প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা বাংলা যুক্ত বর্ণ লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলায় ৩ রকম করে যুক্ত বর্ণ লেখা হয়।
এগুলো হলো:
- ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জন দিয়ে যুক্ত বর্ণ
- কার সহযোগে যুক্তবর্ণ
- ফলা সহযোগে যুক্ত বর্ণ
সম্মানিত পাঠক, বাংলা যুক্ত বর্ণ লেখার নিয়ম শেখার আগে, আমাদের জানতে হবে, যুক্ত বর্ণ আসলে কি বা যুক্ত বর্ণের সংঙ্গা কি?
যুক্ত বর্ণকে সংযুক্ত বর্ণ বলা হয়। ২টি বা তার চেয়ে বেশি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে কোনো স্বরধ্বনি না থাকলে সে ব্যঞ্জনধ্বনি দুটি বা ধ্বনি কয়টি একত্রে উচ্চারিত হয়।
এইরকম যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির দ্যোতনার জন্য দুটি বা অধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে সংযুক্ত বর্ণ গঠিত হয়।
আবার এই ভাবে গঠিত সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের মূল বা আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে। যেমন: তক্তা, শক্ত এখানে ক এর আকার পরিবর্তন হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আমরা অনেক সময় কম্পিউটারে বা অন্য কোথাও টাইপ করার সময় যুক্ত বর্ণ লিখার সিস্টেম ভুলে যাই।
তাই আমাদের এই লিস্ট দেখে দেখে আপনি সকল প্রকার যুক্তবর্ণ বাংলা কিবোর্ড দিয়ে টাইপ করতে পারবেন।
যেমন: কম্পিউটারের বাংলা বিজয় ৫২ কিবোর্ড, অভ্র কিবোর্ড ইত্যাদি।
আবার অনেক চাকরির পরিক্ষায় কিংবা কম্পিউটার বিষয়ক নিয়োগ পরিক্ষায় যুক্তবর্ণ বিষয়ক প্রশ্ন আসে।
সেখানেও আপনি সহজেই সঠিক উত্তর করতে পারবেন। এছাড়াও, ভর্তি পরিক্ষা, প্রতিযোগিতা মূলক পরিক্ষাতেও এগুলো জানতে চাওয়া হয়।
উপরন্ত, আপনি যদি, কম্পিউটার কিবোর্ড টাইপিং এক্সপার্ট হতে চান, তাহলেও বাংলা যুক্তবর্ণ লেখার সঠিক নিয়ম কাজে লাগবে।
বাংলা ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জন সহযোগে যুক্ত বর্ণ:
- ক্ক = ক্+ক, যেমন: ছক্কা, চক্কর
- ক্ত = ক্+ত, যেমন: তক্তা, ভক্ত, শক্ত, রক্ত, শক্তি
- ক্ষ = ক্+ষ, যেমন: ক্ষমতা, ক্ষমা
- ক্ষ্ম = ক্+ষ্+ম, যেমন: সূক্ষ্ম
- ক্স = ক্=স, যেমন: বাক্স, রিক্সা
- ঙ্ক = ঙ্+ক, যেমন: অঙ্ক, লঙ্কা
- ঙ্খ = ঙ্+খ, যেমন: শৃঙ্খলা
- ঙ্গ = ঙ্+গ, যেমন: মঙ্গল, অঙ্গ
- ঙ্ঘ = ঙ্+ঘ, যেমন: সঙ্ঘ
- চ্চ = চ্+চ, যেমন: উচ্চারণ, বাচ্চা
- চ্ছ = চ্+ছ, যেমন: সচ্ছ, কিচ্ছা, উচ্ছেদ
- জ্জ = জ্+জ, যেমন: উজ্জীবিত
- জ্ঝ = জ্+ঝ, যেমন: কুজ্ঝটিকা
- জ্ঞ =জ্+ঞ, যেমন: জ্ঞান, বিজ্ঞান, জ্ঞানী
- ঞ্চ = ঞ্+চ, যেমন: অঞ্চল, পঞ্চম, পঞ্চাশ
- ঞ্ছ = ঞ্+ছ, যেমন: বাঞ্ছনীয়
- ঞ্জ = ঞ্+জ, যেমন: গেঞ্জি, গঞ্জ, রঞ্জন, রঞ্জিত, কুঞ্জ
- ঞ্ঝ = ঞ্+ঝ, যেমন: ঝঞ্ঝাট
- ট্ট = ট্+ট, যেমন: চট্টগ্রাম
- ড্ড = ড্+ড, যেমন: আড্ডা, গড্ডালিকা
- ণ্ট = ণ্+ট, যেমন: কণ্টক, ঘণ্টা
- ত্ত = ত্+ত, যেমন: উত্তর, উত্তম, চিত্ত
- ত্থ = ত্+থ, যেমন: উত্থান
- দ্দ = দ্+দ, যেমন: উদ্দীপক, উদ্দেশ্য
- দ্ধ = দ্+ধ, যেমন: উদ্ধার, বদ্ধ, বৃদ্ধ
- ন্ত = ন্+ত, যেমন: শান্ত, দন্ত, শান্তি, অন্ত, জ্যান্ত
- ন্দ = ন্+দ, যেমন: বন্দনা, বন্দী, বন্ধন, সন্ধান
- ন্ন = ন্+ন, যেমন: অন্ন, ছিন্ন
- ন্ম = ন্+ম, যেমন: তন্ময়, ছিন্ম, জন্ম, আজন্ম
- ন্ত্র = ন্+ত্+র, যেমন: স্বাতন্ত্র্য
- প্ত = প্+ত, যেমন: রপ্ত, লিপ্ত, ক্ষিপ্ত
- প্প = প্+প, যেমন: পাপ্পা, ধাপ্পা, খপ্পর, থাপ্পর
- প্স = প্+স, যেমন: লিপ্সা
- ব্দ = ব্+দ, যেমন: শব্দ, জব্দ, অব্দি
- ল্ক = ল্+ক, যেমন: উল্কা, হাল্কা,
- ল্গ = ল্+গ, যেমন: ফাল্গুন
- ল্ট = ল্+ট, যেমন: উল্টা, মাল্টা
- ষ্ক = ষ্+ক, যেমন: শুষ্ক, পরিষ্কার
- স্ক = স্+ক, যেমন: স্কুল, স্কুটার, বিস্কুট
- স্খ = স্+খ, যেমন: স্খলন
- স্ট = স্+ট, যেমন: স্টেশন, মাস্টার, সিস্টার
- স্ত = স্+ত, যেমন: আস্তানা, সস্তা
- স্প = স্+প, যেমন: স্পষ্ট, স্পন্দন
- স্ফ = স্+ফ, যেমন: স্ফটিক
- হ্ম = হ্+ম, যেমন: ব্রাহ্মণ
কার দিয়ে বাংলা যুক্ত বর্ণ লেখার নিয়ম:
স্বরবর্ণ যখন সংক্ষিপ্ত হয়ে ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয় তখন তাকে কার বলে। অ বর্ণ ছাড়া বাকি ১০টি বর্ণের সংক্ষিপ্ত রুপ রয়েছে।
এজন্য বাংলা কার মোট ১০টি। এই ১০টি কার হলো:
- আ-কার (া) যেমন: মা, বাবা
- ই-কার ( ি) যেমন: পাখি, বাড়ি
- ঈ-কার (ী) যেমন: নীতি, শীত
- উ-কার (ু) যেমন: হবু, বাবু, কাবু
- ঊ-কার (ূ) যেমন: মূল্য, পূজা
- ঋ-কার (ৃ) যেমন: গৃহ, কৃমি
- এ-কার ( ে) যেমন: মেয়র, বেগম
- ঐ-কার (ৈ) যেমন: বৈশাখ, কৈ, চৈত্র
- ও-কার (ো) যেমন: দোলা, তোতা
- ঔ-কার ( ৌ) যেমন: কৌতুক, যৌতুক
ফলা সহযোগে যুক্তবর্ণ লেখার নিয়ম:
ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রুপকে বলা হয় ফলা। এই ফলা মোট ৬টি।
যখন ফলা যুক্ত হয়, তখন বর্ণের আকার পরিবর্তন হয়। নিচে উদাহরণ সহ ৬টি ফলা দেয়া হলো:
- ণ বা ন – ফলা, যেমন: চিহ্নরত্ন
- ব – ফলা, যেমন: বিশ্বাস, লম্বা
- ম – ফলা, যেমন: আত্মা, পদ্মা
- য – ফলা, যেমন: সয্য, বিদ্যা
- র – ফলা, যেমন: গ্রহ, ব্রত
- র এর আরেকটি ব্যবহার হলো রেফ। যেমন: বর্ণ, পর্ব
- ল – ফলা, যেমন: ক্লান্ত, অম্ল
যুক্তবর্ণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তর:
বাংলায় কার মোট ১০টি।
ফলা মোট ৬টি। এগুলো হলো: ণ/ন ফলা, ব ফলা, ম ফলা, য ফলা, র ফলা, ল ফলা।
বাংলা ভাষায় মোট পঞ্চাশটি বর্ণ রয়েছে। এই ৫০টি বর্ণকে একত্রে বর্ণমালা বলা হয়। এর মধ্যে স্বর বা স্বরবর্ণ মোট ১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ মোট ৩৯টি।
জ্ঞ তে জ এবং ঞ বর্ণ রয়েছে।
ক্ষ তে ক এবং ষ বর্ণ রয়েছে।
ঞ্ছ তে ঞ এবং ছ বর্ণে রয়েছে।
- সোর্স: