প্রাচীন মিশর সভ্যতার লিখন পদ্ধতি, সমস্ত মিশর সভ্যতার মতোই রহস্যময়। অন্য সাধারাণ, লিখন পদ্ধতির চাইতে মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রাচীন মিশর খ্রিস্টপূর্ব ৫ হাজার অব্দে আদিম নবোপলীয় সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নগর সভ্যতার পতন ঘটায়।
মিশর সভ্যতা বিশ্বের সুপ্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বলে একে প্রাচীন সভ্যতার আদি ভূমি রূপে গণ্য করা হতো।
তবে ভাবতে অবাক লাগে যে, সমগ্র জগৎ যখন কেবল সভ্যতার জগতে প্রবেশ করছিলো ঠিক তখন মিশরীয়রা জ্ঞান বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা সাধনে বিশেষ অবদান রাখে।
মিশরীয় সভ্যতা ছিলো সভ্যতার দিক থেকে প্রচীন, আবার কৃষ্টি ও জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারক ও বাহক।
প্রাচীন মিশর সভ্যতার লিখন পদ্ধতি ও বর্ণ মালার বিবরণঃ
ব্রোঞ্জ যুগের নগর সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার হল প্রাচীন মিশরীয়দের বর্ণভিত্তিক চিত্রলিপির উদ্ভাবন! ছবির দ্বারা লেখা প্রাচীন মিশরে লিখন পদ্ধতিকে বলা হয় হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতি।
এটি হলো গ্রিকদের দেয়া একটি নাম হায়ারোগ্লিফিক অর্থ দাঁড়ায় পবিত্র লিপি।
ধর্মমন্দির, রাজাজ্ঞা, পিরামিড সহ বিভিন্ন জায়গায় হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতির লিখিত রূপ পাওয়া গেছে বলে বোধ হয় এরকম নামকরন করা হয়েছে।
এ লিপি সাধারণত ডান থেকে বামে লেখা হতো আবার অনেক সময় বাম থেকে ডানেও লেখা হতো। যেমন আমরা আরবি হরফ ডান থেকে বামে লিখি আর বাংলা অক্ষর বাম থেকে লিখি।
প্রায় ৭৫০ টি লিপি চিহ্ন দিয়ে এ প্রাচীন মিশরীয় লিখন পদ্ধতি তৈরি হয়েছিলো।
প্রাথমিক অবস্থায় একেকটি চিত্র সাজিয়ে নতুন শব্দ তৈরি করা হতো।
এই কারণে এটিকে চিত্র লিপিও বলা হয়।
এতে প্রকৃত চিত্র না হয়ে প্রতিকধর্মী হত। প্রথমদিকে শব্দের কোন ধ্বনি ছিল না।
তবে হায়ারোগ্লিফিক লিখন পদ্ধতিতে পরে ব্যঞ্জনধ্বনির যুক্ত করা হয়।
হায়ারোগ্লিফিক লিখন পদ্ধতির ৩টি রুপ ছিলো:
যথাঃ
১। চিত্র ভিত্তিক লিখন পদ্ধতি
২। অক্ষর ভিত্তিক লিখন পদ্ধতি
৩। বর্ণ ভিত্তিক লিখন পদ্ধতি
প্রাচীন মিশর সভ্যতার আরো দুটি লিপির প্রবর্তন ঘটেছিল।
১। হায়ারোটিক লিখন পদ্ধতি
২। ডোমোটিক লিখন পদ্ধতি
এ লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবনের পর পাথর ব্যবহার করে লেখার অসুবিধা হওয়ায় প্রাচীন মিশরীয়রা প্যাপিরাসের উদ্ভাবন করেন! বড় প্যাপিরাস গাছের নাম নাম্বার ওয়ান।
মিশর কর্তৃক ক্রিট, প্যালেস্টাইন, ফিনিশীয় ও লিডিয়া অধিকৃত হলে এ লিখন পদ্ধতির সমুদয় এবং ব্যপক বিস্তার লাভ করে।
প্রাচীন মিশরের লিখন পদ্ধতি উদ্ধারের ক্ষেত্রে রোজেটা নামক একটি পাথরের নাম পাওয়া যায়।
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সেনা নায়ক রোজেটা নামক স্থানে খুঁটি গাড়তে গিয়ে এই রোজেটা নামক পাথরটি পান।
ফলে এই পাথরের নাম রাখা হয় রোজেটা। জ্যাঁ ফ্রাসোয়া এর পাঠ উদ্ধার করেন! ফলে একটি নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়।
- আরো পড়ুন- মিশরীয় সভ্যতার রজনৈতিক ইতিহাস
সুতরাং বলা যায়- মিশরের সভ্যতা ছিল প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তিভূমি।
মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি ছিল প্রশংসনীয় একটি লিখন পদ্ধতি।
এই লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে লেখার সুবিধার জন্য প্যাপিরাসের গায়ে লেখা হতো।
এছাড়া প্রাচীন মিশর সভ্যতার এই লিখন পদ্ধতি, বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়তার সাথে বিস্তার লাভ করেছিল।