ফুটবল খেলা আর ফুটবল খেলা বলে আমরা সারাদিন মেতে থাকলেও, আমরা অনেকেই এই মজার ফুটবল খেলার সঠিক ইতিহাস, কলা-কৌশল, নিয়ম বা আইন কানুন জানি না।
তাই আমাদের সঠিক ভাবে ফুটবল খেলা বুঝতে বা ভালো খেলোয়ার হতে চাইলে, ফুটবল খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় জানা থাকতে হবে।
তাহলে চলুন একে একে ফুটবল খেলার সকল প্রকার সঠিক নিয়ম, আইন, কলা কৌশল জেনে নেয়া যাক।
ফুটবল খেলার সঠিক ইতিহাস:
বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বের আনাচে কানাচে ফুটবল খেলা সবার নিকট বেশ পরিচিত। কিন্তু, ফটবলের অতীত এমন উজ্জ্বল ছিলো না।
আধুনিক সময়ে আমরা যে ধরনের ফুটবল খেলা দেখি- এর জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে। তাই- স্বাভাবিক ভাবেই ফুটবল খেলার যত আইন, নিয়ম কৌশল রয়েছে, সেগুলোও ইংল্যান্ডেই তৈরি।
মজার কথা হলো শুরুর দিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়মে ফুটবল খেলা হতো। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য এবং সকল দেশে এক নিয়ম মেনে ফুটবল খেলার জন্য ১৯০৪ সালে ফিফা গঠিত হয়।
আরেকটি মজার বিষয় হলো- ফুটবলের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও, ফিফা গঠিত হয় ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯০৪ সালের ২১ মে মাসে। আসলে ফিফার চেষ্টাতেই সারা বিশ্বে ফুটবল খেলা পরিচিতি লাভ করে ও জনপ্রিয় হয়।
ফুটবল খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার পূর্ণ নাম হলো “ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন”।
ভারত আর বাংলাদেশও ফিফার সদস্যভুক্ত দেশ। উভয় দেশের মানুষ ফুটবল খেলা পছন্দ করে এবং নিজেরাও খেলে।
১৯৩৭ সালে ভারতে “সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন” বা “All India Football Federation” নামক ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে গঠিত হয়- “বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন” বা বাফুফে। এটি বাংলাদেশের ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার প্রচলন হয় ১৯৩০ সালে। তখন থেকেই নিয়মিত ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
প্রতি চার বছর পর পর ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সাধারনত একেক বারে একেক দেশে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়।
ফিফা কতৃর্ক ফুটবল খেলার ১৭টি আইন:
১। মাঠ বিষয়ক ফিফার আইন:
ফুটবল খেলার মাঠ আইনে বলা হয়েছে- মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ এবং সর্বনিম্ন ১০০ গজ হতে পারবে। আর মাঠের প্রস্থ্য হবে- সর্বোচ্চ ১০০ গজ এবং সর্বনম্ন ৫০ গজ।
মাঠের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ্যর ভিন্নতার কারন হলো- আন্তর্জাতিক খেলা বা বড়দের জন্য বড় মাঠ এবং ছোটদের জন্য ছোট মাঠের প্রয়োজন হয়।
ফুটবল খেলার আন্তর্জাতিক মাঠ বা বড়দের মাঠ তৈরির ৩টি মাপ:
- দৈর্ঘ্য ১২০ গজ হলে, প্রস্থ্য ৮০ গজ নিতে হবে।
- দৈর্ঘ্য ১১৫ গজ নিলে, প্রস্থ্য ৭৫ গজ হতে হবে।
- আর দৈর্ঘ্য ১১০ গজ নিলে, প্রস্থ্য ৭০ গজ হবে।
এই ৩টি মাঠের যে কোনো এক ধরনের মাঠ হলেই বড়দের বা আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারবে।
জুনিয়র পর্যায়ে কিংবা স্কুল পর্যায়ের বাচ্চাদের জন্য নিম্নলিখিত মাপে ফুটবল মাঠ তৈরি করতে হবে:
- দৈর্ঘ্য হবে ১০০ গজ এবং প্রস্থ্য হবে মাত্র ৫০ গজ।
ফুটবল খেলার মাঠ তৈরির সঠিক নিয়ম:
মাঠের দাগ: ফুটবল মাঠে যে সমস্ত দাগ দেয়ার দরকার হয় তা ৫ ইঞ্চি চওড়া হতে হবে।
ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্য বরাবর ২ পাশে যে লাইন থাকে তাকে বলা হয় টাচ লাইন। আর গোল পোষ্টের সাথে বা প্রস্থ্য বরাবর যে লাইন থাকে তাকে গোল লাইন বলা হয়।
মাঠের গোল এড়িয়া কেমন হবে: দুই গোল পোষ্টের ২ দিকে ৬ গজ ও সামনের দিকে ৬ গজ নিয়ে উভয় দাগকে, সরল রেখা দিয়ে যোগ করে দিতে হবে।
এই সরল রেখার দৈর্ঘ্য হবে ২০ গজ। আর এই দাগের ভিতরের জায়গাকেই বলা হয় গোল এড়িয়া।
পেনাল্টি এড়িয়া তৈরি করার নিয়ম: গোল এড়িয়ার মতো করেই- গোল পোষ্টের ২ দিকে ১৮ গজ নিতে হবে, আর সামনে ১৮ গজ নিয়ে সরল রেখা টানলে, তার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪ গজ। এটাই হবে পেনাল্টি এড়িয়া।
পেনাল্টি মার্ক: গোল পোষ্টের ঠিক মাঝ থেকে সামনের দিকে ১২গজ দূরে ৯ ইঞ্চি ব্যাসের মার্ক দিতে হবে। এটাই পেনাল্টি মার্ক।
ফুটবল মাঠের কর্নার পতাকা দেয়ার নিয়ম: ফুটবল খেলার সময় রেফারি ও খেলোয়ারদের সুবিধার জন্য এবং মাঠের কর্নার সহজে নির্দেশ করতে, ফুটবল মাঠের চার কোণায় চারটি পতাকা দেয়া হয়। এটাকে বলা হয় কর্নার পতাকা।
মাঠের কর্নার পতাকার দন্ড কমপক্ষে ৫ ফুট উঁচু হতে হবে। পতাকা দন্ডের মাথা ধারালো বা চোখা করা যাবে না।
মাঠের কর্নার এড়িয়া: ফুটবল মাঠের ৪ কোণায় চারটি কর্নার এড়িয়া রাখতে হয়। এর ব্যাসর্ধ ১গজ। এখানে বল রেখে কর্নার কিক দিতে হয়।
ফুটবল মাঠের গোল পোস্ট: মাটি থেকে ক্রসবারের উচ্চতা নিতে হবে ৮ ফুট। দুই গোল পোস্টের মাঝের দূরত্ব হবে ৮ গজ।
গোল পোষ্টের পিছনে জাল টাঙ্গাতে হয়। খেলোয়ার বা গোল কিপারের যেনো কোনো অসুবিধে না হয়, তেমন করে জাল টাঙ্গাতে হবে।
গোল পোস্ট ও ক্রসবারের রং অবশ্যই সাদা হতে হবে। সকল দাগ ৫ ইঞ্চির বেশি হবে না।
মাঠে সেন্টার সার্কেল তৈরি: ফুটবল মাঠের মাঝখানে মধ্যরেখার উপর ১০ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্ত আঁকতে হবে। এটাকে সেন্টার সার্কেল বলে।
২। বল তৈরির সঠিক নিয়ম:
ফুটবল খেলার ইতিহাস লগ্নে বর্তমান সময়ের মতো এতো উন্নত বল ছিলো না। তখন অন্য কিছু দিয়ে বল বানানো হতো।
বর্তমানের নিয়ম অনুযায়ী ফুটবল খেলার বল গোলাকার হতে হবে। বল চামড়া বা ঐ ধরনের কোনো বস্তু দিয়ে তৈরি করতে হবে। আর বল অবশ্যই বাতাস দিয়ে ভরা থাকতে হবে।
বড়দের জন্য বলের পরিধি হতে হবে ৬৮ থেকে ৭০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। তবে ছোটদের জন্য ছোট বল ব্যবহার করা যায়।
৩। খেলোয়াড়ের সংখ্যা কেমন হবে:
ফুটবল খেলায় ২ টি দল থাকে। প্রতি দলের ১১ জন করে মাঠে মোট ২২ জন খেলে। তবে প্রতি দলে মোট ১৮ জন খেলোয়ার রাখতে হয়।
প্রতি দল থেকে ১১ জন করে মাঠে খেলবে আর বাকি ৭ জন অতিরিক্ত খেলোয়ার হিসেবে মাঠের বাহিরে থাকবে। তবে এই সংখ্যা প্রয়োজনে কম বেশি হতে পারে।
৪। ফুটবল খেলোয়ারের পোশাক:
ফুটবল খেলায় নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখে পোশাক বা অন্যান্য বিভিন্ন সরঞ্জাম নির্ধারন করা হয়।
অন্য খেলোয়ারের অথবা নিজের বিপদের কারন হতে পারে, এমন কোনো পোশাক বা বস্তু পরিধান করে খেলার অনুমতি দেয়া হয় না।
একজন খেলোয়ার যা যা পরিধান করতে পারবেন তা হলো- শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিনগার্ড ও বুট।
৫। খেলার রেফারি:
খেলা পরিচালনা ও তদারকির জন্য যিনি মাঠে উপস্থিত থাকেন, তিনি হলেন রেফারি।
খেলা পরিচালনা ছাড়াও রেফারির হাতে বিশেষ ক্ষমতা থাকে। যেমন কোনো খেলোয়ার অনিয়ম করলে তাকে শাস্তি স্বরুপ লাল বা হলুদ কার্ড দেখাতে পারেন।
৬। ডেপুটি রেফারি:
প্রধান রেফারিকে সাহায্য করার জন্য আরো ২ জন ডেপুটি রেফারি থাকেন। এছাড়াও মাঠের বাহিরে আরো একজন ৪র্থ রেফারি থাকেন।
৭। ফুটবল খেলার টাইম:
ফুটবল খেলা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন- ১ম অর্ধে ৪৫ + ১৫ মিনিট বিরতি + শেষ অর্ধে ৪৫ মিনিট।
তবে স্কুলে খেলা অনুষ্ঠিত হলে- খেলার সময় কম হেতে পারে। যেমন: ৩৫ মিনিট + ১০ মিনিট বিরতি+ ৩৫ মিনিট।
৮। ফুটবল খেলা শুরু করার নিয়ম:
খেলা শুরুর আগে গোল কিপার সহ প্রতি দলের ১১ জন করে খেলোয়াড় ও রেফারি সহ মোট ২৫ জন মাঠে নামবেন।
এরপরে টস হবে। যারা টসে জয়ী হবেন, তারা মাঠের যেকোনো সাইড ইচ্ছা মতো পছন্দ করবেন। আর যারা টসে পরাজিত হবেন- তারা রেফারির বাঁশির সংকেত পাওয়া মাত্র “কিক অফ” এর মাধ্যমে খেলা শুরু করে দিবেন।
এই একই ধরনের কিক অফ করতে হয়- খেলার শুরতে, হাফ টাইম বা বিরতির পরে এবং গোল হবার পরে।
এই কিক অফ থেকে এক কিকে যদি গোল হয়ে যায়- তবে সেই গোল বৈধ বা সঠিক হিসেবে গণ্য হবে।
৯। বল- খেলার মধ্যে ও বাহিরে থাকবে কখন:
কখনো কোনো খেলোয়ার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যদি বল মাঠের বাহিরে পাঠায় অর্থাৎ বল গড়িয়ে বা উড়ে গিয়ে মাঠের গোল লাইন ও টাচ লাইন অতিক্রম করে, তবে সেই বলকে খেলার বাহিরে ধরা হবে।
আবার রেফারি যদি খেলা বন্ধ ঘোষণা করেন- তবেও বল খেলার বাহিরে আছে বলে গণ্য হবে। অন্যথায় বল খেলার মধ্যে গণ্য হবে।
১০। ফুটবল খেলায় বল গোল হয় কিভাবে:
খেলার মধ্যে, বল যদি গোল পোস্টের ভিতর উড়ে গিয়ে কিংবা মাটি স্পর্শ করে, সম্পূর্ণ প্রবেশ করে ক্রসবার পার হয়, তখন গোল হয়েছে বলে ধরা হয়।
১১। ফুটবল খেলায় অফ সাইড হয় কিভাবে:
ফুটবল খেলায় অফ সাইড হওয়া একটি বহুল প্রচলিত ও নিয়মিত ঘটনা। আমরা অনেকেই অফ সাইড কিভাবে হয় বুঝিনা।
যখন বল ছাড়াই কোনো খেলোয়ার তার বিপক্ষ দলের অর্ধে অবস্থান করে এবং তার সামনে বিপক্ষের ২ জন খেলোয়ার না থাকে এবং ঐ মুহূর্তে যদি সে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল পায় তখন তাকে অফ সাইড বলা হয়।
১২। ফুটবল খেলায় ফাউল হওয়ার কারণ কি কি:
ফুটবল খেলার সময় অসৎ উপায় অবলম্বন করলে, অথবা সঠিক নিয়ম মেনে ফুটবল না খেললে, কিংবা অন্য কোনো অসদাচরণ বা অপরাধ করলে ফাউল বলে গণ্য হয়।
এই ফাউল ও অসদাচরণের জন্য ২ ধরনের ফ্রি কিক দেয়া হয়। একটি- ডাইরেক্ট ফ্রি কিক, অন্যটি হলো- ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক।
নিম্ন লিখিত ১০ টি কারণে ফাউল হয় এবং ডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেয়া হয়-
- বিপক্ষের খেলোয়াড়কে লাথি মারা বা লাথি মারা চেষ্টা।
- বিপক্ষ দলের কাউকে ল্যাং মারা বা মারা চেষ্টা করা।
- বিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের উপরে লাফিয়ে পড়া।
- বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে আক্রমণ বা চার্জ করা।
- বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে আঘাত করা বা আঘাতের চেষ্টা করা।
- বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধাক্কা দেওয়া।
- বিপক্ষের খেলোয়াড়কে ট্যাকল করা।
- বিপক্ষ খেলোয়ারকে আটকানো বা ধরে রাখা।
- বিপক্ষের খেলোয়াড়ের উপর থুথু মারা।
- গোল কিপার ছাড়া কেউ ইচ্ছা করে বল ধরা।
উপরের ১০ টি কারনে ডাইরেক্ট ফ্রি কিক হয়। আর ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক হওয়ার ৭ টি কারনে নিচে দেয়া হলো:
- গোল কিপার বল ধরার পরে, খেলার মাঠে বল নিক্ষেপ না করে যদি সেই বল ৬ সেকেন্ডর বেশি সময় ধরে রাখে।
- গোল কিপার বল নিক্ষেপ করার পরে, সেই বল কেউ টাস করার আগেই যদি একই গোল কিপার বলটি আবার ধরেন।
- নিজ দলের কোনো খেলোয়ারের ইচ্ছাকৃত কিক করা বল যদি গোল কিপার ধরে বা টাস করে।
- নিজ দলের কোনো খেলোয়ারের থ্রো করা বল যদি গোল রক্ষক সরাসরি ধরে বা টাস করে।
- বিপজ্জনক ভাবে কেউ খেললে।
- নিজে বল না খেলে, বিপক্ষ খেলোয়ারের সম্মুখগতিতে বাঁধা দিলে।
- গোল রক্ষক বল নিক্ষেপ করার সময় তাকে বাধা দিলে।
১৩। ফুটবল খেলায় ফ্রি কিক:
আমরা উপরের ২ রকমের ফ্রি কিকের কথা জেনেছি। এখানে উল্লেখ্য যে ডাইরেক্ট ফ্রি কিক থেকে সরাসরি গোল হয়, কিন্তু ইন্ডাইরেক্ট থেকে সরাসরি গোল হবে না।
১৪। ফুটবল খেলার সময় পেনাল্টি কিক দেয়ার নিয়ম:
যদি মাঠের পেনাল্টি এড়িয়ার মধ্যে গিয়ে উপরের ১০ টি অপরাধ ডিফেন্ডারের কেউ ঘটায়, তবে বিপক্ষ দল পেনাল্টি কিক দেয়ার সুযোগ পায়।
এই পেনাল্টি কিক মারার সময়ে পেনাল্টি এড়িয়ায় কিকার ও গোল কিপার ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না।
১৫। ফুটবল খেলার সময় থ্রো ইন করার সঠিক নিয়ম:
খেলার সময় যদি কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শে বল টাস লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করে, তাহলে বিপক্ষ দলের কেউ সেই স্থান থেকে নিয়মমত মাঠের মধ্যে হাত দিয়ে বল নিক্ষেপ করে খেলা শুরু করার পদ্ধতিকে থ্রো-ইন বা থ্রোয়িং বলে।
বল থ্রো-ইন করার সঠিক নিয়ম: থ্রো-ইন করার সময় বল দুই হাতে সমান ভর দিয়ে মাথার পেছন দিক থেকে ও মাথার উপর দিয়ে দুই পা মাঠের বাইরে কিংবা দাগের উপর রেখে বল মাঠের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হয়। থ্রো-ইন থেকে সরাসরি গোল হয় না।
১৬। ফুটবল খেলাতে গোল কিক দেয়ার নিয়ম:
বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শে বল গোল লাইন অতিক্রম করলে তখন গোল কিক হয়। গোল কিক থেকে সরাসরি গোল হয়।
গোল কিক গোল এড়িয়ার মধ্যে থেকে করতে হয়। তবে গোল কিক দেয়া বল পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে না গেলে বল খেলার মধ্যে গণ্য হবে না।
১৭। খেলায় কর্নার কিক:
ডিফেন্ডারদের কারণে বা স্পর্শে বল গোল লাইন অতিক্রম করলে, তখন বিপক্ষ দল কর্নার কিক পায়। তখন বল কর্নার এরিয়ায় রেখে কিক করতে হয়।
আর যে পাশ দিয়ে বল গোল লাইন অতিক্রম করবে, সেই পাশের কর্নার এরিয়াতে বল রেখেই কর্নার কিক করতে হয়।
ফুটবল খেলার ৬ টি কৌশল:
ফুটবল খেলা হলো শক্তি, সামর্থ্য, আর গতি ও দক্ষতার খেলা। যাকে বলা হয়- Stamina, Speed & Skill. বা ট্রিপল এস (SSS) ভালো ফুটবল খেলোয়ার হওয়ার জন্য এই ৩টি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে ফুটবল হলো শক্তির খেলা। তাই ভালো খেলোয়াড় হতে হলে শরীল সুস্থ্য রাখতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য জ্ঞান ও পুষ্টি জ্ঞান থাকতে হবে।
- আরো পড়ুন- সুস্থ্য থাকার সকল টিপস।
এছাড়াও ফুটবল খেলার আরো ৬ টি মৌলিক কৌশল রয়েছে। এগুলো হলো-
- কিকিং
- হেডিং
- ট্র্যাপিং
- ড্রিবলিং
- ট্যাকলিং
- গোলকিপিং
(১) ফুটবলে কিক করার কৌশল:
পা দিয়ে ফুটবলে আঘাত করাই হলো কিক। ফুটবল আসলে পায়ের খেলা। তাই ভালো খেলোয়ার হতে হলে কিকিং এ দক্ষ হতে হবে।
আমাদের পায়ের ৩ টি অংশ রয়েছে। এই ৩ টি অংশ দিয়ে ফুটবলে কিক করতে হয়। এগুলো হলো:
– পায়ের ভিতরের দিক বা Inside
– পায়ের বাহিরের দিক বা Outside
– এবং পায়ের পাতার উপরের দিক বা Instep
আমাদের পায়ের এসব অংশ দিয়ে বিভিন্ন ভাবে কিক করা যায়। ইনসাইড কিকের মাধ্যমে সহজে বল পাস দেয়া যায়। আবার ডানদিকে থাকা খেলোয়াড়ের কাছে বল পাঠাতে হলে আউট সাইড কিক দিতে হয়।
বল উঁচুতে পাঠাতে হলে বলের নিচে পা নিয়ে জোড়ে কিক করতে হবে। কয়েক ধরনের গুরুত্বপূর্ন কিক রয়েছে। যেমন:
ভলি কিক করা:
ওপর দিয়ে বলকে দূরে পাঠানোর জন্য ভলি কিক দেয়া হয়। এজন্য বল মাটিতে পড়ার আগেই বা মাটিতে পড়ে আবার একটু উপরে উঠলে যে কিক দেয়া হয় তাকে ভলি কিক বলে।
হাফ ভলি কিক করার নিয়ম:
বল মাটিতে পড়ার পরে, ওপরে উঠতে শুরু করার সাথে সাথে জোরে যে কিক করা হয়, তাকে হাফ ভলি কিক বলা হয়। এই ধরণের হাফ ভলি কিক খুব জোড়ালো কিক হয়।
লো হার্ড কিক বা জোড়ালো কিক:
সজোড়ে নিচু দিয়ে বল সোজাসুজি পাঠানোর জন্য বলের দিকে দ্রূত এসে, পায়ের মাঝের উপরের অংশ দিয়ে বলের মাঝখানে জোড়ে লাথি মারতে হবে।
আর বলকে একটু উঁচু দিয়ে পাঠাতে হলে, একটু কোনাকুনি এসে, বলের পেটের নিম্ন ভাগে আঘাত করতে হবে।
চিপ শট দেয়ার নিয়ম:
অল্প দূরে থাকা কোনো খেলোয়ারের কাছে বল পাস করার জন্য চিপ শট দেয়া হয়। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বা এক দু পা দূর থেকে এসে পায়ের ভিতর অংশ দিয়ে বলের পেটের নিচের অংশে কিক করাকে চিপ শট বলা হয়।
যখন নিচে দিয়ে গড়িয়ে বল নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছে পাঠালে, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় সেই বল ধরে ফেলার সম্ভাবনা থাকে, তখন চিপ শট দেয়া হয়।
(২) ফুটবল খেলার সময় ট্র্যাপিং বা বল আটকানোর সঠিক নিয়ম:
হাত দিয়ে বল না ধরে, শরীরের অন্য যেকোনো অংশ দিয়ে বল থামানো বা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনাকে ট্র্যাপিং বলা হয়।
ট্র্যাপিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে ৫ ধরনের ট্র্যাপিং অনেক জনপ্রিয়। এগুলো হলো:
- সোল ট্র্যাপ: মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে আসা বলকে পায়ের তলা দিয়ে থামানোকে সোল ট্র্যাপ বলা হয়।
- শিন ট্র্যাপ: উঁচু দিয়ে আসা বল মাটিতে ড্রপ খাওয়ার পরে, সেই বল শিন দিয়ে থামানোকে শিন ট্র্যাপ বলে।
- থাই ট্র্যাপের কৌশল: উপরে দিয়ে আসা বল থাই স্পর্শ করার সাথে সাথে থাই নিচের দিকে টানতে হবে। তাহলে বলের গতি কমে সামনে পড়বে এবং থাই ট্র্যাপ সফল হবে।
- চেস্ট ট্র্যাপ করার কৌশল: উঁচু বল বুক দিয়ে থামানোর পদ্ধতি হলো চেস্ট ট্র্যাপ। বল বুকে লাগার সাথে সাথে বুক ভিতরে দিকে টানতে হবে। তাহলে বলের গতি কমে যাবে আর বল সামনে পড়বে।
- হেড ট্র্যাপ: কপাল দিয়ে বল ঠেকিয়ে বলকে সামনে ফেলার কৌশলকে হেড ট্র্যাপ বলা হয়।
(৩) ফুটবল খেলার সময় হেড দেয়ার সঠিক নিয়ম:
হেডিং বা হেড দেয়া মানে বলকে কপাল দিয়ে আঘাত করা। সঠিক ভাবে হেড করার কয়েকটি গোপন কৌশল রয়েছে। যেমন:
- নিজের দৃষ্টি সর্বদা বলের দিকে রাখতে হবে।
- সর্বদা কপাল বা চুলের সামনের অংশ দিয়ে হেড করতে হবে।
- বলে আঘাত করার সময় ঘাড় শক্ত রাখতে হবে।
- মাথা ঘুরিয়ে বল পাঠানোর দিক পরিবর্তন করতে হয়।
- হাত দুটো সামান্য প্রসারিত রাখতে হবে।
- বলে আঘাতের সময় শরীরের উপরের অংশ পিছনের দিকে এনে বলে কপাল ঠেকাতে হবে।
(৪) ড্রিবলিং করার কৌশল:
খেলার সময় পায়ে পায়ে বল গড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে ড্রিবলিং বলা হয়। সঠিক জায়গায় বল পাস দিতে ড্রিবলিং করার প্রয়োজন হয়।
২ রকমের ড্রিবলিং রয়েছে:
এক: পায়ের কাছাকাছি বল রেখে ড্রিবলিং।
দুই: বল সাামন্য দূরে রেখে রেখে ড্রিবলিং করা।
(৫) ট্যাকলিং কৌশল:
ফুটবল খেলার সময় একটি প্রয়োজনীয় ও রক্ষনাত্মক কৌশল হলো ট্যাকলিং।
বল যখন বিপক্ষ দলের কারো কাছে থাকে, তখন বিপক্ষ দলের ঐ খেলোয়াড়ের কাছে থেকে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাকে ট্যাকলিং বলা হয়।
(৬) গোল কিপিং করার সঠিক কৌশল:
ফুটবল খেলায় গোল কিপারের দায়িত্ব থাকে অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গোল কিপারের ওপর খেলার ফলাফল ঝুলে থাকে।
গোল কিপারে সুবিধা হলো সে তার শরীরের যেকোনো অংশ ব্যবহার করে বল ধরতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তবে গোল কিপারে প্রধান কাজ হলো হাত দিয়ে বল ধরা। হাত দিয়ে বল ধরার কয়েকটি কৌশল রয়েছে। যেমন:
নিচু দিয়ে আসা বল ধরার কৌশল:
মাটি দিয়ে গড়িয়ে আসা বা সামান্য উপর দিয়ে আসা বলকে, এক পা সামনে ও অপর পা পিছনে দিয়ে, হাঁটু ভেঙ্গে কোমর থেকে উপরের অংশ সামনে ঝুঁকিয়ে বল এর পিছনে যেয়ে, দুই হাত দিয়ে বল বুকের কাছে আনতে হবে।
কোমর সমান উঁচু দিয়ে আসা বল ধরার নিয়ম:
বলের দিকে দৃষ্টি রেখে, বলের লাইনে এসে, দুই হাত বলের নিচে দিয়ে, বল বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে হবে।
মাথার উপর দিয়ে আসা বল ধরার কৌশল:
এসব বল লাফিয়ে বা বলের পিছনে গিয়ে, দুই হাত সামনে উপরের দিকে প্রসারিত করে, দুই হাতের তালুর সাহায্যে বল ধরতে হবে।
আবার উপর দিয়ে আসা যে সকল বল ধরা সম্ভব নয়, সে সকল বলকে পাঞ্চ মেরে অন্য দিকে পাঠিয়ে দিতে হবে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:
ইংল্যান্ডে।
ইংল্যান্ডে।
ফিফা।
ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
২১ মে ১৯০৪ সালে।
ফ্রান্সের প্যারিসে।
মোট আইন ১৭ টি।
দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ, প্রস্থ্য সর্বোচ্চ ১০০ গজ।
দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন ১০০ গজ, প্রস্থ্য সর্বনিম্ন ৫০ গজ।
মোট ৯০ মিনিট বা দেড় ঘন্টা।
১৯৩০ সালে।
৪ বছর পর পর।
কাতারে হবে।
২১ নভেম্বর ২০২২ সালে।
Canada, Mexico এবং USA.
ব্রাজিল।
উরুগুয়ে।
ফ্রান্স।
ব্রাজিল।
আর্জেন্টিনা।
ফ্রান্স, হাইতি, ইজরায়েল, ইতালি, মরিশাস, পোল্যান্ড, সার্বিয়া।
সোর্স- ফিফা এবং ইন্টারনেট।