ঈশ্বরে বিশ্বাস করার যুক্তি দর্শনে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। দর্শনে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার যুক্তির পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক আলোচনা করা হয়েছে।
তবে এই পোষ্টে শুধু আলোচনা করবো আমরা কোন যুক্তিতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করবো। ঈশ্বরে বিশ্বাস করার ৬ টি যুক্তি রয়েছে।
আমর সেই যুক্তি গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করবো। ৬টি যুক্তি হলোঃ
- বিশ্বতাত্তিক যুক্তি (Cosmological Argument)
- কার্যকারিতা যুক্তি (Causal Argument)
- সত্তাতাত্ত্বিক যুক্তি (Ontological Argument)
- পরমকারণমূলক যুক্তি (Teleological Argument)
- নৈতিক যুক্তি (Moral Argument)
- ব্যবহারিক যুক্তি (Pragmatic Argument)
বিশ্বতাত্তিক যুক্তি(Cosmological Argument):
বিশ্বে সকল কিছুর মূলে কোনো না কোনো কারন রয়েছে। দার্শনিকদের মতে সকল কিছুর কারন রয়েছে।
তাই যদি হয় তাহলে একটি কারনের পেছনে আরেকটি কারন, এভাবে আরেকটি কারনের পেছনে আরেকটি কারন থাকে।
ফলে কারনের বিশাল চেইন বা শিকল তৈরি হবে যা কোন দিনও শেষ হবে না। কিন্তু উক্ত শিকলের প্রথম কারন তো অবশ্যই রয়েছে।
তা না হলে এই যুক্তির বা কারনের সমাধান হয় না। তাই ঈশ্বরকে প্রথম কারন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয় ঈশ্বর হলেন সকল কারনের প্রথম কারন (First Cause)!
মানে ঈশ্বর হলো সব কিছুর কারন কিন্তু ঈশ্বরের কোনো কারন নেই (Uncaused caused)। তিনিই সব কিছু চালান কিন্তু তিনি কারো দ্বারা চালিত হন না (Unmoved mover)।
কার্যকারিতা যুক্তি (Causal Argument):
কার্য উৎপন্ন করতে পর্যাপ্ত কারন থাকতে হবে। আমরা কেউই আমাদের নিজেদের কে সৃষ্টি করতে পারি না। এমনকি আমাদের মা-বাবাও আমাদের সৃষ্টি করেননি।
এ থেকে প্রমান হয় আমরা কেউই পারফেক্ট না। তাহলে পারফেক্ট তো কেউ একজন রয়েছে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। কে সে ?
তিনি হলেন ঈশ্বর। এমনকি ঈশ্বর নিজেই ঈশ্বরের ধারণা আমাদের মনে দিয়ে দিয়েছেন। তাই ঈশ্বরের ধারনা আমাদের আছে এবং ঈশ্বর আছেন।
সত্তাতাত্ত্বিক যুক্তি (Ontological Argument):
St. Anselm হলেন সত্তাতাত্ত্বিক যুক্তির প্রথম প্রবর্তক। তার মতে আমাদের চিন্তার সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো যে আমরা চিন্তা করতে পারি(The greatest possible object of thought)!
তার মতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে, অন্যথায় তা না হলে তো ঈশ্বরের চেয়ে বড় কিছু থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। সুতরাং ঈশ্বর রয়েছেন।
দেকার্তের মতে ঈশ্বর হলেন নিখুঁত পারফেক্ট (All Perfect)! অর্থাৎ ঈশ্বরের মধ্যে সকল গুন রয়েছ সুতরাং ঈশ্বরের মধ্যে অস্তিত্বর গুনও রয়েছে। তাই বলা যায় ঈশ্বর আছেন।
পরমকারণমূলক যুক্তি (Teleological Argument):
Planer বা পরিকল্পনাকারী ছাড়া কোনো কিছুই তৈরি হয় না। যেমন আমাদের সামান্য রাস্তা বা বাড়ি তৈরির কাজে পরিকল্পনার দরকার হয়।
তাহলে মানুষ তো এই বিশাল গ্রহ, তারা,মহাজগৎ তৈরি করতে পারে না। সুতরাং কেউ একজন এগুলো তৈরি করেছেন। আর তিনিই ঈশ্বর।
ঈশ্বরে বিশ্বাস করার নৈতিক যুক্তি (Moral Argument):
কেউ নৈতিক কাজ করলে পুরষ্কার পাবেন। পুরষ্কার পাবেন মানে পাবেনই। কিন্তু আমাদের এই পৃথিবীতে কেউ কেউ ভালো বা নৈতিক কাজ করেও কোনো ঐশ্বরিক পুরষ্কার পান না।
কিন্তু অন্য বা পরের জীবনে সেই ব্যক্তি তার ভালো কাজের পুরষ্কার অবশ্যই পাবেন। কারন ঈশ্বর তাকে পুরষ্কৃত করবেন। তাই পুরষ্কার দাতা হিসেবে ঈশ্বর রয়েছেন।
ঈশ্বরে বিশ্বাস করার ব্যবহারিক যুক্তি (Pragmatic Argument):
ব্যবহারিক যুক্তি (Pragmatic Argument) এর প্রথম কথা হলো আমরা যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তবে তো আমাদের কোন লস বা ক্ষতি নেই।
বরং কেউ যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে তবে পরকালে তার ক্ষতির সম্ভাবন রয়েছে।
অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে লাভ আছে কিন্তু ক্ষতি নেই। আর বিশ্বাস না করলে পরকালে তার ক্ষতির সম্ভাবন রয়েছে।
সুতরাং ব্যবহারিক যুক্তি বা Pragmatic ভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা লাভজনক। উপরের ৬টি যুক্তির আলোকে যে কেউ ঈশ্বরের উপর কিংবা সৃষ্টি কর্তা হিসেবে মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস আনতে পারেন।
FAQ
নাস্তিক বলা হয়।
যারা ঈশ্বরের বিশ্বাস করে।
সর্বেশ্ববাদ মানে জগতের সবকিছুর মধ্যে ঈশ্বর রয়েছেন।
চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈনরা।
পরম সত্তা।