স্থানে রাখতে হবে।

Leave a Comment