প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা প্রাচীন মিশরীয় দর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। মিশরীয় সভ্যতা ছিলো বিশ্বের অন্যতম সু-প্রাচীন সভ্যতা।
মিশরীয় লিখন, ধর্ম, সাহত্য, বিজ্ঞান, শিল্পের মতো, মিশরীয় দর্শনও- মিশরীয় সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে প্রকট প্রভাব ফেলতে সামর্থ্য লাভ করে।
প্রাচীন মিশরীয় দর্শন সম্পর্কে আলোচনা:
প্রাচীন মিসরীয়দের দর্শন ছিল অনেকটা ধর্মের অনুষঙ্গী। পরজীবনের চিন্তা ও নীতিবোধ, মিশরীয় দর্শনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।
প্রথমত তাদের দর্শনের নৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তা পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে প্রকৃতি সম্পর্কে কৌতূহল থেকেও মিশরীয়দের দার্শনিক চিন্তার ঊন্বেষ ঘটে।
২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে পঞ্চম রাজবংশের ফারাওয়ের ভিজিয়ার পাতাহোটেপ, যে দর্শন রেখে যান তাকে প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে পালন করা হয়।
এ দর্শন চিন্তা পাতাহোটেপের বাণী নামে পরিচিত। এখানে চল্লিশটি অনুচ্ছেদে তিনি তাঁর পুত্রের উদ্দেশ্যে পন্ডিত্য পূর্ণ বক্তব্য রেখে যান।
এর অন্যগুলোতে তিনি নৈতিকতা সম্পর্কে পরামর্শ দেন। একই সাথে তিনি লোক লোভ, ভোগবিলাস ও অহংকার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।
মধ্য রাজবংশের রাজত্বকালে নৈতিক দর্শন আরো পরিমার্জিত রুপ লাভ করেছিল! ফলে, প্রাচীন মিশরীয় সমাজে নীতি চর্চার সুযোগ বিকশিত হয়। যা মিশরীয় দর্শনের অন্যতম সফলতা হিসেবে বিবেচিত।
২১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একাদশ রাজবংশের ফারাওদের সমাধি ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে দেয়ালের গায়ে খদিত লিপিতে আরেকটি দর্শন চিন্তা প্রকাশিত হয়েছিলো।
বীণা বাদকদের গান নামে এ লিপি পরিচিত ছিল! এখানে একমাত্র রে দেবতা ছাড়া অন্য কোন দেবতার অবস্থান স্বীকার করা হতো না।
মিশরীয় দর্শনের পরলৌকিক চিন্তা থেকে, তারা পুনরায় পরকালীন পূর্ণ জীবনের ধারণা লাভ করে। ফলে তারা দেহ মমি করে রাখার প্রয়োজন থেকে, পিরামিডের যুগে প্রবেশ করে।
সুতরাং; দেখায় যায় মিশরীয় দর্শনের সাথে পিরামিড, তথা স্থাপত্য শিল্পের সম্পর্ক বিদ্যমান।
মিশরীয় দর্শনিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন হেলিওপালিসের পুরোহিত। এ দর্শন চিন্তার উদ্ভব ঘটেছিল প্রাচীন রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়।
এর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা, শ্রেণি প্রথা, রাজতন্ত্র, সমাজ, প্রশাসন, গোষ্ঠী, আইন প্রভাবিত হয়। এই দার্শনিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
মিশরীয় দর্শনের সার্বিক আলোচনা ছিল মিশরীয় সংস্কৃতির উপজীব্য এবং মিসরের দর্শন ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। কেননা গোটা মিশরীয় সমাজব্যবস্থা নির্ভরশীল ছিল ধর্মের উপর।
কারন, তারা ধর্মীয় চিন্তাদ্বারা পরিচালিত হতেন। তাই বলা যায় মিশরীয় দর্শন, মিশরীয়দের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
অন্যদিকে, মিশরীয় দর্শন, মিশর ব্যতিরেকে, সমস্ত বিশ্ব দর্শনেও অবদদান রাখতে সচেষ্ট হয়।