মিশরীয় পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার ৬টি বৈশিষ্ট্য

বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে মিশরীয় পরিবার ও সমাজ জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচ্য বিষয়! আজ আমরা মিশরীয় পরিবার কাঠামো, সমাজব্যবস্থা, গোষ্ঠী জীবন, সমাজের শ্রেণী প্রথা ও বিবাহ রীতি নিয়ে আলোচনা করবো।

মিশরীয় পারিবারিক জীবন ও পরিবার কাঠামো:

মিশরকে বলা হয় নীল নদের দেশ। নীলনদ মিশরকে সমৃদ্ধ করেছে। নীলনদ কেন্দ্রিক সভ্যতা হওয়ার কারণে মিশর ছিল কৃষিনির্ভর।

আর, কৃষিনির্ভর সভ্যতা হওয়ার কারণে মিশরের অর্থনীতির ভিত্তি ছিল পরিবার। আবার পরিবার ব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক।

পরিবার ব্যবস্থায় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, পিতা-মাতা, সহ যৌথভাবে সবাই বসবাস করত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একক পরিবারের প্রচলন ছিল।

সমাজ পিতৃতান্ত্রিক হওয়ার কারণে সমাজে সবাই পরিবার এর প্রধান কে মান্য করে চলত। পরিবারের নিয়ম-কানুন সবাই মেনে চলত।

পরিবারে বড়দের প্রাধান্য দেয়া হতো। পরিবারের প্রধানের পর, বড় পুত্রকে সব কিছু দায়িত্ব বহন করতে হতো।

প্রাচীন মিশরীয় সমাজ জীবন:

১। রাজ পরিবার:
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থায় সবার উপরে ছিল রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা! তুলনামূলক ভাবে মিশরীয় রাজপরিবার, মেসোপোটেমিয়ার চেয়ে অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী ছিল।

সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তর ছিল রাজশক্তি তথা ফারাও নিয়ন্ত্রিত। ফারাওদের দেবতা বা দেবতাদের পুত্র মনে করা হতো।

দেশের সমস্ত সম্পদ ফারাওদের অধীনে থাকতো এবং তাদের ইচ্ছামত সম্পদ ব্যবহার হতো। তাদের অনুমতি ছাড়া সম্পদ ব্যবহার করার অধিকার কারও ছিল না।

বাস্তব পক্ষে ইতিহাসের কোথাও এ ধরনের সর্বগ্রাসী রাজতন্ত্র আর দেখা যায় না 

২। পুরোহিত শ্রেণি:
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমাজব্যবস্থায় রাজপরিবারের পরেই ছিল পুরোহিতদের স্থান।

দেশের রাজনীতিতে মন্দির আর পুরোহিতদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ফারাউকে পুরোহিতদের মন জয় করে চলতে হতো।

কেননা তাদের বিরাগভাজন হয়ে কোন ফারাও নিরাপদে সিংহাসনে বসতে পারত না। তাই মিশরের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরোহিতকুলের কালো ছায়া পড়েছিল।

৩। অভিজাত শ্রেণি:
মিশরীয় সমাজে মানুষের মধ্যে অভিজাত ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল।

ধনী অভিজাত শ্রেণীর মানুষ-জন বসবাস করতেন প্রাসাদের মতো দালানে। বিলাসিতা জন্য সকল উপকরণ সেখানে প্রস্তুত থাকতো।

৪। কারিগর শ্রেণি:
মিশরীয় সভ্যতার সামাজ ব্যবস্থায়, অভিজাত শ্রেণির পরে কারিগর শ্রেণির স্থান ছিল।

ব্যবসায়ী, লিপিকর এ কারিগর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারিগর শ্রেণীর জীবনযাত্রা ছিল মোটামুটি সচ্ছল।

৫। শ্রমিক শ্রেণি:
সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরের বাস কত শ্রমিক শ্রেণী। মিশরীয় সমাজে শ্রমিক শ্রেণীর জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত দুঃখময়।

৬। দাস শ্রেণি:
মিশরীয় সমাজের দাসদের অবস্থান ছিল সবার নিচে। দরিদ্র স্বাধীন মানুষ, এমনকি ভূমিদস্যুরা ও তাদের ঘৃণা করত।

তাই মিশরীয় সমাজ জীবন সম্পর্কে বলা যায় এই সমাজে শ্রেণি বৈষিম্য ছিলো প্রকট। সেখানে ধনীরা দামি পোশাক পড়তো আর কেউ অর্ধ উলঙ্গ থাকতো।

মিশরীয় পরিবার ও সমাজ জীবনে গোষ্ঠীততন্ত্র:

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থায় গোষ্ঠী কেন্দ্রিক কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবে এ গোষ্ঠীতন্ত্র গড়ে উঠেছিল অনেক সময় ধরে! এ গোষ্ঠীর মধ্যে আবার বিভিন্ন শ্রেণি বিভাগ দেখা যায়।

গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়, বড়দের প্রাধান্য বেশি। গোষ্ঠীভুক্ত সমাজে তাদের মধ্যে আপন ভাই, চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, প্রতিবেশী সহ ইত্যাদি সম্পর্কের বিবরণ পাওয়া যায়! তারা এদের সবাইকে নিয়ে বসবাস করত।

রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, তারা রাজনৈতিকভাবে গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রামের পরিবার এর মধ্যে একই গোষ্ঠী বা বংশের প্রতি সম্প্রীতি স্থাপনের দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যায়! তারা নিজেদেরকে একই গোষ্ঠীভুক্ত মনে করতো।

এছাড়া সমাজে ধনী-দরিদ্র প্রভৃতি শ্রেণী বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। যদিও সমাজের সম্পদশালী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ হত দরিদ্রদের মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিতরণ করতেন এবং এতে করে মিশরীয় সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়েছিল।

মিশরীয় সমাজে বিবাহ ব্যবস্থা আলোচনা:

জানা যায় যে মিশরীয় সমাজে বিবাহ হত দুই ভাবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্বামীর বাড়িতে অর্থাৎ ছেলের বাবার বাড়িতে বিবাহ হতো! কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় মেয়ের বাবার বাড়িতে বিবাহ হতো।

বিবাহ অনুষ্ঠানে সব আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করা হতো। বিবাহের বেলায় কোন কোন ক্ষেত্রে ছেলের পছন্দ অনুযায়ী বিবাহ হতো।

তবে মিশরের সমাজে ঘরজামাইয়ের প্রথার প্রচলন ছিল। বিবাহের অনুষ্ঠানাদি খুব সতর্কতার সাথে করা হতো।

বিয়ের ব্যাপারে বয়স্ক ছেলে ও মেয়েরা পরিবারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ছিল। বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলা হত।

মিশরীয় সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের বিবরণ পাওয়া যায়। তবে তা ছিল খুবই কম। বিবাহ বিচ্ছেদ ছিলো শতকরা ১৮ জনের মতো।

এটা বৃটেনের চেয়ে অনেক কম ছিল। কারণ তখন মিশরের চেয়ে বৃটেনের বিবাহবিচ্ছেদের বেশি প্রচলন ছিল।

বিবাহ বিচ্ছেদের এক্ষেত্রে নতুন মুসলিম রীতি অনুযায়ী মেয়েরাও বিচ্ছেদ ঘটাতে পারত। এটা সাধারণত স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে ঘটতো।

মিশরীয় সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও সন্তানের দায়িত্ব পিতার কাছে থাকতো।

এছাড়াও মিশরীয় সমাজে যদি কোন পুরুষ বিবাহ করার সময় কোন চুক্তিনামা করত তা আবার বিচ্ছেদ ঘটার সময় চুক্তিবদ্ধ শর্তাবলীর সমাধান করার পর বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতো।

এজন্য চুক্তির শর্ত পরিশোধ করে বিচ্ছেদ ঘটাতে হত! পরে সামাজিক বিধান অনুযায়ী অর্থ দিয়ে মেয়েদেরকে বিভিন্ন বীমা বা অন্য কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো।

মিশরীয় পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার গঠনপ্রণালী মোটামুটি সহজ ও সরল! মিশরীয় পরিবার ও সামাজিক জীবন আলোচনা করতে গিয়ে দেখা যায় যে তাদের পরিবার কাঠামো, সামাজিক জীবন, গোষ্ঠী জীবন, বিবাহ রীতি খুব মজার ও আকর্ষনীয় ছিল।

2 thoughts on “মিশরীয় পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার ৬টি বৈশিষ্ট্য”

    • মানুষের মধ্যে শ্রেনি বৈষম্য ছিলো। সমাজের উঁচু শ্রেনির মানুষ বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো.. ইত্যাদি।

      Reply

Leave a Comment