ইসলামের আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা ৩ প্রকার স্বপ্ন ও সত্য স্বপ্ন

স্বপ্নের মানে ও ব্যাখ্যা কি হবে ? কোন ধরনের স্বপ্নের কেমন অর্থ ও ব্যাখ্যা করা উচিত ? ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, ইসলামের আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও সত্য স্বপ্ন সমূহ নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লা।

আজকে আমরা স্বপ্ন সংশ্লিষ্ট ১০ টি পয়েন্টে নিয়ে আলোচনা করব। সেগুলো হলোঃ 

  • স্বপ্ন দেখার গুরুত্ব ও তাৎপর্য কি ?
  • স্বপ্ন কত প্রকার ও কি কি ?
  • ভালো স্বপ্ন দেখলে করণীয় কি ? খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় কি ?
  • ইসলামের আলোকে কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রয়োজন রয়েছে বা নেই ?
  • সত্য স্বপ্নের আলামত সমূহ কি কি ?
  • কিভাবে বুঝব যে আমার স্বপ্নটা অর্থবহ কিনা ?
  • স্বপ্নের ব্যাপারে কিছু ইসলামী দিক নির্দেশনা জানবো
  • স্বপ্নে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে দেখা প্রসঙ্গে জানবো
  • ইসলামের আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে কারা বেশি পারদর্শী ছিলেন তা জানবো
  • কোরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামের আলোকে বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্নের দিকে খেয়াল রেখে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার উপায়

স্বপ্নের তাৎপর্য:

আমরা সাধারণত মনে করি যে স্বপ্ন নিছক একটা বিষয় ! কিন্তু স্বপ্ন মুমিনদের জীবনে অনেক অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

মুমিনদের জীবনে একটা ভালো স্বপ্ন হতে পারে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুসংবাদ কিংবা দিক নির্দেশনা কিংবা হতে পারে বান্দার প্রতি সতর্কবাণী।

পক্ষপাতদুষ্ট লোকেরা বলে থাকে যে- আমরা যখন ঘুমাই তখন মস্তিষ্ক আমাদের স্মৃতিগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে বা আমাদের স্মৃতিগুলোকে পুনর্বিন্যাস’ করে আর সেটাই আমাদের কাছে স্বপ্ন হিসেবে ধরা দেয়।

অর্থাৎ তারা বলতে চাই যে- স্বপ্ন হচ্ছে ঘুমের ঘোরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া আমাদের চিন্তা ভাবনার প্রতিচ্ছবি।

কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বলা যায় স্বপ্ন শুধুই আমাদের চিন্তা ভাবনার প্রতিচ্ছবি নয়।

বরং এটা মহান আল্লার পক্ষ থেকে সুসংবাদ হতে পারে কিংবা সতর্কবাণী হতে পারে।

সুতরাং স্বপ্নের ব্যাপারে আমাদের খুব ভালো ধারণা রাখা উচিত।

নবুয়তের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। অর্থাৎ ওহীর সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী নবুওয়ত পাওয়া আগে টানা ৬ মাস ধরে স্বপ্ন দেখেছেন! এছাড়া ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে জবাই করতেছেন।

এটা দেখার পরে তিনি তার স্বপ্নের কথা তার পুত্রকে জানিয়ে বললেন; ‘‘হে আমার সন্তান ইসমাইল, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবাই করছি ! এখন তোমার অভিমত কি ?’’

সেদিন ইসমাইল আলাইহিস সালাম বলেছিলেন- ‘‘আপনি যা দেখেছেন সেটাই করেন নিশ্চয় আমাকে ধৈর্য্যশীলদের মধ্যে পাবেন !’’ ছেলের এই মন্তব্য শুনে সাইয়েদেনা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম একটি ধারালো ছুরি নিয়ে ইসমাইল আলাইহিস সালামকে শুইয়ে দিয়ে জবাই করতে শুরু করল।

সুতরাং, এর মাধ্যমে বোঝা যায় এটা সাধারন কোন স্বপ্ন নয় বরং এই স্বপ্ন ছিলো ওহীর অন্তর্ভুক্ত।

নবীদের স্বপ্ন যদি সত্য না হতো এবং এটা যদি নিছক স্বপ্নই হতো তাহলে একটা স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে সেদিন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানকে জবাই করার জন্য যেতেন না।

স্বপ্নের গুরুত্ব আলোচনা:

মক্কার কাফেরদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন মদিনায় যাওয়ার প্রায় ছয় বছর পরে ষষ্ঠ হিজরিতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন যে তিনি আবার মক্কায় ফিরে গিয়েছেন সেখানে তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন এবং বাইতুল্লাহ শরীফ তিনি তাওয়াফ করছে সেই স্বপ্ন দেখার পরে রাসল (সাঃ) সাহাবীদের কে নিয়ে ওমরা করার জন্য মক্কায় রওনা হলে।

এটাই প্রমাণ করে যে স্বপ্ন যদি নবীদের জন্য নিছক স্বপ্নই হতো তাহলে এই ঝুঁকি নিতেন না! কিন্তু, ঝুঁকি নিয়েও তিনি ওমরা করতে গিয়েছিলেন।

যদিও সে বছর তিনি ওমরা করতে পারেননি তাকে ফিরে আসতে হয়েছিল।

তার পরবর্তী বছর অর্থাৎ সপ্তমী হিজরিতে তিনিই ওমরা টি সম্পাদন করেছিলেন।

সূরাতুল ফাতহে আল্লাগ বলেন- আল্লাহ আপনার স্বপ্নকে হে নবী অবশ্যই সত্যায়ন করবেন এবং অচিরেই ইনশাআল্লাহ আপনি মসজিদুল হারামে ওমরা করার জন্য প্রবেশ করবেন।

তাহলে প্রথমে আমরা জানলাম যে নবীদের কাছে ওহীর সূচনা বিশেষ করে রাসূল (সাঃ) এর নিকট ওহীর আগমন ঘটেছিলো স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ! এরপর আমরা দেখলাম নবীদের স্বপ্ন নিছক স্বপ্ন নয় এটা অভির অন্তর্ভুক্ত।

স্বপ্নের আরো গুরুত্ব আলোচনা:

 এ পর্যায়ে আমরা জানবো যে বিশ্বাসীদের জন্য বা যারা মুমিন তাদের জন্য স্বপ্নের গুরুত্ব কতটুকু! আল্লার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন- নবী হওয়ার সুযোগ আর নেই।

অর্থাৎ নবয়ত আর আর আসবে না ! কিন্তু, মুবাশ্যিরাত আসবে ! তখন, সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন- মুবাশ্যিরাত হলো সত্য স্বপ্ন।

তিনি আরো বলেন- ভালো স্বপ্ন হচ্ছে নবুয়তের 46 ভাগের এক ভাগ। সহিহ বুখারীতে এসেছে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- সত্য স্বপ্ন নবুওয়্যাতের 46 ভাগের এক ভাগ! কি করে একজন বিশ্বাসীর বা মুুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের 46 ভাগের এক ভাগ হতে পারে ?

তার মানে মুমিনের স্বপ্ন বা একজন বিশ্বাসীর স্বপ্নকে আল্লাহতা’লা অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা শুধুই স্বপ্ন নয় ! এটা হতে পারে আল্লার পক্ষ থেকে একটা গাইডেন্স বা সুসংবাদ হতে পারে।

কোন সতর্কতাবানীও হতে পারে। এজন্য এ স্বপ্নকে বিশ্বাসের স্বপ্নকে আল্লাহ রাসুল সা ইসলাম 46 ভাগের এক ভাগ গুলি উল্লেখ করেছেন!

কেন তিনি বিশ্বাসীদের স্বপ্নকে নবুয়তের 46 ভাগের এক ভাগ বলে উল্লেখ করলেন? এর কারণ হচ্ছে আমরা জানি যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নবী হয়েছেন 40 বছর বয়সে এবং তিনি জীবিত ছিলেন 63 বছর বয়স পর্যন্ত! অর্থাৎ তার নবুওয়্যাতের পুরো সময় ছিল 23 বছর।

আর নবুয়ত প্রাপ্তির আগে তিনি টানা ছয় মাস শুধু স্বপ্ন দেখতেন। তাহলে এই ৬ মাসকে যদি আমরা 23 বছর ভাগ করি, তাহলে এটা 46 ভাগের এক ভাগ হয় এবং সে কারণে আল্লাহ রাসুল বলেন- ভালো স্বপ্ন হচ্ছে নবুয়তের 46 ভাগের এক ভাগ।

ইসলামের আলোকে স্বপ্নের প্রকারভেদ ও ব্যাখ্যা:

এখন আমরা জানবো স্বপ্নের প্রকারভেদ এর ব্যাপারে। খুব সোজা সাপ্টা যদি বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে যে স্বপ্ন হচ্ছে ৩ প্রকার।

একটা হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যেটা আল্লাহ দেখান, আরেকটি হচ্ছে শয়তানের পক্ষ থেকে যেটি শয়তান মানুষকে দেখায়, আরেকটি হচ্ছে নিজের পক্ষ থেকে অর্থাৎ আমরা সারা দিন যা করি, বা ভাবি, রাতে তাই স্বপ্নের মধ্যে দেখি। তাহলে আমরা বলতে পারেঃ

  • একটা হচ্ছে রাহমানী স্বপ্ন
  • আরেকটা হচ্ছে শাইতানি স্বপ্ন
  • আরেকটা হচ্ছে নাফসী স্বপ্ন

রহমানী স্বপ্নের ব্যাখ্যা:

এখন আমরা ভালো বা রাহমানী স্বপ্নের ব্যাপারে জানবো ! আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমাদের কেউ যদি কোনো ভালো স্বপ্ন দেখে, যেই স্বপ্ন দেখে খুব ভালো লাগে তাহলে তার বুঝতে হবে যে এই স্বপ্ন ছিলো আল্লাহর পক্ষ থেকে।

এমন সুন্দর স্বপ্ন দেখার কারণে আল্লাহ শুকরিয়া আদায় করবে এবং চাইলে সে এই স্বপ্নের কথা মানুষের কাছে বর্ণনা করতে পারে! তাহলে আমরা যেটা বুঝলাম আমরা যদি ভাল কোন স্বপ্ন দেখি তাহলে তিনটি কাজ করা যেতে পারে।

প্রথমত আল্লাহর প্রশংসা করা যেতে পারে কারণ আমি ভালো একটা স্বপ্ন দেখেছি তাই আল্লাহর প্রশংসা করতে পারি।

দ্বিতীয়ত চাইলে সুসংবাদ হিসেবে এই স্বপ্নটা আমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারি।

তৃতীয়ত এমন ব্যক্তিকে আমি শেয়ার করব যে আমাকে ভালবাসে বা যে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। তা না হলে আমি হিংসার স্বীকার হতে পারি।

ভালো স্বপ্ন দেখার জন্য হালাল খেতে হবে, সত্যবাদী হতে হবে, ওযু করে ঘুমাতে হবে।

ইসলামের আলোকে শয়তানি স্বপ্নের ব্যাখ্যা:

এবার আমরা জানবো স্বপ্নের দ্বিতীয় প্রকার স্বপ্নের ব্যাপারে, যাকে বলা হচ্ছে শাইতয়ানি যা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে! শয়তনান মানুষকে ঘুমের মধ্যে মানুষের অকল্যাণ করার জন্য যে স্বপ্নটা দেখায় সেটা হচ্ছে শয়তানি ষ্বপ্ন।

কেউ যদি আমরা ভয়ংকর স্বপ্ন রাতে দেখে ফেলি যেটাকে আমরা নাইট মেয়ার বা হরোর ড্রিম বলি বা ভংকর স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন বলি এবং যা দেখে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় আমরা খুব ভয় পায়, প্রচন্ড ভয়ে আমরা আঁতকে ওঠে এবং ঘুম ভেয়ে যায়।

এরকম ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলতে হবে এবং সে যেনো শয়তানের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার কাছে ৩ বার প্রার্থনা করে বা আশ্রয় চায়।

যে পাশে হয়ে শুয়ে ছিল সে পাস চেঞ্জ করে অন্য পাশ হতে হবে! বিছানা পরিবর্তন করে শোয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

ইসলামের আলোকে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে ৬ টি কাজ করতে হবেঃ

(১) আপনি বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবেন।
(২) তিন বার আপনি পড়তে পারেন আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম অর্থাৎ

(৩) আপনি যদি আপনার ঘুমকে আবারও কন্টিনিউ করতে চান তাহলে বাঁদিকের থেকে যদি স্বপ্ন দেখেন তাহলে আপনি ডান দিকে হয়ে ঘুমাবেন। অথবা আপনি ডান কাতে ঘুমাচ্ছিলেন এরকম যদি হয় তাহলে বাম কাত হবেন! অথবা যেখানে ছিলেন ওই জায়গাটা পরিবর্তন করে অন্য বিছানায় গিয়ে ঘুমাবেন।

(৪) ওজু করে ফেলবেন এবং আপনি যদি অর ঘুমাতে না চান তবে দু রাকআত সালাত আদায় করবেন।

(৫) এই স্বপ্ন আপনি কারো সাথে শেয়ার করবেন না যদি শেয়ার করতে হয় তাহলে তাহলে ভালো আলেম বা এরকম লোক কিংবা আপনার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী এরকম কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন।

(৬) দান করতে পারেন। কারণ দান-খয়াত করলে মহান আল্লাহ আমাদের বালা মুসিবত কে দূর করে দেন।

ইসলামের আলোকে নাফসী স্বপ্নের ব্যাখ্যা:

এখন আমরা নাফসী স্বপ্নের বিষয়ে আলোচনা করবো।

সারাদিন আপনি যেটা নিয়ে কন্সার্নড সারাদিন আপনি আপনার চিন্তা ভাবনার মধ্যে যে জিনিসটাকে স্থান দেন, সেটাই আপনি রাত্রিবেলা দেখে থাকেন।

যেমন দিনের বেলা কেউ কেউ খেলাধুলা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে।

তাহলে সে রাতে স্বপ্নে রাতে ফুটবল খেলা দেখতে পারে।

আবার দিনের বেলা হয়তো সে বাজারে যেয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে, সুতরাং রাতে হয়ত দেখা যাচ্ছে, সে স্বপ্নে জিনিসপত্র কিনছে বা দরদাম করছে।

এটা খুব সাধারণ স্বপ্ন। তাই এই ধরনের স্বপ্ন দেখলে বিচলিত বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

এই ধরনের স্বপ্নের কোনো ব্যাখ্যা করার প্রয়াজন হয় না।

1 thought on “ইসলামের আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা ৩ প্রকার স্বপ্ন ও সত্য স্বপ্ন”

  1. সপ্নে ২ টি সাপ গলায় কামড় দিলে কি হয়
    মহিলা

    Reply

Leave a Comment